somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পৃথিবির সর্ববৃহৎ স্থাপনা গুলো--থ্রি জর্জেস ড্যাম

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সোজা বাংলায় বললে ড্যাম শব্দের বাংলা অর্থ বাধ। প্রাকিতিক কোন পানির গতিপথ( যেমন নদি, খাল ইত্যাদি) কে কৃত্তিম উপায়ে বাধা দিয়ে মানুষের পয়োজনে কাজে লাগানো। পৃথিবীর ইতিহাসে ড্যাম অনেক পুরানো একটি স্থাপনা। আগে ড্যাম তৈরি করা হত মুলত কৃষিকাজে সুবিধার জন্য অথবা বন্যা বা নদির গতিপথ পরিবর্তনের জন্য। কিন্তু আধুনিক এই ইলেকট্রনিক্সএর যুগে ড্যাম তৈরি হচ্ছে কেন?? এবং কিভাবেই বা তৈরি হচ্ছে?? আসুন দেখি পৃথিবির সবচেয়ে বড় ড্যামটি এবং এর তৈরির সকল বর্ননা।


গনচীনের ইয়াংজি নদির উপর স্থাপিত এই ড্যামটি এই মুহুর্তে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ড্যাম। এখন আসি ড্যাম এর আসল কিছু বিষয় সম্পর্কে।
ইয়াংজি নদি একটি বিশাল নদি যার উৎপত্তি একটি পাহারি অন্চল থেকে। নদিটি চিনের অর্থনিতির একটি গুরুত্বপুর্ন অংশ। চীন এই মুহুর্তে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ দেশ মানুষ সংখ্যা এবং অর্থনিতির ক্ষেত্রে। এই বিশাল অর্থনিতির জন্য প্রয়োজন বিপুল পরিমান কলকারখানা এবং তাদের জন্য প্রয়োজন সাশ্রয়ি মুল্যে বিদ্যুৎ। এবং সে জন্যই প্রথম ১৯৩৯ সাথে এর পরিকল্পনার কাজ শুরু হয়। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের দ্বারা দখল এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক সমস্যার কারনে প্রযেক্টটি দির্ঘদিন আলোর মুখ দেখেনি। সবশেষে ১৯৯৪ সালে ড্যামটি আলোর মুখ দেখে। শুরু হয় ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ এবং সর্ববৃহৎ এই ড্যামটির কাজ।
প্রথমেই বলেছি ড্যামটির মুল উদ্যেশ্য হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা। হাইড্রোলিক পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যে বিষয় গুলো প্রয়োজন।
১) বিশেষ ভাবে তৈরি টারবাইন।(সাইজ দেখছেন? এক একটা ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে। এরকম ৩২ টা টারবাইন স্থাপন করা হয়েছে ড্যামটিতে।)


২) টারবাইনের সাথে তৈরি জেনারেটর। এগুলো বেশেষ ভাবে চিনে তৈরি জেনারেটর। এগুলো কম হিট জেনারেট করে। যারা এই ব্যাপারে পরাশুনা করছেন তারা বুঝবেন। ছবিতে দেখা যাচ্ছে জেনারেটর গুলো উপরে উল্লেখিত টারবাইনে সাথে যুক্ত করা হচ্ছে।


৩) টারবাইনে পানি সন্চালনের ব্যবস্থা।


খুব ভাল করে খেয়াল করুন এই বিশাল আকারের পাইপগুলো থেকে পানি উপরের ছবির টারবাইনকে আঘাত করবে। এবং সেটি ঘুরবে সাথে জেনারেটরকে ঘুরাবে।


এইবার কিছু সাধারন বিষয় জেনে নিন।
১) সর্বোমোট ৩৪ টি জেনারেটর রয়েছে ড্যামটিতে। ৩২ টি ৭০০ মেগাওয়াটের এবং ২ টি ৫০ মেগাওয়াটের। যারা সব মিলিয়ে ২২৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎতাপদন করতে পারবে। মনে করা হচ্ছে এটি বাৎসরিক ১০০ টেরা ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা রাখে।
২) এর টারবাইন গুলোকে ফ্রান্সিস টারবাইন বলা হয়। এগুলো পার মিনিটে ৭৫ বার ঘুরে এর সর্বোচ্চ ক্ষমতায় যেতে পারে।
৩) জেনারেটর গুলোর বাইরের ব্যাস কম বেশি ৭০ ফিট। এবং ভিতরের ব্যাস কমকেশি ৬০ ফিট।
৪) আমরা যেটাকে কয়েল বলি(স্টেটর) সেগুলো হচ্ছে পৃথিবীর এইমুহুর্তে সবচেয়ে বড় স্টেটর। এক একটার বিয়ারিং লোড হচ্ছে ৫০৫০-৫৫০০ টন পর্যন্ত।


স্টেটর।
প্রায় ২.৩ কিলোমিটার লম্বা এই ড্যামটির পাওয়ার প্লান্ট এর চিত্র।



ড্যাম বানাতে গেলে আপনি প্রথম যে সমস্যায় পরবেন তা হচ্ছে কন্সট্রাকশনের স্থানটিতে একটি অস্থায়ি বাধ দেয়া। কারন অস্থায়ি বাধদিতে না পারলে আপনি ড্যামটির বেইজ করতে পারবেননা। অস্থায়ি বাধ তৈরিতে প্রয়োজন পাথর বার মাটি। কিন্তু বিশাল গভিরতা সম্পন্ন এবং ২.৩ কিলো একটা নদিতে একটা অস্থায়ী বাধ তৈরির জন্য এত বিপুল পাথর কোথায় পাওয়া যাবে??
সমাধান হচ্ছে চায়না সরকার এই ড্যমের অস্থায়ী বাধ তৈরির জন্য হাজার হাজার বিশাল সাইজের কংক্রিটের ব্লক তৈরি করে। এই ব্লক গুলো নদিতে স্তুপ আকারে ফেলে একটি নির্দিস্ট এরিয়া কাভার করে তার পর তার পানি সেচ করে মুল নির্মান কাজ শুরু হয়। ছবিতে অস্থায়ি বাধটি দেখা যাচ্ছে।



এর পর আসে ড্যামের বেইজ এবং নির্মান জনিত কিছু টেকনিক্যাল সমস্যা।
এতবড় প্রযেক্ট যার দৈর্ঘ ২.৩৩ কিমি আর প্রস্থ ১৩১ ফিট এবং উচ্চতা ৬০০ ফিট কমবেশি। তার মানে প্রায় ৬০ তল বিল্ডিং এর সমান উচু। আপানাকে অবশ্যই একে একটি শক্ত ভিত্তির উপর স্থাপন করতে হবে। কিন্তু নদির তলাতে তো শক্ত কিছু তো নেই উল্টা নরম কাদা মাটি। এটির একটি খুব পুরানো এবং চমৎকার উপায় আছে। নরম মাটির মধে ছোট ব্যসের কিন্তু খুব গভির কিছু গর্ত করা হয় এবর তার মধ্যে সিমেন্টের মর্টার প্রচন্ডচাপে প্রবেশ করানো হয়। এগুলো পরে জমে গিয়ে পুরো ড্যামটির জন্য একটি প্রচন্ড শক্ত বেইজ তৈরি করা হয়।

নির্মানজনিত সবচেয়ে মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে নতুন মিক্স করা কংক্রিটের তাপমাত্রা কন্ট্রোল করা।


আমরা সামান্য একটা বিল্ডিং এর ৪-৫ ইন্চি ছাদ ঢালাই দিতে গেলে প্রত্যেকটা নির্মান সামগ্রি ভাল করে ভিজিয়ে নেই এবং বার বার ভিজাই কারন তাপমাত্রা কন্ট্রোল করার জন্য। কারন সিমেন্ট পানির সাথে বিক্রিয়া করলে একটি ভাল মানের তাপমাত্রার উৎপত্তি হয়। এতে সমস্যা কোথায়???
যদি একলেয়ার কংক্রিটের তাপমাত্রা ঠান্ডা না করে তার উপর আর এক লেয়ার কংক্রিট ঢালা হয় তবে উপরের লেয়ার দ্রুত ঠান্ডা হয় কিন্তু ভিতরের গরম লেয়ার কোন না কোন এক সময় ফেইল করবে। এছারা সংকোচন এবং প্রসারনে কিছু ব্যাপার আছে। এবং এতে ভায়বহ দুর্ঘটনা ঘটাবে। এই সমস্যার সমাধান করেন আমেরিকার হুভার ড্যাম এর এক নির্মান প্রকৌশলি।


তিনি ড্যামটি ছোট ছোট লেয়ারে নির্মান করেন। ছবিতে ভাল করে খেয়াল করুন। এবং মিক্সিং এর জন্য বরফ হওয়ার ঠিক আগের তাপমাত্রার পানি ব্যবহার করেন। ঠিক এই বুদ্ধিটি ব্যবহার করে থ্রি জর্জেস ড্যাম এর ইন্জিনিয়াররা। তারা এর সাথে বরফ এবং ঠান্ডা পানির স্প্রে ব্যবহার করে। যদিও এতে লেবারদের ভায়নক স্বাস্থ ঝুকি থেকে যায়। কিন্তু এ ছারা আর কোন উপায় নাই।

আগেই বলেছি চীনের ইয়াংজি নদি অর্থনৈতিক দিক দিয়ে একটি গুরুত্বপুর্ন নদী। এই নদী দিয়ে প্রচুর মালবাহি এবং মানুর্ষ বাহি জাহাজ চলাচল করে। কিন্তু ড্যাম তো অনেক উচু এবং পুরো পানি পথকে আটকিয়ে দিছে। এই সমস্যার সমাধান করে লক গেইট। আপনার তো মনে হয় পানামা থালের লক গেইট গুলো দেখেছেন?? এখানে একই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।


তবে ডিফারেন্স হচ্ছে এখানে লকের সংখা ৫ টি যাতে সর্বোমোট ৪ ঘন্টার উপরে লাগে একটি জাহাজকে নিচে নামতে বা উপরে উঠতে। তবে এখানে একটি মজার কাজ হচ্ছে। তার হচ্ছে পৃথিবির প্রথম লিফট যা জাহাজ তুলবে এবং নামাবে। এত বড় লিফট পৃথিবীর ইতিহাসে আর কখোনো তৈরি হয়নি।
সর্বোমোট ৩০০০ টন ওজন বহন করতে পারবে লিফটি। এটি একটি হাইড্রোলিক লিফট। তবে লিফটটির কন্সট্রাকশন কাজ এখনে চলছে।


লাস্ট জানা গেছে লিফটটির চারটি কলামের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ শেষ করে এটি জাহজা বহন করা শুরু করবে ২০১৫ সালে।

এর পর সমস্যা ছিল ইরোশন এবং সেডিমেন্টেশন। আগে বলি এই জিনিষটি হয় নদির পানির বয়ে আনা বিপুল পরিমানে পলি যা মাটিকে উর্বর করে এবং ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করে। এই ড্যামটির নিচে ঠিক নদির সেডিমেন্টেশেন স্তরে একটি বিশাল গর্ত সমৃদ্ধ পাইপ বসানো হয়েছে। ফলে ড্যামটির পুরোপুরি না হলেও ৪০-৫০% পলি ছেরে দিতে পারে।


উপর থেকে নেয়া ছবিটিতে খেয়াল করুন টারবাইনের ছোরা পানি ছারাও নিচ দিয়ে ঘোলা একটি পানি যাচ্ছে। এটিই হচ্ছে মুলত সেডিমেন্টশনের পানি।

ড্যামটি তৈরিতে একটি বিশাল পরিবেশ বিপর্যয় ঘটানো হয়েছে। কারন ড্যামের ঠিক পিছনে একটি সুবিশাল বনান্চল ধংশ হয়েছে রিজার্ভারের পানির কারনে। প্রায় ৬৩০০ প্রজাতির গাছ তার আসস্থল হারিয়েছে। যার মধ্যে ৫৭ শতাংশই বিলুপ্তপ্রায়। এছারা বিপুল পরিমান বন্যপ্রানি তার আবাসস্থল হারিয়েছে। আবাস্থল হারিয়েছে প্রায় ১৩,০০,০০০ মানুষ যারা সবাই ওই অন্চলের আদিবাসি। যাদের প্রায় অর্ধেকই আর নতুন সমাজের সাথে মানিয়ে নিতে পারেননি। এছারা অনেকেই সরকারের প্রতিশ্রুত নতুন
আকাসস্থল পাননি।

এই লেখাটি লিখেঠি মুলত না জানাকে জানার জন্য। আমি নিজেও অনেক কিছু শিখেছি।

আর উৎসর্গ করছি রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের বিরুদ্ধে যারা সোচ্চার তাদের প্রতি। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র আমাদের ধংস ছারা আরকিছু দিবে না। তাই আসুন সব ভেদাভেদ ভুলে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হই এবং এর সুন্দর বন ধংসকারি এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র কে না বলি।

এতক্ষন কস্ট করে পরার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×