somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতীশ দীপঙ্কর

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ দুপুর ১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বৌদ্ধর্ধমাবলম্বী বাঙালি পন্ডিত, র্ধমগুরু, শিক্ষাবিদ, দর্শনিক, লেখক , র্সবকালের র্সবশ্রেষ্ঠ বাঙালি জ্ঞানতাপস শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর 980 খৃস্টাব্দে ঢাকা জেলার বিক্রমপুরে বজ্রযোগিনী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা কল্যাণশ্রী, মা প্রভাবতী দেবী। পিতামাতা নাম রেখেছিলেন - আদিনাথ চন্দ্রর্গভ। 19 বছর বয়সে বৌদ্ধর্ধমে দীক্ষিত হ'লে নতুন নাম হয় - দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান।

পান্ডিত্যে প্রথম হাতে-খড়ি হয় জননীর কাছে। পরে অবধূত জেতারির কাছে শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন এবং বিহারের কৃষ্ণগিরি রাহুলের কাছে শাস্ত্রে দীক্ষিত হ'লে গুহ্যজ্ঞানবজ্র উপাধি লাভ করেন।

মাত্র 31 বছর বয়সে তিনি বৌদ্ধ ভিক্ষু হন। 1011 খৃস্টাব্দে বহুসংখ্যক শিষ্য নিয়ে তিনি সুর্বণ দ্বীপ বা মালয়েশিয়ায় যান। সেখানে 12 বছর বৌদ্ধর্ধম বিষয়ে গবেষণা করে জন্মভূমিতে ফিরে আসেন। এবং তৎকালীন রাজা মহীপালের অনুরোধে বিক্রমশীলা মহাবিহারের প্রধান অধ্যক্ষের পদে যোগ দেন। ধীরে ধীরে এ অঞ্চলে দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান একজন র্সববিষয়ের পন্ডিত হিসেবে পরিচিতি পান।

1041 খৃস্টাব্দে তিব্বতের রাজা চ্যান-চাব জ্ঞানপ্রভ র্কতৃক নিমন্ত্রিত হয়ে সেখানে যান র্ধমপ্রচারের জন্য। ঐ বছর তিনি প্রথম বাঙালি হিসেবে দুর্গম হিমালয় র্পবতমালা অতিক্রম করেন এবং যাত্রাপথে নেপালের রাজা র্কতৃক সম্মানিত হন। নেপালের রাজপুত্র পথপ্রভা তাঁর কাছ থেকে বৌদ্ধর্ধম গ্রহণ করেন। তিব্বতে গিয়ে তিনি পান রাজকীয় সম্মান। এখনো তিব্বতের মঠের দেয়ালে সেই সংর্বধনার দৃশ্য আঁকা আছে।

তিব্বতে গিয়ে তিনি র্ধম প্রচারের সাথে সাথে বৌদ্ধশাস্ত্র, চিকিৎসা ও কারিগরিবিদ্যা বিষয়ে তিব্বতী ভাষায় বই লেখেন। এবং তিব্বতে সম্মানজনক অতীশ উপাধি পান।

তিব্বতে তিনি গবেষণা কাজেও নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। সেখানে বহু প্রাচীন সংস্কৃত পুঁথি আবিষ্কার করেন। এবং এগুলোর প্রতিলিপি তৈরি করে বাঙলা দেশে পাঠান। এছাড়াও তিনি বহু গ্রন্থ অনুবাদ করেন ভোট ভাষায়। জানামতে দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের রচিত গ্রন্থ সংখ্যা প্রায় 200।

তিব্বতে অবস্থানকালে তিনি সেখানে শান্তিস্থাপনে কাজ করেন। তাঁর উদ্যোগেই রাজা ন্যায়পাল ও পশ্চিমদেশিয় র্কণরাজের মধ্যকার বিবাদ মিটে যায়।

তিব্বতে কাজ করে তিনি যে অর্থ আয় করেছিলেন, তাও নিজের জন্য ব্যয় করেন নি। স্থানীয় একটি নদীর পানি থেকে প্রতিবছর বন্যা হতো সেটি ঠ্যাকাতে তিনি সে অর্থ ব্যয় করে বাধ র্নিমাণ করেন। এবং বন্যা প্রতিরোধে সফল হন।

অতীশ দীপঙ্কর তিব্বতে খুবই শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। তিব্বতীয়দের কাছে তিনি বুদ্ধের অবতার বলে আজো পূজিত হন। শ্রীজ্ঞান তিব্বতে ছিলেন 17 বছর এবং সেখানেই 1053 খৃস্টাব্দে দেহত্যাগ করেন। তিব্বতের লামায় তাঁর সমাধি আছে। তিনি লামা র্ধম প্রর্বতন করেন

দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান অতীশ ১০৪০ খ্রিস্টাব্দে তিব্বত যাত্রা করেন৷ তখন তার বয়স ৫৯ বছর৷ ১০৪১ খ্রিস্টাব্দে তিনি নেপালে কাটান৷ মানস সরোবর থেকে তিব্বতে যাওয়ার দুটি প্রাচীন পথ আছে৷ তাদের মধ্যে অতীশ কোনটি গ্রহণ করেন তা সঠিক জানা যায় না৷ শ্রী শরৎচন্দ্র দাস তার অনুবাদে অতীশের সঙ্গীসহ যাত্রীদের একটি সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন, “৩৫ জন সঙ্গী পরিবৃত হয়ে অতীশ খোলিংয়ের পথে চলেছেন৷ (তার বাহন) অশ্বটি সুবর্ণ হংসের মতো মৃদুমন্দ গতিতে এই মহামুনিকে বহন করে চলেছে৷ অতীশের বয়স তখন ৬০ বছর৷ তবুও তার প্রশানত্ম মুখশ্রী ও অঙ্গসৌষ্ঠব তাকে দেবদুর্লভ মহিমামণ্ডিত করেছেন৷ সুস্মিতমুখে, উদাত্ত গম্ভীর স্বরে তিনি অনর্গল সংস্কৃত মন্ত্র উচ্চারণ করে চলেছেন৷ তার সুমিষ্ট বাচনভঙ্গিতে প্রতি বাক্যের শেষে তিনি বলছেন, ‘অতি ভালো! অতি ভালো! অতি মঙ্গল! অতি ভালো হত্র (হয়)৷”

অতীশের তিব্বতি শিষ্য ও পথসঙ্গী নাগছো ছুলঠিম জলবা তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে এই বর্ণনাটি দিয়েছেন৷ ভাষাতত্ত্বের বিচারে দেখা যায়, ভালো বা ভালা- এই শব্দটি একাদশ শতকের বাংলাদেশে প্রচলিত ছিল৷ অতীশের নিজমুখে উচ্চারিত বাক্যের এ নিদর্শন থেকে তিনি যে বাঙালি ছিলেন এ অনুমানই স্বাভাবিক৷

তিব্বতি সীমানত্মে রাজপ্রতিনিধিরা অতীশকে বিপুল সংবর্ধনা জানান৷ তারপর তারা চীনের ড্রাগন আঁকা একটি পাত্রে তিব্বতি প্রথায় প্রস্তুত চা অতীশকে নিবেদন করেন৷ তারা বলেন, এই স্বর্গীয় পানীয় কল্পদ্রম্নমের নির্যাস থেকে তৈরি৷ অতীশ এই উচ্চ প্রশংসিত পানীয়টির নাম জানতে চান৷ লোচাবা ছুলঠিম জলবা বলেন, ‘গুরম্নদের, এর নাম চা৷ তিব্বতের ভিক্ষুরাও এটি পান করেন৷ অতীশ তখন মনত্মব্য করেন, ‘তিব্বতের ভিৰুদের উন্নতশীলের গুণেই চায়ের মতো এমন চমৎকার পানীয় প্রস্তুত হয়েছে৷’ তিব্বতিরা বলেন, প্রথম চা পানের পর অতীশ চায়ের প্রশসত্মিমূলক একটি কবিতাও প্রকাশ করেন৷ আমার দুঃখ এই যে, সেই কবিতাটি আমি এখনো পাইনি৷

অতীশের জীবনীতে চা কে এত গুরম্নত্ব দেয়ার সম্ভবত অন্য কারণ আছে৷ তিব্বতের সম্রাট স্রোংচান গামপো-র পৌত্র চীন থেকে এ পানীয়টি আমদানি করার পর তিব্বতে চা জাতীয় পানীয়ের স্থান দখল করে৷ সম্পন্ন তিব্বতিরা দিনে ৩০ থেকে ৭০ কাপ চা পান করেন৷ স্বাভাবিকভাবেই তিব্বতের মানুষ তাদের জাতীয় ধর্মগুরম্ন অতীশকে চায়ের পরম সমঝদার রূপে চিত্রিত করেছেন৷ আজ পর্যনত্ম আমাদের পাওয়া তথ্যে অতীশই প্রথম বাঙালি চা পানকারী ও চা সম্পর্কিত কবিতার রচয়িতা৷

http://munshigonj.wordpress.com
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×