স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে: জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার ‘বাংলার মারাদোনা’খ্যাত সম্রাট হোসেন এমিলিকে পিস্তল ঠেকিয়ে বেধড়ক মারধর করেছেন নারায়ণগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমান এবং তার অনুসারীরা। গতকাল সকালে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের রিসিপশনে (সাবেক ইউরোপিয়ান ক্লাব) এ ঘটনা ঘটে বলে এমিলি অভিযোগ করেন। সকালে ওই ঘটনার পর উল্টো এমিলিকে মাদকাসক্ত আখ্যা দিয়ে পুলিশ দুপুরে তাকে খানপুরের বাসা থেকে আটক করে সদর মডেল থানায় নিয়ে যায়। থানার ওসি মঞ্জুর কাদের বলেন, এমিলি মাদকাসক্ত। তাই তাকে আটক করে এনেছি। আর ঘটনা অস্বীকার করে শামীম ওসমান বলেন, এমিলি মাদকাসক্ত। তার সঙ্গে আমার দেখাই হয়নি। ঘটনা ধামাচাপা দিতে এমিলিকে মাদকাসক্ত সাজিয়ে পুলিশ দিয়ে আটক করানো হয়েছে বলে এমিলির পরিবার অভিযোগ করেছে। এমিলি নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবলীগের সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক।
এদিকে এমিলিকে আটকের খবর পেয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা সদর মডেল থানায় ছুটে গেলে কিছুক্ষণ পরেই পুলিশ এমিলিকে ছেড়ে দেয়।
ফুটবলার এমিলি বলেন, শুক্রবার সকালে তিনি নিজে প্রাইভেট কার চালিয়ে শহরের দিগুবাবুর বাজারে বাজার করতে যান। বাজারের পাশেই নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের অবস্থান। এ কারণে তিনি প্রাইভেট কারটি সেখানে রাখতে যান। গাড়ি পার্কিং করে তিনি ক্লাবের সভাপতির সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য রিসিপশনে প্রবেশ করে দেখেন সেখানে জেলা যুবলীগের সহসভাপতি আসিফ হাসান মাহামুদ মানু ৩-৪ জন অজ্ঞাত যুবককে নিয়ে বসে আছেন। তাকে দেখেই মানু কোমর থেকে পিস্তল বের করে তার শরীরে ঠেকিয়ে বলে, ‘তোর সঙ্গে ভাই (শামীম ওসমান) কথা বলবে।’ প্রত্যুত্তরে এমিলি বলেন, এর জন্য পিস্তল ঠেকানোর প্রয়োজন কি? ওই সময় মানু তার সঙ্গীয় যুবকদের ইঙ্গিত দিলে তারা পিস্তল বের করে তাকে আটকে রাখে। মানু মোবাইল ফোনে এমিলিকে আটকের কথা শামীম ওসমানকে জানায়। ৪-৫ মিনিটের মধ্যে শামীম ওসমান ক্লাবের উপরতলা থেকে লুঙ্গি ও শার্ট পরে নিচে নেমে আসেন। এসেই তাকে প্রথমে লাথি মারেন। ওই সময় ক্লাবের বিভিন্ন কক্ষ থেকে আরও ৬-৭ জন যুবক অস্ত্র হাতে রিসিপশনে চলে আসে। শামীম ওসমানের লাথিতে এমিলি নিচে পড়ে গেলে তাকে সবাই মিলে এলোপাতাড়ি মারধর করে। একপর্যায়ে শামীম ওসমান কোমর থেকে পিস্তল বের করে এমিলির মুখের মধ্যে চেপে ধরে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। এক পর্যায়ে তাকে চলে যেতে বলেন। না হলে তাকে গুলি করে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। একই সঙ্গে তাকে ক্লাবে ঢুকতে দেয়ায় নিরাপত্তা প্রহরীদেরও শামীম ওসমান অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন।
নিরাপত্তা প্রহরীদের কয়েকজন জানিয়েছেন, সকালে এক ব্যক্তিকে শামীম ওসমান মারধর করেছেন। ওই ব্যক্তিকে ক্লাবে প্রবেশ করতে দেয়ায় আমাদেরও গালাগাল করেছেন। তবে যাকে মারধর করা হয়েছে তাকে আমরা চিনি না।
এদিকে দুপুরে সদর মডেল থানা পুলিশ মাদকাসক্ত আখ্যা দিয়ে এমিলিকে আটক করে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা থানায় গিয়ে ওসি মঞ্জুর কাদেরের কাছে এমিলিকে আটকের কারণ জানতে চাইলে ওসি বলেন, আমাদের কাছে খবর ছিল এমিলি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় শহরে কয়েকটি রিকশা ভাঙচুর করেছে। কিন্তু তাকে আটকের পর তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি। তাই তাকে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সভাপতি এম সোলায়মান দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, শুক্রবার হওয়ায় তিনি সকালে ক্লাবে যাননি। আর এ ধরনের কোন ঘটনার খবরও তার জানা নেই। ক্লাব থেকে তাকে ফোন করে কেউ কিছু জানায়নি। তবে বিষয়টি তিনি খোঁজ নিয়ে দেখছেন।
নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে অস্ত্রধারী যুবকদের অবস্থান
ক্লাবের একটি সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে রাত কাটান। তাকে পাহারা দেয়ার জন্য যুবলীগ নেতা আসিফ হাসান মাহামুদ মানু’র নেতৃত্বে ১০-১২ জন অজ্ঞাত পরিচয় যুবক ছিল। ওই সব যুবক ক্লাবের রিসিপশনসহ বিভিন্ন রুমে অবস্থান নেয়। শুক্রবার সকালে এমিলিকে মারধরের সময় ওইসব যুবক প্রায় সবাই সশস্ত্র অবস্থায় ছিল।
মারধরের নেপথ্য কারণ: এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর শহরের খানপুর এলাকাসংলগ্ন বরফকল পশুর হাট পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন ফুটবলার এমিলি। প্রতি বছর এ হাট থেকে শামীম ওসমানকে ৪টি গরু উপহার দিতো হাট কর্তৃপক্ষ। আর গরু বুঝে নিতো শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটু। কিন্তু এ বছর এমিলি ঘোষণা দেন হাট থেকে কাউকে কোন চাঁদা দেয়া হবে না। ফলে শামীম ওসমানকে এ বছর কোন গরু দেয়নি হাট কর্তৃপক্ষ। এর জের ধরে শামীম ওসমান মারধর করতে পারে বলে এমিলির ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। এছাড়া এমিলিকে অস্ত্র ঠেকিয়ে মারধরের আর কোন কারণ নেই।