somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জিওর্দানো ব্রুনো। রেনেসাঁর বলি

২৯ শে অক্টোবর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জর্দানো ব্রুনো (১৫৪৮–১৭ই ফেব্রুয়ারি, ১৬০০) একজন ইতালীয় দার্শনিক, ধর্মযাজক, বিশ্বতত্ত্ব বিশারদ এবং ওকাল্টিস্ট (গূঢ় রহস্যাদিতে বিশ্বাসী ব্যক্তি)। ব্রুনো তার স্মৃতিবর্ধন পদ্ধতির জন্য বিখ্যাত যা সংগঠিত জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি মতবাদ প্রচার করেছিলেন যে, মহাবিশ্ব অসীম এবং এর কোন কেন্দ্র নেই। আর এজন্য প্রচলিত ধর্মের বিরোধিতার (heresy) অপরাধে তাকে পুড়িয়ে মারা হয়। এজন্য অনেকে তাকে চিন্তার মুক্তির জন্য নিবেদিত একজন শহীদ হিসেবে গণ্য করে থাকেন।
জিওর্দানো ব্রুনো ১৫৪৮ সালে ইতালির ভিসুভিয়াস পর্বতমালার অদূরে "নোলা" নামক ছোট্ট এক শহরে জন্মহণ করেন। তার জন্মের সময়টা এমন ছিল যে, মধ্যযুগের ধর্মীয় ও দার্শনিক প্রতিক্রিয়াশীলতাও শেষ হয়নি আবার যুক্তিভিত্তিক আধুনিক যুগেরও সূচনা ঘটেনি। সে হিসেবে তার জন্ম এক মহা সন্ধিক্ষণে। সে সময়ের মূল বৈশিষ্ট্য ছিল দর্শনের সাথে বিজ্ঞানের সমন্বয় ঘটেনি। এ কারণে দর্শনচ্যুত বিজ্ঞান বা বিজ্ঞানচ্যুত দর্শনের অন্ধকার যুগ বিরাজ করছিল। এমন সময়েই বিপ্লবী মতবাদ নিয়ে উপস্থিত হন ব্রুনো। উল্লেখ্য ব্রুনোর জন্মস্থান ইতালিতেই ১৩৫০ সাল থেকে ইউরোপীয় পুনর্জাগরণ তথা রেনেসাঁ শুরু হয়েছিল। ব্রুনোর জন্মের সময়ে আরও একটি বিষয় চোখে পড়ে। সে সময় রাজার সাথে গীর্জার বিরোধ খুব একটা জমে উঠেনি এবং পার্লামেন্টের সাথে রাজার বিরোধের সূচনাই হয়নি। প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মের উত্থান ঘটছিল এবং ক্যাথলিক চার্চ সমাজে নিজেদের প্রভাব রক্ষার করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল।
ব্রুনোর বাবা "জিওভানি ব্রুনো" সৈনিক ছিলেন। অবশ্য ব্রুনোর আলোচনায় পরিবারের বিষয় খুব একটা আসে না। কারণ সারা জীবন তিনি ভবঘুরের মত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে বেরিয়েছেন। কখনও পরিবারকেন্দ্রিক জীবন যাপনের কোন চেষ্টা করেননি। আরেকটি বড় কারণ পালিয়ে বেড়ানো। সারা জীবনই তাকে প্রতিক্রিয়াশীল শাসকগোষ্ঠী থেকে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। ইউরোপের দেশে দেশে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন। তবে ব্রুনো বিজ্ঞান, দর্শন এবং যুক্তিবাদ নিয়ে এমন সব চিন্তা করেছিলেন যা বিংশ শতাব্দীতে এসে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এজন্যই বলা হয়, ব্রুনো অসময়ে জন্ম নিয়েছিলেন, তার জন্ম আরও অনেক পরে হওয়া উচিত ছিল।
বয়স ১৩ বছর হওয়ার পর ব্রুনো নেপ্‌ল্‌সের সেন্ট ডোমিনিকান স্কুলে ভর্তি হন। পরবর্তী ১০ বছর এই বিখ্যাত স্কুলেই পড়াশোনা করেন। সেন্ট টমাস একুইনাস ডোমিনিকান গোত্রের মানুষ ছিলেন এবং এই স্কুলেই শিক্ষকতা করতেন। একুইনাসের প্রভাব অস্বীকার করতে পারেননি ব্রুনো এবং অচিরেই তিনি ডোমিনিকান ধর্মযাজক হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। শপথ গ্রহণের পাশাপাশি "জিওর্দানো" উপাধিটিও গ্রহণ করেন।
মহাবিশ্ব। মানুষের বিস্ময়; তবে মানুষের প্রজ্ঞায় এর রহস্যজট খুলছে।
আমাদের এই সৌরজগৎটি সূর্যকেন্দ্রিক। মহাবিশ্ব অসীম। নক্ষত্রগুলি আসলে সূর্যর মতোই স্বাধীন ও স্বতন্ত্র মহাজাগতিক বস্তু-যাদের সংখ্যা কোটি কোটি। মহাবিশ্ব কেবল অসীম নয়-এর প্রবাহও অনন্ত। আর পৃথিবী বিশ্বজগতের কেন্দ্রে অবস্থিত না-হলে আর দূরবর্তী নক্ষত্রগুলি সূর্যর মতো বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হলে মহাবিশ্বে আরও পৃথিবী (গ্রহ) আছে ...সেখানে আমাদের মতো প্রাণিও থাকতে পারে!
যা হোক। ব্রুনোর ধারণার সঙ্গে ক্যাথলিক বিশ্বাসের সঙ্গে খাপ খায়নি। তারা কাজ দেবে বলে রোমে ডেকে নিয়ে যায়। ব্রুনো রোমে পৌঁছলে তাঁকে ইনকুইজিশন (ধর্মীয় বিচার সংস্থা) এর কাছে ধর্মদ্রোহী হিসেবে হস্তান্তর করা হয়।
রোমের ক্যাসটেল সেন্ট অ্যাঞ্জেলো। এখানেই ৮ বছর শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছিল স্বাধীন চিন্তার দার্শনিকটি । বিচার অনুষ্ঠিত না-হওয়া পর্যন্ত নিয়মিত টর্চার ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হত। তারপরও তিনি মাথা নত করেনি গন্ডমূর্খ মূঢ়দের কাছে। বলেছিলেন: “আমার মৃত্যুদন্ডের রায় ঘোষনা শোনার সময় আমার চেয়ে তোমরাই ভয় পেয়েছ বেশি!”
মৃত্যুদন্ডের রায় ঘোষনার পরপরই ব্রুনোর চোয়ালে লোহার কপাট পরিয়ে দেওয়া হয়। লোহার শলাকা দিয়ে জিভ ফুটো করে দেওয়া হয়। ১৬০০। ফেব্রুয়ারি ১৯। স্বাধীন চিন্তার দার্শনিকটি কে রোমের রাস্তায় টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় অগ্নিমঞ্চের দিকে। তারপর নগ্ন করে আগুন ধরিয়ে দেয় ।



সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:১৭
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×