somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গাছের উপড় পরগাছার প্রভাব। ইসরাইল-মার্কিন সম্পর্কের নেপথ্য নায়কেরা।

২০ শে অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৮:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গাজা ভূখণ্ডের আল আহলি হাসপাতালে হামলার পর থেকে অনেকেরই সুর বদলে গিয়েছে। অনেকেই যাঁরা এতদিন, হামাসের সন্ত্রাসবাদের পাল্টা জবাব বলে, গাজায় লাগাতার ইজরায়েলি বিমান হামলাকে এক প্রকার ন্যায্যতা দিচ্ছিলেন, তাঁরাও অনেকটা ব্যাকফুটে। তবে, অবস্থান একচুলও বদলায়নি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ইজরায়েলের সুরে সুর মিলিয়ে, আল-আহলি হাসপাতালে হামলা ইজরায়েলি বাহিনী করেনি বলে, শংসাপত্র দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ‘হামাসের রকেট হামলা থেকে ইজরায়েলের আত্মরক্ষার বৈধ অধিকার’ বলে বিমন হামলাকে সমর্থন করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ যখন ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাব এনেছে, সেই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভেটো প্রয়োগ করেছে আমেরিকা। তবে শুধু জো বাইডেন নন, তাঁর আগের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও একতরফা ভাবেই তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর করেছিলেন জেরুসালেমে। আসলে, ইজরায়েলকে সমর্থনের প্রশ্নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকানে কোনও প্রভেদ নেই। যাই ঘটে যাক, ইজরায়েলের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্ব্যর্থহীন সমর্থন দেখা যায়। কিন্তু কেন? কেন রাজনৈতিক রঙ নির্বিশেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইজরায়েলতে সমর্থন করে?
কখন থেকে ইজরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থনের শুরু?
বলা যেতে পারে একেবারে শুরু থেকে। ১৯৪৮ সালে ইজরায়েল স্বাধীন রাষ্ট্রের ঘোষণা করার পর, প্রথম রাষ্ট্রনেতা হিসেবে ইজরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান। ব্যক্তিগত সম্পর্ক একটা অন্যতম কারণ ছিল। ট্রুম্যানের প্রাক্তন ব্যবসায়িক অংশীদার ছিলেন এডওয়ার্ড জ্যাকবসন। ইজরায়েলকে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার মার্কিনী নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন এই ইহুদি ব্যবসায়ী। তবে, এর পিছনে কৌশলগত কারণও ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক পরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে ঠান্ডা যুদ্ধ শুরু হব হব করছে। সেই সময়, মধ্যপ্রাচ্যের উপর আধিপত্য থাকাটা দুই পরাশক্তির জন্যই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। শুধু তেল ভান্ডার নয়, মধ্যপ্রাচ্যের সুয়েজ খাল কৌশলগত এবং বাণিজ্যগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মধ্যপ্রাচ্যে সেই সময় থেকেই পশ্চিমী দেশগুলির প্রতিনিধি ইজরায়েল।
মার্কিন সমর্থনে সিলমোহর
ট্রুম্যানের শুরু করা ইজরায়েলের প্রতি সমর্থনের নীতিতে সিলমোহর পড়েছিল ১৯৬৭ এবং ১৯৭৩ সালের দুই যুদ্ধ। প্রথম যুদ্ধে, ইজরায়েলি বাহিনীর পরাক্রমে মুগ্ধ হয়েছিল আমেরিকা। আরব দেশগুলির নিয়ন্ত্রণের জন্য ইজরায়েলকে দরকার বুঝেছিল ওয়াশিংটন। আর দ্বিতীয় যুদ্ধের পর, আমেরিকা ইজরায়েল ও মিশরের মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি করিয়ে, মিশর ও সিরিয়ার মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছিল। যার ফলে, এই অঞ্চলে সোভিয়েতের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ভোঁতা হয়ে গিয়েছিল।

ইজরায়েলপন্থীদের রাজনৈতিক প্রভাব
তবে, এই পর্যন্ত বলা যেতে পারে হিমশৈলের চূড়ামাত্র দেখা গিয়েছে। ইজরায়েলের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের সবথছেকে বড় কারণ হল, মার্কিন রাজনীতিতে ইজরায়েলপন্থীদের প্রভাব। বেশ কয়েকটি ইহুদি সংস্থা রয়েছে, যারা একপ্রকার মার্কিন সরকারকে ক্রমাগত চাপ দিয়ে ইজরায়েলকে সমর্থন করতে বাধ্য করে। সবথেকে বড় এবং রাজনৈতিক দিক থেকে প্রভাবশালী সংস্থাটি হল, আমেরিকা-ইজরায়েল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি বা ‘এইপ্যাক’ (AIPAC)। বিভিন্ন প্রকারের সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ধীরে ধীরে এই ধরনের সংগঠনগুলির সদস্যরা মার্কিন-ইহুদি মধ্যে তো বটেই, পাশাপাশি খ্রিস্টানদের মধ্যেও প্রভাব বিস্তার করে।
কতটা শক্তিশালী ‘এইপ্যাক’?
ওয়াশিংটনে একটি বার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করে এইপ্যাক। গত বছর সেখানে প্রায় ২০,০০০ মানুষ উপস্থিত হয়েছিল। ভারতের নিরিখে সংখ্যাটা বেশি মনে নাই হতে পারে, কিন্তু, মার্কিন প্রেক্ষাপটে সংখ্যাটা বিশাল। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো শীর্ষস্থানীয় মার্কিন রাজনীতিবিদরা এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। আর প্রায় প্রতি বছরই আসেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
ফেলো ডলার, তোলো কলার
তবে, জনমানসে ইজরায়েলপন্থী গোষ্ঠীগুলির প্রভাবই যথেষ্ট নয়। এর সঙ্গে রয়েছে, মার্কিনি-ইহুদি সম্প্রদায়ের টাকার জোর, বা ডলারের জোর। মার্কিন ফেডারেল নির্বাচনে রিপাবলিকান হোক কি ডেমোক্র্যাট, রাজনৈতিক প্রার্থীদের কোটি কোটি জলার অনুদান দেয় ইহুদিরা। এমনকী, ডলারের জোরে তারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করে বলেও শোনা যায়। গত নির্বাচনে, অর্থাৎ, ২০২০ সালে, প্রচারের সময়, ইসরায়েলপন্থী গোষ্ঠীগুলি সব মিলিয়ে মোট ৩ কোটি ৯ লক্ষ ডলারেরও বেশি অর্থ দান করেছিল। ভারতীয় মুদ্রায় ২৫৭ কোটি টাকারও বেশি! ৬৩ শতাংশ গিয়েছিল ডেমোক্র্যাটদের ঘরে, ৩৬ শতাংশ রিপাবলিকানদের। ২০১৬ সালের নির্বাচনের প্রচারে এর অর্ধেক অনুদান ছিল। তবে, সবটাই প্রায় ট্রাম্পের জন্য।
বদলাচ্ছে চিত্র
প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর ইজরায়েল প্রীতি এবং আরব বিদ্বেষ গোপন করতেন না। তবে, ডেমোক্রেটিক এবং রিপাবলিকান দল মিলিয়ে, মার্কিন কংগ্রেসের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই ইজরায়েলপন্থী। তবে, ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যে, প্যালেস্টাইন সমর্কদের সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। জাতীয় রাজনীতিতে তাদের গুরুত্বও বাড়ছে। সেনেটর বার্নি স্যান্ডার্স, এলিজাবেথ ওয়ারেনদের মতো নেতারা প্যালেস্তিনীয়দের মানবাধিকারের বিষয়ে সোচচার হয়েছেন। হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস-এ প্যালেস্তিনীয়দের পক্ষে বলেন, আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ, ইলহান ওমর, আয়না প্রেসলে, রাশিদা তালাইবদের মতো নতুন প্রগতিশীলরা। আসলে, এই নব্য মার্কিন রাজনীতিবিদরা আগের রাজনীতিবিদদের মতো তহবিল সংগ্রহের কাঠামোর উপর নির্ভরশীল নন।
বিদেশী পত্রিকা থেকে। নেয়া তথ্য।

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৯:০০
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বই : টক অব দ্য টাউন

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:০৮

বই : টক অব দ্য টাউন



একটি বই হঠাৎ করে এতটা আলোচনায় আসবে আমরা কি ভাবতে পেরেছি ?
বাংলাদেশের মানুষ অতি আবেগপ্রবন , বর্তমান রাজনৈতিক অস্হিরতার মধ্যে ও
বাঙালীর স্বভাবসুলভ অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাদ্রাসা শিক্ষা, বৈশ্বিক রাজনীতি, সহিংসতা ও জঙ্গিবাদ

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৫


লেখাটির শুরুতে একটি ভূমিকা দেওয়া যাক। সর্বশেষ দেশে গিয়ে কয়েকদিন গ্রামের বাড়িতে ছিলাম। উত্তরবঙ্গে, নিতান্ত অনুন্নত আমাদের সেই গ্রামে এতগুলো কওমি মাদ্রাসা হয়েছে দেখে অবাক হয়েছিলাম। আগে গ্রামে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকার মানুষের জীবন

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪


ঢাকাতে মানুষ বড় বিচিত্র ভাবে বেঁচে থাকে। নিয়মিত ঢাকার রাস্তার ঘুরে বেড়ানোর কারণে এই রকম অনেক কিছু আমার চোখে পড়ে। সেগুলো দেখে মনে হয় মানুষ কত ভাবেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে প্রায় সারা বছর বৃষ্টিপাতের কারণ কী?

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯

পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে প্রায় সারা বছর বৃষ্টিপাতের কারণ কী?



পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে প্রায় সারা বছরই বৃষ্টিপাত হয়। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আফ্রিকার কিছু দেশ এবং দক্ষিন আমেরিকার কিছু দেশ ও অঞ্চলে বছরের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ কখনো এমন করে বলতে পেরেছে কি?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


ভারতে গরু ও গোমাংস নিয়ে হত্যা বা সহিংসতার নির্দিষ্ট সংখ্যা বলা কঠিন কারণ এটি রাজ্য, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং 'গরু রক্ষা' বাহিনী ইত্যাদীর কারণে একেক যায়গাতে একেক রকম। ভারত গোমাংস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×