somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প : পাঞ্জাতনের ফকির

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সকাল ৮:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আহমদ ময়েজ
পাঞ্জাতনের ফকির

মনোপাগলা খেপেছে। মুখে ফেনা তুলে, বমি করে সব খিস্তি-খেউড় উগরে দিচ্ছে। একটি নিশ্বাস মাটিতে পড়ার আগে হাসফাঁস করে আরও একটি দম নিলে─মুখের ফেনা খিচুনি লাগা রোগীর মতো তুবড়ে তুবড়ে ওঠে। তারপর আবার শুরু হয়, ‘কুত্তার বাচ্চা। শুয়োরের বাচ্চা। খানকিরপুত। আমারে আতায়। আমি তার তলা খাইছিনি?’
জটলা বাড়ে। মনোপাগলা কখনও জটলার দিকে তেড়ে যায়, জটলা আরও বড় হয়। তার গলা চড়ে─আকাশ বিদীর্ণ করে আসমানের খোদাকে নামিয়ে আনতে চায়। বিড়বিড় করে বুকে কিল-থাপ্পড় মারে। একসময় কান্নায় তার গলা ভারি হয়ে ওঠলে ‘তিন পয়সার মোল্লা আমারে আল্লা চিনাইতো চায়, তার আল্লা তার, আমার আল্লা আমার। আমি মোল্লার আল্লা মানি না...’ বলে শাপতে থাকে। জটলা সরগরম হয়ে ওঠে। দড়াম দড়াম করে অনেকগুলো মুষ্ঠিবদ্ধ হাত ছুটে যায় মনোপাগলার চোয়াল লক্ষ্য করে। দেহভার নিয়ে মাটিতে লুটায়। তার বাবরি চুল ধূলায়-রক্তে একাকার হয়। মাটিতে গড়াতে গড়াতে চিল্লায়─‘আল্লেরে ... তুই আমার দিলের মালিক, তুই হক্কলতা দেখছছ। তিন পয়সার মোল্লায় মারছে, আমারে মারছে ... হে বান্দিবেটির মুত খায়। আমি তারে মাফ খরি দিলাম। কিন্তু ...’ এই সময় মনোপাগলার বুকের পিঞ্জর ফুলে আরও বড় হয়ে ওঠে। তড়পাতে তড়পাতে নিঃশ্বাস ছেড়ে শিশুর মতো কেঁদে ফেলে─‘.. তোমার বিচারে যেন হে মুক্তি না পায়। মুক্তি পাইলে তোর হক্ নাম ভুল অইবরাবা আল্লা, আল্-লা-হ্।’ মাটিতে মাথা ঠুকে ঠুকে শাপতে থাকে। মারমুখো জটলাটা এবার আস্তে আস্তে সরে গেলে, নিরীহ প্রকৃতির দরদী মানুষগুলো পা পা করে এগিয়ে আসে যারা এতোক্ষণ আতঙ্কে দূরে সরে গিয়েছিল।
জালাল বাবার মাজার। পাহাড়ে শায়িত-মরদ। লোকে বলে জিন্দাপীর। এক পাশে মসজিদ। আর তারই চারপাশ ঘিরে গড়ে উঠেছে মাদ্রাসা─সিলসিলায়ে দেওবন্দ। দেওবন্দের অনুসারী, হোসেন আহমদ মদনীর অনুসারী। ৭শ’ বছর পর মাজার অনুরাগীর পাশাপাশি মাদ্রাসার তালাবারাও কম বাড়েনি। দ্বন্দ্বটা তাহলে বিশ্বাসের না বৈষয়িক! হয়তো দুটোই। কিন্তু মনোপাগলা মারখায় কেন? মনোপাগলা কারো সাতেপাঁচে নেই। খাটমোল্লা তারে মারে। তবু মাজার ছাড়ে না সে। বরং কলবের জিকির নিয়ে আরো ঘনিভূত হয়। হতে হতে নিজকে বিলিয়ে দিতে চায় কারো কাছে। জালালী কৈতর উড়ে─আশিকের দৃষ্টি সীমানা ছাড়িয়ে, কিনব্রিজ মাড়িয়ে অনেক দূর। মনোপাগলা তাকিয়ে থাকে শূন্য দৃষ্টি নিয়ে। নাকের কষ, মুখের কষ এক হয়। মসজিদের সিঁড়ি থেকে হাত-বিশেক দূরে মনোপাগলা পড়ে আছে। দু’হাত দু’দিকে প্রসারিত করে বিস্ফারিত চোখ দু’টো কী যেনো খুঁজছে। বিকেলের নোরম রোদ মিনার ছুঁয়ে ঠিকরে পড়েছে চারদিকে। কৌতুহলীদের পায়ের আওয়াজ কাছে এসে আবার একটুপর মিলিয়ে গেলে একটা চিক্কইরের ধ্বনি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে মুহূর্তে। বিভাজন হয়ে ছড়িয়ে পড়া নারী কণ্ঠের ভয়ার্ত চিক্কইরে মনোপাগলার চোখের পাতা একটু কেঁপে গেলে সে টের পায়, স্বশরীরে কেউ তার বুকের উপর আছড়ে পড়েছে। মনোপাগলা ‘উফ’ করে ওঠে।
- আহ্, মরিয়ম র্হ। মোল্লায় মারছে।
মরিয়ম কিছুই বোঝে না। অনেক কথা বলতে চায়, তার বুক ছিঁড়ে শুধু কান্না আসে। মরিয়ম নামের নারীটি মনোপাগলার সঙ্গে সারাক্ষণ লেপটে থাকে, কিংবা লেপটে থাকতে অনেকটা বাধ্য। পাগলার মার খাওয়া নতুন কিছু নয়। সেও কতবার তার সাথে থেকে মার খেয়েছে। তবু পাগলার পিছু ছাড়ে না মরিয়ম। এবার মাজারে তার মানত ছিল, দু’রাকাত নফল নামাজ পড়বে। মাজারের সিঁড়ির লাগোয়া একটি ঘর। ঘরটি শুধু মেয়েদের জন্য। গেইট দেওয়া-পর্দা টানানো। মাজারে শায়িত জালাল বাবা চিরকুমার বলেই হয়তো মেয়েদের মূল মাজারের ভেতর প্রবেশ করা নিষেধ। পর্দা টানানো ঘরটিতে মেয়েদের এবাদত করার রেওয়াজ চালু আছে বহুকাল। মরিয়ম ঝর্ণার কুয়োতে ছাফ-ছুতরো হয়ে সেই কখন ঢুকেছিল এবাদতখানায়। মনের ভেতর একটা ভয়-শঙ্কা তাকে জড়োসড়ো করে রেখেছিল। অপরিচিত রহস্যময় ঘরটিতে এই তার প্রথম আসা। চারপাশ এক অচেনা ঘোর-লাগা জগত। ঘরের দেয়াল ঘেষে ধোঁয়া উঠছে, আগরপোড়া ধোঁয়া। স্থানে স্থানে কাঠের টুকরোতে গলা-মোম বাতাসার মতো জমাট বাঁধা। মহিলারা ভাবলেশহীনভাবে বসা, ঠোঁটে মৃদু কম্পন। সাদা ধবধবে কাপড় তাদের পরনে। আতর আর গোলাপজলের গন্ধে মরিয়মের দম বন্ধ হয়ে আসে। প্রত্যেকের চেহারায় প্রার্থিব অহংকারের ঝিলিক খেলা করে। মরিয়ম দেখে, এক মহিলা ব্যাগ থেকে তাড়াতাড়া নোট বের করে, হাত ইশারায় দূরে বসে থাকা আরেক মহিলাকে ডেকে টাকাগুলো তুলে দিচ্ছে। ইঙ্গিতে বাইরে বিলি করে দিয়ে আসতে বলে। মরিয়ম আজ প্রর্থনায় এসেছে। তার উদর শূন্য। তাড়াতাড়া নোট তার শূন্য উদরকে আরও উগলে দিতে চায়। এতো টাকা দেখে তার লোভের রিপু উসকে উঠে। অনেক কষ্টে নিজকে ধমক দেয় সংযমী হয়ে থাকার জন্য। নোটগুলো নিয়ে মেয়েটি চলে যায়। যেতে যেতে মরিয়মকে একনজর দেখে নিলে মরিয়ম আরো জড়োসড়ো হয়। সে একধরণের ভয়ার্ত চোখে চারদিকে তাকায়। কোথায় বসবে বুঝতে পারে না। নিজের গায়ের শাড়িটা খুব একটা পুরানো নয়, তবু এই মহলে তার শাড়িটা তেনা-তেনা লাগে। আগের দিন মনোপাগলার গেরুয়া চাদরে গা ঢেকে আট-আনার বাংলা-সাবান দিয়ে পরনের শাড়িটা ভালো করে কেঁচে দিয়েছিল। এই জৌলস-মহলে তার দীনতাটুকু চাপা থাকেনি। সাহসে ভর করে মরিয়ম এক কোণে বসে পড়ে। বসেও মনের ভেতর বড় শরম অনুভব করে, সঙ্গে একটু একটু ভয়ও। প্রার্থনার জন্য কিছুই খুঁজে পায় না। প্রার্থনার ভাষা সে ভুলে গেছে। মোল্লাবাড়ির মেয়ে সে, তার ক্বলবের ভেতর অনেক পবিত্র কালাম জমা ছিল। কিন্তু আজ সবকিছু কোথায় যেন তাবাই হয়ে গেছে। কাকে যেনো মনে মনে গালি দেয়─বৈতলের পাল্লায় পড়ে জীবনটা একেবারে তছনছ হয়ে গেল বলে। মরিয়ম কি আজ প্রভুর নামও ভুলে গেছে? কী যেন সে আতিপাতি করে খুঁজে। চাওয়ারও কিছু খুঁজে পায় না। কী চাইবে আর কী চাইবে না! সারাক্ষণ দীনতার মধ্যে থেকে প্রভুর কাছে কীবা চাইবার আছে? একসময় তার চাওয়ার ফর্দ অনেক লম্বা ছিল। এখন ছোট হতে হতে কেবল এক মনোপাগলাতে এসে ঠেকেছে যে লোকটা কিনা কেবল সারাদিন মাজারেই ঘুরে বেড়ায়। সিদ্ধি খায়। পাগলাটাকে কেন্দ্র করেই তার সব চাওয়া-পাওয়া, এই লোকটা ছাড়া তার আর কিছুই নেই। পাশের মানুষগুলোর কীসের অভাব? এরা বাবার মাজারে কী চাইতে এসেছে মরিয়ম জানে না। এদের শরীরের চেকনাই দেখলে কার্তিকমাসের গৃহস্থবাড়ির চিকনাই-মাটি দিয়ে লেপে দেয়া ঘরদোরের কথা মনে পড়ে। স্বামী-পুত্র-ধন-দৌলত-ঐশ্বর্য-ক্ষমতা, কী তাদের নেই - মরিয়ম জানে না। আজ প্রার্থনার ভাষা ভুলে গিয়ে একজন মরিয়ম নিজেকে বড় অসহায় অনুভব করে। তার অন্তর ফুঁড়ে প্রতিদিন যে কথাটি উদয় হয়, প্রভু কি তা জানেন না! যে কথাটির জন্য প্রতিদিন মনোপাগলার সঙ্গে থেকে থেকে রক্তাক্ত হয়, তিনি কি তা জানেন না? তাহলে কেন এতো ঘটা করে আলাদা করে বলা─প্রার্থনা করা? মরিয়মের কাছে হঠাৎ করেই স্থানটি প্রার্থনার অযোগ্য মনে হয়। পাথরের দেয়াল ফুঁড়ে, আতর আর লোবানের গন্ধ মাড়িয়ে তার আর্তি আর পৌঁছবে না অদৃশ্যের মায়াময় অন্দরে─যেখান থেকে মরিয়মের জন্য এতোটুকু শান্তির বারিধারা বর্ষিত হবে। মাটিতে পুঁতে রাখা আগরের মাথায় যে অগ্নি স্ফুলিঙ্গটি জ্বলে জ্বলে দেবে যাচ্ছে নীচের দিকে - মরিয়মও একইভাবে গেঁথে যাচ্ছে জীবনের সঙ্গে। তার মুখশ্রী ছাঁই রঙ করে আগুনের হল্লাটা কেবলই ভেতরে ধাবিত হয়। মরিয়ম সাঁৎ করে উঠে দাঁড়ায়। কান সতর্ক হয়েছিল অনেক আগেই। বাইরের কোলাহল ঠাওর করে ফেলেছে সে। পাগলার আর্তচিৎকার তাকে দিশেহারা করে ফেলে। তোয়াজ-তমিজের একটুও বালাই না মেনে মরিয়ম ছুটে আসে পাগলার কাছে। মনোপাগলাকে একা ছেড়ে দিয়ে সে যেন মস্ত বড় অপরাধ করে ফেলেছে─সে দুঃখে তার গলা থেকে অদ্ভুত এক গোঙানী রোদন হয়ে ছড়িয়ে পড়ে মাজারের চারপাশে।

মনোপাগলা ঘোলা চোখে মরিয়মকে দেখে। তার গলা শুকিয়ে আসছে। জিব চেটে গলা ভেজাবার চেষ্টা করে। মরিয়ম বুঝতে পারে পাগলার এখন ক্ষিধে জেগে উঠছে। সে চারিদিকে চোখ বোলায়। মাজারের এক কোণে গজার মাছ ভর্তি পুকুর। মাছগুলো বয়সের ভারে অলসভাবে ঘুরে বেড়ায়। তাদের খাদ্যের কোন চিন্তা নেই। এই মাছগুলোর বয়স কতো? এসবই বাবার কেরামতি─বলেছিল মনোপাগলা। তখন এক ঘোরের ভেতর থেকে খুব তমিজের সঙ্গে এসব কাহিনীর বর্ণনা তুলে আনতো সে।
মরিয়ম পাগলাকে আস্তে করে তুলে ধরে কোমর পেঁচিয়ে পুকুরটাকে পিছনে রেখে ঈদগাহমুখো হয়। পাগলার বাম হাতটা তুলে ধরে নিজের কাঁধে। পা পা করে ঈদগাহর দেয়ালের আড়ালে নিয়ে যায়। খুব যত্ন করে বসায়। মাথার পেছনে কম্বলটা রেখে দেয়ালে ঠেস দেয়। নিজেও বসে। মুখ থেকে ধূলো-বালি ঝাড়ে। এতোক্ষণে পাগলা একটু হাসে। হাসিটা প্রসারিত হবার আগেই কাটা ঠোঁটে টান পড়লে ব্যথায় কঁকিয়ে ওঠে। মরিয়ম মিষ্টি করে বলে, ‘বৈথাকো। লইড় না।’
পুকুর পাড়ে শিণœী বিতরণ হচ্ছে। মরিয়ম সেদিকে এগিয়ে যায়─কিছু যদি নিয়ে আসতে পারে সেই ভরসায়। সে ভিড় ঠেলে কাছ ঘেঁষার চেষ্টা করে। লোকটাকে ভিখারীর দল বলার চাকের মত ঘিরে ধরেছে। একটু দূরে ধবধবে পায়জামা-পাঞ্জাবী পরা এক ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর চোখে-মুখে প্রশান্তির দীপ্তি। মনে হয় এইমাত্র তিনি সাতসাতটা বেহেশতের চাবিগুচ্ছ হস্তগত করে ফেলেছেন। তার পক্ষ থেকেই শির্নি হচ্ছে। মরিয়ম অনেকটা কাছে এসে হাত বাড়ায়। লোকটা একদলা তোষা মুঠ করে মরিয়মকে দিতে গিয়ে পা বাড়িয়ে তার কাছে ঘেঁষে। ইশরায় আঁচল পাততে বলে। মরিয়ম খুশি হয়ে আঁচলটা মেলে ধরলে লোকটির শির্নি ধরা হাত বিদ্যুৎ বেগে আঁচলের তলায় নড়ে ওঠে। মরিয়ম শরীরে একটা জ্বালা অনুভব করে। তীব্র চোখে লোকটার মুখের দিকে তাকায়। লোকটা একটা নোংরা হাসি ছুঁড়ে দেয়।
মরিয়মের ক্ষিধেটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। তার চেয়ে অধিক ক্ষিধেয় মনোপাগলা ছটফট করছিল। নিজের ক্ষুধা, মনোপাগলার ক্ষুধায় কাতর মুখ ছাপিয়ে অপমানবোধটা ক্ষ্যাপার মতো তার মাথা আউলা করে দেয়। আঁচল থেকে তোষার দলাটা হাতের মুঠোয় তুলে নেয়। তারপর সমস্ত ঘৃণা-শক্তি এক করে লোকটার মুখের উপর ছুড়ে মারে। এক মুহূর্তে লোকটাসহ ফকিরের দল থ’ মেরে দাঁড়িয়ে যায়। মরিয়ম পিছন ফিরে চলে যেতে উদ্যত হলে লোকটা চিৎকার করে বলে, শির্নি বন্ধ। এই ফকিরণী বাবার শির্নির অপমাণ করছে।
হইচই, কোলাহল আর খামচা-খামচির ভেতর থেকে যখন মরিয়ম বেরিয়ে আসে ততক্ষণে শরীর ক্লান্তি আর অবসাদে নেতিয়ে পড়েছে। তার আচরণে অন্যদের শির্নি খাওয়া বন্ধ হলে মূল্য তো দিতেই হবে। ফকিরের দল তাকে তক্তাপেটা করেছে। গন্ডগোল বাঁধানোর দায়ে গার্ডের লাঠিপেটাও বাদ পড়েনি। আক্রমণটা বুঝতে পেরে মরিয়মের ইচ্ছে হয়েছিল দৌঁড়ে গিয়ে দীঘির জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। গজার মাছগুলোর তলায়─একেবারে অন্ধকার পানির ভেতর লুকিয়ে আত্মরক্ষা করে। এতোগুলো লোকের চিৎকারের ভেতর তার নিজের গলাই শুনতে পায়নি সে। টলতে টলতে ঈদগাহর দিকে এগিয়ে যায় যেখানে মনোপাগলাকে বসিয়ে রেখে এসেছিল। মনোপাগলাকে ডাকতে চায়। গলার আওয়াজ কাশির মতো খক্ খক্ করে ওঠে। মিনার থেকে মাগরিবের আজান-ধ্বনি থেমে থেমে ছড়িয়ে পড়ে দিগন্তে। মরিয়ম চোখ তুলে দীর্ঘ মিনার দেখে। ঐ মিনারের চূড়ায় চড়ে তার গলা ছেড়ে ডাক দিতে ইচ্ছে করে, পাগলারে ... আমারে লইয়া যা। আমি আর পারি নারে পাগলা।
মরিয়ম মনোপাগলার পাশে ধপ্ করে বসে পড়ে। অন্ধকার হয়ে আসছে। মনোপাগলা ঢুলছে। আলো-অন্ধকারে মরিয়মের মুখ পড়তে চেষ্টা করে সে। মার খাওয়া মুখ দেখে মনোপাগলার হাসি পায়─‘তোরেও মারছে!’
- অয়! মারির কথা আর কইয়ো না। তোমার অতো খুশি খুশি লাগের কেনে। মনে অয় ফেটো কোন্তা পড়ছে।
- পানি, মিশিনর পানি। যা তুইও খাইয়া আয় বলে মনোপাগলা অনেকক্ষণ হাসে। মরিয়ম ঝিম ধরে পাগলার হাসির কারণ বোঝার চেষ্টা করে। একসময় নিজেও হেসে ওঠে। দু’জনের হাসির সঙ্গে দুঃখগুলো কৌতুক হয়ে ছড়িয়ে পড়ে।
কার্তিকের ঠা-া তেমন কিছু নয়। তবুও মরিয়মের শরীর কাঁপছে। শিরিষ গাছের পাতা ঝরার শব্দে চোখ দুটো বুজে আসে। দেয়ালের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন এখানকার সম্মানিত ব্যক্তিত্ব মাওলানা আকবর আলী। দরগাহ মাদ্রাসার মোহতামিম। বয়োবৃদ্ধ, লোকে বলে একশ’র উপরে বয়স। গেট পেরিয়ে যখন তিনি দরগাহর দু’পাশে সারিবদ্ধ দোকানপাটগুলো অতিক্রম করেন লোকজন সশ্রদ্ধায় দাঁড়িয়ে থাকে। কারোর দিকে তিনি অতি উৎসাহ্ নিয়ে তাকান না। ঠোঁট দু’টো সারাক্ষণ নড়তে থাকে─পাঠে ব্যস্ত পবিত্র কালামের। গভীর অন্তর্দৃষ্টি নিয়ে পড়তে চান চারপাশ, নীরবে। কয়েক যুগ ধরে দরগাহ মসজিদের ঈমামতিতে নিয়োজিত। তমিজের সাথে লোকে তাঁর হেঁটে যাবার পথ প্রশস্ত করে দেয়। মরিয়ম শুধু জানলো না এতো সব। ক্ষুধা তাকে কিছুই জানতে দেয় না। দড়াম করে হাত পেতে বসে তাঁর সামনে। ‘বাবা, পেট খালি। মানুষটাও মরবো। লগে আমিও।’
হেই-হেই বলে মাদ্রাসার ছাত্ররা তেড়ে আসলেও মরিয়ম টলে না। দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে সামনে। মাওলানা হাত তুলেন। ছাত্ররা থেমে গিয়ে কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে থাকে। মাওলানা আকবর আলী শান্ত-ধীর পায়ে সামনের দিকে পা বাড়ান─মরিয়মকে পাশ কাটিয়ে। মরিয়মের নাকে-মুখে বাতাস লাগে─আতরের সুগন্ধীমিশ্রিত বাতাস। সেও পিছু পিছু হেঁটে যায়। ততক্ষণে নিয়নবাতিগুলো জ্বলে উঠেছে। মরিয়ম পিছন থেকে আন্দাজ করতে পারে, লোকটা তেমন বড়সড় নয়। হালকাপাতলা গড়ন। ঢোলা-ঢালা জামার ভেতর শরীরটা যেনো হাওয়ার উপর ভর করে হেঁটে যাচ্ছে। ঈদগাহর পূবদিকে মাদ্রাসার সারিবদ্ধ টিনশেড-দফতরখানা। তারই প্রথমটিতে এসে তিনি থামলেন। পকেট হাতড়ে চাবিগুচ্ছ বের করলেন। সূইচ টিপে বাতি জ্বেলে পিছন দিকে ঈশারা করে মরিয়মকে দাঁড় করালেন। মরিয়ম সাহস করে বারান্দায় উঠে আসে। মাওলানা আকবর আলী সুপার বিস্কুটের টিন খুলে মুঠিভরে বিস্কুট তুলে নেন কাগজের ঠোঙ্গায়। তুলে ধরেন মরিয়মের সামনে।
- নাও, ক্ষিধা তো কিতা অইছে মা। ইতা তো থাকবো-ই।
‘কিতা অইছে’ বলা তাঁর লফ্জ যা প্রতিটি বাক্যের সঙ্গে তিনি অন্তত একবার উচ্চারণ করেন। মরিয়ম বিস্ময়ভরা চোখে একজন কালো মানুষের চেহারা অবলোকন করে যার শুকনো-পাকনা কালো হাড্ডির ভেতর অসংখ্য মানুষের বেদনা লুকিয়ে রয়েছে। সে আরও প্রত্যক্ষ করে, পবিত্র এই শান্ত-সৌম্য অবয়বে কোনো ভাবান্তর নেই। কম্পিত হাতে বিস্কুটের ঠোঙ্গাটা তুলে নেয়। একবার ইচ্ছে হয় দায়িতার হাত দুটো একটু স্পর্শ করে দেখতে, আলতো করে চুমু দিতে, চোখের পাপড়ি দিয়ে বুলিয়ে নিতে। সে তার ইচ্ছার তরঙ্গ অনেক কষ্টে দমন করে চোখ বুজে ফিরে আসে।

২.
মধ্যরাতে ঝর্ণার পার জেগে উঠলে শিঙ্গার গমগম আওয়াজ আর মোমের আলোর অধিক ঘনত্বে এক ধরণের ইন্দ্রজাল তৈরি হয়। এক কুহুকের ভেতর একদল মানুষ তাদের আরাধনায় আরশের কুর্সি কাঁপাতে উদ্যত হলে, ঢোল আর মন্দিরার দামাইল চালে কূয়োর ভেতর সোনার কৈ-মাগুর লাফাতে থাকে। দামাইলের মুদ্রায় মরিয়মের ভেতর জ্যোৎস্নার আলো নিয়ে কে একজন নৃত্য করে নামতে থাকে। সে একটু একটু করে কাঁপে। তার শরীর বেয়ে বৃষ্টির দানাগুলো ফুল ফোটায়। ঝর্ণার পার থেকে একটু দূরে আগচালা বারান্দায় কতোটা ঘুমে কতোটকা জাগরনে বুঝতে পারে না। মনোপাগলা তার পাশে ধ্যানমগ্ন। রাত্রি বাড়ে। বৃহস্পতি-রাত। আজ তার ফানাফিল্লার রাত। বর্জ্যক ধ্যানের মদিরা-রাত। এ রাতে মুর্শিদের পবিত্র চরণ ঘাটে ঘাটে ঘুরে। অন্তরে পাঞ্জাতনের বাতি, আগর-ধুপ জ্বালতে পারলে সে চরণ ঘরে তোলা যায়। মুর্শিদের এই বাতেনি নির্দেশ মনোপাগলা মনেপ্রাণে পালন করে। তাই এ রাত বড় ছওয়াবের রাত। এই রাতে কি বাবার মাজারে জিনেরা জিয়ারত করতে আসে? মাঝ-রাতে গাছের চিরল পাতা গলে যে চাঁদনী নামে তা কি কেবল চাঁদনী না অন্য কিছু। চিন্তার স্রোতের ভেতর চোখ দুটো আরও আর্দ্র হয়ে আসে মরিয়মের। মনোপাগলাই তো বলেছিলো, মন্দ জিনগুলোকে শাপ দিয়ে জালাল বাবা গজার বানিয়ে রেখেছেন। আর যারা জালাল বাবার হুকুমের তাবেদারি করতো, গোলামি করতো, তারা হয়ে উঠেছে জালালি কৈতর, সোনার কৈ-মাগুর।
- আহ্; মরিয়ম তুই বড় বেশি বকছ!
মরিয়মকে ধাক্কা দেয় মনোপাগলা। মরিয়মের তন্দ্রা ভাঙ্গে। সে বুঝতে পারে না স্বপ্নে ছিল না জাগনা ছিল। ঘোর কেটে গেলে পাগলার দিকে মুখ তুলে চায়। কী হয়েছে বুঝতে পারে না। মনোপাগলা বলে, ‘ঘুমাইতে ঘুমা। ঘুমোর মাঝে অতো মাতছ কেনে? তোর আবার দোষ যা ভাবছ, ঘুমাইলে সব বারই যায়। ফেটো কোন্তা থাকে না।’
- আমি কোন্তা কইছিনি? হাছা-কথা কও?
পাগলা গুম হয়ে থাকে অনেকক্ষণ। নিশুতি রাত যখন বাড়ে পাগলাকে তখন কথার নেশায় পায়─মনে মনে কথা বলে। ঝোলা থেকে গাঁজার কলকে বের করে। ছোট্ট কাঠের টুকরোতে ভালো করে ধুয়ে রাখে নেশার পাতা, পাট্টা। পাগলা বলে সিদ্ধি। ডাঁটা মিশানো পাট্টা লোহার ধারালো বাটালী দিয়ে কুচি কুচি করে কাটতে থাকে সে। থেমে থেমে কুচি করা পাট্টার দিকে ঝিম ধরে চায়─একটা ভাব ধরতে চেষ্টা করে। মরিয়ম অতসব বুঝে না। এ-সময় কথা বললে পাগলা খেপে যায়। কিন্তু পাগলা নিজে আবার কথা বলে, বিড় বিড় করে বলে। ছোট্ট বাটালী চালানোর সময় বাবরীচুল দুলে ওঠে মুখটাকে একবার ঢেকে দিয়ে আবার একটু ফাঁক হয়ে উঁচু নাকটা বেরিয়ে আসলে, নাকের ডগায় জমে উঠা বিন্দু বিন্দু ঘাম মরিয়মের বুকের খাঁচায় একটা মায়ার টান তৈরি করে। কাঠের টুকরোর উপর পাট্টা জড়ো করে পাগলা এভাবে বার বার বাটালী চালায়। মরিয়ম ততোক্ষণ অপেক্ষা করে। এতোকাল সে কেবল এভাবেই শুনে আসছে, পাগলা যা বলে মরিয়ম সব বিশ্বাস করে। পাগলার কথা শুনে তার অন্তর কিসের এক মুগ্ধতায় ধুয়ে যায়। সুপারীর কৌটা খুলতে খুলতে সে আঁড় চোখে দেখে, মনোপাগলা নারকেলের শুকনো খোসাকে চুলের খোঁপার মতো কুণ্ডুলীপাকিয়ে লোহার চিকন শলায় গেঁথে মোমবাতির শিখায় তুলে ধরে। সিদ্ধির কলকের জন্য এভাবে সে টিক্কা তৈরি করে। টিক্কাটা পুড়ে গণগণে লাল হয়ে ওঠলে কলকেতে চেপে ধরে। ছোট্ট একটা ভেজা তেনায় কলকের নীচের অংশ পেঁচিয়ে নিয়ে আরো কিছুক্ষণ মনোপাগলা দম বন্ধ করে থাকে। চোখ বুজে বিড়বিড় করে। যোগাসনে বসে কলকেটা দু’হাতের তালুতে ধারণ করে কপালে ঠেকায়। ছোট-ছোট ক’টা টান শেষে, কষে একটা লম্বা টান মারলে তার অর্ধ উন্মিলিত চোখের পাতায় আরক পুড়তে থাকে। ভেজাপাট্টার পোড়া পোড়া গন্ধের সাথে কলকের মুখগহ্বর থেকে ছোট ছোট স্ফুলিঙ্গ বাতাসে মিলিয়ে যেতে থাকলে, পাগলা একসময় অনুভব করে নিজের ভেতরটাও সিদ্ধ হয়ে উঠছে। এভাবে সে সাধুর অন্তরঙ্গ জগত ছুঁতে চাইলে, জগত সংসারকে তুচ্ছ করে মহাপুরুষ হতে চাইলে, মরিয়ম পাগলার তাগাবদ্ধ বাহু স্পর্শ করে। পাগলা মরিয়মের মস্তকটা এমনভাবে উঁচিয়ে ধরে─দৃষ্টি যেনো এখনই জালালী-সুউচ্চ মিনার স্পর্শ করে যাবে। মরিয়ম পাগলার চোখের ভেতর পড়বার চেষ্টা করে─‘তোমার চোখ জালালবাবার গজার মাছর মতো লাগের। তুমি ইলা চাও কেনেরে পাগলা। আমার ডর লাগের।’ পাগলা বড় রহস্যের হাসি হাসে। এই হাসির ভেতর সে লুকিয়ে রেখেছে গজার মাছ আর জালালি কৈতরের রহস্যময় গল্প─এক ঝোলাভর্তি গল্প যা মরিয়মকে এখনই শোনাতে চায়। মরিয়ম জানে পাগলাকে এখন জোশে পেয়েছে। জোশে পেলে পাগলা দিল-দরিয়া হয়ে ওঠে। মরিয়ম শোনার জন্য কানপাতে, সন্তর্পণে। গলায় ঝুলে থাকা তাবিজটায় চুমু খায়─যেনো এখনই নিশুতি রাত খান খান হয়ে অন্ধকারের কপাট খুলে যাবে। কিন্তু কিছু সময় অতিবাহিত হলে মরিয়ম মনোপাগলার ভাবান্তর বুঝতে পারে না। সে আজ অন্যমানুষ।
‘মুখো তালা মারিদিছোনি, ছিপি খুলো পাগলা?’─মরিয়ম বলে।
- বউরে আমি তারে পাইলাম নারে ... বউ─এক বিমর্ষ উচ্চারণে মনোপাগলা সারা জনমের বেদনাকে এভাবেই প্রকাশ করে। যদিও মরিয়ম তা শোনার জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিল না। সে নিজেকে অন্যকিছু শোনার জন্য, জানার জন্য তৈরি করছিল। মনে মনে কিছুটা বিরক্তই হয়।
- আফনে ছাফছতুর অইয়া নামাজ পড়উকা, তানারে ফাইবা নে ...।
মরিয়ম থেমে গেলে মনোপাগলা রক্তচক্ষু দৃষ্টি নিয়ে তার দিকে চায়-যেনো গাঁজা-কাটার বাটালী দিয়ে এখনই জিবটা কেটে ফেলবে। মরিয়ম ভয়ে আড়ষ্ট হয়।
- শেষমেষ তুইও আমারে বুঝলে নারে বউ। আমি আর কোওয়ায় যাইতামরে ... আল্লা!
মনোপাগলার গলা কান্নায় ভারী হয়। চক্ষু বুজে আসে। মরিয়ম পা জড়িয়ে ধরে─‘আমারে মাফ করি দেউকা, আমার ভুল অইগেছে।’ সাহস করে ঘনিষ্ট হয় মরিয়ম।
পাগলা কথা বলে নিজের সঙ্গে, নফছের সঙ্গে। বুকের ভেতর তুফান বইছে, সে আল্লাহকে চায়, আল্লাহ নামের ধ্বনির ভেতর নিজেকে লীন করতে চায়। কলবের ভেতর তুলে আনতে চায় হক্ক নাম। কিন্তু কীভাবে। সে রিফ্যু দমন করতে পারেনি। পেটে ক্ষুধা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, দমন করতে পারেনি। নফছ জেগে ওঠে, দমন করতে পারেনি। বউটাকে ছেড়ে এসেছিল, বউ তাকে ছাড়েনি।
তখনও রাত কাটেনি। পশ্চিমাকাশে ধলপ্রহর আসেনি। ঝর্ণাপারের গাঁজার আসরের মানুষগুলো ক্লান্তিতে নেতিয়ে এলে, সুরের মুর্ছনার শেষ রেশটুকু বাতাসে একটু একটু করে ঘুরে বেড়ালে, মনোপাগলা মরিয়মের উরুতে সেজদায় নুয়ে পড়ে হু হু করে কেঁদে ওঠে। আর মরিয়ম থ হয়ে অনুভব করে─এক ঘরছাড়া মানুষের চোখের উষ্ণ নোনাজলে তার কাপড়-উরু-সংসার সব ভেসে যাচ্ছে। যে ছিল একসময় তার কলমাপড়া স্বামী, তারও অনেক আগে যে ছিলো গ্রামের এক তাগড়া যুবক, যে বাতাসে বাবরী চুল উড়িয়ে আলপথ ধরে গান বাঁধতো। গান করতো। বুরো-খেতের কামলা খেটে বাড়ি ফিরলে আগ-পিছের সবক’টি ঘরের যুবামেয়েগুলো তখন বুঝতে পারতো, তাগড়া গায়েন বাড়ি ফিরেছে। আর ঐ বয়সেই মরিয়ম মোল্লাবাড়ির মেয়ে হয়েও, যার পরপুরুষের সঙ্গে কথা-বলা নিষেধ তা জেনেও মরিয়ম মনোহর উদ্দিন ওরফে মনো-গায়েনের বুকে কিছু স্বপ্ন রুয়ে দিয়েছিল। আজ এতোটা সময় অতিবাহিত হবার পর─সংসার জীবনের স্বপ্নগুলো ধূসর রঙ ধারণ করলে, মরিয়ম নিজের দেহটিকে ঝিমধরা, ঠাণ্ডামারা একটি কবর ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারে না। এই যে প্রচেষ্টা─পাগলাকে সংসারী করে তোলার নিরন্তর যুদ্ধ, যার জন্য প্রতিদিন অপমান, গঞ্জনা সয়ে-যাওয়া আর এক দঙ্গল লোকের কাছে নিয়তই খারাপ বলে চিহ্নিত হওয়া─সবকিছু আজ এক ফুঁৎকারে ডুবে যেতে থাকে।

উপসংহার :
মরিয়ম কি হাল ছেড়ে দিয়েছিল? এক তারা ফোটা রাতে মরিয়ম বলেছিল পাগলারে, আমার যে আর অয় (হয়) নারে পাগলা। পাগলা বলে, কিতা (কী হয় না)?
ইস্! বুঝইন না আমার বাতানে। ঘুমর মাঝে খালি মরদানি করইন।
মনোপাগলার ঝিম ধরে যায়। পলকহীন চোখে মরিয়মকে দেখে। দেখে, সমস্ত শরীরে ওর প্রশান্তির প্রলেপ। সে যে সংসারে তাকে বাঁধতে চায়, সেই সংসার জীবনের সূত্রগুলো, চিহ্নগুলো একে একে পাগলার চোখে ধরা পড়লে, পাগলা ত্রস্ত হয়ে ওঠে। চঞ্চল চোখ দু’টো ঝুলার ভেতর নিবন্ধ করে কম্পিত হস্তে সিদ্ধির কল্কে সাজাতে থাকে।

নোট :
ক. বৈথাকো লইড় না (বসে থাকো নড়বে না)
খ. ফেটো কোনতা থাকেনা (পেটে কিছুই থাকেনা
গ. কোওয়ায় যাইতামরে আল্লা (কোথায় যাবোরে আল্লা)
ঘ. ইলা (এভাবে)
ঙ. আপনে ছাফছতুর অইয়া (আপনি পরিষ্কার হয়ে)
চ. মুখোতালা মারিদিছোনি (মুখে কি তালাবদ্ধ)
ছ. বুঝইন না (বুঝে না), মরদানি করইন (পৌরুষ প্রদর্শনী)

২০০৫-এ ভোরের কাগজে প্রকাশিত
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সকাল ১০:১৫
২২টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×