১৯৮২ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন স্বৈরশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সরকার একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেন যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮৩ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি তারিখে উক্ত শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ এবং বাংলাদেশ সচিবালয়ে স্বারকলিপি প্রদান করার কর্মসূচী গ্রহণ করেন। প্রতিবাদ সমাবেশে পুলিশ গুলি চালায় এবং বেশ কিছু হতাহতের ঘটনা ঘটে। তখন থেকে দিনটিকে স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন করা শুরু হয় ।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তৎকালীন প্রধান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ১৯৮২ সালের ২৪শে মার্চ রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেন এবং বাংলাদেশের সংবিধান রহিত করে সাত্তারের জাতীয় সংসদ ও মন্ত্রীসভা বাতিল ঘোষণা করেন।একইসাথে তিনি নিজেকে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ঘোষণা করে সামরিক আইনে জারিকৃত সব বিধিবিধান এবং আদেশকে দেশের সর্বোচ্চ আইন হিসেবে ঘোষণা করেন।একই বছর এরশাদের শিক্ষামন্ত্রী ড: মজিদ খান একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেন যা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয় এবং তারা ১৭ই সেপ্টেম্বর থেকে এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ এবং আন্দোলন শুরু করেন।শিক্ষার্থীদের তিনটি দাবি ছিল,মজিদ খানের গণবিরোধী শিক্ষানীতি বাতিল,সব ছাত্র ও রাজবন্দির নিঃশর্ত মুক্তিদান,সামরিক শাসন প্রত্যাহার করে গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মিলিত হন এবং বাংলাদেশ সচিবালয় অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। মিছিলে পুলিশ টিয়ার গ্যাস, জলকামান এবং গুলি বর্ষণ করে আর তার ফলে বেশ কিছু শিক্ষার্থী নিহত হন এবং অসংখ্য শিক্ষার্থী আহত এবং গ্রেফতারের শিকার হন। আন্দোলনের মুখে পরবর্তীতে শিক্ষানীতিটি স্থগিত করা হয়।
শিক্ষার্থীদের মিছিলে পুলিশের হামলা। ছবি: পত্রিকা থেকে সংগৃহীত
গণগ্রেফতারে নির্মম নির্যাতনের শিকার হন সে সময় প্রায় দেড় হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী। সে ঘটনা পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বৈরাচারী এরশাদের পতন অনিবার্য করে তোলেন। শুরুর দিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হলেও জাতীয় ইতিহাসের গুরুত্ববহ এই দিনটি সময়ের বিবর্তনে এখন সবাই প্রায় ভুলে যেতে বসেছে।গণ-আন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালে এরশাদের স্বৈরাচারী যুগের অবসান হলেও এর বীজ বপন হয়েছিলো তারও ৭ বছর আগে। সামরিক সরকারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে ১৯৮৩ সালের ১৪-ই ফেব্রুয়ারি রাজপথে নামেন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের উদ্ধেগে।
কিছু বুঝে ওঠার আগেই টিয়ারশেল, জলকামান আর লাঠিপেটার পাশাপাশি মুর্হূমুহূ চলতে থাকে গুলি। তবে এই ঘটনায় একাধিক নিহতের খবর পাওয়া গেলেও ছাত্রনেতা জয়নাল ছাড়া আর কারো লাশের হদিস পাওয়া যায়নি।দিনটিকে স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস ঘোষণা করেন পরের বছর থেকেই বিশেষ গুরুত্বের সাথে পালন শুরু করে দেশের রাজনৈতিক সব দল।
তথসূত্রঃ ইন্টারনেট।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:১৩