somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শৈশব স্মৃতি - মাহে রমজান !!!

২২ শে জুলাই, ২০১৩ সকাল ৮:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আবারো ছোটবেলার কথা...
রোজা ছিলো ডিসেম্বরে। ক্লাস ফাইভে পড়ি মনে হয় তখন। বৃত্তি পরীক্ষার জন্য ধুমায়া পড়াশুনা করতে হলো সারা বছর ধরে। ডিসেম্বর মাসে সব পরীক্ষা শেষ। রোজার মাস শুরু। এক মাস পুরো স্কুল ছুটি।
সেই যে মাথায় ঢুকে গেলো রোজার মাসে ছুটি থাকে, আজও ব্যাপারটা বের হয়নি মাথা থেকে। এখন চাকরি করি। পড়াশুনা করে এসেছি। সেবার ছাড়া এরকম ছুটি আর কখনও পাইনি। কিন্তু মাথায় ঢুকে গেছিল রোজার মাস মানেই পুরোটা ছুটি। ছুটি দেয়না বলে তাই কলেজ, ভার্সিটি, কিংবা প্রথম চাকরি সবার প্রতিই একটা অভিমান কাজ করতো। আজও করে।
ক্লাস ফাইভের একটা ছেলে কতটাই বা আর শক্ত-সমর্থ? আমি এমনিও অবশ্য রোজা রাখতাম সব। মা বাবা বলতো, বুঝাতো, বাবা দিনে দুবার খেলে দুই রোজা। তিন বার খেলে তিন রোজা।
শেষ মেশ না পেরে মা এক হুজুরকে দিয়েও আমাকে ফতোয়া দেয়ালো। আমি প্রায় বিশ্বাসের মতো করে নিয়েও কেন যেন আবার রোজা রাখতাম। ভাবতাম থাক, আমার একটা রোজাই ভালো।
সেহরি খেয়ে সেই যে ঘুম। টানা ঘুমায়ে উঠতাম এগারোটার দিকে। চলে যেতাম দাবা খেলতে।
খুব ভালো দাবা খেলতে পারতাম তখন। এক গুরু ছিলো, আমার চেয়ে বছর দশেকের বড় হবে। খুব নাম ডাক চারদিকে। আমাকে উনিই শিখাইছিলো খেলা। উনার সাথেই খেলতাম।
হঠাত করেই টের পেলাম উনি আর পারছেনা আমার সাথে। যেই চালই দেক। কিস্তিমাত।
ব্যাস। ছেড়ে দিলাম খেলা। মনে হতো আরেহ এইতো, গ্র্যান্ড মাস্টারকে (!!!) হারাইছি। আর খেলে কি হবে?

দুপুরে সুরসুর করে ভদ্র ছেলের মতো নামাজে চলে যেতাম। হাতে থাকতো তসবীহ। হুজুরদের অনুকরণে।
পুরাই আলেম ওলামাদের মতো মনে হতো নিজেকে। অনেক ইসলামী বইটই পড়তাম। পাড়াগায়ের হুজুররা ভূলভাল বললে ভূলটা বিনয়ের সাথে ধরিয়ে দিতাম। রেফারেন্স সহ।
কি যে পছন্দ করতো পাড়ায় সবাই আমাকে কিংবা আমাদের! একটা গ্রুপ ছিলো। আমি, শিমুল,হারুন,রাকিব আরো কত। আহঃ মফস্বল।
নামাজে গেলে পাড়ার হাতেম দাদা, আজিজ মাস্টার, আকরাম হুজুর, জোনাব স্যার খুব খুশী হতেন। বাহ, এভাবেই তো হবে। কি অভিব্যক্তি ছিলো উনাদের মুখে। এখনো ভাবলেই শান্তি লাগে কেমন যেন।
মনে আছে এখনো, পাল্লা দিয়ে শবে বরাতের বা কদরের রাতে নফল নামাজ পড়তাম আমরা। কে কত বেশী পারে।
এক রোজার মাসে তাবলীগেও চলে গেলাম। রাতে এক বাসায় আমাদের সেহরীর দাওয়াত দিলো। খাবার চলে আসলো যথারীতি। তবে সেহরীর শেষ সময়ের দশ মিনিট আগে। খেতে গিয়ে দেখি ভাত ঘেমে নষ্ট হয়ে গেছে। খাওয়ার উপযুক্ত না। হুজুর বললেন, খাও। আমরা এর চেয়ে বেশী ভালো কিছু খাওয়ার যোগ্য নই। আল্লাহ তাই এটাই পাঠিয়েছেন আমাদের।
আহা, কি সবুর ছিলো মানুষের।
কি সহজ সরল মানুষগুলো।
বিকেল হলেই পেটে প্রচন্ড ক্ষুধা নিয়ে দলবেঁধে ব্যাডমিন্টন খেলা। খিদে লাগায় আর খেলতে গিয়ে দৌড়াদৌড়িতে পেটে ব্যাথা শুরু হয়ে যেতো। তাও থামাতাম না।
সবকিছুই এতো বেশী মধুর ছিলো কেন?
তখনও মধুর লাগতো। আজও লাগে।
অদ্ভুত।

হাতেম দাদার কবরটা দেখলাম সেদিন। আজিজ স্যারেরটাও। আকরাম হুজুর আর ইমামতি করান না। জোনাব স্যারও ঠিকমত সময় দেন না। বাবা মসজিদ কমিটির সভাপতি হয়েছেন। নতুন কমিটি, নতুন ইমাম নিয়োগ পেয়েছেন। মসজিদ ঘরটা টিনের চালা ভেঙ্গে দোতলা হয়েছে।
সব এতো নতুন।
আমার স্মৃতিগুলো এতো পুরাতন কিন্তু জ্বলজ্বলে কেন?
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুলাই, ২০১৩ সকাল ৯:২৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×