somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রায়শ্চিত্ত

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিকাল ৫ টা
সারাদিন চমৎকার একটা ঘুম দিলাম।অপারেশনের আগে আমি এমন টাইপ ঘুম দেই,শরীর মন সতেজ হয়ে ওঠে,ব্রেন টা ভালো কাজ করতে থাকে।আজকের দিনটা কেমন ছিল বলতে পারবো না।সূর্যটা কি ঠিকমতো আলো দিয়েছিল?কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে।হাই দিয়ে বিছানায় উঠে বসলাম।জানালা দিয়ে বাতাস আসছে।রেডি হতে হবে।

বিকাল ৬ টা
কিছুক্ষন পড়ন্ত সুর্যটা দেখলাম।অনেককেই জীবনেরই শেষ সুর্যটা দেখা থেকে বঞ্চিত করেছি। সুর্যটা কি লাল,ঠিক তাঁদের ছটফটানি কমে আসলে চুইয়ে চুইয়ে যে গাড়ো লাল রক্ত পড়তে থাকে,ঠিক সেরকম।গায়ে হালকা একটা সুয়েটার,পায়ে চপ্পল।সুয়েটারটা থেকে কেমন যেন বাবার গন্ধ ।

সন্ধ্যা ৭ টা
ভালোই কুয়াশা পড়েছে।আমার জন্য ভালোই,যত কম চোখ দেখবে ততই মঙ্গল।রহিম মিয়ার দোকান থেকে ১ কাপ চা খেলাম।আহ তৃপ্তি।জীবনে কিছু কিছু জিনিস আমি মিস করবো।এই চায়ের মজাটা কিসের সাথে তুলনা করা যায়?মৃত্যু নিশ্চিত জেনে যখন আমার শিকারেরা কাকুতি মিনতি শুরু করে,তাদের চোখে আমি মৃত্যুভয় দেখি,সেই সময়টা,সেই তৃষ্ণাটুকু আমি উপভোগ করেছি গরম চায়ের একটি চুমুকের মত।

রাত ৯ টা
বুঝে গেছেন নিশ্চই আমি কে।বাংলায় খুনী,ইংরেজীতে কিলার,যাই হোক।আজ আমার বিশেষ একটা অপারেশন আছে।আমার ভাষায় এটা রোগমুক্তি বলা যেতে পারে।বৃত্তান্ত একটু পরেই বুঝতে পারবেন।একটা ভালো খাওয়ার হোটেল খুঁজছি।ধোয়া ওঠা গরম ভাত,ভুনা গরুর গোশত,সাথে এক টুকরো পেয়াজ,লঙ্কা।সারাজীবন তো এর জন্য যুধ্ব করে গেলাম।

রাত ১০ টা
চানখারপুলের একটা ভাতের দোকান।আমার সামনে একপ্লেট ভাত।গরুর গোশত।আমি বসে বসে ধোয়া ওঠা দেখছি।দেখতে ভালোই লাগছে।কেমন জানো কান্না চলে আসছে।আশ্চর্য তো,ঠান্ডা মাথার খুনী যার কিনা মৃত্যুভয়ে ভীত কোন মানুষের কান্না দেখে সামান্য একটু মায়া লাগেনি,চোখের একটা পাপঁড়ি কাঁপেনি সে কিনা আজ গরম ধোয়া ওঠা এক প্লেট ভাত দেখে কাঁদছে।উঠে পড়লা।ভাতগুলো অপেক্ষা করুক।মলিন হয়ে যাক,পোকায় খাক,আমি তো সারাজীবনই অপেক্ষা করলাম।আমাকে তো পোকায় খেল,ভাত,হাহ।

রাত ১২ টা
কুয়াশা আর শীত।রাস্তা প্রায় জনশুন্য।কুকুরের মত কুন্ডলী পাকানো কিছু মানুষ দেখছি।চাঁদ নেই,চাঁদ কি জিনিস আবার?আমি অন্ধকারের বাসিন্দা,চাঁদ সুর্য আমার জন্য নিষিধ্ব।ধ্যাত্তের।

রাত ২ টা
চিপা কানাগলিটার ঠিক শেষ মাথায় দাঁড়িয়ে আছি।এখানে আমি হাত লাল করতে আসতাম।আজ আবার করব,হাত,বুক,কলিজা।শেষবার।কি ভাবছেন,এরপর ভালো হয়ে যাব?তা তো যাবোই।এটাই শেষ।

রাত ২,৩০ মিনিট
ওঁরা আসে।ঠিক রাত ৩ টায়।আমাকে ভয় দেখায়,আমাকে নিয়ে যেতে চায়।আমি ভীষন ভয় পাই।তড়াক করে ঘুম থেকে উঠে পড়ি।বালিশের পাশে পানির গ্লাসের বদলে ঠান্ডা পিস্তলটা পাই।আমার মতই তৃষ্ণার্ত।ওঁরা আসে।স্বপ্নে,জাগরনে,এখানে সেখানে।ওফ আমি না পাগল হয়ে যাচ্ছি।ওঁরা আমাকে নিয়ে যাবে।শুধু বুকের বা পাশটায় হাত দেয়।কালচে হয়ে আছে,গুলি করার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা আমার।ওঁরা বুক চেপে ধরে।আমি ব্যাথায় অজ্ঞান হয়ে যাই।আর পারা সম্ভব হচ্ছে না।ওরা দল বেধে আসে।নতুন নতুন মুখ,আমিই যাদের ওঁদের দলে ভীড়িয়েছি।ইচ্ছে হয় ওঁদের সব কয়টাকে গুলি করে উড়িয়ে দেই,আমি গুলি চালাই।গুলি ফাকা দেয়ালে বিধ্ব হয়।মৃত মানুষদের যে গুলী ভেদ করতে পারে না।এটাই আমার রোগ।ঘড়ির কাঁটার দিকে চেয়ে আছি।ওঁরা আসবে।আমাকে রোগমুক্তি দিবে।আমিও তারপর ওঁদের একজন হয়ে যাব।

রাত ৩ টা
পিস্তলের নলটা বুকের বা পাশে ঠেকালাম।কি ঠান্ডা,আমি শিউরে উঠি।আঙ্গুল শক্ত হয়ে চেপে বসেছে ট্রিগারে।ওঁরা আসছে,ঐতো,আমাকে ডাকছে,আয় আয়,আমি আশু রোগমুক্তির আনন্দে বিভোর।
রাতের নির্জনতা খান খান করে দিল যে শব্দ,কেউ তা শুনলো না।কুয়াশা কেটে যাচ্ছে,চাঁদটা উকি দিয়ে শুধু আমার অন্তর্ধানের সাক্ষী করে রাখলো নিজেকে।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×