অপারেশন করে বিরল রোগ উয়ের উল্ফ সিনড্রমে আক্রান্ত ১২ বছর বয়সী বিথীর ডান স্তন থেকেও কেটে ফেলা হয়েছে নয় কেজি ৪০০ গ্রাম ওজনের মাংস।
রোববার সকাল সাতটা থেকে দুপুর সাড়ে তিনটা পর্যন্ত বি-নেগেটিভ গ্রæপের তিন ব্যাগ রক্ত দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সার্জারি বিভাগে সম্পন্ন হওয়া এ অপারেশন ছিল বিথীর দ্বিতীয় অপারেশন। গত ২০ জুন বিথীর বাম স্তনে প্রথম অপারেশন হয়েছিল। সেসময়ও বাম স্তন থেকে নয় কেজি ৪০০ গ্রাম বাড়তি মাংস কেটে ফেলেছিলেন চিকিৎসকরা বলে জানিয়েছিলেন বিথীর বাবা আবদুর রাজ্জাক।
দুটো অপারেশনই বিএসএমএমইউর প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সহকারী অধ্যাপক ডা. ইকবাল মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে সম্পন্ন হয়েছে। রোববার বিকালে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘বর্তমানে রোগীকে আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) রাখা হয়েছে। অপারেশন সাকসেস ফুল।’ তিনি আরও বলেন, এ ধরণের কেস আমি আমার লাইফে পাইনি। যে দুটো অপারেশন তাকে করলাম, সে অপারেশন সচরাচর করা হয় ঠিকই, কিন্তু এতো জটিল ও কঠিন কেস নয়। এ অপারেশনের মাধ্যমে অস্বাভাবিক আকৃতির স্তনকে স্বাভাবিক আকৃতি দান করা হয়। বর্তমানে বিথীর শরীরের ওজন ২০ কেজি বলে জানান এই চিকিৎসক।
বিথীকে নিয়ে গত ২৬ এপ্রিল আমাদের সময় ডটকমে ‘বিথীর বিরল রোগ, ওয়েরউল্ফ নাকি হার্সুটিজম’, গত ২৩ জুলাই ‘বিরল রোগাক্রান্ত বিথীর ডান স্তনে অপারেশন আগামী শনিবার’ শীর্ষক শিরোনামে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল।
সহকারী অধ্যাপক ডা. ইকবাল মাহমুদ চৌধুরী জানান, বিথীর সমস্যাটি উয়ের উল্ফ সিনড্রোম। এ সিনড্রোমের প্রভাবে বিথীর মুখমÐলসহ সারাদেহে ঘন কালো চুল গজিয়েছে, ঠোঁট-দাঁত মাংস পিÐে রূপ পেয়েছে, দুই স্তনের আকৃতি বিশাল রূপ ধারণ করেছে।
১০৬ দিন ধরে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন বিথীর মুখে ইতোপূর্বে লেজার থেরাপি দিয়ে ঘনকালো লোম ফেলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু তা আবার গজিয়েছে। আবার আরও উন্নত মানের লেজার থেরাপি দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে বলে জানা যায়। আর স্তনের মতো আরও অপারেশন করে ঠোঁট ও মুখের বাড়তি মাংস কেটে ফেলার পরিকল্পনা আছে চিকিৎসকদের। তবে এটা করতে করতে কমপক্ষে ছয় মাস সময় নেয়া হতে পারে।
একমাত্র মেয়ে আরোগ্য লাভ করবেন- এমন আশা নিয়ে আজও দিন যাচ্ছে আবদুর রাজ্জাক-বিউটি আক্তার দম্পত্তির। রাজ্জাক বলেন, আমি ভাড়া করা মোটর সাইকেল দিয়া যাত্রী টানি। ওর চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা দরকার। আমার ব্যর্থতা একটাই, টাকা নাই। ওয়াল্টন গ্রæপ ছাড়াও দেশ-বিদেশের অনেক মানুষ সাংবাদিক গো লেখার মাধ্যমে জাইন্না আমার মেয়ের চিকিৎসায় সাহায্য করছে। সবার সহযোগিতা লইয়াই বিথীর চিকিৎসা এহন পর্যন্ত চালাইতে পারতাছি। সাংবাদিকরা প্রথমে লেখনের পর যেমনে ফোন পাইতাম, সহযোগিতা পাইতাম, এখন সেইটা পাই না। আমার মেয়েরে জানি কেউ না ভুলে। সবার সাহায্য না পাইলে পারুম না মেয়ের চিকিৎসা করাইতে (বিথীকে কেউ সহযোগিতা করতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন ০১৭১০৫২১৪৭৯। এটি বিকাশ নম্বর ও বিথীর বাবার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর)।
বিথীর ডান স্তনের থেকে কেটে ফেলা হলো নয় কেজি ৪০০ গ্রাম মাংস
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১০