বিতর্ক চর্চা এখন স্কুল-কলেজের শ্রেণীকক্ষেই সীমাবদ্ধ না থেকে ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে এমনকি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও। আর তাই বিজ্ঞ বিতার্কিকরাও এখন মিডিয়া আইকনে পরিণত হয়েছেন। অথচ বিতর্ক চর্চার সার্বিক প্রসার ও সমৃদ্ধির জন্যে আমাদের দেশে সরকারিভাবে কোনো উদ্যোগ বা আয়োজনের কোনো চিহ্ন নেই। শিল্প-সাহিত্যের অন্যান্য ক্ষেত্রে সরকারি কোষাগার থেকে যেভাবে টাকা খরচ করা হয় সেভাবে বিতর্কের মত শক্তিশালী শিল্পের প্রসারেও বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা সমীচীন বলে আমরা মনে করি। বিতর্ক চর্চা শিক্ষার্থীদের মেধার চর্চা ও প্রসারে কতটা প্রয়োজনীয় তা আজ বিজ্ঞান সম্মতভাবেই প্রমাণিত। যোগাযোগের এই উৎকর্ষ সময়ে টিকে থাকার জন্য প্রতিটি ব্যক্তি মানুষের যোগাযোগ দক্ষতার প্রসার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ- যা বিতর্ক চর্চার মাধ্যমে খুব সহজেই অর্জন করা সম্ভব। হালে বিতর্ক চর্চা রাজধানী থেকে শুরু করে বিভাগীয়- জেলা শহর ছাপিয়ে উপজেলা পর্যায়ে এমনকি ইউনিয়ন এবং তৃণমূল পর্যায়ের স্কুল-কলেজগুলোতেও নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এভাবেই বিতর্ক চর্চা বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব আর যুক্তিশীল সমাজ তৈরিতে ইতিবাচক ভূমিকা রেখে চলেছে।
আমাদের প্রত্যাশা-বিতর্ক চর্চাকে উৎসাহিত এবং প্রসারিত করতে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে অচিরেই রাজধানীতে একটি জাতীয় বিতর্কশালা বা একাডেমী নির্মাণ কর হোক। যে একাডেমী থেকে পর্যায়ক্রমে সমস্ত জেলা শহরে তথা সারাদেশে বিতর্ক একাডেমী নির্মাণ সম্ভব হবে এবং সার্বিক বিতর্ক চর্চা সত্যিকার অর্থেই একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে যা যুক্তিবাদী ও আলোকিত সমাজ নির্মাণে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। ফলে বিতর্ক চর্চা প্রসারের মাধ্যমে চিন্তাশীল, সহিষ্ণু, গণতন্ত্রমনা নাগরিক তৈরির জোয়ার শুরু হবে।
‘জাতীয় নির্বাচনের আগে নির্বাচনী বিতর্ক’- তেমনি আরো একটি প্রত্যাশা। অনেক বছর আগে থেকেই সর্বত্র আমরা এ দাবি তুলে আসছি। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে নির্বাচনী বিতর্ক নেতৃত্ব বাছাইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। উন্নত দেশগুলো তাদের জাতীয় নেতৃত্বকে বেছে নিচ্ছে নির্বাচনী বিতর্কের মাধ্যমে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বারাক ওবামা এবং হিলারী ক্লিনটনের নির্বাচনী বিতর্ক তাদের যোগ্যতাকে জনসমক্ষে তুলে ধরেছে। সামনে আরো অপেক্ষা করছে জন মেককেইন এবং বারাক ওবামার নির্বাচনী বাকযুদ্ধ। বাংলাদেশেও এরকম নির্বাচনী বিতর্কের মাধ্যমে প্রার্থীরা তাদের যোগ্যতা এবং কর্মপরিকল্পনা জনগণের সামনে তুলে ধরবে- এটি আমাদের অনেক দিনের দাবী। প্রসঙ্গেত উল্লেখ্য, ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি প্রতি বছর নির্বাচনী বিতর্কের মাধ্যমে তাদের পরবর্তী কমিটি নির্বাচন করে থাকে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সহশিক্ষামূলক কার্যক্রম যেমন-বিএনসিসি, রোভার স্কাউট প্রভৃতির মত আলাদা করে বিতর্ক বিষয় চালু এবং এ বিষয়ে নম্বর প্রদান পদ্ধতিও প্রবর্তন করা প্রয়োজন। সে কারণেই বিভিন্ন শ্রেণীতে এক্সট্রা ক্যারিকুলার হিসেবে বিতর্ক বিষয়ের উপর কোর্সও চালু করা যেতে পারে। বলার অবকাশ রাখে না যে, বর্তমান দেশকে সারাদেশে বিতর্ক চর্চা এবং আন্দোলন এক নতুন মাত্রা পেয়েছে।
হালে ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘বিতর্ক’ বিষয়ক শিক্ষকও নিয়োগ প্রদান শুরু হয়েছে এবং আমরা আশাবাদী অদূর ভবিষ্যতে সারাদেশের সবধরনের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একজন করে ‘বিতর্ক’ বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা থাকবে। উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তির ক্ষেত্রে যেমন-খেলাধুলা, সংগীত বিষয়ে আলাদা দক্ষতা থাকায় বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হয় তেমনি মেধাবী বিতার্কিকদের জন্যেও এরকম সুবিধার নিশ্চয়তা থাকবে। চিন্তার মুক্তি আর যুক্তিবাদী সমাজইতো কেবল আমাদের কাম্য।