somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্রুসেডের কারণ গুলো

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ক্রুসেড শব্দটি দ্বারা মূলত কিন্ত ধর্মীয় যুদ্ধ বোঝানো হয়েছে । তবে এটা যদি কোন রাজনৈতিক দল বা ধর্মীয় উদ্দেশ্যের ব্যাপারে জনগণ শক্ত কোন ধারণা পোষণ করে তাঁহলে তাকেও ক্রুসেড নাম দেয়া হয় । সাধারণত দেখাগেছে বিশ্ব ইতিহাসে ক্রুসেড বলতে পবিত্র ভূমি অর্থাৎ জেরুজালেম ও কন্সটান্টিনোপল এর অধিকার নেওয়ার জন্য ইউরোপের খ্রিস্টানদের সম্মিলিত শক্তি মুসলমানদের বিরুদ্ধে ১০৯৫সাল থেকে১২৯১ সাল পর্যন্ত বেশ কয়েকবার বিভিন্ন ধরনের যে যুদ্ধ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে সেগুলোকেও ক্রুসেড বোঝানো হয়েছে । আসলে পূর্বাঞ্চলীয় অর্থডক্স বাইজেন্টাইন সম্রাট এই যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন আনাতোলিয়াতে মুসলমান সেলজুক সম্রাজ্যের বিস্তার রোধ করার জন্য । প্রথমে ক্রুসেড বলতে মুসলমানদের কাছ থেকে জেরুসালেম শহর ফিরিয়ে নেওয়ার ইউরোপীয় প্রচেষ্টাকে বোঝানো হত । এর পর থেকে খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে ইউরোপীয়দের যেকোন সময় সামরিক প্রচেষ্টাকে ক্রুসেড বলা শুরু হয় । ক্রুসেডারেরা মধ্যপ্রাচ্যে সামন্তবাদী রাজ্য স্থাপনে সমর্থ হয়েছিলেন । তাই ক্রুসেডগুলিকে ইউরোপীয় সম্প্রসারণবাদ এবং উপনিবেশবাদের একটি আদি রূপ হিসেবেও কল্পনা করা যায় । এগুলিতেই প্রথমবারের মত ইউরোপীয় খ্রিস্টানেরা দেশ থেকে বহুদূরে সামরিক অভিযানে বের হয় এবং বহু সংখ্যায় তাদের সংস্কৃতি এবং ধর্ম বিদেশে নিয়ে যাবার চেষ্টা চালায় ।

ক্রুসেডগুলি ছিল যুদ্ধভিত্তিক খ্রিস্টধর্ম ও খ্রিস্টান ইউরোপের সম্প্রসারণের বহিঃপ্রকাশ । এগুলিতে ধর্মীয় চেতনার সাথে ধর্মনিরপেক্ষ সামরিক চিন্তাধারার মিলন ঘটে থাকে । এগুলির ফলে খ্রিস্টানেরা অন্য সংস্কৃতিতে বাস করা শেখে এবং একই সাথে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির মাধ্যমে এগুলিকে প্রভাবিত করেন । এগুলি আজও ইউরোপে মধ্যযুগের সবচেয়ে বিখ্যাত ঘটনা হিসেবে দেখা যায় ।

ক্লেরমন্তে পোপ ২য় উর্বানের ভাষণে ক্রুসেডের বীজ রোপন করা হয়েছিল । সেলজুক তুর্কিদের বিরুদ্ধে বাইজেন্টীয় সম্রাট আলেক্সিস সাহায্য চেয়ে পাঠান এবং তখন ফিলিস্তিনে খ্রিস্টান তীর্থযাত্রীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয় । পোপ উর্বান তার ভাষণে সম্রাট শার্লমাঞ কীভাবে স্যাক্সনদেরকে বলপ্রয়োগে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণে বাধ্য করেছিলেন এবং স্পেনের মুসলিম শাসকদের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন তার কথা স্মরণ করিয়ে দেয় ।


শার্লমাঞ ছিলেন ফ্রাংক জাতির একজন রাজা । ৮১৪ সালে তার মৃত্যুর পর তার সাম্রাজ্যের পতন ঘটে এবং খ্রিস্টান ইউরোপ আক্রমণের সম্মুখীন হয় । এশিয়া থেকে মজর নামের যাযাবর জাতিরা এসে পূর্ব এবং মধ্য ইউরোপের লুটতরাজ আরম্ভ করেন এবং ১০ম শতক পর্যন্ত তাই অব্যাহত রাখেন । ৮০০ সাল থেকে উত্তর ইউরোপে ভাইকিংয়েরা দস্যুগিরি শুরু করেন । তারা ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলেও নানা ধরনে হানা দেন । কিন্তু ইউরোপীয় খ্রিস্টানদের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে দাড়ায় ইসলামের প্রসার । ইসলামের সামরিক শক্তি এবং ৮ম শতকের মধ্যেই ভূমধ্যসাগরের পূর্ব তীর ও উত্তর আফ্রিকা এবং স্পেনের অধিকাংশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েনেন । তারা ইতালিতে সামরিক ঘাটি স্থাপন করে, গ্রিকদের চিরায়ত সংস্কৃতির ধারক বাইজেন্টীয় সাম্রাজ্যের ক্ষমতা শেষ করে এবং সাম্রাজ্যের রাজধানী কন্সতান্তিনোপল অবরোধ করেন । ভাইকিং অথবা মজর জাতির তুলনায় ইসলামের হুমকি ছিল দুই ধরনের এটি ছিল সংস্কৃতি ও ধর্ম উভয়ের যুদ্ধ ।

১১শ শতকে শক্তির ভারসাম্য পশ্চিমের দিকে হেলতে শুরু করে ।আর খ্রিস্টানদের গির্জা কেন্দ্রীভূত হয় । এবং রাজারা সরকারব্যবস্থায় বিশপদের নিয়োগ দেওয়া শুরু করেন । বহু বছরের মধ্যে প্রথমবারের মত পোপেরা ইউরোপের জনমতকে নিজেদের পেছনে একতাবদ্ধ করতে সক্ষম হন । ফলে তাদের পক্ষ্যে ক্রুসেড আরম্ভ করা খুব সহজ হয়ে ওঠে । এসময় ইউরোপের জনসংখ্যা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছিল । আর এখানকার নগর জীবনে এসেছিল এক নতুন জোয়ার । স্থানীয় এবং দূরবর্তী বাণিজ্য রমরমা ভাব ধারণ করছিল । ইউরোপের মনুষ্য এবং অর্থনৈতিক সম্পদ ক্রুসেডের ব্যয়ভার বহনের উপযোগী হয়ে ওঠে । পূর্বে ইউরোপীয় বণিকেরা ভূমধ্যসাগর অঞ্চলের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতো । তারপর তারাই দ্রব্য পরিবহন এবং লাভের উপর অধিকতর নিয়ন্ত্রণ বিস্তারের ব্যাপারে উচ্চাভিলাষী হয়ে ওঠেন । এই পার্থিব অভিলাষ এবং পবিত্র ভূমি সম্পর্কে ধর্মীয় অনুভূতির মিশেল এবং পোপের নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষমতাই একটি সময় এসব ক্রুসেডের জন্য পশ্চিম ইউরোপীয় খ্রিস্টানদের প্রস্তুত করে তোলেন ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ২:০৯
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্টে যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×