somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রকমারি পাখির ঠোঁট, রকমারি ব্যবহার

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিভিন্ন পাখির ঠোঁট বিভিন্ন রকম। কাকের ঠোঁট এক রকম, বকের ঠোঁট এক রকম, আবার ধনেশের ঠোঁট আরেক রকম। একটি পাখির স্বভাব কেমন হবে, সেটি পোকা খাবে না ফল খাবে, না অন্য কোনো পাখিকেই খাবে সেটা নির্ভর করবে তার ঠোঁটের ওপর।
যেমন, চড়ুই তার ঠোঁট দিয়ে মাছ শিকার করতে পারবে না, তাকে খেতে হবে শস্যদানা। আবার, বক শস্যদানা খেতে পারবে না, তাকে ঠোঁট দিয়ে মাছ ধরতেই হবে।

বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ছয়শো প্রজাতির পাখি দেখা যায়। কাজেই চারিদিকের পাখিদের ভালোভাবে দেখলে আমরা অনেক রকমের ঠোঁট দেখতে পাবো। এখানে কয়েক ধরনের পাখির ঠোঁট ও তাদের ব্যবহার দেখা যাক।

কাকের সমাজে খাবার নিয়ে অতোটা বাছবিচার নেই। তাদের ঠোঁট সব রকম খাবার খাওয়ার উপযুক্ত। কাক এবং হাঁড়িচাচার ঠোঁটকে তাই বলা হয় জেনারেলিস্ট বা সর্বভুক ধরনের ঠোঁট। আমাদের খুব পরিচিত শালিকদের ঠোঁটও সর্বভুক ঠোঁট। তবে তা গঠনে খানিকটা আলাদা।



এর পর আসা যাক দোয়েলের ঠোঁটে। ছোট পোকামাকড় শিকারের জন্য এ ঠোঁট খুবই উপযুক্ত। পোকা ধরা এমন ধরনের ঠোঁটের মালিক আমাদের চারপাশের টুনটুনি, চাকদোয়েল, শ্যামাসহ আরও অনেক পাখি। কসাই (Shrike) পাখির ঠোঁটও এধরনের। তবে ওপরের ঠোঁটটি খানিক সুঁচালো ও বাঁকা হওয়াতে পাখিটি ছোট ছোট গিরগিটি, সাপ পর্যন্ত শিকার করে থাকে।



কেবল খাদ্যশস্য খেয়ে বেঁচে থাকে এমন পাখির ঠোঁট কেমন তা জানতে চাইলে চড়ুই পাখির দিকে তাকাতে হবে। চড়ুই, বাবুই আর মুনিয়াদের ঠোঁট এরকম। তবে চড়ুই কেবল খাদ্যশস্য খায় না; বিভিন্ন ফল, পোকামাকড় আর রান্নাঘরের উচ্ছিষ্ট পর্যন্ত খেয়ে থাকে।



ফুলের মধু খেয়ে জীবনধারণ করে মৌটুসি আর নীলটুনি (Sunbirds)। এদের ঠোঁট আবার লম্বা ও বাঁকানো। হামিংবার্ডের ঠোঁটের মতো অনেকটা। ফুলের মধু চুষে নিতে পারে এসব পাখি।



ধনেশের চারটি প্রজাতি আগে বাংলাদেশে দেখা যেতো। এখন তাদের দেখা যায় না। তবু চট্টগ্রাম ও সিলেটের পার্বত্য বনে একটি প্রজাতির দেখা পাওয়া যেতে পারে। শুধু ফল খাওয়ার জন্য বিকশিত হয়েছে ধনেশের ঠোঁট। বসন্তবৌরির ঠোঁটও ফলাহারী। তবে আকারে-প্রকারে বসন্তবৌরি আর ধনেশের ঠোঁটে পার্থক্য আছে।



কাঠঠোকরার ঠোঁট আবার বিশেষ ধরনের। তাদের ঠোঁট বিবর্তিত কাঠ ঠুকরে দেওয়ার জন্যই। গাছের গায়ে আর বাকলের ভেতরের পোকামাকড়, পিঁপড়া এদের খাদ্য। ঠোঁটের সাহায্য গাছের গায়ে গর্ত করে বাসা বানায় এরা।




পেলিক্যান এর বাংলা নাম গগনবেড়। এ পাখিরা সারা বিশ্বে বিখ্যাত মূলত তাদের ঠোঁটের নিচের থলের জন্য। এদের একটি প্রজাতিকে বাংলাদেশে দেখা গেছে এমন প্রমাণ আছে। এরা জলাশয়ে শিকার করার সময় ঠোঁট খোলা রাখে। তখন এদের ঠোঁটের নিচের থলেটা জালের মতো মাছ আটকে দেয়।



দেশি গাঙচোষা, পানিকাটা বা জলখোর (Indian Skimmer) একটি বিপন্নপ্রায় পাখি। এদের নামকরণ থেকেই বোঝা যায় এদের স্বভাব। এরা ঠোঁট দিয়ে পানি কেটে বা স্কিম করে ছোট ছোট মাছ শিকার করে। তখন ঠোঁটের নিচের ম্যান্ডিবলটা পানির নিচে থাকে। মাছ বা অন্য ছোট চিংড়ি তখন ঠোঁটে আটকা পড়ে।



কাদাতে খাবার অনুসন্ধানকারী অধিকাংশ পাখিদের ঠোঁট বেশ লম্বা ও বাঁকানো। এদের আদর্শ উদাহরণ গুলিন্দা (Curlew) নামের পাখি। এরা কাদার নিচে ক্রমাগত ঠোঁট দিয়ে অনুসন্ধান করে কেঁচো, ছোট ছোট কাঁকড়া শিকার করে। চ্যাগা (Snipe), বাটান বা চাপাখি (Sandpiper) ও এধরনের কিছু পাখিও একইভাবে শিকার করে। সবার ঠোঁটই কম বেশি লম্বা।[i



পাকড়া উল্টোঠুঁটি বা চেঙ্গা (Pied Avocet) বাংলাদেশের শীতের পাখি। তবে, খুব কমই দেখা যায় এদের। এদের ঠোঁট গুলিন্দার মতোই লম্বা ও বাঁকা, তবে একদম উল্টোদিকে বাঁকানো। এদের অগভীর জলাশয়ের কাঁদাতে ঠোঁট ডুবিয়ে পাশাপাশি নাড়িয়ে ছোট পোকামাকড় খুঁজতে দেখা যায়।



মাছরাঙাদের ঠোঁট আবার অন্যদের থেকে আলাদা ধরনের। এ ধরনের ঠোঁট থাকার ফলে মাছ শিকার করায় দক্ষ ওরা। একই রকম ঠোঁট পানচিলদের (terns)।

জলের নিচে ডুব দিয়ে যেসব পাখি মাছ শিকার করে, তাদের ঠোঁট আবার মাছরাঙার মতো নয়। ডুবুরি হাঁস (Grebes), পানকৌড়ি ও গয়ার (Darter) এমন ঠোঁটের অধিকারী। এদের ঠোঁট লম্বা ও সামনের দিকে কিছুটা বাঁকানো। ডুবুরি হাঁসের ক্ষেত্রে আবার অনেক সময় দেখা যায়, বাচ্চা তার মা-বাবার বুক ও পেটের পালক ঠুকরে ঠুকরে খাচ্ছে।



ফ্লেমিঙ্গো আমাদের দেশে দেখা যায় না। তবে পাখিটি টিভি চ্যানেল আর চিড়িয়াখানার সুবাদে অনেকেরই পরিচিত। এরা যেভাবে খাবার খায় তার নাম ফিল্টার করে খাওয়া (Filter Feeding)। ঠোঁট দিয়ে কয়েক ধরনের হাঁসও খাবার ছাঁকতে পারে।



চিলে কান নিয়ে গেছে— এমনটি আমরা শুনে থাকি প্রায়ই। চিল, বাজ, ঈগল এসব পাখিরা দেখতে অনেকটা আগ্রাসী গোছের। ঠোঁট হলো এদের ধারালো অস্ত্র। সে ঠোঁট দিয়ে এরা শিকার করে অন্যান্য পাখি, ইঁদুর, খরগোশ আর ছোট ছোট প্রাণি। এমন ঠোঁট আছে পেঁচারও।



আবার কিছু পাখি সত্যিই আগ্রাসী। এসব পাখি অন্য পাখির শিকার ছিনতাই করে নিয়ে যায়, অন্য পাখির বাচ্চা অপহরণ করে নিয়ে খেয়ে ফেলে। এমনকি অন্য পাখির খাবার ডাকাতি করেও নিয়ে থাকে। গাঙচিল এমন একটি পাখি। ফ্রিগেট বার্ড নামের একটি সাগরের পাখি এমন কাজে সবচেয়ে পটু।



কোনো পশু মারা গেলে তার মাংস খেতে শকুনের জুড়ি নেই। মরা পশু থেকে মাংস ছাড়াতে সাহায্য করে শকুনের ধারালো ঠোঁট। এধরনের ঠোঁট দেখতে প্রায় ঈগলদের মতোই।



পাখির রাজ্যে রয়েছে আরও অনেক রকমের ঠোঁট। যেমন: চামচঠুঁটি বা খুন্তেবকের (Spoonbill) ঠোঁট অনেকটা বড়ো আকারের চামচের মতো। হাড়গিলা, শামুকখোল, মানিকজোড় (Storks) এদের ঠোঁট অনেক লম্বা ও মোটা, এই ঠোঁট কখোনো কাঁকড়া, ব্যাঙ বা কচ্ছপ শিকারের জন্য, কখোনো ঠোঁট দিয়ে তালি বাজিয়ে অন্য পাখিকে ভয় দেবার জন্য।

সর্বোপরি, বিচিত্র রকমের পাখি, তাদের বিভিন্ন রকমের ঠোঁট ও সেই সাথে হরেক রকম খাবার সম্পর্কে আরও জানা যেতে পারে পাখি সম্পর্কিত বিভিন্ন বই, ওয়েবসাইট থেকে; চারিদিকের বিভিন্ন পাখিকে ভালোভাবে দেখে। বিষয়টি নিঃসন্দেহে বেশ মজার। তাই না?

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৩৮
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×