১৯৪৭ সালে তৎকালীন ভারতবর্ষ ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের সময় ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্রের জন্মের সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ৫ লাখ মানুষ নিহত হয়েছিল। এদের অধিকাংশই নিহত হয়েছিল ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায়। কিন্তু এর এক বছর পর ১৯৪৮ সালে মধ্য ভারতে আর একটি নির্বিচার গণহত্যার ঘটনা ঘটেছিল বলে সম্প্রতি খুঁজে পাওয়া এক গোপন তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জানিয়েছে বিবিসি অনলাইন। যার শিকার হয়েছিল সেখানকার হাজার হাজার মুসলিম জনগোষ্ঠী।
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনতা থেকে ভারত স্বাধীন হয় ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট। এর কিছুদিনের মধ্যেই ১৯৪৮ সালের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে মধ্য ভারতে হাজার হাজার মানুষকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। এই ঘটনাটি ঘটে ওই সময়ের হায়দারাবাদ স্টেটে। এটি ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজের অধীনে রাজা শাসিত ৫শ’টি রাজ্যের অন্যতম। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর এ ধরনের অধিকাংশ রাজ্যই ভারতের অংশ হতে রাজি হয়। কিন্তু বেঁকে বসেন মুসলিম রাজা (নিজাম) শাসিত হায়দারাবাদ, এটি স্বাধীনতা বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এতে নতুন রাষ্ট্র ভারতের দিল্লি কেন্দ্রিক প্রধানত হিন্দু শাসকরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এ নিয়ে দিল্লি ও হায়দারাবাদের মধ্যে তিক্ত বাকবিতা-ার এক পর্যায়ে ধৈর্য হারায় দিল্লি।
ভারতের কেন্দ্রিয় অংশে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব প্রতিরোধ করা ছাড়াও প্রধানত হিন্দু শাসিত ভারতে একটি মুসলিম নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্র নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। এমনই এক সময় হায়দারাবাদের সবচেয়ে প্রভাবশালী মুসলিম রাজনৈতিক দলের সশস্ত্র শাখা শক্তিশালী রাজাকার মিলিশিয়ারা হিন্দু গ্রামবাসীদের ওপর অত্যাচারের মাধ্যমে ব্যাপক ভীতি ছড়িয়ে দেয়। এটি ওই সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুকে কাক্সিক্ষত অজুহাত তৈরি করে দেয়। ১৯৪৮ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতীয় সেনাবাহিনী হায়দারাবাদ আক্রমণ করে। মাত্র কয়েকদিনের যুদ্ধেই নিজাম বাহিনী পরাজিত হয়।
সে সময় এটিকে ‘পুলিশি অভিযান’ বলে প্রচারণা দিয়ে বলা হয়, এই অভিযানে বেসামরিক নাগরিকদের উল্লেখযোগ্য মৃত্যু ছাড়াই নিজামের বাহিনী পরাজিত হয়। তবে এই বিষয়ে লোকসভার হিন্দু সদস্য প-িত সুন্দরলালের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে অন্য ঘটনা প্রকাশ পায়। ওই প্রতিবেদনে দেখা যায় অভিযানের সময় ভারতীয় বাহিনী নির্বিচার হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ব্যাপক ধর্ষণের মতো যুদ্ধাপরাধ করেছে। অভিযানকালে বেসামরিক নাগরিকদের তেমন মৃত্যু হয়নি বলা হলেও প্রতিবেদনে ২৭ হাজার থেকে ৪০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়। এদের অনেককেই লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে গুলি করে মারে ভারতীয় সেনারা।
সরকারি ওই তদন্ত প্রতিবেদন কোনোদিন প্রকাশ করা হয়নি। খুব অল্প সংখ্যাক ভারতীয় নাগরিক এই গণহত্যার কথা জানে। এই গণহত্যার ঘটনা চেপে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় দিল্লিতে ক্ষমতাসীন হওয়া সরকারগুলোকে দায়ী করেছেন সমালোচকরা।
Click This Link