somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি রাত এবং ভালোবাসার গল্প

১৪ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৪:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভেজা ঘাস এর রাস্তায় হাঁটছি। পেছন পেছন একটা কুকুর আসছে। কিছু একটার গন্ধ শুঁকবার চেষ্টা করে চলেছে। জনমানব শুন্য রাস্তা, এতরাতে কেই বা বের হবে। টাও আবার গ্রামের বাড়িতে। কুয়াশাও বেশ পরেছে,তেমন একটা দেখা যায় না। রাত দুটা কি আড়াইটা হবে। গ্রামের রাস্তার দুপাশ জুড়েই বেশ বড় বড় গাছ আর ঘাস থাকে তাই এতো রাতে হাঁটার সাহস ও হচ্ছে না। যদি সাপ থাকে,তার ওপর আবার নীলার ভুতের ভয় তো আছেই। সে যে হাত খামচে ধরেছে আর ছাড়ার নাম নেই। বাধ্য হয়ে খাল এর ধার ঘেঁষে চলা রাস্তা দিয়ে হাঁটছি। খালের ওপর পাড় থেকে আলো আসছে, খড়ের স্তুপ দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ধান সিদ্ধ করা হচ্ছে। একটা বাঁশ আর সাথে আরেকটা বাঁশ ধরুনি হিসেবে,এটার ওপর দিয়ে পার হতে হবে। পায়ে কনভার্স থাকায় আমার খুব একটা অসুবিধে হবে না কিন্তু নীলার পায়ে হিল,তাও একেবারে পেন্সিল হিল ! এটা পায়ে উঠলে পানিতে পরতে আর সময় লাগবেনা। সাকোর কাছে এসে দাঁড়িয়েছি পার হবো বলে,ধুপ করে একটা আওয়াজ হল। কিছু বুঝে উঠার আগে আমি নিজেকে আবিষ্কার করলাম যে খালের কর্দমাক্ত হাঁটু পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছি আর নীলার খিল খিল হাসি শুনছি। খালের পাড়ে এসেই এভাবে অন্ধকার এর মাঝে পাড় দিয়ে পিছলে কাঁদায় পড়তে হবে কে ভেবেছিলো। পায়ের গোড়ালি থেকে একটু বেশি হবে পানির পরিমাণ। সেই কাঁদা পানিতে পরে আছি। একে তো শীতের রাত তার ওপর আবার নীলা হাসছে আমার অবস্থা দেখে। ওর হাসির শব্দে মেজাজ যারপরনাই বেগতিক হারে খারাপ হল।কোথায় আমাকে সাহায্য করবে না মেয়ে টা হেসেই যাচ্ছে এমন পরিস্থিতি তে। বিরক্তি মাখা কণ্ঠে ওকে ধমকের সুরে বললাম সাহায্য টা তো করবে নাকি আমি এভাবেই পরে থাকবো আর তুমি হেসেই যাবে ? রাত টা কি এখানেই কাটাবে বলে ঠিক করেছ ? আজিব মেয়ে। আমার ধমক শুনে নীলা অনেকটাই দমে গেল। ও সামনে এগিয়ে ডান হাত টা বারিয়ে দিল। ওর হাত ধরে যেই না উঠতে যাবো তখন বুঝতে পারলাম যে পা দুখানা গোড়ালি পর্যন্ত কাঁদায় ডুবে আছে। ওর ওইটুকুন শক্তি তে কুলাবে না যে আমাকে টেনে তুলবে। তবে মাথায় আসলো যে ওকেও ফেলে দেই, বত্রিশ টা দাঁত বের করে হাসার মজা টা বুঝবে তাহলে শীতের রাতে কাঁদা পানিতে পরলে। নাহ,কি দরকার ওকে কষ্ট দেওয়ার। পরক্ষনেই সে চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে ওকে হাত টা ছেঁড়ে দূরে সরে দাড়াতে বললাম। তারপর আমি নিজে প্রথমে ডান পা টেনে তোলার চেষ্টা করলাম।উঠে এলো ভাল মতই। তারপর ঘুরে ডান পা টা যত টা সম্ভব দূরে পাড়ে রেখে ডান হাত দিয়ে পাড়ে গুল্ম জাতীয় আগাছা ধরে যতটা সম্ভব শক্তি দিয়ে উঠে এলাম উপরে। গাছ টাউপড়ে যাবে ভেবেছিলাম কিন্তু গেলো না। বেশ শক্তই আছে গাছের গোঁড়া টা। কিন্তু উঠেই বুঝতে পারলাম বাম পায়ের কনভারস টা কাঁদায়ই রয়ে গিয়েছে।
কনভার্স এর দুঃখ অনুভব করার মত অবশ্য অবস্থা তখন ছিল না আমার। হাঁটুর খানিক টা নিচ পর্যন্ত কাঁদা আর শার্ট ভেজা অনেকটাই এবং শ্যাওলা জড়ানো কয়েক জাগায়ই। আর তো তার ওপর শীত ও বেশ ভালই। ভালই কাঁপুনি দিচ্ছে শরীর। আমি মোটামুটি হতবাক হয়েই দাড়িয়ে আছি। এ অবস্থায় কি করবো মাথায় আসছে না। প্রায় পুরোই ভিজে গিয়েছি। পকেট থেকে মুঠোফোন টা বের করে দেখলাম ভিজে বন্ধ হয়ে আছে। গেলো ফোন টা। এর মানে যোগাযোগ ও বন্ধ সবার সাথে। নিজের কপালে নিজেরই জুতা দিয়ে বারি মারতে ইচ্ছে করছে এখন। কার মুখ দেখে যে আজকে ঘুম থেকে উঠেছি। আসার সময় খবরের কাগজ টাও ধরা হয়নি। তাহলে রাশিফল টা দেখে আসতাম। আজকে বিপদ আছে কি না কোন। তাহলে প্রস্তুতি নিয়ে আসতাম ওরকম করে। কি আবলতাবল ভাবছি, আজিব! মাথা মনে হয় গিয়েছে পুরোই। অবশ্য এরকম অবস্থায় পরলে কার ই বা মাথা ঠাণ্ডা থাকে! এসব আবল তাবোল ভাবতে ভাবতে নীলার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। আচ্ছা আসলেই তো! ওর কোন সাড়াশব্দ নেই যে, কই গেলো মেয়ে টা! আশে পাশে তাকিয়ে না পেয়ে চিন্তায় পরে গেলাম। বেশ খারাপ ভাবেই ভয় বাড়তে লাগলো। ভাবলাম মেয়ে টা তো মাত্রই এখানে ছিল। কোথায় যাবে এতটুকু সময় এর ব্যাবধানে! নিজেকে একটু ঠাণ্ডা করার চেষ্টা করলাম, আশে পাশেই তো আছে হয়তো। কোথায় আর যাবে। একটু মাথা ঠাণ্ডা হতেই কাছেই একটা গাছের আড়াল থেকে হাল্কা ফুঁপানোর শব্দ পেলাম। কাছে গিয়ে দেখি নীলা কাঁদছে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে। ঘেমে গিয়েছিলাম ওর চিন্তায়, যাই হোক ওকে দেখে একটু শস্তি পেলাম। জিজ্ঞেস করলাম কি হল কাঁদছ কেন ? ও কোন জবাব দিল তো না ই উল্টো আরও জোরে শব্দ করে কান্না শুরু করে দিল। এগিয়ে আমার বুকে মাথা রাখতে নিয়েছিল আমি আঁতকে উঠে পিছিয়ে বললাম ভিজে যাবে তো। আমি পুরোপুরি ভিজে গিয়েছি যে। ও ওভাবেই কাদতে লাগলো। বুঝতে পারলাম তখন ধমক টা বেশিই জোরে দিয়েছিলাম। ওর কাছে মাফ চাইলাম। বললাম যে এরকম আর হবে না লক্ষ্মীটি। মাফ করে দেও না এবারের মত। হাতজোড় করে মিনতি করছি লক্ষ্মীটি। ক্ষমা করো। ওর চোখ মুছে দিতে হাত বাড়াতেই ও বলল যে তোমার হাত ভেজা, ছুবে না আমাকে। এমনি তেই শীত করছে। আমি আরও অভিমান করে বললাম, আর আমি যে পুরো ভিজে আছি ? তার কি হবে ? এখন তমাকেও ভিজিয়ে দিব কিন্তু! ও হেসে উঠে বলল ভুল করেও এ কাজ করবে না, তোমার খবর আছে, হাহ। এর মাঝেই আবার মাথায় চিন্তা শুরু হল, আমরা ঢাকা কি করে যাবো! আমার এই অবস্থায়! আর ওর বাবা যদি আমাদের খুঁজে পায়! তাহলে তো আমাদের মেরেই ফেলবে।



নীলা আর আমি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন এর প্রথম থেকেই আমাদের ভালবাসার যাত্রা শুরু হয়। আজ আপাতত এই পরিস্থিতি তে আছি। নীলা আর আমার বয়স যেহেতু একই তাই আমাদের বিয়ে টা আটকে ছিল, আমি স্বাবলম্বী না হওয়া পর্যন্ত তো কোন উপায় নেই। আমরা যখন এম.বি.এ করছি তখন হঠাৎ একদিন ও আমাকে বলল যে ওর বাবা ওর বিয়ের জন্য পাত্র দেখছে। আমি যেন খুব শীঘ্রই কিছু একটা করি। আমার না আছে কোন মামা-খালু জাদের জোর এ আমি কোন চাকরি পাবো। তারপরও আমি চেষ্টা করছিলাম।কিন্তু বাস্তবতা তো অনেক বেশি কঠোর। চাকরি তো সোনার হরিণ। মামা-খালু ছাড়া কি করে পাই! আমার দুনিয়াতে আপন বলতে কেও নেই বলা চলে,কিছুনেই বলা চলে। তারপরও নীলা কি দেখে আমার সাথে এতদিন ধরে আছে আমি জানি না। যাই হোক, ওকে আমি যতটা সম্ভব সান্ত্বনা দিয়ে বললাম যে, আম চেষ্টা করছি চাকরীর জন্য। পেলেই ওকে বিয়ে করবো। এসব বলেতে বলতে ওর বাবার ফোন আসলো যে সে ওর হোস্টেল এর সামনে দাড়িয়ে আছে। ও যেন তাড়াতাড়ি কাপড়চোপড় গুছিয়ে বাড়ি যাবার প্রস্তুতি নিয়ে নামে।ওর বাবা ভীষণ রাগী মানুষ এবং ক্ষমতাশীল তো বটেই। ওদের গ্রামের চেয়ারম্যান ওর বাবা।ও ওর বাবাকে বেশ ভয় পায়। ফোন রেখেই ও উঠে চলে গেলো আমাকে এই বলে যে ওর বাবা ওকে বাড়িতে নিতে এসেছে। আমি নির্বাক ওর চলে যাওয়া দেখলাম। জানিনা আর দেখতে পাবো কি না। ওর বাবা নিশ্চয়ই ওকে বিয়ে দিবেন বলেই নিতে এসেছেন। ওদের পরিবার টাও রক্ষণশীল। নীলার মতামত নেওয়ার প্রয়োজন ও মনে করবেন না ওর বাবা। মনের আকাশে এক গুচ্ছ মেঘ জমে গেলো মুহূর্তেই। এই মেঘ আদৌ কাটবে কি না সেটা নিয়েও দ্বিধায় পরে বসে রইলাম।
পরের দিন নীলা ফোন করে জানালো যে পাত্রপক্ষ ওকে দেখতে এসেছিল। পাত্র নাকি ইউ.এস.এ এর নাগরিকত্ব প্রাপ্ত এবং বেশ টাকাওয়ালা। ওর পরিবার ভাল ভাবেই রাজি এই সম্মন্ধে। ও ফোন এ কান্নাকাটি শুরু করে দিল। আমি ওকে কোনমতে থামিয়ে বললাম যে পালায় বিয়ে করবো লাগলে। তোমাকে নিতে আসবো আমি। তুমি তৈরি থেকো। এছাড়া এখন আর উপায় নেই। তুমি চিন্তা করো না। আমি এদিকে সব ব্যবস্থা করছি। তোমাকে পরে ফোন দিচ্ছি। এখন রাখি। যাই হোক কোনমতে ওকে বুঝিয়ে ফোন রাখলাম। রেখেই দুশ্চিন্তায় আমার মাথায় হাত। ওকে যে বেশ করে বলে দিলাম পালাবো।এখন কি করবো, কিভাবে করবো তার কিছুই মাথায় আসছে না যে। হাতে তেমন টাকাও নেই। মাত্র তিন হাজার টাকা আছে। এইটা দিয়ে কিছুই হবে না।
সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে মুঠো ফোন এর রিংটোন শুনে চমকে উঠলাম। দেখলাম শুভ্র ফোন দিয়েছে। শুভ্র আমার জিগরি বন্ধু। ফোন রিসিভ করেই জিজ্ঞেস করলাম যে ও কোথায়। ও বলল যে ও ক্যাম্পাসে আছে। আমি বললাম যে তুই থাক আমি আসছি। জরুরী কথা আছে তোর সাথে। এই বলে তাড়াহুড়া করে ক্যাম্পাস এ গেলাম। গিয়ে ওকে সব খুলে বললাম। ও সব বুঝতে পেরে আমাকে বলল আমি যেন তখনই নীলা কি আনতে যাই, ও এদিক এর ব্যপার দেখবে। ওদের পাঁচতলা বাসার ছাঁদের রুম টা ফাঁকাই পরে আছে। ওখানে থাকতে পারবো নীলা কে নিয়ে। ও আমাকে কিছু টাকা দিয়ে বলল যা নিয়ে আয় ভাবি কে। দেরি করিস না। এক্ষন রওনা দে তুই। ওর থেকে বিদেয় নিয়েই আমি নীলা কে আনতে রওনা হলাম।

নীলার কান্না থেমেছে। ও একটু শান্ত হয়েছে। আমি বললাম তাড়াতাড়ি চল। ভোর হওয়ার আগে আগে বাস ধরতে হবে। এখনও অনেক টা পথ বাকি। সাঁকোর কাছে গিয়ে ওকে বললাম ওর হিল জোড়া খুলে হাতে নিতে। তারপর সাবধানে সেই সাঁকো পার হয়ে দ্রুত হাঁটতে শুরু করলাম আমরা। প্রায় ভোর হয়ে এসেছে। এ অবস্থায় কেও দেখে ফেললে নির্ঘাত খবর আছে। অনেক টা পথ হেটে একটা বাড়িরউঠোনে একটা শার্ট আর একটা লুঙ্গী ঝুলানো দেখলাম। খোদা কে হাজারও শুকরিয়া জানালাম ওগুলো দেখে। যত দ্রুত সম্ভব আমার সিক্ত কাপড়চোপড় খুলে সেই লুঙ্গী আর শার্ট পরে নিলাম। আমার সিক্ত কাপড়চোপড় পাশেই একটা ঝোপেফেলে দিলাম। নীলা ব্যাগ এ করে বোরখা নিয়ে এসেছিল, ওকে সেটা পরে নিতে বললাম। তারপর আবারও হাঁটা শুরু করলাম। আমরা বাস স্ট্যান্ডএ পৌছতে পৌছতে প্রায় ছটা বেজে গেল। সেখানে গিয়ে এক মুদি দোকান খোলা পেলাম। সেখান থেকে সময় জানলাম যে ছটা বাজে। বাস এর দুটি টিকেট কাটলাম। দোকান থেকে হালকা খাবার দাবার খেয়ে বাস এ উঠে বসলাম। বাস ছারবে ছটা চল্লিশ এ। ওদিকে নিশ্চই এতক্ষনে নীলার খোঁজ পরে গিয়েছে। নীলা কে খুজতেও নিশ্চয়ই বেরিয়ে পরেছে লোকজন। আমি মনে মনে খোদা কে স্মরণ করতেলাগলাম যেন তীরে এসে তরী না ডোবে। কোনভাবেই যেন ধরা না পরি। কিছুক্ষণ পরই জানাল দিয়ে চোখপড়লো নীলার যে তার ছোট কাকা আর ভাই বাইরে দাড়িয়ে আছে,আশে পাশে তাকাচ্ছে। নীলা তাড়াতাড়ি নেকাপ দিয়ে মুখ ঢেকে দিল। ওর ভাই আবার সেই বাস এ উঠে ভেতরের দিকে আসছিল। আমাদের কাছাকাছি আসতেই পেছন থেকে ওর কাকা ডাক দিল ওর ভাই কে যে নীলার মত একজন কে দেখা গিয়েছে পেছনের বাস এ। ওর ভাই তাড়াতাড়ি নেমে গেল। আমাদের বাস ছেঁড়ে দিল তারপরই। আমি আর নীলা হাঁপ ছেঁড়ে বাঁচলাম। একটু শস্তির নিশ্বাস ফেললাম আমি। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই বাস আবার থামল।
বাস এ পুলিশ উঠলো। ভাবলাম ওর বাবা ওর খোঁজ করতে পুলিশ লাগিয়েছে নাকি। কিন্তু না। পুলিশসবার ব্যাগ চেক করে নেমে গেল। আমি এবারের মত আবারও হাঁপ ছেঁড়ে বাঁচলাম। বাস ছেঁড়ে দিলে নীলাকে নেকাপ খুলতে বললাম আমি। ওর মুখ দেখে আমার মায়া লাগলো অনেক। বেচারি সারা রাত অনেক কষ্ট করেছে। আমি ওকে বললাম ঘুমতে। ও আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো। আমি জানাল দিয়ে প্রকৃতি দেখতে লাগলাম। প্রকৃতি বরাবরই আমাকে টেনেছে কিন্তু আজ টানছে না। হাজারও চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে।
ঢাকায় পৌঁছেই শুভ্র দের বাসায় গেলাম। দিয়ে দেখি শুভ্র নেই। অ্যান্টি কে বললাম শুভ্র কে ফোন করতে। আমরা ওদের বসার ঘর এ বসলাম। অ্যান্টি আমাদের জন্য জুস করে দিলেন। অ্যান্টি বুঝতে পেরেছে কি করেছি আমরা। বেশ ক্লান্তি নিয়ে শুভ্রর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। শুভ্রর বাবা নেই, ওদের পরিবার বলতে এখন শুধু ওর মা আর ও এবং ওদের কাজের মেয়েটি। শুভ্রর বড় একটি বোন আছে,উনার বিয়ে হয়ে যাওয়ারপর জামাই এর সাথে বিদেশে চলে গিয়েছেন। শুভ্র রা তিন তলায় এক পাশে থাকে। আর বাকি ফ্ল্যাট গুলো ভাড়া দেওয়া। শুভ্র স্টাডির পাশা পাশি ওর বাবার ব্যাবসা দেখে।
শুভ্র এসে আমাদের পাঁচতলায় ফাঁকা ঘর টায় নিয়ে গেল।তারপর শুভ্র নিচে চলে গেল। আমি র নীলা ফ্রেশ হয়ে নিলাম। একটু পরেই শুভ্র হাজির হল সাথে কবির কে নিয়ে। শুভ্র এসে বলল যে চল তদের বিয়ে করায় দিব আজকেই। আমি শুভ্র কে এক পাশে নিয়ে গিয়ে আমার পকেটের অবস্থায় বলায় ও আমার পেট এ ঘুষি মেরে বলল, আমি আছি না! আমি থাকতে এতো চিন্তা কিসের রে তোর। তারপর অনেকটা স্বপ্নের মত করে আমাদের বিয়ে হল। আমরা বাইরে খেয়ে দেয়ে রাতে ফিরলাম। আমি আর নীলা দুজন এ বেশ ক্লান্ত থাকায় তেমন কথা হল না আমাদের। দুজনই ঘুমিয়ে পরলাম। পরদিন শুভ্রআমাকে নিয়ে গেল সংসারের কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে। নীলা কে অ্যান্টির কাছেই রেখে গেলাম এভং অ্যান্টি কে তখন সব খুলে বললাম। অ্যান্টি বললেন, সমস্যা নেই বাবা। আমরা আছি তোমাদের পাশে। আমি অ্যান্টির কথায় অনেকটা শস্তি পেলাম। শুভ্র একটা মুঠোফোন দিয়েছে, সেটায় আমার সিম অন করেছিলাম, বাঁজার এথাকা অবস্থায় একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোনআসলো। রিসিভ করে কথা বললাম। আমি কয়েকটা কোম্পানি তে সি.ভি. ড্রপ করেছিলাম,তেমন একটা কোম্পানি থেকে ফোন দিয়ে আগামীকাল সাক্ষাৎকার এর জন্য ডেকেছে। আমি একটু খুশিই হলাম শুনে।
বাসায় পৌঁছে নীলা কে সুসংবাদ টা দিলাম। নীলা বেশ খুশি হল এবং প্রার্থনা করলো যেন আমার চাকরি টা হয়ে যায়। সে রাতে অনেক্ষন আমাদের কথা হল। আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে, আমাদের স্বপ্ন নিয়ে,আমাদের ইচ্ছে গুলো নিয়ে। দুজন দুজনের ভালবাসার ভেলায় হাজারও স্বপ্ন নিয়ে ভেসে চললাম.........
পরদিন সকালে উঠে খেয়ে দেয়ে আমি বেরিয়ে পরলাম সাক্ষাৎকার এর জন্য। আমি যখন সাক্ষাৎকার কক্ষে প্রবেশ করলাম।তিনজন বসে আছেন টেবিল এরওপারে। আমি সামনে এগিয়ে যেতে আমাকে বসতে বললেন মাঝখানের জন। বসার পর তিনি আমার বৃত্তান্ত জানতে চাইলো। বললাম। ডান পাশের জনআমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার কি কোন অভিজ্ঞতা আছে ? আমি বললাম যে নেই। তিনি বললেন তাহলে আপনাকে দিয়ে যে আমরা কাজ ভাল করে করাতে পারবোতার নিশ্চয়তা কি ? আমি বললাম যে দেখুন স্যার আপনি যে ওখানে বসে আছেন, একদিন আপনিও আমার জাগায় ছিলেন। সবকিছুরই প্রথম বলে একটা ব্যাপার আছে। আপনাকে সেটা পার করতেই হবে। আপনিও একটা সময় পার করে এসেছেন। আপনাকে সুযোগ কেও একজন দিয়েছে। সুযোগ না দিলে অভিজ্ঞতা কি করে পাবো বলুন ? এসব বলে আমি অনেক টা দুঃখ নিয়েই উঠে দাঁড়ালাম চলে যাবো বলে। তিনি আমাকে বসতে বললেন। এবং বললেন যে আমাকে তার ভাল লেগেছে,আমার আত্মবিশ্বাস এ তারা মুগ্ধ। আমি চিৎকার করতে নিয়েছিলাম খুশিতে। নিজেকে সামলে নিয়ে তাদের ধন্যবাদ দিয়ে এপয়েন্টম্যানট লেটার নিয়ে বাসায় ফিরলাম। বাসায় ফিরে দেখি নীলার বাবা-মা বসে আছেন। নীলা বলল যে গতকাল সে অ্যান্টির ফোন থেকে ফোনদিয়ে ঠিকানা দিয়েছিল তাই তারা আজকে এসেছেন। ওর বাবা বললেন, দেখো বাবা যা হয়েছে। হয়ে গিয়েছে। এখন কিছু করার নেই। আমরা চাই তোমাদের বিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে হোক। আমার গ্রামে একটা সম্মান আছে। আমি সেটা অন্তত ক্ষুণ্ণ করতে চাচ্ছি না। তিনি আমাকে হাতের চিঠি টা দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলেন এটা কি ? আমি বললাম এটা আমার জইনিং লেটার। আমার চাকরি হয়েছে। এতে তিনি বেশ খুশি হলেন।
আমরা এখন নতুন ফ্ল্যাট নিয়ে আছি। আমাদের আনুষ্ঠানিক ভাবে বিয়ে হয়েছে। আর কিছুদিন পরে আমাদের সংসারে নতুন অতিথির আগমন ঘটবে। আপনাদের শুভকামনা চাচ্ছি.........

বিঃ দ্রঃ লিখেছিলাম ভালোবাসার ডাকপিয়ন পেজের জন্য ঈদে তারা পোষ্ট করে নি বলে নিজের ওয়ালে শেয়ার করলাম। অনেক ধন্যবাদ রাতুল কে তার সাহায্য ছাড়া হয় তো পারতাম না গল্প টা শেষ করতে,গল্প টা উৎসর্গ করলাম রাতুল তোকে কে, রুপা কে আর হুমায়ুন স্যার কে।
৭টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×