somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুন্য প্রান্তর ৪ (ধারাবাহিক ওয়েস্টার্ন গল্প)

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০০৬ রাত ৯:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শেষ পর্ব

জিনের পেটি বেঁধে আগুন নিভিয়ে ঘোড়ায় চাপল ওরা । হার্ডিনকে সামনে রেখে আবার অন্ধকারে যাত্রা শুরু করল ওরা ।
সবার পেছনে আছে নীল । বাতাস স্যাঁৎসেঁতে আর ঠান্ডা এখানে এই ক্লিফগুলোর নীচে, মনে হয় গুহার মধ্যে রয়েছে ওরা । মাথার ওপরে তারাগুলো উজ্বল হয়ে জ্বলছে । দুশ্চিন্তায় পড়বে মেরি, এতো দেরী করে কখনও বাড়ি ফেরেনা ও । আর ওকে একা ফেলে কোথাও যাওয়াও নীলের ইচ্ছা নয় । মনে মনে ইচ্ছে হল সে বাড়িতে আছে । চমৎকার সাপার খেয়ে শুয়ে পড়েছে সে মেরির নানীর বানানো তালি দেয়া কম্বল গায়ে দিয়ে । গোটা ব্যাপারটাতে যা কিছু উৎসাহ ছিল তার সব হারিয়েছে সে । আগুন, কফি, ক্লান্তি আর তাড়া খাওয়া লোকটার প্রতি ক্রমাম্বয়ে জেগে ওঠা শ্রদ্ধাবোধ তাকে পরিবর্তিত মানুষে পরিনত করেছে ।

এখন ওরা সকলেই জানে চ্যাট লককে ওরা যা ভেবেছিল সেরকম লোক নয় । বিচারবোধ যতই নির্মম হোকনা কেন পশ্চিমের মানুষ অন্যের পরিমাপ নিতে পারে । একজন মানুষ যখন ট্রেইলে সফরে যায়, কাজ করে, বিছানা পাতে অন্যদের সাথে, তখনই অন্যরা তাকে চিনতে পারে । পোসির প্রত্যেক সদস্যই এখন জানে চ্যাট লক সেই ধরনের মানুষ যাদের শ্রদ্ধা করা যায় । চিন্তাটা অস্বস্তিতে ফেলছে ওদের । সন্দেহের বীজ মনের মধ্যে বড় হচ্ছে, যে কাজটা ওরা করতে চলেছে সেটা সম্বন্ধে । ওদের মধ্যে সবচেয়ে গোঁয়ার গোবিন্দ শর্ট আর কেসনিও এর বাইরে নয় ।

তারা জানে পিঠে গুলি করা মানুষ কী ভাবে আচরণ করবে । সে তার স্বভাবের ছাপ রেখে যাবে প্রত্যেকটা কাজে । এলোকের প্রত্যেকটা কাজে প্রমান হচ্ছে সে পুরোপুরি আত্বনির্ভরশীল একজন মানুষ । যে লোক যদি কোনঠাসা হয়ে মরতে হয়, শত্রুর দিকে ফিরে মরবে ।

করাত কলটা অন্ধকার আর নির্জন, বয়ে চলা ঝর্ণার ধারে আর একটা শান্ত পুকুরের পাড়ে বসে আছে । ঘোড়া থেকে নেমে কাছিয়ে এল ওরা করাতকলটার কাছে । তারপর পুর্ব পরিকল্পিতভাবে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে ঘিরে ফেলল বাড়িটাকে । একটা লজপোল পাইনের পেছনে পজিশন নিয়ে হাঁক দিল হার্ডিন ।

'আমরা ভেতরে আসছি লক! তোমাকে চাই আমাদের !'

কর্কশগলায় ছুঁড়ে দেয়া চ্যালেঞ্জটা প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে এল । অবশেষে সে চুড়ান্ত মুহুর্ত সমাগত, পুরনো রোমাঞ্চের কিছুটা ফিরে এসেছে ওদের । পুরনো বাঁধের ওপর দিয়ে দিয়ে গড়িয়ে পড়া পানির আওয়াজ কানে আসছে ওদের । আগে বাড়ছিল ওরা এমন সময় লকের গলা কানে এল ওদের ।

'ভেতরে এসোনা ! তোমাদের কাউকে খুন করার কোন প্রবৃত্তি আমার নেই । কিন্তু তোমরা যদি জোর করে ভেতরে ঢোকো, তাই করতে হবে আমাকে বাধ্য হবে আমাকে । এবং সেটা হবে নায্য গুলিবর্ষণ ।'

গোঁফ কামড়ে ইতস্তত করল হার্ডিন । 'কিন্তু তুমি জনিকে পিঠে গুলি করে মেরেছো !' চিৎকার করে জানাল সে ।

'ওরকম কিছুই করিনি আমি ! আমি যখন ঢুকি তখন ও বারের দিকে মুখ করে বসেছিল । যখন দেখে পিস্তল নিয়ে এসেছি আমি, দেখেই ও পাশ ফিরতে ফিরতে ড্র করার চেষ্টা করে । আমি ওকে হারিয়ে দিয়ে আগে গুলি করি । প্রথম গুলিটা ওর পাশে লেগে ও বারের ওপর পড়ে যায়, দ্বিতীয় গুলিটা ওর পিঠে লাগে আর শেষটা মিস হয় । তোমরা আসলে কেউই ব্যাপারটা বুঝতে পারনি ।'

লকের গলা মিলিয়ে গেল । এখন আবার পাথরের ওপর ঝর্ণার পানি গড়িয়ে যাবার কুলুকুলু শব্দ পাওয়া যাচ্ছে । লকের যুক্তি অকাট্য মনে হল ওদের কাছে । ঘটনাটা এভাবে ঘটলেও ঘটতে পারে !

লম্বা একটা বিরতি, তারপর হার্ডিন বলল, 'বেরিয়ে এস, আমরা এর নায্য বিচার করব !'

'কীভাবে?' লকের চ্যালেঞ্জ । 'তোমাদের কোন সাক্ষী নেই, আমারও নেই । বলবার কেউ নেই ঘটনাটা কীভাবে ঘটেছিল আর জনিও জীবিত নেই ।'

'খুব ভাল মানুষ ছিল জনি, আর ও আমাদের বন্ধু ছিল !' চেঁচাল শর্ট । 'কোন খুনী নবাগত স্কোয়াটার এসে ওকে আমাদের এলাকায় মেরে যাবে তা হবেনা !'

একথার কোন উত্তর এলনা । ওরা বেশ কিছুক্ষন অপেক্ষা করল । হতাশভাবে গাছের গায়ে হেলান দিল নীল । হতে পারে লক সত্য কথা বলছে ? সম্পুর্ণ নিঃসন্দেহ না হয়ে কীভাবে একটা লোককে ফাঁসিতে ঝোলাবে ওরা ?

'ফালতু প্যাঁচাল !' শর্টের সংক্ষিপ্ত বিস্ফোরক মন্তব্য । 'আগে বাড়ো হার্ডিন । আমরা জানি ও মিথ্যা কথা বলছে । পিস্তলে ভীষন চালু হাতর ছিল জনির ।'

'ওয়েব লোকটাকেও তার নিজের এলাকার মানুষ ভাল লোক বলেই চিনত !' জবাবে লকের চিৎকার ভেসে এল । কয়েকমুহুর্তের জন্য ধমকে গেল ওরা । তারপরে একসাথে এগোতে শুরু করল । ভেতরটা ফাঁপা আর অসুস্থ লাগছে নীলের । সে জানে এ লোক কারো পিঠে গুলি করবার মানুষ নয় ।

সাবধানে এগোচ্ছে ওরা কারন ওরা জানে এ লোকের নিশানা খুবই ভাল হঠাৎ বলে উঠল হার্ডিন । 'সামলে চল ! এত উতলা হবার কিছু নেই ! আমরা দিনের আলোর জন্য অপেক্ষা করব । চোখকান খোলা রাখো যেন না পালায়, তারপর হয়ে আমরা ওকে পাকড়াও করব নয়তো মিলটা পুড়িয়ে দেব !

একটা গাছের গুঁড়ির পেছনে হাঁটু মুড়ে বসে পড়ল নীল । স্বস্তির এক উষ্ণ প্রবাহ অনুভব করল সে সারা শরীরে । কোন খুনখারাবী হচ্ছেনা তাহলে, অন্তত আজ রাতে নয় ।

ধীরগতিতে পেরিয়ে যেতে লাগল ঘন্টাগুলো, আস্তে আস্তে নীলের কান অভ্যস্ত হয়ে উঠল অন্ধকারে । খসখস করে ছুটে গেল একটা খরগোশ । পাইনের একটা মোচা খসে পড়ল গাছ থেকে, পাইন গাছের মগডালে সরসর করে বয়ে চলল রাতের বাতাস আর ডালপালার ফাঁক দিয়ে দেখা যেতে লাগল কয়েকটা নিঃসঙ্গ তারা ।

অবশেষে দিনের আলো ফুটল । পুরনো করাতকলটার দরজা, জানাল ঠেলে ঢুকে পড়ল ওরা । সব ফাঁকা আর খালি! ওদের ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে গেছে লোকটা ! একজন আরেকজনের মুখ চাওয়াচায়ি করল ওরা । প্রাণ খুলে গালাগাল দিল শর্ট, নিস্তব্ধ ঘরে অস্বাভাবিক জোরে প্রতিধ্বনিত হল সে আওয়াজ ।

'চল, সোরেনসন প্লেসে যাই,' পরামর্শ দিল কিমেল । 'ওকে ওখানে পাওয়া যাবে ।'

যে কারনেই হোক অন্যরা খুবই নিশ্চিত যে চ্যাট লক ওদিকেই যাবে । কারন লোকটা ওরকমই । নিজের বাসা ও সম্পত্তি পর্যন্তই পিছু হটবে সে, তার বেশি এক পাও না । ওকে ধরতে হলে, ওর বাসায় আগুন দিয়ে ওকে বের করতে হবে । এবং তাতে বেশ কিছু মানুষ হতাহত হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই । তাতে এই ছয়জনের কোন ভয় নেই । তাদের ধারনা, তারা তাদের কর্তব্যকর্ম সম্পন্ন করছে মাত্র । শুধু ওদের মনের মধ্যে সন্দেহ, যা নাড়া দিয়েছে ওদের সবাইকে । এমন কী শর্ট যে সবচেয়ে রেগেছিল পথের তীর চিহ্নগুলো দেখে, আর কেসনি, যে কিনা ওদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল, এমন কী হার্ডিনের থেকেও ভাল ট্র্যাকার, ।

সুর্য বেশ খানিকটা উঠে তেতে রোদ দিচ্ছে এমন সময় পাহাড়টার ওপর উঠল যেখান থেকে নীচের শুকনো সোরেনসন প্লেসের শুকনো বেসিনটা দেখা যায় ।

কিন্তু বেসিনটা মোটেই শুকনো নয় এখন । হার্ডিন এত দ্রুত হাতে রাশ টানল যে ঘোড়াটা প্রায় পেছনের দুপায়ে ভর করে দাঁড়িয়ে পড়েছিল প্রায় ।

বাড়িটা মেরামত করা হয়েছে । চালটা দেখে বোঝা যাচ্ছে নতুন কাঠ লাগান হয়েছে । পুরানো গুদামঘরটা ঝড়বৃষ্টি ঠেকানোর মত করে মজবুত করা হয়েছে । নতুন একটা কোরাল আর বাড়ির লাগোয়া একটা বেড়াঘেড়া সব্জিখেতও দেখা যাচ্ছে । এতোক্ষন মরুভুমি দেখার পর চোখ জুড়িয়ে দেবার মত একটা দৃশ্য ।

ভালকরে পর্যবেক্ষন করতে করতে ঘোড়া নিয়ে নেমে এল ওরা । গরুবাছুর যা দেখল সব মোটা তাজা । কোরালটা ভর্তি ঘোড়ায় ।

'অনেক কাজ করা হয়ছে এখানে,' বলল কিমেল । সে জানে, কতখানি পরিশ্রম করলে এরকম চেহারা করা যায় একটা জায়গার ।

'দেখে মনে হয়না কোন খুনীর জায়গা,' মুখ ফসকে বলে ফেলল নীল । বলেই লাল হয়ে গেল, আকস্মিক মন্তব্যটার জন্য বিব্রত বোধ করছে সে । এদের সবার বয়ঃকনিষ্ঠ সে, এবং সবার শেষে সে এ তল্লাটে এসেছে ।

জবাব দিলনা কেউ । ওদের সবার মনের কথা বলে ফেলেছে নীল । এ জায়গাটার মধ্যে একটা কিছু আছে- শক্ত, স্থিতিশীল, নির্ভরযোগ্য ও স্থায়ী ।

'আমি অপেক্ষা করছিলাম তোমাদের জন্য,' পেছন থেকে ভেসে এল মন্তব্যটা ।

জমে গেল ওরা সবাই কথাটা শুনে ! চ্যাট লক ওদের পেছনে, কোন সন্দেহ নেই ওর হাতে অস্ত্র আছে । ওদের একজন বেচাল কিছু করতে গেলেই মারা পড়বে !

'আমার বউ নাশতা বানাচ্ছে । আমি তাকে বলেছি কিছু বন্ধু আসছে নাশতা খেতে । পলাতক খুনীর খোঁজে বেরনো একটা পোসি । আমি তাকে ওদিককার সমস্যা সম্বন্ধে কিছু বলিনি । তোমরা সোজা ভেতরে চলে যাও । তোমাদের অস্ত্র সাথে রাখতে পারো । ব্রেকফাস্ট করার পরেও যদি তোমাদের মনে হয় কালকের নায্য ডূয়েলের জন্য কিছু দেনা পাওনা মেটানো দরকার, তবে আমি তৈরি আছি । আমি যে কারোর সাথে বা সবার সাথে লড়ব আমি । কিন্তু আমি ফাঁসিতে ঝুলবনা ।

'আমি তোমাদের কারও নাম ধরে বলছিনা । কারন কারও সাথে পা বাঁধিয়ে ঝগড়া করার ইচ্ছা আমার নেই । তোমরা সবাই ভেতরে ঢোলো এবার ।'

সবাই ঘোড়া নিয়ে আগে বাড়ল । দোরগোড়ায় এসে জিন থেকে নামল সবাই । পেছনে ফিরল নীল, এবং এই প্রথমবারের মত চ্যাট লককে দেখতে পেল সে ।

বিশালদেহী, শক্ত-পোক্ত মানুষ চ্যাট । রোদেপোড়া তামাটে মুখের ওপর লালচে বাদামী চুলের গোছা এসে পড়েছে । কিন্তু চোখের চাহনি তার বন্ধুত্বপুর্ণ । যেটা মোটেই আশা করেনি নীল ।

হার্ডিন তাকাল ওর দিকে । 'বেশ কিছু অদল বদল করেছ তুমি ।'

'তা ঠিক,' হাত তুলে কুয়াটা দেখাল চ্যাট । ' আমার নিজের হাতে খোঁড়া । আমার বউ উইন্ডল্যাস (কপিকল) চালিয়েছে ।' একনজরে ওদের সবাইকে দেখে নিল চ্যাট । 'দুনিয়ার সেরা মেয়েটাকে পেয়েছি আমি বউ হিসেবে ।'

চোখে তপ্ত অশ্রুর আভাস পেল নীল । জিনের বাঁধন নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল সে যেন কেউ দেখতে না পায় এটা । মেরির সম্বন্ধে তার ধারনাও এরকম ।

দরজাটা খুলে গেল হঠাৎ এবং ঘুরে দাঁড়াল ওরা । যা দেখল তা সম্ভবত আশা করেনি কেউ, এই মরুভুমির দেশে যেকোন মহিলাকেই ফিরে দেখে মানুষ । মধ্য বিশের কোঠায় মেয়েটার বয়স, বাদামী ঢেউ খেলান চুল, ধুসর চোখ আর তিল পড়া নাক, সুশ্রী । 'আপনারা ভেতরে আসবেননা ? চ্যাট বলেছে, ব্রেকফাস্ট খেতে নাকি কয়েক বন্ধু বান্ধব আসবে ওর । রোজ তো মেহমান আসেনা আমাদের ঘরে ।'

আনাড়ির মত স্থুল পায়ে, লজ্জিত মুখে বারান্দায় উঠল ওরা । কেসনি খেয়াল করল, কী রকম যত্ন নিয়ে শক্ত, বাদামী তক্তাগুলো কুঁদে, নিঁখুতভাবে জোড়া লাগান হয়েছে । এখানও সেই স্থায়ীভাবে টিকে থাকার মজবুতি, সেই শক্তির পরিচয় । এই ধরনের মানুষেরই দেশের দরকার । লোকটা সম্পর্কে আগের ধারনার কথা ভেবে লজ্জা পেল সে ।

ভেতরের ঘরটা মেয়েটার মতই পরিপাটি । কী ভাবে মেয়েটা মেঝে এত পরিস্কার রাখে ? জিগ্যেস করল সে । হেসে উত্তর দিল মিসেস লক ।

'ওহ, ওটা চ্যাটের আইডিয়া ! একটা কাঠের ফ্রেম বানিয়ে ঝামা পাথরের একটা টুকরো সেঁটে দিয়েছে একটা কাঠের সাথে । ঝামা পাথরটা ধারাল বলে মেঝের কাঠের মধ্যে কেটে বসে যায় । দারুন পরিস্কার রাখে মেঝে ।'

চমৎকার খাবারের খুশবু পাওয়া যাচ্ছে । নিজের হাতের দিকে চাইল হার্ডিন । দরজার দিকে দেখাল চ্যাট । 'তোয়ালে আর পানি আছে ওখানে, যদি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হতে চাও ।'

কনুই পর্যন্ত জামার হাতা গুটিয়ে বেসিনে হাত ডোবাল নীল । সুপেয় পানি, ব্যাপারটা দুর্লভ । সাবানের পরশ চমৎকার লাগল হাতে । তোয়ালে দিয়ে হাত মুছে বেরিয়ে এল সে । কেসনি আর হার্ডিন এর মধ্যেই বসে গেছে টেবিলে । চ্যাটের বউ কফি ঢালছে ওদের জন্য ।

'লোকেরা,' বলল লক । 'এ হচ্ছে মেরি । তোমাদের নাম গুলো ওকে একএক করে বল । নামগুলো জানা হয়নি আমার ।'

মেরি, মুখ তুলে চাইল নীল । তার বউয়ের নামও মেরি । আবার প্লেটের দিকে নজর ফেরাল সে । কয়েক গ্রাস খাবার পর আবার মূখ তুলে তাকিয়ে দেখল ওর দিকে চেয়ে হাসছে মেরি ।

'আমার বউয়ের নামও মেরি,' জানাল সে । চমৎকার মেয়ে সে !'

'অবশ্যই! কেন ওকে একদিন নিয়ে এসো না বেড়াতে ? কোন মেয়ের সাথে এতোদিন কথাবার্তা হয়নি আমার যে প্রায় ভুলে গেছি আমি ব্যাপারটা । চ্যাট তুমি ওদের সবাইকে দাওয়াত করনা কেন ?'

বিড়বিড় করে কিছু একটা বলল চ্যাট, কফির দিকে চেয়ে রইল নীল । অস্বস্তিকর নীরবতার মধ্যে খেয়ে চলল লোকেরা । আরডিনের চোখ কেবিনের সবদিক জরিপ করে দেখছে । ঝামা পাথর, বুদ্ধিটা চমৎকার, জেইনের জন্য ওরকম একটা কিছু করতে হবে । কাঠের মেঝে পরিস্কার রাখা যায়না বলে হার্ডিনের বউয়ের অভিযোগ । ওয়াশস্ট্যান্ডটা ঘরের ভেতর, ময়লা পানি বের হওয়ার জন্য ফাঁপা কাঠের পাইপের বন্দোবস্ত আছে । বারবার ঘরের ভেতর বাইরে দৌড়াতে হবেনা । এটাও ভাল একটা বুদ্ধি ।

বেশ অণিচ্ছার সাথে খাওয়া শেষ করল ওরা । কারো চোখে চোখাচোখি না করে একজন একজন করে বাইরে বেরিয়ে এল । চ্যাট লক ওদের বসিয়ে রাখলনা । 'যদি লড়তেই হয় তবে কাজটা সেরে ফেলা উচিৎ,' শান্তভাবে বলল ও। ' বাড়ির থেকে দূরে যাই চল ।'

মুখ তুলে চাইল হার্ডিন । 'চ্যাট, সব ঠিক আছে । তুমি বলতে চাইছো, গতকালের ডুয়েলটা তুমি নায্যভাবে লড়েছো ?'

মাথা নাড়ল চ্যাট । 'জনি উস্কিয়ে ছিল আমাকে । পিস্তল ছিলনা বলে চলে যেতে পারতাম । তো একটা পিস্তল যোগাড় করে স্যালুনে পা রাখলাম আমি । আমার ইচ্ছা ছিলান কোন গোলমালে জড়িয়ে পড়ার, কিন্তু ও যদি আমার সাথে লাগতে যা্য় তো ওকে একটা সুযোগ দেব আমি । তো জনি ড্র করতে গেল কিন্তু আমি হারিয়ে দিলাম ওকে । ডুয়েলটা নায্য ভাবেই হয়েছে ।'

'ঠিক আছে,' বলল হার্ডিন । 'আমরা যা ভেবেছিলাম তুমি সেরকম লোক নয় ।'

'চল বাড়ি ফিরি,' বলল শর্ট । 'আমাকে বেড়া মেরামত করতে হবে ।'

হার্ডিনের জিনে হাত রাখল চ্যাট । ' মাঝে মাঝে বেড়াতে এসো তোমরা । আমার বউতো কথাবার্তা বলার মানুষ পায়না । আমি ব্যাপারটা নিয়ে তেমন ভাবিনা । কিন্তু মেয়েরা, জানোইতো কেমন ।'

'ঠিক আছে,' বলল হার্ডিন । 'নিশ্চয়ই আসবো ।'

'আর তোমার মেরিকে নিয়ে এসো ।' নীলকে বলল সে ।

মাথা নাড়ল নীল । গলার কাছে দলা পাকিয়ে উঠছে তার একটা কিছু । পিছু ফিরে চাইল সে । মেরি লক দরজায় দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছে । পরিস্কার করে ঝাঁট দেয়া দোরগোড়ায় সকালের রোদ্দুর খুব উজ্জল দেখাচ্ছে ।


শেষঃ-
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০০৬ রাত ৯:১৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৭


ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

পহেল গাঁয়ে পাকিস্থানি মদদে হত্যাকান্ডের জন্য ভারত পাকিস্থানে আক্রমন করে গুড়িয়ে দেয় , আফগানিস্থান তেহেরিক তালেবানদের মদদ দেওয়ার জন্য, পাকিস্থান... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×