somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পল ইজ নো মোর

২৮ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ৯:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অপরাজিত বন্দ্যোপাধ্যায়

ভিরেনাকে নতুন চাকরি খূঁজতে হবে। আর ট্রেনার লাগবে না। একের এক ভবিতব্যের কথা বলতে বলতে পল নিজেই এখন অতীত হয়ে গেল। গণকদের মতোই তার দুরাবস্থা। নিজের ওপর কোন অতিন্দ্রীয় প্রভাব খাটাতে পারলো না পল। অঙ্কের নিয়মের কাছে হেরে গেল অক্টোপল। জীববিজ্ঞানে অক্টোপাসের বয়সকে হার মানাতে পারলো না পল। প্রকৃতি নিয়মেই চলে যেতে হলো অক্টোপলকে। হয়ত আর কিছুদিন হলেও সে বেঁচে থাকতে পারতো। কিন্তু খ্যাতির চূড়ায় থাকা পলের স্বাস্থ্য রক্ষায় ইদানিং এতটাই গুরুত্ব পেয়েছে তার জেরেই মৃত্যু এগিয়ে এসেছে। সোজা কথায় অতি যত্নে জীবন বেড়িয়ে গেছে।
তবু বিস্ময়টা থেকেই গেল। ফুটবল বিশ্বকাপে একনাগাড়ে আট আটটি ফল মিলিয়ে দিয়েছিলো অক্টোপল। ট্রেনারের চাতুরি কাকতালীয়ভাবে মিলে যাওয়ায় জগত জোড়া খ্যাতি পেয়েছিলো পল। দুনিয়ায় সে তুলে ধরেছিলো জার্মানির ওবারহাউসেনের সি লাইফ সেন্টারকে। হোয়াইট হাউস, ক্রেমলিন কিংবা হাউস অব লর্ডসের মতোই সি লাইফ সেন্টার হয়ে উঠেছিলো বিশ্ব পর্যটকদের প্রধান দর্শনীয় স্থান। এটা কম পাওনা নয়। ছোটো থেকে বড় সকলের কাছেই পল ছিল পরম আপন। পরাবাস্তবের প্রতি মানুষের অদম্য টানই এই খ্যাতি দিয়েছিল পলকে। পল’কে নিয়ে কত কিই না করেছে ওবারহাউসেনের রক্ষকরা। কিন্তু তা নিয়ে আন্তর্জাতিক কোন পশুক্লেশ নিবারণ সংস্থাকে রা কাড়তে দেখা যায়নি।
বিশ্বকে হাসাতে আর বাহবা কুড়াতে গিয়ে পলকে কম কষ্ট সহ্য করতে হয়নি। দীর্ঘদিন আধ পেটা শুধু নয়। শরীরে শেষ শক্তি নিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে আট থেকে দশবার নামতে হয়েছে পরীক্ষক অ্যাকোরিয়ামে। দুই বাক্সের মধ্যে থাকা চৌকা চাকতি (আদপে জাতীয় পতাকা) জাপটে ধরতে দেরী হলে তাকে সরু লোহার শিকের খোঁচাও খেতে হয়েছে। বেশ কয়েকবার এইভাবে তাকে রক্তাক্ত হতে হয়েছে। কে তার খবর রাখে ? ট্রেনার ভিরেনা পল’কে ভবিষ্যতবানীর আগের ১৮ঘন্টা কোন খাবার দিতো না। দিলে তো অলস হয়ে পড়বে পল। ফ্লাশ ক্যামেরা আর টিভি ক্যামেরার সামনে তাহলে বেশ নিরাশ হতেন। বিজয়ী দেশকে খূঁজে দিতেও বেশ সময় লাগতো। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা হতো না। বলা ভালো তা হতে দিতেন না পলের মালিক অলিভার ওয়ালেন সিয়াক। তাই পলের তাড়াহুড়ো করে জয়ীর পতাকাকে বেছে দেওয়াটা, যে একটু খাবার পাওয়ার জন্য আকুতি তা কারো মনকে কোনদিনও ছুঁতে পারেনি। একটু ঝিনুকের মাংসের জন্য পলের ঐ আকুল পাথারি বুঝেও অনেকে বোঝেন নি। সকলে সাবাশি দিয়েছেন তার ‘অলৌকিক’ শক্তি নিয়ে।
পল নেই। পলের কষ্ট নিয়ে আর কথা বলার কোন যুক্তি নেই। কারণ সে একটি জলজ চিড়িয়াখানার ব্যক্তিগত সম্পতি। অনেকটা আলিপুরের অদ্বৈতের মতো। প্রাণী কেনাবেচা, বক্তিগত সংগ্রহে রাখার আইনী সংস্থান এখনো রয়েছে। তবে পলের প্রজাতি অক্টোপাস ভালগারিসদের আয়ু ৩বছর। তা অগ্রাহ্য করাতো আর যায় না। পলের ঘোষিত জন্ম ২০০৮সালের আগস্ট মাস। সেই হিসাবে তার বয়স হয়েছিল ২বছর ২মাস। রোগে নয়, অপুষ্টির জন্যই হয়ত তার শেষ দিন ত্বরান্বিত হলো। কিন্তু সেসব ভুলে অনেকে অক্টোপাসের জীবন শৈলীর কথা তুলেছেন। এটা ঠিক যে পুরুষ অক্টোপাসের মিলনের পর প্রায়শ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। দুই পুরুষ অক্টোপাসের মধ্যে মিলন জনিত দ্বন্দ্বের জন্য একে অন্যকে মেরে ফেলে। এটা ‘প্রিডেটরশিপ’। ভালোবাসার তাড়নায় মৃত্যু হতে পারে। ভালোবাসায় ‘শহীদ’ কখনোই না। পলের মালিক অলিভার ওয়ালেন সিয়াক প্রথম থেকেই অক্টোপলকে একাকীই রেখেছিলেন। তাই এক্ষেত্রে সে সম্ভাবনা নেই।
অক্টোপলের জন্য ওবারহাউসেনের রক্ষকদের দারুন কষ্ট। ম্যানেজার স্টেফান পাউরুল সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পলের অন্তেষ্টি হবে যথাযোগ্য সম্মানে। তৈরি হবে পলের স্মৃতিস্মারক। পলের শূন্যস্থান পূরণ করতে অন্য আর এক অক্টোপাসকে যে আনা হচ্ছে তা পলের মৃত্যুর দিন ঘোষণা করে দিলো ওবারহাউসেনের শোকাহতরা। তার নামও হবে ‘পল’। ফাটকা বন্ধ হওয়ার নয়। মরে গিয়ে তা প্রমাণ করে দিলো পল। বিদায় ‘পল, দ্য সাইকিক’ !
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×