somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কর্মফল

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ সকাল ১০:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছেলের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন সালাম সাহেব। এ কি তার সেই ছেলে যাকে সে কিনা ছোট বেলা থেকে বুকে আগলে রেখেছেন। হাজার কষ্টের মাঝেও ছেলের গায়ে এতটুকু আঁচড় লাগতে দেয়নি। আজ সেই ছেলেই নির্লিপ্ত ভঙ্গীতে তার সাথে কথা বলছে। দু-চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। মনে পড়ে তার স্ত্রীর কথা, যে কি না বার বার সতর্ক করে দিয়েছিল ছেলে সম্বন্ধে।কিন্তু সে পাত্তা দেয় নি। তার পরিণতি কি না আজ সহ্য করতে হচ্ছ?

সরকারী কর্মকর্তা হিসাবে খুব বেশি বেতনের চাকুরী তার ছিলনা, তবুও সে খেয়াল রেখেছে তার একমাত্র ছেলের শিক্ষার ক্ষেত্রে কোন খুত যেন না থাকে।অনেক কষ্ট করে সে যোগাড় করেছে তার কোচিং আর প্রাইভেট টিউটরের খরচ। এসব
কষ্টের পুরষ্কারও সে পেয়েছে , ছেলের ঈর্ষণীয় রেজাল্টের মাধ্যমে। কিন্তু তার স্ত্রী এতে সন্তুষ্ট ছিল না। বার বার সে সালাম সাহেবকে সতর্ক করেছে ছেলের আচরণ সম্পর্কে, তার উদ্ধত-পনা সম্বন্ধে। কিন্তু সে নিজেই বিষয়টি এড়িয়ে গেছে। শুধু তাই নয় স্ত্রীর কাজেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সে।
তার স্ত্রী সাবিনা সব সময় চাইত, তার ছেলে লেখাপড়ার পাশাপাশি একজন মুসলমান হিসাবে গড়ে উঠুক। তাই প্রায়ই নামাজ পড়ার ব্যাপারে জোর দিতেন। কিন্তু সালাম সাহেব এতে বাধা হয়ে দাঁড়াতেন।আর দাঁড়াবেন না কেন ছেলে যখন কাঁদ, কাঁদ কণ্ঠে বলত “বাবা রাত জেগে পড়তে হয়, কিভাবে ফজরের নামাজ পড়ব? এভাবে আরও নানা অজুহাত দিত, তখন সে ভাবত তাইতো। আমার এতটুকু ছেলে কত কষ্ট করে পরা-লেখা করছে। থাক না, এখন তো অবুঝ! বড় হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। এখনই অত কঠোর হবার কি দরকার।
বেশি কষ্ট হত রোজার মাসে, সাবিনার সাথে এ নিয়ে প্রায়ই ঝগড়া হত কিন্তু তার এক কথা পড়ালেখার ক্ষতি হয় এমন কিছু তার ছেলে করবেনা। সাবিনা প্রায়ই বাড়তি খাবার ঘরে রাখতোনা। কিন্তু ছেলের পড়ালেখার ক্ষতি হবে এই ভেবে, স্ত্রীর চোখ এড়িয়ে সে নিজেই ছেলের খাবারের ব্যবস্থা করত।
এগুল জানার পর সাবিনা প্রায়ই রাগ করে বাবা-ছেলের সাথে কথা বলতো না। কিন্তু সালাম সাহেব বিষয়টিকে অগ্রাহ্য করত। সালাম সাহেবকে সাবিনা বার বার সতর্ক করেছে সে ছেলের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে, কিন্তু তিনি ভ্রুক্ষেপও করেননি। এভাবে অতি আদরে আদরে ছেলে বড় হতে থাকে। আর সালাম সাহেবও ছেলের একটার পর একটা অন্যায়ের প্রশ্রয় দিতে থাকেন। তার একটিই কথা আল্লাহ্‌ দয়ালু, তিনি সব ক্ষমা করে দেবেন।

এভাবে কেটে গেল ২৮টি বছর, আজ ছেলে বড় হয়েছে। ছেলে ঘর ছেড়েছে ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে বেশ নাম ডাক তার। সে তার নিজের পছন্দমত সংসার সাজিয়েছে।

কিন্তু সালাম সাহেব বড় একা। স্ত্রীর মৃত্যুর পর থেকে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছে মফস্বলের ছোট্ট বাড়িটিতে। সারাদিন স্ত্রী- সন্তানের স্মৃতি রোমন্থন করেই সময় কাটে তার। কিন্তু ছেলের সময় হয় না বাবাকে একটু দেখতে আসার। আবার স্ত্রীর আপত্তির কথা ভেবে বাবাকে নিজের কাছেও রাখতে পারেন না।
এভাবেই সালাম সাহেবের দিন কাটে।অবশেষে পিঠের ব্যথা অসহনীয় হওয়াতে বাধ্য হয়েছেন তিনি শহরে ছেলের কাছে আসতে। কিন্তু ডাক্তার বড়ই ব্যস্ত মানুষ। শিডিউল পাওয়া অনেক কঠিন। তবুও একদিন ম্যানেজ করা গেল। কিন্তু এরই মধ্যে রোজা শুরু হয়ে গেছে। তিনি অসুস্থ মানুষ সেহেরীতে এক গ্লাস দুধ খান। তাই বাসায় কি হয় না হয় সেদিকে খেয়াল করেন না।

কিন্তু সে দিন দুপুরে প্রচণ্ড হাসির শব্দে তার ঘুম ভেঙ্গে গেল, অসময়ে এত উচ্চস্বরে কে হাসছে তা দেখার জন্য তিনি রুম থেকে বের হলেন। ডাইনিং স্পেসে আসতেই তার চক্ষু চড়কগাছ! সে দেখল টেবিলে কিছু অপরিচিত লোক তার ছেলে ও বৌমার সাথে বসে দুপুরের খাবার খাচ্ছে। মাথা গরম হয়ে গেল সালাম সাহেবের, কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেনা এ দৃশ্য। তার সমস্ত পৃথিবী দুলে উঠল! শিক্ষিত ছেলের বাবা হিসাবে গর্ববোধ করে সে। কিন্তু আজ এ কি দেখছে সে? আমতা আমতা করে বলল বাবারা রোজার দিনে এভাবে দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করা কি ঠিক?
তখন ছেলে বলব, বাবা তুমি বুঝবেনা, খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমরা আলোচনা করছি। তুমি বরং ও ঘরে যাও। এ কথা বলে নির্লিপ্ত ভঙ্গীতে সে তার খাওয়া চালিয়ে গেল।

ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে গেল সালাম সাহেবের, বললঃ তুমি জান না রোজার দিনে এটি অন্যায়? তুমি তো এখন আর ছোট নও? তবে রোজা রাখতে এখন কেন পারবে না? এ কথা বলে সে চোখ মুছতে মুছতে ভিতরে চলে গেল।

বাবার রণমূর্তি দেখে ছেলের আক্কেল গুড়ুম! কোনদিনও বাবার এই চেহারা সে দেখে নি। তারপর বন্ধুদের সামনে এত-বড় অপমান সে কিছুতেই হজম করতে পারছিল না। এ ঘটনার পর বন্ধুরাও খাবার শেষ না করে চলে গেল, এবং তার স্ত্রীও অগ্নিশর্মা হয়ে টেবিল থেকে উঠে গেল।

বাধ্য হয়েই সে বাবার ঘরে গেল। দেখল বাবার, চোখ দিয়ে পানি পরছে। শুধু অস্ফুট কণ্ঠে বলল বাবা?
সালাম সাহেব দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বলল, তোকে আমি অনেক আদরে মানুষ করেছি কি আজকের দিনটি দেখার জন্য ?
ছেলে বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে বললঃ বাবা আজ অনেক দেরী হয়ে গেছে? ছোট বেলা থেকে তুমি যদি আমাকে প্রশ্রয় না দিতে তাহলে আজকের দিনটি দেখতে হত না।
সালাম সাহেব নিস্তব্ধ হয়ে ভাবতে লাগলেন আসলেই এটি তার কর্মফল। তার অতিরিক্ত স্নেহই আজ তার ছেলেকে এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে।

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×