গত ৭ ও ৮ জানুয়ারি, ২০১২ সার্ক চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি(SCCI) এবং ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি(FBCCI) এর আয়োজনে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো সাউথ এশিয়ান ইয়্যুথ কনভেনশন( LEAD-2012 )। আর এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সার্কের অন্যান্য সদস্য দেশ থেকে আগত তরুণ শিক্ষার্থীদের সাথে অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছেন দেশী-বিদেশী নবীন-প্রবীণ সফল ব্যক্তিত্বরা। সেই সাথে প্রত্যেকের প্রতি আহবান জানিয়েছেন নিজেদেরকে দক্ষিণ এশিয়ার যোগ্য নেতৃত্ব হিসেবে গড়ে তুলতে।
অনুষ্ঠানের প্রথমদিনের ভেন্যু ছিলো বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র। আর পুরোদিনের আয়োজন বিভক্ত ছিলো চারটি পৃথক সেশনে, যার প্রথম তিনটি সেশনে ছিলো বক্তৃতা ও প্রশ্নোত্তর এর মাধ্যমে অভিজ্ঞতা ও মতামত বিনিময়। যেটাকে আমার নিজের কাছে কয়েকজন প্রকৃত সফল ব্যক্তিত্বের পাশে কয়েকজন প্রচারপিয়াসী উঠতি সমাজসেবকের শোডাউন ছাড়া আর কিছুই মনে হয় নি।
দিনের শেষ সেশনে ছিলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আর এতে অংশ নিয়েছিলেন বাংলাদেশের সঙ্গীতশিল্পী রুনা লায়লা, পাকিস্তানী মডেল মিস জুজ্ঞান কাযিম(Ms. Juggan Kazim), মিস-শ্রীলঙ্কা মিস স্টেফানী সিরিবর্ধানা(Ms. Stephanie Siriwardhana), পাকিস্তানী সঙ্গীতশিল্পী নেজাম সিরাজ(Najam Sheraz) এবং শ্রীলংকান নৃত্যদল। আর তরুণদের কাছে মূলত এটাই ছিলো আকর্ষণের কেন্দ্রে।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরুতেই রুনা লায়লা মঞ্চে উঠেন এবং সবাইকে অভিবাদন জানান। এবং তারপরই শুরু করেন নিজেকে আন্তর্জাতিক শিল্পী হিসেবে জাহির করার পর্ব। যদিও ঐ মুহুর্তে পুরো কনভেনশন রুমে উপস্থিত সিংহভাগই ছিলো বাংলাদেশী, তবু তিনি একের পর এক পাকিস্তানী ভাইদেরকে উৎসর্গ করে, ভারতীয় ভাইদেরকে উৎসর্গ করে উর্দু আর হিন্দি গানের পসরা সাজিয়ে বসেন। ফলে, অনুষ্ঠানের শিল্পীতালিকায় পাকিস্তানীসহ অন্যান্য দেশের পারফর্মার থাকা সত্ত্বেও তার এই বহুভাষী সঙ্গীতদক্ষতা দৃষ্টিকটু হয়ে উঠে উপস্থিত অনেকের কাছেই। তার গানের পরিসংখ্যানটা সংক্ষেপে দিলেও আশা করি সেটা বুঝতে সমস্যা হবে না। তার মোট পরিবেশিত গান ছিলো ১২টি; যার ৫টি বাংলা, ৩টি উর্দু, ৩টি হিন্দি এবং একটি পাঞ্জাবী। আর সেইসাথে এটাও উল্লেখ্য যে, বাংলা গানগুলোর বেশীরভাগই তাকে গাইতে হয়েছে দর্শকের চিৎকারে এবং বারবারই বলছিলেন এটা গাইতে নিষেধ আছে, এটা গাওয়া যাবে না। আমি জানি না, কারা তার উপর ওই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলো। আর তাছাড়া এই প্রশ্নও জাগে, বাংলাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী কি এখন আয়োজকদের ফরমায়েশী গানের শিল্পী হয়ে গেলেন নাকি?
এ প্রশ্ন আমি তুলতাম না। একজন শিল্পী কি গান গাইবেন, আর কি গান গাইবেন না; সেটা আমার মতো তুচ্ছ শ্রোতার ভাবনার ধার ধারে না। কিন্তু তবু আমি প্রশ্ন তুলছি; কারণ এটাই প্রথম নয়। এর আগেও, বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১১ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাকে দেখেছি একমাত্র উর্দুগানটি গেয়ে পাকিস্তানের অদৃশ্য নিশান তুলে ধরতে। আমরা যখন আমাদের দেশে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মতো বিশাল উপলক্ষ্যে আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি, ভাষা, দেশাত্ববোধ তুলে ধরতে ব্যস্ত, তখন আমাদের কোকিলকণ্ঠী গায়িকা জানান দিলেন তার উর্দুপ্রেমের, আয়োজক হতে বাদ পড়া পাকিভাইদের প্রতি সহানুভূতির। তাই, শ্রদ্ধেয় রুনাজ্বীর কাছেই জানতে ইচ্ছে করে, তিনি যখন বাংলাদেশে এতটা মূল্যায়িত হয়ে তার প্রথম যৌবনের পাকিপ্রেমকে ভুলতে পারেন নি, তখন তার প্রতি বাঙ্গালী শ্রোতাদের দৃষ্টিভঙ্গি কি হওয়া উচিত?
আর তাই সময় এসেছে, এদেশীয় সংস্কৃতির উপর ভারতীয়সহ বিভিন্নদেশীয় সংস্কৃতির আগ্রাসনে আন্তর্জাতিক শিল্পীর তকমাপিয়াসীদের ভূমিকাটা খতিয়ে দেখার এবং সমাধান খুঁজে বের করতে প্রয়াসী হওয়ার...

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


