আমরা যখন ছোট ছিলাম, ডাক্তার, ইন্জিনিয়ারের ভিড়ে কেউ কি আমাদের স্বপ্ন দেখিয়েছে আমি বড় হয়ে মন্ত্রী হব, প্রধানমন্ত্রী হব।কিংবা আমি হয়ে উঠব একজন বঙ্গবন্ধু ,ভাসানী, শেরেবাংলা,সোহরাওয়ার্দী। আমাদের ছোটবেলা থেকে মনের ভেতর দেশপ্রেমের একটা বীজ বপণ হয়ে যায়।বীজ থেকে চারা হয়,চারাটা সযত্নে বাড়তে থাকে। বাড়তে বাড়তে একটা সময় গাছটা থমকে দাড়ায়। বলতে গেলে থামিয়ে দেয়া হয়।তার ডালপালা ছড়াবার আগেই। যে গাছটা বড় হয়ে ছায়া দিতে পারত।আমাদের স্বপ্ন দেখানো হয় ডাক্তার হওয়ার ,
প্রকৌশলী হওয়ার, পাইলট হওয়ার। আমরা আমাদের হওয়াটা বুঝার আগেই অভিবাবকদের বাধা ধরা স্বপ্নে নিজেকে নিমজ্জিত করে ফেলি। আমরা কেউ এতে সফলতার উচ্চ শিখড়ে পৌছাই।কেউবা অঙ্কুরোদগমেই ঝড়ে পড়ি। আমাদের কখনো রাজনীতিবিদ হওয়ার
স্বপ্ন দেখানো হয় না।আমরা বলতে পারি না আমি মন্ত্রী হব।প্রধানমন্ত্রী হব।আমরা ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার হয়ে যেরকম দেশকে সেবা দিতে পারি,জনগণের প্রতিনিধি হয়ে সরাসরি দেশকে সেবা দেয়ার মত বড় মাধ্যম আর কি হতে পারে। যেখানে আমার ধ্যান, কর্ম সবই দেশের কল্যাণ, মানুষের কল্যাণ। । দেশকে, দেশের মানুষকে ভালবাসার বড় একটা পথে কাটা বিছিয়ে রাখা। আজকাল ফেসবুকে অনেকের প্রফোইল ইনফোতে পলিটিক্যাল ভিউ এ লেখা "আই হ্যাট পলিটিক্স"। রাজনীতিকে মানুষ ঘৃণা করে। যেখানে সুষ্ঠ রাজনীতি চর্চা প্রায় বিলুপ্ত। যেখানে রাজনীতির মানে বুঝানো মানে হয় জ্বালাও পোড়াও, ক্ষমতার অপব্যবহার, রেশারেশি সেখানে ঘৃণা করাটাই স্বাভাবিক। অথচ ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, বায়ান্ন, ঊনসত্তর, একাত্তরের রাজনৈতিক ইতিহাস নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি।একটা সময় সব শ্রেণী পেশার মানুষের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ ছিল। দেশের স্বার্থে নি:স্বার্থভাবে সবাই এক কাতারে দাড়াত।
বর্তমান কিপ্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। যেখানে শিশু ভূমিষ্ঠ হয় হরতালে আটকে থাকা এ্যাম্বুল্যান্সে। বিশুদ্ধ বাতাস নেবার আগে বোমা, বারুদের গন্ধ তার ফুসফুসে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এই নবপ্রজন্ম কখনো গণতন্ত্রের সুদর্শন রূপ দেখতে পাবে? আমাদের অতীতের গর্বের ইতিহাস ভবিষ্যত কত প্রজন্ম পর্যন্ত টিকে থাকবে? পচাত্তর পরবর্তী রাজনৈতিক পথ প্রদর্শকরা শুধু একে কলুসিতই করে গেছেন।রাজনীতিতে চলে আসে কিছু ভূইফোর লোক। যারা শুধু রাজনীতিকে ব্যবহারই করে গেছে,নিজের ব্যবসায়িক স্বার্থে। কেউবা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠা নিজের সামাজিক মর্যাদার স্বার্থে।যেখানে রাজনীতির মূল উৎস হয়ে গেছে অর্থ। ক্ষমতার পালাবদলে কতজন এল গেল।কেউ আর সুষ্ঠ গণতন্ত্রের চর্চা ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনবোধ করলেন না।
এক সময় আমাদের গর্ব করার মত যে ছাত্ররাজনীতি ছিল, যেখান থেকে মেধাবি ছাত্রনেতা বের হয়ে আসত, সে ছাত্র রাজনীতি আজ সবচে বিপথে। ছাত্র রাজজনীতি এখন এক আতঙ্কের নাম। যে ছেলেটা আজ কলেজ, ভার্সিটিতে রাজনীতি করে মানুষের চোখে সে মন্দ। কলেজ/ভার্সিটির সবচেয়ে মেধাবি ছাত্রটি এখন আর স্বপ্নেও ভাবে না রাজনীতিতে আসার। ছাত্ররাজনীতি এখন শুধু ক্ষমতার প্রলোভনেই আটকে আছে। অথচ এখান থেকে ভবিষ্যত নেতৃত্ব তৈরী হওয়ার কথা। যারা দেশকে সমৃদ্ধশালী করতে পারত। এ বছরই স্কুল পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয় স্কুল ক্যাবিনেট নির্বাচন। উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীদের গণতন্ত্র চর্চা, অপরের মতামতকে মূল্যায়ণ করা ইত্যাদি। এখন তারা কোন গণতন্ত্রের চর্চা করবে? এর সুফল কি? আমাদের দেশে সরকার দল বিরোধী দলকে কতটুকু মূল্যায়ন করে? দেশের অগ্রযাত্রায় বিরোধি দলের ভূমিকাই কতটুকু। যেখানে যেটার প্রয়োগ নেই সেখানে সেটার চর্চা কখনো আশা করা যায় না। এমনও হতে পারত জন্ম থেকে আমাদের রক্তে মিশে যেত সুষ্ঠ চর্চা। যে জিনিস আমি ছোটবেলা থেকেই দেখে আসব,শুনে আসব সেটা সহজেই আমার নিজের মাঝে ধারণ করে নিতে পারতাম।
দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। এই উন্নয়নটা আরও দ্রুত হতে পারত।
মানুষ এখন রাজনীতিকে যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলে। যেন কোন এক নর্দমা থেকে এর সৃষ্টি। আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে এর সুইতিহাস দিন দিন খসে পড়ছে।বর্তমান সময়ে রাজনীতির কুৎসিত রূপটাই শুধু আমাদের চোখে ভেসে উঠে। সুষ্ঠ রাজনৈতিক বিকাশের সুযোগ এখন আর নেই। ফলে দেশের মেধাবি নেতৃত্ব তৈরী হচ্চে না। দেশের নতুন প্রজন্ম সুশিিক্ষত হয়ে গড়ে উঠছে। তারা রাজনীতি সচেতন। এখন রাজনীতি সচেতন মানেই রাজনীতি থেকে বিরত থাকা।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:৪১