একজন ভালো মানুষের কথা বলবো....
পেশায় রিকশাওয়ালা। গতকাল আমার এক্সাম থাকায় বেশ আগে ভাগে বেরুলাম বাসা থেকে। মোদী-ফায়েড জ্যাম চলছেই। আড়াই ঘন্টায় ল্যাব এইড পৌছুঁলাম। অস্থির লাগা শুরু হলো। এক্সামের বাকি আর ৩০ মিনিট। ক্যাম্পাসে পৌঁছুতে পারবো তো? গাড়ি ছেড়ে হাঁটা ধরলাম। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। ভিজে যাচ্ছি। কোন রিকশাওয়ালাই রাজী হয়না যেতে। সিএনজি ওয়ালারা তো সেই পুরনো নবাব।
বাইক এক্সিডেন্ট করার পর থেকে দৌড়ালে হালকা ব্যাথা আসে পায়ে। তাও হাঁটার মত করে দৌড়াচ্ছি। এক রিকশাওয়ালা সদ্য জ্যাম পার হয়ে উলটা দিকে যাচ্ছে। বললাম যাবা? ক্যাম্পাসে?
চলে যেতে লাগলো। আমি কাতর হয়ে শেষ ট্রাই করলাম। মামা, আমার পরীক্ষা পাঁচ মিনিটের মাঝে।
ঘ্যাচাং করে রিকশা ঘুরালো ছেলেটা। আমার চেয়ে কমপক্ষে বছর দশেক এর ছোট হবে। আমি অবাক হবার আগেই তার রিকশায় উঠে বসলাম। সুন্দর করে একেবেঁকে চালাতে লাগলো। আমি খুব অস্থির অস্থির করছিলাম। কিছু বলিনি তবুও। সে আরো জোরে চালানো শুরু করলো রিকশা। হঠাত, দেখি সামনের সব ব্রেক করেছে। আমার রিকশা আছড়ে পড়লো সামনের রিকশার গায়ে। রিকশাওয়ালা ব্যালেন্স করতে না পেরে সামনের রিকশার মার্টগার্ডের উপরে থাকা টিনের নকশার উপরে হাত দিয়ে ঠেকালো।
আমি চিল্লায়ে উঠলাম, ব্রেক নাই?
বলে, না মামা, খেয়াল ছিলোনা ব্রেক উইক আমার। আপনার এক্সাম শুনেই দৌড় এর উপর চালানো শুরু করলাম। আমি ভুলে গেছিলাম মামা। আমি হঠাত দেখি তার হাত কেটে গেছে। বেশ রক্ত বেরুচ্ছে। প্রচন্ড খারাপ লাগা শুরু হলো।
তিন মিনিট পরে আমার এক্সাম। এই ছেলেটার জন্য কি করতে পারি আমি? আশে পাশের হাসপাতালও চিনিনা। এই এক্সামটা মিস করার ও কোন উপায় নাই।
আমি বললাম থামো। ব্যান্ডেজের ব্যাবস্থা করি, দেখি।
ক্যাম্পাস তখনও মাইলখানেক দূরে।
বোকা ছেলেটা এক গাল হেসে বললো, দাড়ান, বলেই রিকশা টান দিলো। আমি থামতে বললেও সে থামেনা। হাত কেটে রক্ত পড়ছে। শুধু বললো মামা শুধু ডান বাম বলেন। আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। শক টা নিতে পারছিলাম না।
আমাকে এমবিএ বিল্ডিং এ একেবারে নামায়ে দিয়েই থামলো।
বোকার মত হাসি, হাতের প্রচন্ড ব্যাথাটা প্রচন্ড কষ্টে চেপে কে আর হাসতে পারে এভাবে?
কষ্ট হলো আমার। স্বার্থপর হয়ে যাবার কষ্ট। বোকা ছেলেটার মত না হতে পারার কষ্ট। কিছু টাকা দিয়ে ছেলেটার চিকিতসা করাতে বলে ঢুকে গেলাম এক্সাম হল এ। বুকটা তখনও কাঁপছে।
অমানুষিক। অতিপ্রাকৃত।
বোকা এই রিকশাওয়ালাটার সমান হতে ইচ্ছে করে যাবে হয়তো আজীবন।
শুধু ইচ্ছেটুকুই।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ৮:৫৯