somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প- মায়া রাত্রি

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সময়টা বোধহয় মাঝরাত। বোধহয় বলছি তার কারণ কয়টা বাজে সেটা ঠিক জানিনা। এবং দেয়ালে ঝুলতে থাকা ঘড়ি দেখেও লাভ হবে না। কারণ জানি তাতে কয়টা বাজছে, সাতটা আঠারো। গত পাঁচ মাস ধরে এই সাতটা আঠারোই বেজে আছে। আসলে মোবাইলেই সবসময় সময় দেখা হয় বলে এই দেয়াল ঘড়ির দিকে খেয়ালই করা হয় না। আর এটা জন্মদিনে বন্ধুদের দেয়া গিফট বলে খুল ফেলতেও ভালো লাগে না।

যাইহোক, খুব ক্লান্ত থাকার কারণে আজ বেশ আগেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তাই হয়ত মাঝরাতে হঠাত্‍ই ঘুম ভেঙে গেল। এমনিতে তো এক ঘুমেই রাত পার হয়ে যায়। তা ঘুম একটু কাটতেই চোখে পড়লো যে জানালাটা খোলা। ঘুমানোর আগে জানালা বন্ধ করেই ঘুমাই, তবে আজকে করা হয়নি। আর হয়নি বলেই বোধহয় এমন সৌন্দর্য দেখতে পেলাম।

আমার খুব পছন্দের সময় হলো রাত, আর রাত্রির সাথে যদি চাঁদনি থাকলে তো কথাই নেই। মানে চাঁদনি রাত আরকি। এবং আজকের রাতটা তেমনি রাত। অস্বাভাবিক সুন্দর আলো চারদিকে। হালকা হলুদাভ সাদা আলো। আর ঐ যে চাঁদটা, শিমুল গাছের পাশদিয়ে উঁকি দিচ্ছে যেটা, ধবধবে সাদা। কি চরম সুন্দর! আর তার উপর আবার মাঝরাতের হালকা বাতাস। পুকুরের পানিতে অল্প ঢেউ উঠেছে সে বাতাসে। তাতে চাঁদের আলো পড়ে হীরের মত চিকচিকে ছটা দিচ্ছে। কি অপার্থিক সৌন্দর্য! এমন পরিবেশ এতটাই সুন্দর যে ভালো লাগার সাথে মন খারাপ মিশে যায়। আনন্দময় বিষাদে মন ভরে যায়। আর মনেহয় এমন সৌন্দর্য তো আজীবন উপভোগ করা যাবে না।

এমন কথা যখন ভাবছি তখন হঠাত্‍ই একটা কুকুর ডেকে উঠলো। একবার। আমি এরআগেও গভীর রাতে কুকুরের বিলাপ শুনেছি। একসঙ্গে অনেক কুকুর ডেকে উঠেছে, কিংবা একটা কুকুরই অনেকক্ষণ ধরে ডেকে গেছে। কিন্তু শুধুমাত্র একটা কুকুর একবার ডেকে ওঠা, কেমনযেন। মনেহয় যেন কেউ তার গলা চেপে ধরে ডাক বন্ধ করে দিয়েছে। আপনারা বুঝবেন না, ভাববেন স্রেফ এটা কুকুরেরই তো ডাক। কিন্তু এমন অপার্থিব আলোয় এমন ডাক মনের মধ্যে ভয়ের অনুভূতি এনে দেয়, নির্মল ভয়, আর কোনোকিছু না। আমিও ভয় পেলাম, নির্মল ভয়। জ্যোত্‍স্না বিলাশ করে আর লাভ নেই। জানালা বন্ধ করতে গেলাম। তখনি চোখে পড়ল তাকে। আমার বারান্দার সামনে, উবু হয়ে কেউ পাতা কুড়াচ্ছে। খুবই সাধারণ, কিন্তু স্বাভাবিক যে না! সাধারণ কারণ অনেকেই আমার বারান্দার সামনের এই আমগাছের পাতা কুড়াতে আসে। আর স্বাভাবিক না কারণ এখন গভীর রাত। আমি ভয়ঙ্কর রকমের ভয় পেলাম এই অস্বাভাবিক-সাধারণ ঘটনা দেখে। দ্রুত জানালা লাগাতে গেলাম, কিন্তু তখনি যে পাতা কুড়াচ্ছিল সে মুখ তুলে তাকালো। একটা মেয়ে। খুবই সাধারণ এক মেয়ে। এমন অবস্থায় হয়ত দেখা উচিত ছিল এমন এক মেয়েকে যার ঠোঁটে রক্ত লেগে আছে, বা যার চোখ দিয়ে রক্ত পড়ছে বা অন্য ভয়ঙ্কর কিছু। কিন্তু এই মেয়ে খুবই সাধারণ। এতই সাধারণ যে হয়ত তাকে একবার দেখে দ্বিতীয়বার দেখলে আর চেনা যাবে না। শুধু তার কাজের সময়টা অস্বাভাবিক, এবং এরপর যা ঘটলো সেটা। তারদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই সে আমার বারান্দায় জালানার সামনে চলে এলো। আর আমি নিশ্চিতভাবেই জানলাম যে এই অপার্থিব সৌন্দর্যের মধ্যে আক্ষরিকভাবেই অপার্থিব কিছুর সম্মুখীন হয়েছি আমি। এরপর সেই মেয়েটা আরো কাছিয়ে এসে তার হাত জানালার দিকে বাড়িয়ে দিল। এতক্ষণ যেখানে পাতা ছিল সেটা খেয়াল করে দেখলাম অন্য কিছু হয়ে গেছে। গোলাকার। হাতটা আরেকটু আগিয়ে আসতে বুঝতে পারলাম গোল জিনিস যেটা সেটা আসলে একটা ছোটো বাচ্চার মাথা। এবং আরো আগাতেই বাচ্চার মাথাটাকে চিনতে পারলাম, আমাদের ফ্যামিলি এলবামে অনেক দেখেছি একে, খুব ভালোভাবে চিনি, কারণ এটা যে আমিই। তখনই সেই মাথাটা চোখ খুলে তাকালো এবং আমারো ঘুম ভেঙে গেল।

উফ! কি স্বপ্ন ছিল। বেশ ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল। গলা শুকিয়ে গেছে। ভালোভাবে চোখ না খুলেই পাশের টেবিলে রাখা বোতল থেকে পানি খেয়ে গলাটা একটু ভেজালাম। মোবাইল টেনে নিয়ে সময় দেখলাম বারোটা ছাব্বিশ (হ্যাঁ, আমার দেয়াল ঘড়িটা আসলেই নষ্ট হয়ে ঝুলে আছে)। মাঝরাত। এবং তখনই খেয়াল হলো যে জানালার এক পাল্লা খোলা। সেখান দিয়ে চাঁদের আলো আসছে। আলো দেখে মনে হচ্ছে আজ বোধহয় ভরা পূর্ণিমা। স্বপ্নে দেখা আলোর মত হলুদাভ সাদা আলো। আমি অপেক্ষা করতে থাকলাম। হ্যাঁ, এইতো একটা কুকুর ডেকে উঠলো। একবার। আমি অপেক্ষা করতে থাকলাম। হ্যাঁ, ঐতো শব্দ হচ্ছে। পাতা কুড়ালে যেমনটা হয়। জানালাটা বন্ধ করা দরকার। দ্রুত বন্ধ করার জন্য উঠলাম। অবশ্য তারআগে দেখেনিলাম বোতলে কতটুকু পানি আছে। কারণ এই স্বপ্নটা যখন ভাঙবে তখন তো আবার গলা শুকিয়ে যাবে। পানি না থাকলে শুকনা গলায় নতুন স্বপ্নে যাওয়াটা বেশ কষ্টকর হবে। কি বলেন? শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাওয়া গলা নিয়ে কষ্ট হবে না?
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:১৬
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×