সিলেটে শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে ভাস্কর্য নির্মাণের বিপক্ষে ৫১জন শিক্ষকের স্বাক্ষর সম্বলিত বিবৃতি এবং এর জের ধরে সুশান্ত দাসগুপ্ত কর্তৃক ঐ শিক্ষকদেরকে ছাগু আখ্যায়িত করা। এটা নিয়ে বেশ কয়েকজনের মতামত পড়লাম, যার মধ্যে শাবিপ্রবি'র ছাত্র সুদীপ্ত করের লেখাটিও আছে। সেখানে সে মূলত ৫১জন শিক্ষকের একজন 'শহীদ স্যার'কে নিয়েই পুরো লেখাটি লিখেছে। লেখাটি পড়ার পর আমার তাৎক্ষণিকভাবে যে চিন্তাভাবনা ও প্রশ্নগুলো মাথায় এসেছে, সেগুলো শেয়ার করছি-
১) শুধু একজনকেই সবাই ডিফেণ্ড করছে। তার মানে কি বাকিদের ক্ষেত্রে ছাগু উপাধি 'ওকে'?
২) সুদীপ্ত তার নোটে একটি স্ক্যানকপি দিয়েছে, যাতে দেখা যায় যে শিক্ষক শহীদ মূলত মূর্তির বিরোধিতা করেছে, মুক্তিযুদ্ধের নয়। সেখানে বিকল্প হিসেবে সাভারের ন্যায় স্মৃতিস্তভ নির্মাণের প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে একই লেখার আরেকটি স্ক্রীনশটে সুদীপ্ত দেখিয়েছে যে, একজন বলেছেন, শিক্ষক শহীদ নাকি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করেছেন। কোনটি সত্য?
৩) যদি তিনি ঐ পত্রে সাক্ষর করেন, তাহলে প্রশ্ন জাগে তিনি মূর্তি বলতে কি বোঝেন? তিনি মূর্তি আর ভাস্কর্যের সংজ্ঞা জানেন কিনা? কারণ তিনি বিকল্প হিসেবে সাভারের ন্যায় স্মৃতিসৌধের প্রস্তাব দিয়েছেন। যা বুঝলাম, মনে হলো তার আপত্তি মানুষের আদলে হওয়াতে। অর্থাৎ এটা যদি মানুষের মুখের মত না হত তাহলে কোনো আপত্তি ছিল না। সেক্ষেত্রে আমাদের 'অপরাজেয় বাংলা'ও তার মতে আপত্তিকর ও ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক। কাজেই তার এই মতকে যদি আমরা আজ সাপোর্ট করি,কাল সে 'অপরাজেয় বাংলা' ভেঙ্গে ফেলার জন্য আবেদন জানালে, সেটাকেও সমর্থন করা হবে!
৪) আর যদি সে সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিয়ে থাকে, তবে সেটা নিতান্তই নির্বুদ্ধিতা ছাড়া আর কিছু নয়। একজন চাষীও যেখানে সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিতে চাইবে না, সেখানে একজন উচ্চশিক্ষিত মানুষ হিসেবে তাকে তো এটা মানায়ই না।
৫) আমি বহুদিন আগে সচলায়তনে একখানা ব্লগ লিখেছিলাম। তখনও আমি ব্লগিংয়ে একেবারেই নতুন। সচল দিয়েই হাতেখড়ি হয়েছিল। তো আমার এক পরিচিত ডাক্তার আঙ্কেল ছিল, যিনি আমার এলাকার এবং বড়চাচার ক্লাসমেট। তার ব্যবহারও ভালো ছিল। কিন্তু তিনি গরীবের ছেলে ছিলেন, জামাতের টাকায় ডাক্তারি পড়ে জামায়াত ইসলামীর বেশ বড় পর্যায়ের নেতা হয়েছেন। আর আমার এলাকা জামাত অধ্যুষিত হওয়াতেই বোধ করি জামাত নিয়ে একধরণের অভ্যস্ততা হয়ে গিয়েছিল। জামাত-শিবির ঘৃণা করতে হবে, কেন করতে হবে এই ব্যাপারটা তখনো সেভাবে মাথায় আসে নি। তো আমি সেই ব্লগে অবচেতনে ঐ জামাত নেতাকে মুক্তচিন্তার অধিকারী বলে আখ্যায়িত করে ফেলেছিলাম। এরপর তো শুরু হলো হিমুভাই, অনার্যদাদের পঁচানি। কিন্তু তারপরও সে সময় এতটা উপলব্ধি করিনি, যতোটা করেছি পরবর্তী তিনবছরে- দেখে, শুনে, পড়ে, জেনে, বুঝে,।
শিক্ষক শহীদ আদতে কেমন লোক জানি না। কিন্তু তিনি যেহেতু বাকি ৫০জন ধর্মগোঁড়া শিক্ষকের সাথে একাকার হয়ে যেতে পেরেছেন (জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে), কাজেই মরিয়া হয়ে তাকে ডিফেণ্ড করা বা তাকে সমর্থন করা খুব একটা যৌক্তিক বলে মনে হচ্ছে না। এক্ষেত্রে সুদীপ্তদের বর্তমান অবস্থাটাকে আমার তিনবছর আগের অবস্থার মত বলেই মনে হচ্ছে। এরা এখনো জামাত কি জিনিস জানে না, চিনে না। জামাতের হাতে গোনা দুয়েকজন ছাড়া কাউকেই আমি সাধারণ মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে দেখিনি। উপরে ওরা খুবই ভালো। কিন্তু জানবেন, ঐ রগকাটা, সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার চালানো বা পুলিশের উপর হামলাকারী শিবিরকর্মীদের পিছনে ওরাই আছে। মেডিকেল ভর্তি কোচিং করতে বেশিরভাগের প্রথম পছন্দ রেটিনা। রেটিনার পাঠের মানও নিঃসন্দেহে ভালো। কিন্তু এই রেটিনাই হচ্ছে শিবিরের অর্থ ও কর্মী সংগ্রহের অন্যতম উৎস। আমাদের অজান্তে আমাদের দেয়া টাকাগুলোই ব্যয় হচ্ছে শিবিরের রগকাটা বাহিনীর পিছনে- হয়তো আমাদেরই রগ কাটতে!
ফেসবুক নোট লিঙ্ক

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


