somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিজ্ঞানীদের জীবনের কিছু মজাদার ঘটনা ।

৩০ শে অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৪:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ঘটনা - ১ (নিউটন)
অনেকদিন আগের ঘটনা। ইংল্যান্ডের এক বুড়ি মহিলা তার জানালা দিয়ে পাশের বাড়ির এক বুড়োকে দেখলো বুদবুদ বানাচ্ছে। একদিন-দুইদিন-তিনদিন এভাবে বেশ কয়েকদিন লক্ষ্য করার পরে তার মনে হল এই বুড়ো হয়তো পাগল। সে পুলিশে খবর দিলো। পুলিশ এসে খোঁজ নিয়ে দেখলো ইনি বিখ্যাত বিজ্ঞানী নিউটন। তিনি তখন বুদবুদের গায়ে যে রংধনু রঙের সৃষ্টি হয় তার কারণ নিয়ে গবেষণা করছিলেন। বিজ্ঞানীদের জীবনে এমন অনেক মজার ঘটনা আছে। এক্ষেত্রে একটি বিষয় হল বিজ্ঞানীদের ভুলোমন। বিজ্ঞানীদের ভুলে যাওয়ার (প্রায়) অসাধারণ ক্ষমতা অনেক মজার ঘটনার জন্ম দিয়েছে। আইনস্টাইনের ক্ষেত্রে এই ধরণের ঘটনাগুলো বোধহয় একটু বেশিই ঘটেছে।
ঘটনা - ২ (আইনস্টাইন)
আইনস্টাইন একবার কোন একটা বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে করতে বাড়ি গেল। বাড়িতে গিয়ে তিনি দরজায় শব্দ করেছেন। ভিতর থেকে তাঁর স্ত্রী বলল “আইনস্টাইন বাসায় নেই।” আইনস্টাইন চিন্তা করতে করতে চলে গেল। গৃহকর্তাতো বাসায় নেই! এমন অনেক ঘটনাই আছে। কিন্তু আইনস্টাইন কি সত্যিই তাঁর চারপাশ সম্পর্কে এমন উদাসীন ছিলেন? এতখানি আত্মমগ্ন? ৪-৫ বছর আগে আইনস্টাইনের মেয়ে গবেষকদের হাতে সহস্রাধিক চিঠি তুলে দেন। সবগুলোই আইনস্টাইনের লেখা।
গবেষকরা চিঠি পড়ে থ হয়ে গেছেন। -আইনস্টাইন এতো চিঠি লেখার সময় পেলেন কিভাবে? -চিঠি গুলোতে উঠে এসেছে আইনস্টাইনের প্রেম কাহিনী। ভদ্রলোক যেখানে বক্তৃতা দিতে গেছেন সেখানেই প্রেমে পড়েছেন। তাঁর সাংসারিক জীবনের অশান্তির কারণ হয়ত শুধু তাঁর ভুলোমন নয়, সাথে সাথে তাঁর পারিপার্শ্বিক সম্পর্কে এই অতিরিক্ত সচেতনতা।
ঘটনা - ৩ (নিউটন)
নিউটন ও এব্যাপারে কম যান না। তিনি একবার তাঁর এক বন্ধুকে দাওয়াত দিলেন। কিন্তু নিজেই ভুলে গেলেন। তিনি নিজের খাবার ঢেকে রেখে বাইরে গেলেন। এসময় তাঁর বন্ধু এসে তাঁকে ঘরে না পেয়ে তাঁর খাবার দেখে ভাবলেন নিউটন হয়ত খাবারটা তার জন্যে রেখে বাইরে গেছেন। সে খেয়ে শুয়ে পড়ল। শোয়ার আগে সে বাসনপত্র আগের মত ঢেকে রেখে দিল।
নিউটন বাসায় এসে তাঁর বন্ধুকে দেখে ভাবলেন তিনি বোধহয় বন্ধুর বাসায় চলে এসেছেন। কিন্তু না। ঐতো খাবার ঢাকা আছে। খাবার খেতে গিয়ে দেখলেন খাবার নেই। তাহলে তিনি
বোধহয় খাবার খেয়েই বাইরে গিয়েছিলেন!

ঘটনা - ৪ (কার্ল সাগান)

বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী কার্ল সাগান ছোটবেলায় লাইব্রেরীতে গেছেন। লাইব্রেরীরিয়ানের কাছে তিনি তারার উপরে কোন বই আছে কিনা জানতে চাইলেন। লাইব্রেরীরিয়ান জিজ্ঞেস করল
“তারার বই? সচিত্র?”
“অবশ্যই।”
লাইব্রেরীরিয়ান অনেক খুঁজে একটা মোটা বই সাগানকে দিল। সাগান খুশি মনে বাসায় এসে বই খুললো। তারার বই বটে! হলিউডের চিত্রতারকাদের নিয়ে লেখা বই। আমেরিকার ইতিহাসে অন্যতম আলোচিত ব্যক্তি বেঞ্জামিন ফ্রাংকলিন। তিনি শুধু বিজ্ঞানীই নয় রাজনৈতিক এবং পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম রাজনৈতিক কার্টুনও তিনিই আঁকেন। বেঞ্জামিন ফ্রাংকলিনের বাসার সামনে সবসময় একটা ঘোড়ার খুর টাঙানো থাকতো। তৎকালীন মানুষের মধ্যে কুসংস্কার ছিল বাসার সামনে ঘোড়ার খুর টাঙানো থাকলে সকল বালা-মসিবৎ দূর হয়ে যাবে।

সাংবাদিকরা যখন তাঁকে এব্যাপারে জিজ্ঞেস করল তখন তাঁর সোজাসাপ্টা জবাব, “একটুকরা ঘোড়ার খুর যদি সব বালা-মসিবৎ দূর করে দেয় তবে ঝুলাতে অসুবিধা কোথায়?”

বেঞ্জামিন ফ্রাংকলিন নিয়মিত ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করতেন। বেঞ্জামিন ফ্রাংকলিনের বন্ধু ওয়েলস একবার তাঁকে জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা তুমি এত বড় একজন বিজ্ঞানী হয়েও এইসব বিশ্বাস করো?” “মনে করলাম তোমার কথাই ঠিক। ঈশ্বর নেই, পরকাল নেই- সব মিথ্যে। কিন্তু বন্ধু যদি থাকে?…… তুমি কিন্তু ফেঁসে যাবে- আমি না।

ঘটনা - ৫

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বাজছে। হিটলারের প্রচণ্ড রাগ ইহুদিদের ওপর। যেখানে ইহুদি পাচ্ছে ধরে ধরে মেরে ফেলছে হিটলারের নাৎসি বাহিনী। এমনকি নিজ দেশ জার্মানির বিজ্ঞানীরাও রেহাই পাচ্ছে না হিটলারের হাত থেকে। আলবার্ট আইনস্টাইন ইহুদি ছিলেন। হিটলারের ভয়ে তিনি পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। যুদ্ধের ডামাডোলে আটকা পড়েন দুই পদার্থবিজ্ঞানী ম্যাক্স ভন লু ও ম্যাক্স ফ্রাঙ্ক। দুজনই নোবেল পেয়েছেন। দুজনই ইহুদি। নোবেল দেওয়া হয় সুইডেন থেকে। সুইডেন আবার হিটলারের শত্রু দেশ। শত্রুদের কাছ থেকে তাঁর দেশের দুই ইহুদি বিজ্ঞানী নোবেল নিয়েছেন! হিটলার সেটা মুখ বুজে সহ্য করবেন কেন। লু আর ফ্রাঙ্ককে ধরার জন্য কোমর বেঁধে নেমে পড়ল নাৎসি বাহিনী। লু আর ফ্রাঙ্ক ভাবলেন, ধরা পড়লে নির্ঘাত মরতে হবে। সেই সঙ্গে নোবেল প্রাইজটাও কেড়ে নিয়ে নষ্ট করে ফেলবে হিটলারের সৈন্যরা। তাঁরা নিজেদের চেয়ে নোবেল প্রাইজ নিয়েই বেশি চিন্তিত হয়ে পড়লেন। প্যাকেট ভরে মেডেল দুটো পাঠিয়ে দিলেন ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে। সেখানে তাঁদের বন্ধু বিখ্যাত বিজ্ঞানী নিলস বোর বাস করেন।

বোর মেডেল দুটো যত্ন করে লুকিয়ে রাখলেন। কিন্তু বেশি দিন নয়। কারণ, নাৎসি বাহিনী ডেনমার্কেও হামলা করেছে। যেকোনো সময় বোরের গবেষণাগারেও হামলা চালাতে পারে। তখন মেডেল দুটো বাঁচানোই মুশকিল হয়ে যাবে। বোর প্রথমে ভাবলেন, মেডেল দুটো মাটিতে পুঁতে রাখবেন। কিন্তু নাৎসিদের বিশ্বাস নেই। ওরা ঠিক মাটি খুঁড়ে বের করে ফেলবে। বোরের এক সহকারী ছিলেন। হাঙ্গেরিয়ান রসায়নবিদ জর্জ হাভাসি। তিনি বোরকে বুদ্ধি দিলেন সোনাগুলো গুলিয়ে তরল করে ফেলতে। যে সে তরলে সোনা গলে না। সোনা গলাতে লাগে রাজ অম্ল অ্যাকোয়া রেজিয়া। অত্যন্ত শক্তিশালী অ্যাসিড। বোর আর হাভাসি তখন নোবেল মেডেল দুটো অ্যাকোয়া রেজিয়ার ভেতর ফেলে গলিয়ে ফেললেন। সোনা আর অ্যাসিড মিশে তখন হলুদ রঙের এক তরলে পরিণত হয়েছে। বোর সেই হলুদ তরল একটা বোতলে ভরে রেখে দিলেন আলমারিতে। তারপর কোপেনহেগেন থেকে তাঁরা পালিয়ে বাঁচলেন।

শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে হিটলার হেরে যান। বোর আর হাভাসি আবার কোপেনহেগেনে ফিরে আসেন। তাঁদের ল্যাবরেটরি লন্ডভন্ড করে রেখে গেছে নাৎসি সৈন্যরা। কিন্তু আলমারির কোণে সেই হলুদ তরলের বোতল একেবারে অক্ষত! মাথা মোটা নাৎসিরা ওর মর্ম কী বুঝবে! পরে নিলস বোরের ছেলে অ্যাগেই বোর অ্যাকোয়া রেজিয়া থেকে আবার সোনাগুলো পুনরুদ্ধার করেন। নিলস বোর সেই সোনা পাঠিয়ে দেন সুইডেনের নোবেল কমিটির কাছে। নোবেল কমিটি সেই সোনা দিয়ে আবার দুটো মেডেল তৈরি করে তাতে লু ও ফ্রাঙ্কের নাম লিখে পাঠিয়ে দেয় বোরের কাছে। এভাবেই রক্ষা পায় বিখ্যাত দুই বিজ্ঞানীর নোবেল প্রাইজ।

তথ্যসুত্রঃ ইন্টারনেট ও বই
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৪:৩৬
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×