সেলুনে গেলাম চুল কাটতে। মধ্যরাতে চুল কাটানোর একটা অদ্ভুত আনন্দ। নাপিতের হাতও চলে না। আমারো ঝিম ঝিম লাগে। মাথার পাশে ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ। মনে হচ্ছিলো ওখানেই ঘুমাই।
এই সেলুনটার একটা অদ্ভুত রোগ আছে। সবগুলো নরসুন্দর চুল কাটার সময় ইনায়ে বিনায়ে বলবে আপনার চুলগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শাইনি করতে হবে। কালি দিতে হবে। শ্যাম্পু করতে হবে। আমাদের একটা স্পেশাল প্যাকেজ আছে মাত্র ৫০০ টাকা। চুলের সম্পূর্ণ কেয়ার। প্রোটিন দিমু হেন দিমু তেন দিমু।
জানি এই সেলুনটা এটা নিয়ে বেশী বাড়াবাড়ি করে। তাও যাই। ভালোলাগে বেটারে বোল্ড করে দিতে। একটাই ওয়ে। চোখে কোন এক্সপ্রেশান না নিয়ে আয়নার দিকে তাকায়া থাকা। বেটা আস্তে করে থেমে যায়। আরেকটা ওয়ে বের করছি আমি। বেটার টাক মাথার দিকে তাকায়া থাকি।
ভাবখানা এমন। আরে বেটা নিজের চুল নাই, আমার চুলে প্রোটিন লাগায়া কি হবে। তোর টাকে প্রোটিন লাগা বেটা।
টাকের দিকে তাকালেই বেটা চুপসে যায়। শেষের দিকে আবার মিন্মিন করে বলে, চুলটা একটু সময় করে যদি শাইনি করাতেন। লাল হয়ে যাচ্ছে। শেষ চেষ্টা করা আর কি। পাত্তাই না দিয়ে ভাবি, আরে বেটা লাল হয়ে যাচ্ছে কি? আমার চুলতো জন্মের পর থেকেই লালচে।
সেলুনে সাধারণত টিভি থাকে একটা। সবাই হা করে সেদিকে টিভি দেখে। এই সেলুনের টিভির দিকে তাকায়া চুল কাটতে কাটতে এক নাপিত আমার কানের লতি কেটে ফেলছিলো প্রায়। একটা ধমকও দেইনি আমি। পরের বার সেই নাপিতের কাছেই চুল কাটিয়েছি। মানুষ বড়ই অদ্ভুত। তারচেয়েও অদ্ভুত আমাদের চালচলন।
সেলুনের মতো একটা স্পর্শকাতর (যেহেতু খুর, ব্লেড কাঁচি ব্যবহার করা হয় মুখমন্ডলের আসে পাশে) যায়গায় কিভাবে নাপিতদের বিনোদনের জন্য টিভি দেয়া হয় আমার বোধগম্য না। কিন্তু ঢাকায় এটাই চলছে।
অদ্ভুত হিউমার আর সেন্স।
টিভি থাকায় চুল ছাঁটানো বাদ দিয়ে আমিও টিভি দেখছিলাম কেন জানি (বাসায় দেখিনা, কিন্তু রাস্তার পাশের শো রূমে বা সেলুনে দেখি)।
মানে গাজী টিভিতে একটা টকশো হচ্ছে।
বিষয়বস্তু, "পরচর্চা ভালো না"।
ট্যাকাটুকা দিয়ে বিশিষ্ট কিছু আলুছানাবিদ ধরে আনা হইছে। উনারা বলছেন পরচর্চা ভালো না এই সেই। একজন বলে বসলেন,
"বাংলাদেশের বেশীরভাগ মহিলারা পরচর্চা করে।" পাশেই বসে থাকা এক বিজ্ঞ মহিলাও মন্তব্য রাখলেন, "শুধু মেয়েদের দোষ কেন? আপনারা ছেলেরাও পরচর্চা করেন। "
বাউন্ডুলে রুবেল জানতে চায়, উনারা সেখানে টকশো করতে বসে কিসের চর্চা করছেন? (বাংলাদেশের মেয়ে বা ছেলেরা কি উনাদের কাছে পর না?)
মাননীয় অমুক, আমি তো স্পীকার হয়া গেলাম।