জাবি সংবাদদাতা : ‘অবাঞ্ছিত’ ভিসি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন আইনজীবীদের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার মাধ্যমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ও মর্যাদা ক্ষুণœœ করেছেন। সেই সাথে ভিসি পদকে করেছেন কলঙ্কিত। ভিসির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলে নিন্দার ঝড় তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গত মঙ্গলবার সুপ্রিমকোর্ট বার চত্বরে কাদের মোল্লার রায়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আইনজীবিদের হাতে তিনি লাঞ্ছিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা ক্ষুণœœ করায় ক্যাম্পাসে নিন্দার ঝড় উঠেছে।
জানা যায়, অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন ভিসি হিসেবে যোগদানের পর থেকেই একের পর এক বিতর্কিত কর্মকা- ও বেফাঁস মন্তব্য করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণœœ করে চলছেন। ওয়াজ শোনার কারণে পত্রিকার হকারের কাছ থেকে মোবাইল কেড়ে নেয়া, রিকশাওয়ালাকে থাপ্পর মারা, কর্মচারীর হাত থেকে পত্রিকা কেড়ে নেয়া, হিন্দু শিক্ষার্থীকে শিবির বলা, চিহ্নিত ছাত্রলীগ কর্মী ও আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের জামায়াত-শিবির বলে মন্তব্য করেছেন। নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গড়তে এবং বিশেষ কাউকে খুশি করতে গিয়ে তার ও আজগুবি মন্তব্য ও কর্মকা- বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ হাজার শিক্ষার্থীর জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা যখন একাডেমিক কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত ঠিক সেই মুহূর্তে অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন ভিসি পদকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে বদ্ধপরিকর। যার নির্মম পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে গতকাল আইনজীবীদের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার মাধ্যমে। এমনটিই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন বলেন, ভিসি তার একাডেমিক দায়িত্ব নিয়েই থাকা উচিত বরং তিনি একাডেমিক দায়িত্ব বাদ দিয়ে বিতর্কিত কর্মকা-ের মাধ্যমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে কলঙ্কিত করছেন।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের সাধারণ সম্পাদক ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক আমির হোসেন বলেন, ‘অধ্যাপক আনোয়ারের লাঞ্ছিত হওয়ার মাধ্যমে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম মারাত্মকভাবে ক্ষুণœœ করেছেন। জাবির ভিসি পরিচয়কে তিনি রাজনৈতিক পরিচয় হিসেবে ব্যবহার করছেন। ভিসি তো আরো রয়েছে কিন্তু কেউতো আনোয়ারের মতো মিডিয়ায় মুখ দেখাতে ট্রাইব্যুনালে গিয়ে হাজির হন না! এসব বিতর্কিত আচরণের কারণেই আনোয়ার জাবিতে অবাঞ্ছিত বলে তিনি মন্তব্য করেন’।
সাধারণ শিক্ষক ফোরামের সদস্য সচিব কামরুল আহসান বলেন, ‘আমাদের কোনো ভিসি এর পূর্বে এভাবে লাঞ্ছিত হননি, তার কর্মকা-ে আমরা লজ্জিত, স্তম্ভিত ও বিস্মিত। ভিসি পদ আঁকড়ে থাকা এই দানব বোধহীন মানুষের থেকে জাহাঙ্গীরনগর পানাহ চায়’।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার বলেন, ‘আমি মনে করি ভিসি হিসেবে নয়, ব্যক্তি আনোয়ার তার অশিক্ষকসুলভ আচরণের কারণে লাঞ্ছিত হয়েছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হয়ে লাঞ্ছিত হওয়ায় আমাদের শিক্ষকদের তিনি পরোক্ষভাবে অপমান করেছেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। তিনি পদত্যাগ করে চলে গেলেই ক্যাম্পাসের মঙ্গল।’
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগের দেয়া কাদের মোল্লার রায়ের পর প্রতিক্রিয়া জানাতে ভিসি আনোয়ার হোসেন টিভি ক্যামেরার সামনে গেলে সুপ্রিমকোর্টের এক আইনজীবী তাকে প্রশ্ন করেন আপনি কে? জবাবে পাশ থেকে অন্য আইনজীবী বলেন, তিনি জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটির বিচি। এসময় ওই আইনজীবী বলেন, বিচিগিরি জাহাঙ্গীরনগরে, এখানে নয়। আইনজীবী সমিতির ভবনে আপনার কি কাজ। বের হয়ে যান এখান থেকে। লজ্জা-শরম নেই আপনার! এসময় ঐ আইনজীবী ভিসি আনোয়ারকে ধাক্কা দিলে তিনি বের হয়ে আসেন। এ সময় একাধিক আইনজীবী আনোয়ার হোসেনের সমালোচনা করেন। তারা বলেন, জাবির ভিসি ট্রাইব্যুনালের মামলা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি না হয়েও রায়ের দিন আদালতে প্রতিক্রিয়া জানানোর নামে বিভিন্ন চ্যানেলে মুখ দেখাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
- See more at: Click This Link