ছোট হয়ে গেছে দাকোপের মানচিত্র : দীর্ঘ ৬ বছরেও স্বস্তিতে নেই আইলা দূর্গত মানুষ
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
দীর্ঘ ৬ বছরেও স্বস্তি আসেনি আইলা দূর্গত এলাকার মানুষের মনে। সেই দিন ঘূর্ণিঝড় আইলার মহা তান্ডবে বিধ্বস্ত হয় উপকুলের বিস্তৃর্ণ জনপদ। ২০০৯ সালের ২৫মে এই দিনে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের উপকুলে প্রচন্ড আঘাত হানে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আইলা। লন্ডভন্ড হয় দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের উপকুলীয় অঞ্চলের গ্রাম,কৃষি জমি ও ঘরবাড়ী। প্রান হারায় ১৯০ জন শিশু ও নারী পূরুষ। দূর্গত এলাকায় ৬ বছরের ক্ষতি গ্রস্থ গাছপালায় সবুজের সমারহ দেখা গেলেও ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের পিছু ছাড়েনি নদী ভাঙ্গন। কৃষক তার কৃষি জমিতে আইলায় রেখে যাওয়া বালুর চরের কারণে আগের মত ফসল ফলাতে পারছে না। নতুন করে নদী ভাঙ্গনে সহস্রাধিক মানুষ ভিটে মাটি হারিয়ে এখনো ওয়াপদা বেড়িবাঁধের উপর মানবেতর জীবন জাপন করছে। তাদেরকে পুনঃ বাসনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। কিছু এলাকার যাতায়ত ব্যাবস্থা সামান্ন উন্নত হলেও বেশীর ভাগ রাস্তার বেহাল দশা। বর্ষা মৌসুমে হয়ে পড়ে চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী। আইলা ও নদী ভাঙ্গনে ছোট হয়ে গেছে দাকোপের মানচিত্র।
এদিকে আইলার পরবর্তী সময়ে দূর্গত এলাকা পরিদর্শন করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্যান্য যে কোন দূর্যোগের তুলনায় আইলার ক্ষতি বেশি ও দীর্ঘমেয়াদি। কিন্তু নানা কারনে তা সবচেয়ে কম আলোচিত হয়েছে। অনেকে বলছেন, আইলা হচ্ছে হারিয়ে যাওয়া একটি প্রাকৃতিক দূযোগের নাম। সরকারের উচিৎ সভা সমাবেশের মাধ্যমে দাতাদের তা মনে করিয়ে দেওয়া।
আইলা ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার বহুলোক জীবন জীবিকার সন্ধানে নিজ জন্মমাটি ছেড়ে চলে গেছে ভারতসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। নতুন করে ব্যাপক নদী ভাঙ্গন এখন এলাকার মানুষের মরার উপর খাড়ার ঘাঁ হয়ে দেখা দিয়েছে।আসন্ন বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙ্গনে মানুষের দুঃখ কষ্ট আরো অবর্ণনীয় হবে এই শঙ্কাই তাড়া করে ফিরছে বাঁধে আশ্রয় নেওয়া মানুষকে।
উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, বর্তমানে নদীর প্রবল জোয়ারের তোড়ে পাউবোর ৩১, ৩২ ও ৩৩নং পোল্ডারের ৩৪টি পয়েন্টে ভয়াবহ নদী ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এ সকল ভাঙ্গন গুলো দ্রুত সংস্কার করা না হলে যে কোন মুহুর্তে ভাঙ্গন কবলিত এলাকা নদী গর্ভে বিলিন হয়ে প্লাবিত হতে পারে লোকালয়। ভাঙ্গন কবলিত স্থান গুলো হল সুতারখালী ইউনিয়নের নলিয়ান বাজার, গুনারী, সুতারখালী ফরেষ্ট অফিসের পশ্চিম কোনা, কালাবগী পন্ডিত চন্দ্র স্কুলের সামনে, কালিবাড়ি লঞ্চঘাট, কামারখোলা ইউনিয়নের কালিনগর টাওয়ার এলাকা, কামারখোলা, জালিয়াখালী, ভিটেভাঙ্গা, জয়নগর, তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের কামিনিবাসিয়া পুলিশ ফাড়ি, মোজামনগর, আন্ধারমানিক, গড়খালী, বটবুনিয়া, বানিশান্তা ইউনিয়নের আমতলা পুলিশ ফাঁড়ির সামনে, বানিশান্তা বাজার, পতিতা পল্লী, পূর্ব ঢাংমারী বড় বাড়ি, ভোজন খালী, খেজুরিয়া, বাজুয়া ইউনিয়নের চুনকুড়ি খেয়াঘাট, কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়নের রামনগর হাটখোলা, বুড়ির ডাবুর, পানখালী ইউনিয়নের ফেরীঘাট, খোনা, মৌখালী, পানখালী, দাকোপ ইউনিয়নের দাকোপ লঞ্চঘাট, পোদ্দারগঞ্জ বাজার, দাকোপ খেয়াঘাট (কালিনগর আড়পার) চালনা পৌরসভার নলোপাড়া থেকে চালনা বাজার পুরাতন জামে মসজিদ পর্যন্ত, চালনা বাজার লঞ্চঘাট থেকে পাকা ঘাট পর্যন্ত। জনপ্রতিনিধিরা বলেন এ সকল ঝুকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ গুলো সংস্কারের জন্য সংশি¬¬ষ্ট পাউবো কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তারা অদ্যবদি সংস্কারের জন্য কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। দাকোপের গুনারী গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ মীর জানান আইলায় তার ঘরবাড়ি ফসলি জমি সবকিছুই শিবসা নদীতে বিলিন হয়েছে। এখন পাশ্ববর্তী বাঁধের উপর পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। দীর্ঘ ৫/৬ বছর আমার ফসলি জমিতে আমন ধান উৎপাদন করতে না পারায় সংসারে অভাব অনটন দেখা দিয়েছে। এখন এলাকায় সরকারী বেসরকারীভাবে সাহায্য হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ সমস্যা এখন প্রকট আকার ধারণ করেছে। বর্তমানে ৩২ নং পোল্ডারে প্রায় ২৬ শত পরিবার আইলার ৬ বছরেও বাড়ীতে ফিরতে পারিনি।
আইলা বিধ্বস্ত খুলনার দাকোপের কামারখোলা, জয়নগর, ভিটেভাঙ্গা, শিবনগর, শ্রীনগর, গুনারী, সুতারখালী, কালিবাড়ি, গোলবুনিয়া, কালাবগী, নলিয়ান, কামিনি বাসিয়া,বানিশান্তা,সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে আইলা দূর্গত মানুষের, জমি নেই, কাজ নেই। যাতায়াত ব্যবস্থা চরম ঝুকি পূর্ণ সমস্ত এলাকা জুড়ে আধা কাচা পাকা রাস্তা।উপড়ে পড়া ইলেক্ট্রিক খুটি তেমনি পড়ে আছে আজও চালু হয়নি সুতারখালী ইউনিয়নের বিদুৎ ব্যবস্থা। উপজেলা থেকে সুতারখালী লঞ্চ ও মটর সাইকেল যোগে ২৫ কিঃ মিঃ যেতে প্রায় ২ থেকে ৩ ঘন্টা সময় লাগে। বর্ষা মৌসুমে নদী পথ একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম। অর্থাভাবে দূর্গত এলাাকার মানুষ ঘরবাড়ি মেরামত করতে পারছে না। মানুষের শ্রম দেওয়ার জায়গা নেই। এলাকার শতভাগ মানুষ এখন শ্রমিক। শ্রমিক হলেও দূর্গত এলাকার কোথাও শ্রম দেওয়ার জায়গা না থাকায় অনেক পরিবার জীবন জীবিকার সন্ধানে ভারত সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিজ জন্ম স্থান ছেড়ে চলে গেছে। সামান্য সংখ্যক শ্রমিক কাবিখা ও ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচীর সাথে জড়িত রয়েছে। এছাড়া দূর্গত এলাকায় কৃষকের জমিতে বালির চর পড়ে উচুঁ হওয়ার কারণে তারা ওই সকল জমিতে ফসল ফলাতে পারছে না।
সুতারখালী ইউপি চেয়ারম্যান গাজী আশরাফ হোসেন বলেন, আইলার জলোচ্ছাসের টানে অত্র ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ৭ হাজার বিঘা জমি নলিয়ান নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। আইলার ক্ষত কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই নতুন করে নদী ভাঙ্গনে এখানকার মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। অনেক কৃষক তাদের জমিতে বালির চর পড়ে ভরাট হওয়ায় তারা ওই জমিতে কোন ফসল ফলাতে পারছে না। দীর্ঘ ৬ বছরেও অনেক পরিবারকে পুনঃ বাসনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। এলাকার শতশত পরিবারের লোকজন এখনো বেড়িবাঁধের উপর মানবেতর জীবন জাপন করছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভাগীয় কার্যালয় জানায়, ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার ৩৮টি পোল্ডারের সবই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ১হাজার ৬শত ৫১ কিঃমিঃ বেঁড়িবাধের মধ্য ৬শ ৮৪ কিঃমিঃ আংশিক ও পুর্ণাঙ্গভাবে বিধ্বস্থ হয়ে ছিল। ৬৩৯টি স্লুইস গেটের মধ্যে ১০৯টি অকেজ হয়ে যায়। তবে আইলার পর ৩৩টি পোল্ডারের ২৫০ কিঃমিঃ অংশ মেরামত করা হয়েছে
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মোসাদ্দেক আলী জানান, সত্তোর আশি দশকের সময় এ উপজেলার চালনা পৌরসভাসহ ৯টি ইউনিয়নে ২৪ হাজার হেক্টর কৃষকের আবাদি জমিতে আমন ফসলের চাষাবাদ হতো। কিন্তু পরবত্তী সময়ে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ও নদী ভাঙ্গনের কারণে কৃষকের জমির পরিমান কমতে থাকে। আইলার পূর্বে ১৯ হাজার ৫শত হেক্টর জমিতে কৃষক আমন ফসলের চাষাবাদ হলেও। আইলায় প্রায় ২শত হেক্টর জমি নদী গর্ভে চলে যায় এবং আইলার জলোচ্ছাসে উপকুলীয় এলাকার কৃষি জমিতে বালুর চর পড়ে উচুঁ ও কোথাও খাল হয়ে যাওয়ায় ওই সকল জমি অনাবাদি জমিতে পরিনত হয়েছে। গত বছর ১৯ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?
ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন
সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প
বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন
একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ
(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাড়ির কাছে আরশিনগর
বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।
কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমি ভালো আছি
প্রিয় ব্লগার,
আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন