আমার এই কবিতাটা পাঁচ বছরের পুরানো কবিতা, সেবার যখন প্যালেস্টানে এভাবে গণহত্যাযজ্ঞ শুরু হয়েছিল তখন আমি খুব মন খারাপ নিয়ে লেখেছিলাম। আজ সেই পুরানো কবিতাটা খুব মন খারাপ নিয়ে পড়ছিলাম।
শরতের আকাশ কিঞ্চিত বাদামী ,
প্রায়শই আজকাল নীল থাকে না ।
তুলতুলে মেঘে আমি সাদা ভাগটুকু পাই না
ওখানেও কালো কালো ছোঁপ একটু ময়লাটে ;
গতকাল কিন্তু এরকম ছিল না ।
স্পষ্ট দেখে এসেছিলাম সবুজ মাঠে একলা প্রজাপতি ,
ছোট ছোট পোষা কুকুরগুলো হাঁটছিলো পায়ে পায়ে ,
খেলার মাঠ জুড়ে অসংখ্য ক্ষুদে খেলুড়ে
কারো পায়ে ফুটবল ,
কারো বুকে আঁগলে থাকে ঘুড়ি ,
একটু লম্বা লম্বা পা ফেলে দ্রুত হেঁটে যায় বয়স্ক দেহ ,
কোণায় কোণায় কংক্রিটের বেঞ্চে এসে বসে অনাগত শিশুর মা ,
নির্মল হাওয়ার খোঁজে একটু জিরায় ক্লান্ত পথচারী ,
সবারই ভিতর আরেকটু বেশী ভালো থাকার আকাঙ্খা ।
আলো মিইয়ে গিয়ে যখন সন্ধ্যা নামে ,
কুয়াশার সাথে তখন ভাব করে ঝি ঝি পোকার দল,
এগুলো কিন্তু অতীত গত দু’দিনের কথা ।
বর্তমান আজ সেই জায়গাগুলোতে গণকবর ;
যে ছেলেটা ঘুড়ি নিয়ে বসে থাকত
ও ঘুড়ি হাতে নিয়ে মাটির নিচে চাপা পড়েছিল
একটা বোমারু বিমানকে বন্ধু ভেবে টক্কর দিতে ঘুড়ি উড়িয়েছিল ।
অনাগত শিশুর মা এখন মুমূর্ষ,
অনাগত শিশুটাকে বাাঁচানো যায় নি, মাকে বাঁচানোর শেষ প্রচেষ্টা।
গুটি ক’টা ডাক্তারের অসহায় মুখমন্ডল,
হাসপাতালগুলোতে সম্মুখে লাশের মিছিল ,
কেউ বাবা, কেউ মা, কেউ বাড়ীর ছোট ছেলে , কেউ মিষ্টি গানের মেয়ে
গতকালে রাতের গুলির তীব্রতা ও বারুদের পোড়া ঝাঁ ঝাঁ গন্ধে
নিস্তবদ্ধ শেষ বিকালের খেলার মাঠ অসংখ্য গর্তের কলোনি , ভাঙ্গা গুঁড়ো স্কুল দালান।
কাল বিকালের কেউ নেই সেই ছেলে, সেই শিশু, সেই মা, সেই বাবা, সেই ক্লান্ত দাদু।
আমরা আজ ওদের কবর খুঁড়ছি নীরবে নিভৃত শক্ত চোখের জলে।
অয়ন আহমেদ
২১.০১.০৯
প্যালেস্টাইন জাতির উপর অত্যাচারের নিরব প্রতিবাদ