somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উপনিবেশোত্তর আফ্রিকান সাহিত্য

০১ লা নভেম্বর, ২০০৬ ভোর ৬:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[লেখাটি সংবাদ সাহিত্য সাময়িকীতে 19 মে 2005 তারিখে প্রকাশিত]
উপনিবেশোত্তর আফ্রিকান সাহিত্য
অবনি অনার্য

একটি দেশে উপনিবেশ গড়বার পর আধিপত্যবাদী শক্তি যা যা করে আফ্রিকার েেত্রও সেটার কিছুমাত্র কম হয়নি। আধিপত্যবাদী শক্তি অধীন দেশের সবচেয়ে স্পর্শকাতর এবং গুরুত্বপূর্ণ সত্তা, সংস্কৃতির একেবারে গোড়ায় আঘাত হানে। শুধু সেটাই নয়, পুরো দেশের রাজনীতিক-আর্থনীতিক-সামাজিক কাঠামো আগ্রাসী শক্তির কাঠামো কতর্ৃক প্রতিস্থাপিত হয়, শিাব্যবস্থা হয়ে পড়ে স্থানীয়সমাজবিচ্ছিন্ন। ইতিহাস আমাদের এই শিা দেয়। ইতিহাস আমাদের এও জানান দেয় যে, কতর্ৃত্বের পরাজয় একদিন ঘটে, কিন্তু ধর্ষণের পর যদি ধর্ষিতা গর্ভবতী হয়ে পড়ে তখন ধর্ষণের কষ্ট ছাপিয়ে যেমন আরো তীব্র হয় 'ধর্ষণের ফল' টানার লাঞ্ছনা, তেমনই আধিপত্যবাদ নিজের পরাজয়ের আগে অধীন দেশের গর্ভে দিয়ে যায় পররমুখাপেী-আর্থনীতিক কাঠামো, নিজের পছন্দ মতো তাঁবেদার স্থানীয় শাসক, সমাজবাস্তবতাবর্জিত শিাব্যবস্থা এবং শ্রেণীবৈষম্যের বীজ। কালে কালে সেই পাপের ফল টানতে হয় ধর্ষিতা ভূখণ্ডকে। আফ্রিকার েেত্র এসব জানবার জন্য ইতিহাস জানার প্রয়োজন সীমিত, তাদের সাহিত্য বরং আমাদের সাহায্য করবে ইতিহাস আসলে কেমন হয় সেটা জানতে। আফ্রিকান সাহিত্যিকদের সৃষ্টিকর্মের দার্শনিক-সমাজতাত্তি্বক আলোচনা ব্যাপক ভাবে করেছেন রডনি, ক্যাবরাল এবং গুগি। তাঁরা খুব চমৎকার ভাবে রাজনীতিক, আর্থনীতিক এবং সামাজিক প্রোপট ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিয়েছেন কিভাবে এগুলো আফ্রিকার সাহিত্যিকদের চেতনাকে জারিত করেছে। আর এভাবে তাঁরা আফ্রিকার সাহিত্য সৃষ্টি-পরিচিতির পেছনকার মানসগঠন এবং চিন্তাচেতনার ধারা সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। পাশাপাশি ঔপন্যাসিকদের সমাজগঠন চিত্রণে আফ্রিকার সামাজিক সম্পর্ক, রাজনীতিক বিন্যাস এবং আর্থনীতিক বিষয়াশয় সদ্সদ্রূপে এসেছে কিনা সে-সম্পর্কে সিদ্ধান্তে আসার েেত্রও পাঠকদের এ-কাজগুলো সহযোগিতা করবে। আফ্রিকার সাহিত্যের সংজ্ঞানির্ধারনী বিতর্কেও এ-সমালোচনাগুলো কাজে আসবে। কেননা যে, এগুলো আফ্রিকার সাহিত্যের প্রাক-উপনিবেশ, উপনিবেশ এবং উত্তর-উপনিবেশ ধাপগুলোর ঐতিহাসিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেছে, যাতে করে আফ্রিকার সাহিত্যের বিশ্লেষণের কাজটি সহজ হয়। রডনি, ক্যাবরাল এবং গুগি দাবি করেন যে, আফ্রিকার সাহিত্যের একটি ঐতিহাসিক ধারা আছে। উদাহরণ দিয়েছেন এইভাবে_ নয়াউপনিবেশবাদ এখনো আফ্রিকাতে আছে এইজন্য যে, ঔপনিবেশিককালে প্রতিষ্ঠিত আর্থনীতিক, রাজনীতিক এবং সামাজিক ধারাগুলো স্বাধীনতা পরবতর্ী সময়েও বর্তমান। নয়াউপনিবেশবাদের বোঝাপড়া এবং একে চ্যালেঞ্জ করবার জন্য ঔপনিবেশিক যুগের প্রতিষ্ঠিত আর্থনীতিক, রাজনীতিক এবং সামাজিক পরস্পরবিরোধিতাগুলোর বিশ্লেষণ জরুরি। কেননা ওই বৈপরিত্যসমূহ আজও আফ্রিকার সমাজের নির্মম বাস্তবতা। রডনির মতে উপনিবেশবাদই আন্তজর্াতিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থার কাছে আফ্রিকার অর্থনীতিকে নির্ভরশীল করে নয়াউপনিবেশবাদের শিকড় তৈরি করে দিয়ে গেছে। উৎপাদন এবং বণ্টনের পুঁজিবাদী সম্পর্ক, যেমন_ ইণ্টারন্যাশনাল ট্রেড কমোডিটি এঙ্চেঞ্জ সিস্টেমস এণ্ড ভ্যালুজ, এ-পরমূখিতার সৃষ্টি করেছে। রডনি বলছেন_ 'উপনিবেশবাদ কোনোরকম তিপূরণ ছাড়াই আফ্রিকার উন্নয়নকে করেছে স্থুল, খণ্ডিত এবং পশ্চাৎমুখী।'আফ্রিকান সাহিত্যে এইসব শোষণের এবং পুঁজিবাদি অর্থনীতির প্রবেশের নান্দনিক উপস্থাপন আছে, এভাবে না বলে বলা ভালো সাহিত্যের ওইসব নান্দনিক চিত্রণ থেকেই এসব আলোচনা হয়েছে, সম্ভব হয়েছে। রডনি কিছু উদাহরণ দিয়েছেন। যেমন, মেয়মবিতে আছে_ আমার জমি কফিতে ভরপুর অথচ বাবা আমার গরিব চাষি ছিলেন চিরকাল...। দেম্বসএ আছে_ 'অনেক ধনের মাঝে লোক বাঁচে দীনহীন হালে। সর্বত্র কফি আর কফি, গাছে গাছে বিপুল সম্ভারে। ওরা দাম দিয়ে ওইসব চুরি করেছিলো, ঘামের দাম দিয়েছে অথর্ব পয়সা দিয়ে।'(পেপেটেলা:1986:18/156)ফার্দিনান্দ ওয়োনোর দ্য ওল্ড ম্যান এণ্ড দ্য মেডেল এর মূলচরিত্র মেকা এবং অন্যান্য চাষিরা নারকেল ফলিয়েছে ফ্রান্সে রপ্তানি করবার জন্য। চিনুয়া আসিবির থিংস ফল্ অ্যাপার্টএ বাণিজ্যকেন্দ্র স্থাপন এবং মিষ্টিআলু বিক্রয় পুঁজিবাদী অর্থনীতির প্রবেশ নির্দেশ করে। একইভাবে মঙ্গো বেটির মিশন টু কালা, দ্য পুওর ক্রাইস্ট অব বোমবা এণ্ড কিং ল্যাজারাসএ রপ্তানীউদ্দেশ্যে নারকেল উৎপাদন আন্তর্জাতিক পুঁজিবাদী অর্থনীতির প্রবেশ নির্দেশ করে, আফ্রিকার জন্য যা অপূরণীয় তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। উপনিবেশ যুগের "মেরুকরণ" আফ্রিকার উৎপাদন ব্যবস্থাকে পুঁজিবাদের মুখাপেী করে নিঃস্ব করে দিয়েছে। স্থানীয় কলকারখানার উন্নতি হয়েছে যৎসামান্য (যা আজো বর্তমান)। আই'ল ম্যারি হোয়েন আই ওয়াণ্ট এ গিকামবা বলছেন: 'সবকিছু মেনে নেবো গিথোনির ছেলে/ শ্রমঘাম বেচে তাও/ গাঁয়ের কিছুটা যদি উন্নতি হয়/ আহারে! দেখো তো গাঁয়ের একি হাল!'রডনি উল্লেখ করেন_ 'রাস্তাগুলো তৈরি করা হয়েছিলো ওদের ব্যবসার সুবিধার্থে' আর যুক্তি দেখান_'আফ্রিকার স্বার্থে যদিবা কিছু গিয়ে থাকে সেটা নেহাতই অনিচ্ছাকৃত, দুর্ঘটনাবশত।' উদাহরণস্বরূপ মঙ্গো বেটির রিমেম্বার রু্যবেনএ ভাষ্যকার বলছেন_ 'রাস্তাগুলো কোনোভাবেই আমাদের ইচ্ছাতে তৈরি হয়নি, ওগুলো আমাদের দুনিয়া থেকে ঢের বেশি দূরে ।' ফার্দিনান্দ ওয়োনোর দ্য ওল্ড ম্যান এণ্ড দ্য মেডেলএ ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর খাটিয়ে কালোশ্রমে রাস্তা নির্মাণ আফ্রিকাতে ইওরোপের শোষণেরই চিত্রণ। রডনি আরো উল্লেখ করেন যে, উপনিবেশ যুগে দখলদাররা নিজেদের মর্যাদা অুন্ন রাখবার জন্য যেসব সামাজিক সেবা দিয়েছে সেগুলো তাদের শোষণ এবং আধিপত্যের ধরণের বহিঃপ্রকাশ। মেয়মবিতে ভাষ্যকার বলছেন_ 'সারাদিন কুড়ালে কাঠ কেটে তুমি পাচ্ছো বিশ পয়সা... আর তোমার মালিক কতো পাচ্ছে জানো? এককাঁড়ি টাকা। এই টাকা আয়ের জন্য তোমার মালিক কী করেছে? কিছুই না, একদম কিচ্ছু না... তো সে কিভাবে দিনে হাজার হাজার আয় করবে আর তোমাকে দেবে মাত্র বিশ পয়সা? কী অধিকার তার আছে? এটাই ঔপনিবেশিক শোষণ।'(পেপেটেলা: 1983: 19)রডনি দাবি করছেন এভাবেই আফ্রিকার উন্নয়নের পথ বন্ধ হয়ে গেছে।রডনি ল্য করেছেন যে, আফ্রিকার এই ইওরোপ_মুখাপেতিাই সৃষ্টি করেছে নয়াঔপনিবেশিক শ্রেণীবৈষম্য আর সেই আফ্রিকান শ্রেণী যারা ঔপনিবেশিক আর্থনীতিক কাঠামোকে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। মিশন টু কালাতে ঔপনিবেশিক প্রভূরা ভিমিলাই এর প্রধানকে নির্বাচিত করে এবং সে জণগনের জীবনের দামে যাপন করতো এক অভিজাত জীবন: 'ঔপনিবেশিক প্রভূরা (যারা তাকে নির্বাচিত করেছিলো) ওর মুখে মাখন তুলে দিয়েছিলো। এর বিনিময়ে সে রোবটের মতো তাদের নির্দেশ পালন করতো আর জানতো যে, তারা ওকে জঞ্জালে ফেলে দেবে না। যখন জোর করে খাটিয়ে কাজ করানো হচ্ছিলো তখন সবাই ওকে ভয় করে চলতো, কেননা ও ছিলো দলচূ্যত আর শত্রুপরে গোয়েন্দা। ও নিজের স্বার্থের প্রয়োজনে আমাদের প্রথাগত চেইন অব কমাণ্ড মেনে চলতো, আর ওর প্রয়োজন না হলে নির্দ্বিধায় ওসব ভঙ্গ করতো।'(বেটি: 1964: 18)কালার কেন্দ্রিয় চরিত্র সমাজকে ধ্বংস করার জন্য ঔপনিবেশিক প্রভূদের হয়ে কাজ করতো। অভাবী ঋণগ্রস্তদের কাছ থেকে টাকা আর গবাদি নিয়ে ধনী বনে যান মেদজার বাবা। মেদজার মতে ইনিই হচ্ছেন আফ্রিকার বুদ্ধিজীবির জগতে পশ্চিমা ভণ্ডামি এবং ব্যবসায়িক বাস্তুববাদের স্বার্থক প্রতিস্থাপকের পরাকাষ্ঠা। এই পেটি-বূজের্ায়া আর শিতি কালো শ্রেণীই নয়াউপনিবেশবাদের ভিত্তি স্থাপন করেছে।উপনিবেশযুগের শিাপদ্ধতি কিভাবে আফ্রিকানদেরকে উপনিবেশ ব্যবস্থার তাঁবেদার বানিয়েছে রডনি সেসম্পর্কে বিশদ ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলছেন, নয়াউপনিবেশবাদের সূচনা যে-শ্রেণীবৈষম্য দিয়ে সেটার শুরু হয়েছে শিার সংগে বস্তুগত প্রাপ্তির সম্পর্কের মধ্য দিয়ে। রডনি বিশেষভাবে বলতে চান যে, একটি সমাজের বাসিন্দাদের জীবন এবং সে-সমাজের অবকাঠামো রার জন্য শিা অতিঅবশ্য জরুরি। উপনিবেশপূর্বযুগের আফ্রিকার শিাপদ্ধতির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক এই যে, শিার সংগে আফ্রিকার জনগণের সম্পর্ক, যেটা উপনিবেশযুগে হয়েছে ঠিক তার উল্টো। উপনিবেশযুগের শিাপদ্ধতির একটাই উদ্দেশ্য_ পুরো মহাদেশের উপর আধিপত্য কায়েমের েেত্র আফ্রিকানদেরকে সংশ্লিষ্ট করার জন্য এদেরকে উপযুক্ত করে গড়ে তোলা। ঔপনিবেশিক শিার শিা হচ্ছে তাঁবেদার হবার শিা, শোষণের শিা, মানসিক সংশয়-সংকটের সৃষ্টি আর অনুন্নয়ন।মিশন টু কালাতে মেদজার ঔপনিবেশিক শিা তাকে রাজনীতিক এবং আর্থনীতিকভাবে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত সরকারি চাকুরের জীবন এনে দেয়, ফলে ঐ দেশের জনগণের সম্পূর্ণ স্বার্থবিরোধী কাজ করতেও এতটুকু কষ্ট হয় না। ঔপনিবেশিক শিা এইভাবে অভিজাত কালোশ্রেণী তৈরি করেছে যেন স্বাধীনতাপরবতর্ী সময়েও তার রাজনীতিক এবং আর্থনীতিক স্বার্থ পুরোপুরি অুন্ন থাকে।রডনি আরো ল্য করেছেন যে, ঔপনিবেশিক শক্তি একটা বিরোধী অভিজাত শ্রেণী তৈরি করেছে যা স্বাধীনতাপরবতর্ী সময়ে ওখানে সামরিক একনায়কতন্ত্রের শাসন কায়েম করেছে। আসিবির অ্যানথিলস অব সাভানাহর সামরিক একনায়ক স্যাম এেেত্র খুব ভালো উদাহরণ।রডনি আরো প্রত্য করেছেন, শিতি আফ্রিকানরা উপমহাদেশে সবচেয়ে বেশি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। শিার প্রতিটি স্তরে তারা আরও বেশি করে জর্জরিত হয়েছে এবং শাদা পুঁজিবাদের প্রতি অনুরক্ত হয়েছে, মোটা অংকের মজুরি পেয়ে ভিনদেশী জীবনযাপন পদ্ধতিতে আসক্ত হয়ে পড়েছে। পরবতর্ীতে যা তাদের মানসকিতাকেই পাল্টে ফেলেছে।ঔপনিবেশিক শিা আফ্রিকানদের চিন্তা-চেতনার জগতকে কলুষিত করার চাইতেও বেশি যে-তি করেছে সেটা হলো অস্বাভাবিক জটিলতা-আক্রান্ত করে তাদেরকে অ-আফ্রিকান করে ফেলেছে এবং নিজস্ব পারিপাশ্বর্িকতা থেকে আরো আরো বিচ্ছিন্ন করেছে। নিজের সমাজজীবন এবং উন্নয়নের পথে যে-দিকনির্দেশনার প্রয়োজন, আফ্রিকান বুদ্ধিজীবিদের সে শক্তি পুরোপুরি কেড়ে নিয়েছে ঔপনিবেশিক শিা। উদাহরণস্বরূপ দাম্বুজো ম্যারেশেরার হাউজ অব হাঙ্গারর কথক সাংস্কৃতিকভাবে বিচ্ছিন্ন কেননা সে পশ্চিমা শিায় শিতি। মিশন টু কালার মেদজার রোল মডেল আমেরিকা। নিজের সমাজোপযোগি কোনো সিদ্ধান্ত সে নিতে পারে না, এমনকি আফ্রিকার সমাজসংশ্লিষ্ট কোনো নতুন দৃষ্টিভঙ্গিও তার নেই: 'তো আমার ধারনা আরো বেশি বোধগম্য করার উদ্দেশ্যে উদাহরণ দিয়ে ওদের সামনে তুলে ধরবো বলে সিদ্ধান্ত নিলাম। আশ্চর্য যে, আমি ওইসব সাধারণ মানুষকে নিউইয়র্ক সম্পর্কে বলতে লাগলাম... নিউইয়র্ক সম্পর্কে বলাটা একটা ছেলেমানুষি ছাড়া আর কিছুই না, কেননা যে ওটা সম্পর্কে আমার যতটা জ্ঞান তা ওই সিনেমা দেখেই।'(বেটি: 1964: 65)ঔপনিবেশিক শিা মেদজাকে যা যা শিখিয়েছে সবই আফ্রিকার সমাজ বহির্ভূত। চার্লস মঙ্গোশির ওয়েটিং ফর দ্য রেইনএ লুসিফারও ঔপনিবেশিক শিার ফলে নিজের সমাজ থেকে বিচ্ছিন্নতা অনুভব করে। পি'বিটেক একটা চিত্রকল্প এঁকেছেন_ যেখানে ঔপনিবেশিক শিা আফ্রিকান অভিজাতদের খোজা করে দিয়েছে: 'আমার স্বামীর ঘর অন্ধকার বইয়ের জঙ্গল.../ তাদের পুরুষত্ব শ্রেণীকইে নিঃশেষিত, বড় বড় বই ওদের অণ্ডকোষ পিষে ফেলেছে।'(পি'বিটেক: 1985: 117)গুগি ল্য করেছেন ঔপনিবেশিক শিাব্যবস্থা এবং আফ্রিকার বাস্তবতার মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণেই জনগণ বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। আর সে কারণেই নিগ্রো কবিরা সবসময়েই বিচ্ছিন্নতাবিরোধী থেকেছেন আফ্রিকার পরিচয়, আফ্রিকান মূল্যবোধ এবং আফ্রিকার শেকড়সংশ্লিষ্ট থেকে। পাগলের মতো খুঁজেছেন তাঁদের হারানো পরিচয়, হারানো আফ্রিকান ঐতিহ্য। লিয়ন দুমাস লেখেন_ '(শাদারা) আমার জায়গাটুকু চুরি করেছিলো।' চিকায়া উ'তামসি বর্ণনা করেছেন_ '(শাদারা কালোদেরকে ফেলে গেছে) অন্ধকার কোনো এক কোণে... চলে গেছে সেই দেবী একদা যে নেচেছিলো গেয়েছিলো বনে... মহান পশ্চিম টাকা দিয়ে বেঁধেছে আমায়... আমার যেসব ছিলো হারিয়েছে সব চিরতরে।'ধর্মের ব্যবহার উপনিবেশবাদের ধর্ম। আফ্রিকাতে হয়েছে খ্রিস্টানধর্মের ব্যবহার । রডনি খ্রিস্টানধর্ম, ঔপনিবেশিক শিাপদ্ধতি এবং প্রশাসনিক পদ্ধতির আন্তঃসম্পর্ক নিয়েও বিশ্লেষণ করেছেন। হোমকামিং এ গুগি বলছেন_ 'গ্রহণযোগ্যতা অর্জন এবং চিরস্থায়ী করবার জন্য ঔপনিবেশিকরা খ্রিস্টানধর্মের সেবা দিয়েছে আর শিাকে করেছে খ্রিস্টানধর্ম ভিত্তিক... মন এবং আত্মা দুটোকেই গ্রাস করার জন্য... (1982)।' আসিবির থিংস ফল অ্যাপার্টএ নতুন ধর্মান্তরিত খ্রিস্টানরা তাদের চিরাচরিত জীবনযাপন পদ্ধতি পাল্টে ঔপনিবেশিকতাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো। ওয়োনোর দ্য ওল্ডম্যান এণ্ড দ্য মেডেলএ মেকা তার সমস্ত সম্পত্তি পাদরিকে দান করে: 'আর এখন সে থাকে খ্রিস্টান গোরস্তানের পাদদেশে অবস্থিত একটা হতদরিদ্র গ্রাম্যকুটিরে যার নামও দেয়া হয়েছে মিশনারিরই নামে।'(ওয়োনো: 1967: 9)হাউজবয়এ ঔপনিবেশিক গির্জাপ্রধান ফাদার গিলবার্ট এর প েগিয়ে নিজের জন্মদাতাকেই অস্বীকার করে টুণ্ডি। বেটির পুওর ক্রাইস্ট অব বোমবা এণ্ড কিং ল্যাজারাসএ ফাদার ড্রুমণ্ট এবং ফাদার লি গুয়েন খ্রিস্টানধর্মকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে স্থানীয় জনগণের ওপর পুরো কর্তৃত্ব নিয়ে নেয়, আর এভাবে শোষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। আই'ল ম্যারি হোয়েন আই ওয়াণ্ট এ গিকামবা বলেন: 'স্রষ্টা আর ধর্ম এক জিনিস নয়।/ 1895এ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা যখন এখানে আসে/ সব গির্জার সব পাদরির/ বাম হাতে ছিলো বাইবেল/ আর ডান হাতে রাইফেল/ শাদারা চেয়েছে/ মাতাল করতে ধর্ম দিয়ে/ আর তেনারা এইসময়ে/ নকশা এবং দখল করছে আমার জমি/ কারখানা আর ব্যবসা ফাঁদছে আমার ঘামে।' (গুগি: 1982: 56-7)আধিপত্যবাদ যে-সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালিয়েছে সেবিষয়ে আলোচনা করেছেন ক্যাবরাল। তাঁর মতে আদর্শ এবং মতবাদের পর্যায়ে আর্থনীতিক এবং রাজনীতিক কার্যাবলীর চূড়ান্ত ফলাফলই হচ্ছে সংস্কৃতি। একটা সমাজের উৎপাদনীশক্তির পর্যায় এবং এই-উৎপাদনের ওপর আধিপত্যবিস্তারি ধর্মই হচ্ছে সংস্কৃতির ভিত্তি।ফলে সমাজে বিদ্যমান সম্পর্কগুলোর একদিকে মানুষ (ব্যষ্টিক এবং সামষ্টিক) ও প্রকৃতির সম্পর্ক, অন্যদিকে ব্যক্তিগত দলগত এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে সম্পর্ক, গতিশীল প্রকাশ এবং বিভিন্ন রাজনীতিক ও আর্থনীতিক কর্মকাণ্ডের সজাগ সচেতনতার ফলই সংস্কৃতি (ক্যাবরাল: 1980: 141)। সংস্কৃতি কেবল তখনই গতিশীল হবে যখন সামাজিক উন্নয়নের প্রক্রিয়াটি নিরবচ্ছিন্ন থাকবে এবং ভিনদেশী আধিপত্যের বিরুদ্ধে একটা শক্ত স্থায়ী দেয়াল দাঁড় করানো যাবে।ঔপনিবেশিক শক্তি আঘাত করেছে স্বদেশি সংস্কৃতির একেবারে মূলে। এবং আফ্রিকার সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ও এর বহিঃপ্রকাশের পথ পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। ওয়োনোর হাউজবয়এ টুণ্ডি (যে ফাদারের প েকথা বলতে গিয়ে নিজের জন্মদাতাকে অস্বীকার করেছিলো) প্রশ্ন করছে_ 'আমাদের (কালোদের)কে ফরাসি ডাকলেই কী!' এপ্রশ্ন সে করে যখন সে বুঝতে পারে তার এই 'ফরাসি পরিচিতি' তাকে প্রকারান্তরে ঔপনিবেশিক সংস্কৃতি ও শোষকের পরিচয়ে পরিচিত করায়।'উপনিবেশবাদ যেমন করে শোষিতের ইতিহাসকে উপো করার মাধ্যমে তাদের সংস্কৃতির পথকে রুদ্ধ করে দেয় তেমনই স্বাধীনতাযুদ্ধও শোষকের সংস্কৃতিকে অস্বীকার করার মাধ্যমে আসলে শোষকের মতার বিরুদ্ধে এক মহাহুঙ্কার'_ক্যাবরাল। অতএব সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রথম ধাপ হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী সংস্কৃতি পরিহার করে নিজের সংস্কৃতি অন্বেষণ। আফ্রিকার সংস্কৃতির বিদেশি রূপান্তরে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে পুঁজিবাদি অর্থনীতির প্রবেশ, বুজের্ায়া ধর্ম এবং ইওরোপিয়ান শিাপ
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০০৭ দুপুর ১:১৩
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×