somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুরআনে বর্ণিত হযরত যুল-কিফল (আঃ) এর জীবনে ঘটে যাওয়া ছোট একটি ঘটনা

২৬ শে জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পবিত্র কুরআনে কেবল মাত্র সূরা আম্বিয়া ৮৫-৮৬ ও ছোয়াদ ৪৮ আয়াতে যুল-কিফল (আঃ)এর নাম এসেছে। তিনি আল-ইয়াসা (আঃ)এর পরে নবী হন এবং ফিলিস্তীন অঞ্চলে বনু ইস্রাঈলগণের মধ্যে তাওহীদের দাওয়াত দেন।
আল্লাহ বলেন,
وَإِسْمَاعِيْلَ وَإِدْرِيْسَ وَذَا الْكِفْلِ كُلٌّ مِّنَ الصَّابِرِيْنَ- وَأَدْخَلْنَاهُمْ فِيْ رَحْمَتِنَا إِنَّهُمْ مِنَ الصَّالِحِيْنَ- (الأنبياء ৮৫-৮৬)-
‘আর তুমি স্মরণ কর ইসমাঈল, ইদরীস ও যুল-কিফলের কথা। তারা প্রত্যেকেই ছিল ছবরকারী’। ‘আমরা তাদেরকে আমাদের রহমতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করেছিলাম। তারা ছিল সৎকর্মশীলগণের অন্তর্ভুক্ত’ (সূরা আম্বিয়া )। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, وَاذْكُرْ إِسْمَاعِيلَ وَالْيَسَعَ وَذَا الْكِفْلِ وَكُلٌّ مِّنَ الْأَخْيَارِ- (ص ৪৮)- ‘আর তুমি বর্ণনা কর ইসমাঈল, আল-ইয়াসা‘ ও যুল-কিফলের কথা। তারা সকলেই ছিল শ্রেষ্ঠগণের অন্তর্ভুক্ত’ (সূরা ছোয়াদ)।
ইবনু কাছীর বলেন শ্রেষ্ঠ নবীগণের সাথে একত্রে বর্ণিত হওয়ায় প্রতীয়মান হয় যে যুল-কিফল(আঃ) একজন গুরুত্বপূর্ণ নবী ছিলেন। হযরত সুলায়মান (আঃ)পরবর্তী নবী হিসাবে তিনিও শাম অঞ্চলে প্রেরিত হন বলে ধারণা হয়।
ইবনু জারীর তাবেঈ বিদ্বান মুজাহিদ সূত্রে বর্ণনা করেন যে পূর্বতন নবী হযরত আল-ইয়াসা (আঃ) বার্ধক্যে উপনীত হলে একজনকে তার স্থলাভিষিক্ত নিযুক্ত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।আর এই উদ্ধেশ্যে তিনি তার সকল সাথীকে একত্রিত করে বললেন যার মধ্যে তিনটি গুণ বিদ্যমান থাকবে আমি তাকেই আমার খলীফা নিযুক্ত করব।আর সে গুণ তিনটি হলঃ
১। সর্বদা ছিয়াম পালনকারী
২।আল্লাহর ইবাদতে রাত্রি জাগরণকারী
৩। তিনি কোন অবস্থায় রাগান্বিত হন না।
এই ঘোষণা শোনার পর সমাবেশ স্থল থেকে ঈছ বিন ইসহাক্ব বংশের জনৈক ব্যক্তি উঠে দাঁড়ালেন এবং সে নবীর প্রতিটি প্রশ্নের জওয়াবে হাঁ বললেন। কিন্তু তিনি সম্ভবতঃ তাকে বিশ্বাস করতে পারলেন না। তাই দ্বিতীয় দিন আবার সমাবেশ আহবান করলেন এবং সকলের সম্মুখে পূর্বোক্ত ঘোষণার পুনরাবৃত্তি করলেন। কিন্তু সবাই চুপ রইল কেবল ওই একজন ব্যক্তিই উঠে দাঁড়ালেন। তখন আল ইয়াসা (আঃ) উক্ত ব্যক্তিকেই তার খলীফা নিযুক্ত করলেন যিনি তার জীবদ্দশায় তার নবুঅতী মিশন চালিয়ে নিবেন এবং মৃত্যুর পরেও তা অব্যাহত রাখবেন। বলা বাহুল্য উক্ত ব্যক্তিই হলেন যুল-কিফল(আঃ) পরবর্তীতে আল্লাহ যাকে নবুঅত দানে ধন্য করেন (কুরতুবী, ইবনু কাছীর)।
যুল-কিফলের (আঃ) এর জীবনে পরীক্ষা
যুল কিফল (আঃ) উক্ত মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হয়েছেন দেখে ইবলীস হিংসায় জ্বলে উঠল এবং ইবলীসের মাথায় ঘোরপাক খেতে শুরু করল। ইবলীস তার বাহিনীকে বলল যেকোন মূল্যে তার পদস্খলন ঘটাতেই হবে। কিন্তু ইবলীসের সাঙ্গ পাঙ্গরা বলল আমরা ইতিপূর্বে বহুবার তাকে ধোকা দিতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছি। অতএব আমাদের পক্ষে একাজ সম্ভব নয়। তখন ইবলীস স্বয়ং এ দায়িত্ব নিল।যুল কিফল (আঃ) সারা রাত্রি ছালাতের মধ্যে অতিবাহিত করার কারনে কেবলমাত্র দুপুরে কিছুক্ষণ নিদ্রা যেতেন। ইবলীস তাকে রাগানোর জন্য ঠিক সেই সময়টাকেই বেছে নিল। একদিন সে ঠিক দুপুরে তার নিদ্রার সময় এসে দরজার কড়া নাড়া দিল। কাঁচা ঘুম থেকে উঠে তিনি জিজ্ঞেস করলেন কে ? উত্তর এল আমি একজন বৃদ্ধ মযলূম। তিনি দরজা খুলে দিলে সে ভিতরে এসে বসলো এবং তার উপরে যুলুমের দীর্ঘ বর্ণনা শুরু করল। এভাবে দুপুরে নিদ্রার সময়টা পার করে দিল। যুল কিফল(আঃ)তাকে বললেন আমি যখন বাইরে যাব তখন এসো। আমি তোমার উপরে যুলুমের বিচার করে দেব।

যুল কিফল(আঃ) বাইরে এলেন এবং আদালত কক্ষে বসে লোকটির জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন। কিন্তু সেদিন সে এলো না। পরের দিন সকালেও তিনি তার জন্য অপেক্ষা করলেন কিন্তু সে এলো না। ঠিক দুপুরে যখন তিনি কেবল নিদ্রা গেছেন ঠিক তখনই এসে কড়া নাড়া দিলেন। তিনি উঠে দরজা খুলে দিয়ে তাকে বললেন আমি কি তোমাকে বলিনি যে আদালত কক্ষে মজলিস বসার পর এসো। কিন্তু তুমি কালও আসনি আজও সকালে আসলে না। তখন লোকটি ইনিয়ে বিনিয়ে চোখের পানি ফেলে বিরাট কৈফিয়তের এক দীর্ঘ ফিরিস্তি পেশ করল। সে বলল, হুযুর আমার বিবাদী খুবই ধূর্ত প্রকৃতির লোক। আপনাকে আদালতে বসতে দেখলেই সে আমার প্রাপ্য পরিশোধ করবে বলে কথা দেয়। কিন্তু আপনি চলে গেলেই সে তা প্রত্যাহার করে নেয়। এইসব কথাবার্তার মধ্যে ওই দিন দুপুরের যুল কিফল(আঃ) এরঘুম মাটি হল।

তৃতীয় দিন দুপুরে তিনি ঢুলতে ঢুলতে পরিবারের সবাইকে বললেন আমি ঘুমিয়ে গেলে যেন কেউ দরজার কড়া না নাড়ে। বৃদ্ধ এদিন এলো এবং কড়া নাড়তে চাইল। কিন্তু বাড়ীর লোকেরা তাকে বাধা দিলেন। তখন ইবলীস সবার অলক্ষ্যে জানালা দিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ল এবং দরজায় ধাক্কা-ধাক্কি শুরু করল। এতে যুল কিফল (আঃ) এর ঘুম ভেঙ্গে গেল। তিনি দেখলেন সেই বৃদ্ধ ঘরের মধ্যে অথচ ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। তিনি বুঝতে পারলেন যে এটা শয়তান ছাড়া অন্যকেউ নয়। তখন তিনি বললেন তুমি তাহলে আল্লাহর দুশমন ইবলীস ? সে মাথা নেড়ে বলল হ্যাঁ। আমি আজ আপনার কাছে ব্যর্থ হলাম। আপনাকে রাগানোর জন্যই গত তিনদিন যাবত আপনাকে ঘুমানোর সময় এসে জ্বালাতন করছি। কিন্তু আপনি রাগান্বিত হলেন না। ফলে আপনাকে আমার জালে আটকাতে পারলাম না। ইতিপূর্বে আমার শিষ্যরা বারবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। আজ আমি ব্যর্থ হলাম। আমি চেয়েছিলাম যাতে আল ইয়াসা (আঃ) নবীর সাথে আপনার কৃত ওয়াদা ভঙ্গ হয়। আর সে উদ্দেশ্যেই আমি এতসব কান্ড ঘটিয়েছি। কিন্তু অবশেষে আপনিই বিজয়ী হলেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৯
১৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×