২০০৯ সালের আজকের এই দিনে উপকূলে প্রচন্ড আঘাত হানে ভয়াবহ জলোচ্ছাস আইলা। লন্ডভন্ড হয় দাকোপ উপজেলার উপকূলীয় বিস্তিৃর্ন এলাকা। প্রান হারায় ১৯জন নারী পুরুষ। এ দিন এলেই স্বজন হারাদের কান্নায় এলাকার আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠে। গত চার বছরে বিধ্বস্ত এলাকার গাছপালায় সবুজের সমরহ দেখা গেলেও আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ তার প্রিয় ঘরবাড়ি,উঠান, বারান্দা, গবাদিপশু পাখি ও বসত ভিটা কিছুই ফিরে পায়নি। পূনর্বাসনের আওতায় আনা এখনো সম্ভব হয়নি উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ১ হাজার পরিবারকে।
তথ্য সুত্রে জানাযায আজ আইলার ৪ বছর পূর্ণ হলেও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো এখনো মানবতার জীবন যাপন করছে। এ সমস্ত পরিবারগুলোর ভিটামাটি বাড়ীঘর সর্ম্পূন নদী গর্ভে বিলিন হয়ে য়ায। দাকোপের কামারখোলা,জালিয়াখালী,শ্রীনগর, সাহারাবাদ, ভেটাভাঙ্গা, কামারখোলা, জয়নগর, ফকিরডাঙ্গা, সুতারখালী ইউনিয়নের নলিয়ান ,কালাবগি, গুনারী, বাইনপাড়া, তেলিরকোনা, সুতারখালী এলাকার এই দিনে প্রায় ১৫ ফুট জলচ্ছাসে ওয়াপদা বাঁধ ভেঙ্গে পানির তোড়ে ভেসে যায হাজার হাজার ঘরবাড়ী গবাদীপশু, গাছপালা, ফসলের ক্ষেত, কোটি কোটি টাকার চিংড়ী মৎস্য ঘের। শুধুমাত্র সুতারখালী ইউনিয়নে ১৫শ একর জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। বিধ্বস্ত হয় ৩৬৫ কিঃ মিঃ এলজিডি সহ বিভিন্ন সংস্থার নির্মানকৃত রাস্তা। ভেঙ্গে যায় ৩২৫ কিঃ মিঃ ওয়াপদা বেড়ীবাঁধ যার ২৬০ কিঃ মিঃ বেড়ীবাঁধ সংস্কার হলেও ৬৫ কিঃ মিঃ বেড়ীবাঁধ এখনো ঝুকিপূর্ণ। আইলায় বিধ্বস্ত পাউবোর ২৫টি স্লুইজগেট চার বছর পার হলেও আজও মেরামত হয়নি। আইলার ৪ বছর পার হয়ে গেছে কিন্তু তীব্র লবনাক্ততায় কৃষকরা তাদের জমিতে আজও ফসল লাগাতে পারেনি। স্লুইজ গেটগুলো অকেজো থাকায় পানি নিস্কাশনের কোন সুযোগ নেই। এ ছাড়া সুতারখালী ইউনিয়নের ওয়াপদা বেড়ীবাধের ১৮ টি পয়েন্ট ও কামার খোলা ইউনিযনের ওয়াপদা বেড়ীবাধের ১৫টি পয়েন্ট মারাত্বক ঝুকি পূর্ন অবস্থায় আছে।ভয়াল আইলার আঘাতে ১৮ হাজার ৯২৫টি পরিবার সম্পূর্ন রুপে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সরকারী ভাবে ১০ হাজার ৬০০ শত পরিবারকে পূর্নবাসনে নিয়ে আসা হয়। অবষ্টিত সহায় সম্বল হারানো এই সকল এলাকায় বসবাসরত লোকজন পৈত্রিক সম্পত্তি বসতভিটা,ঘরবাড়ি হারিয়ে জীবন জীবিকার সন্ধানে চলে গেছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। বর্তমানে আইলা দুর্গত এলাকার গ্রামে গ্রামে চলছে খাদ্যবস্ত্র বাসস্থান ও বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট।
ঘরবাড়ি হারা প্রায় ১ হাজার পরিবার তাদের বসত ভিটা নদী গর্ভে বিলিন হওয়ায় এবং অনেকে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বাড়ি ফিরতে পারছে না। ওই সকল পরিবার তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে বাঁধে আশ্রয় গ্রহণ করে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আইলার পরবতী সময় অনেক কৃষক তাদের এক ফসলি জমিতে আমন ধান তেমন একটা উৎপাদন করতে না পারায় তাদের ঘরে ঘরে চলছে এখন খাদ্যভাব। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে দূর্গত এলাকা মানুষের দুঃখ আরও অবর্ণনীয় হবে এ শঙ্কাই তাড়া করে ফিরেছে বাঁধে আশ্রয় নেওয়া মানুষকে। খুলনার উপকূলীয় দাকোপ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামঘুরে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।
এলাকায় প্রায় ১০ হাজার দিনমজুর শ্রমিকের কোন কাজ নেই। সরকারী বে-সরকারী ভাবে ত্রাণ তৎপরতা গত দু,তিন বছর আগের থেকে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন দুর্গত এলাকায় ঘরে ঘরে চলছে নিরব দুর্ভিক্ষ। সরকারী বে-সরকারী ভাবে ত্রাণ হিসাবে পাওয়া পলিথিন এবং বাঁশ খুটি লাগিয়ে ঝুঁপড়ির মধ্যেই মানবেতর বসবাস করছে দুর্গত এলাকার পরিবার পরিজনেরা। সংস্কারের অভাবে ধ্বংস হয়ে যাওয়া এখনও অনেক রাস্তাঘাট ,ব্রিজ, কালর্ভাট, ¯¬ুইচ গেট, মসজিদ-মন্দির,আর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্টান ধ্বংসস্তুপের মত আজও পড়ে আছে।এলাকায় বে-সরকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দুর্গত এলাকার রাস্তা ঘাট,পুকুর খনন, সংস্কার ও রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং ফ্লান্ট স্থাপন করলেও তাহা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। দাকোপের ৫নং সুতারখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গাজী আশরাফ হোসেন জানান,বাঁধের উপর বসবাসরত পরিবার গুলেরভিতরথেকে বেসরকারী সংস্থার উদ্যোগে দুইটি আদর্শ গ্রামের মাধ্যমে ২০৩টি পরিবারের এক হাজার ৬৫ জনকে পূর্নবাসন করা হয়েছে। এখনো ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার বেড়িবাঁধের উপর বসবাসরত ২৫০০ লোককে পূর্নবাসন করা যায়নি। কামারখোলা ইউপি চেয়ারম্যান উমাশংকররায় জানান,অত্র ইউনিয়নের বিভিন্ন বেড়িবঁেিধর উপর বসবাসকারী ৩১৫টি পরিবারের ৩৯০ জন লোককে এখনো পূর্নবাসন করা যায়নি।
দাকোপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল হালিম জানান,আইলার পরবর্তী সময় কামারখোলা ও সুতারখালী ইউনিয়নের ১০হাজার ৬শত পরিবারকে গৃহ নিমার্ণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ওই দুটি ইউনিয়নের অধিকাংশ পরিবারকে ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে ২০ কেজি করে চাউল প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন আইলার পরবর্তী সময় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের মাধ্যমে এলাকায় স্যানিটেশন ব্যাবস্থাসহ খাবার পানি সরবরাহ করা হয়েছিলো। বর্তমানে দুর্গত এলাকায় পানি সংকট মোকাবেলায় সরকারের পক্ষথেকে কোন বরাদ্ধ না থাকায় খাবার পানি সরবরাহ করা হচ্ছেনা।
আজ সেই ভয়াল ২৫ মে : দাকোপে আইলার তান্ডবে লন্ড ভন্ড হয় বিস্তিৃর্ন এলাকার জনপদ
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ
(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাড়ির কাছে আরশিনগর
বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।
কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমি ভালো আছি
প্রিয় ব্লগার,
আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন
স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ
(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন
এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!
অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন