জাফর ইকবালের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে আমার মতামত
জাফর_ইকবালঃ এক সময় শুধু মুসলমান-হিন্দু ছিল। এরপর হঠাৎ করে 'মুরতাদ' নামে একটা শব্দ খুব শোনা যেতে থাকল। আজকাল নাস্তিক শব্দটি খুব ব্যবহার করা হচ্ছে। একজন মানুষ যদি নিজে নিজেকে নাস্তিক দাবি না করে, বাইরে থেকে অন্যরা তাকে কোনোভাবেই নাস্তিক বলতে পারার কথা নয়। কিন্তু এখন একজন মানুষকে প্রথমে টার্গেট করা হয়, তারপর তাকে 'নাস্তিক' বলে প্রচারণা শুরু করে দেওয়া হয়। একজন মানুষকে 'নাস্তিক' হিসেবে মোটামুটিভাবে দাঁড় করিয়ে দিতে পারলে আসলে তাকে হত্যা করার একটা গণলাইসেন্স দিয়ে দেওয়া হয়।
বাউন্ডুলে_রুবেলঃ মুরতাদ শব্দটা কে বা কারা প্রথম দিয়েছে আমার জানা নাই। তখন আমি ছোট ছিলাম বলা যায়। চরমোনাইর পীর এর কাছ থেকে শুনতাম। তবে নাস্তিক শব্দটা ব্যবহার করা হয় এই কথাটি ঠিক না। নাস্তিকরা নিজেদের নাস্তিক বলে প্রচার করতেই পছন্দ করে। মুক্তমনা বলতে যা বুঝায় সেখানে অবশ্যই আমি অন্যের বিশ্বাসকে আহত করে কিছু বলতে পারার কথা নয়। তবে নাস্তিক শব্দটা নাস্তিকদের নিজেদেরই দেয়া। অভিজিৎ বিশ্বাসের অবিশ্বাসের দর্শন বইটা পড়ার আগ পর্যন্ত আমার ধারনা ছিলো এটা প্রচারনা। কিন্তু তা নয়। সেখানে ক্লিয়ারলি নিজেদের নাস্তিক বলা হয়েছে। অনেকটা গর্বিত উচ্চারনে,
"প্রচলিত ধর্মবিশ্বাস আমরা নতুন দিনের নাস্তিকেরা মানি না।" ঠিক এভাবেই লিখা।
তারা যদি নিজেদের পরিচয় নিজেরা সেভাবে দেয় আর পরে তাকে কেউ নাস্তিক বলে তবে কি এটা চাপায়ে দেয়া প্রচারনা হলো?
জাফর ইকবালঃ শেষ পর্যন্ত যখন তাকে সত্যি সত্যি হত্যা করে ফেলা হবে, তখন লোকজন মাথা নেড়ে বলবে, 'না না, কাজটা ঠিক হলো না; কিন্তু-।' এই একটা 'কিন্তু' শব্দ উচ্চারণ করে নাস্তিককে হত্যা করা যে তার জীবনের স্বাভাবিক পরিণতি, সেটি তারা খুব সহজভাবে মেনে নেবে।
বাউন্ডুলে রুবেলঃ আমরা শারীরিক আঘাতকেই শুধু আঘাত মনে করি। এটাই মূলত জাফর সাহেবেরও সমস্যা। মানবতাবাদ নিয়ে যারা গবেষনা করেন কিংবা এ ধরনের সামাজিক কোষ্ঠ্যকাঠিন্যতা নিয়ে কাজ করেন তারা মাত্রই জানার কথা মানসিক আঘাত বা নির্যাতনও অনেক বড় হতে পারে। সংসারে আপনি কোন বধূকে শারীরিকভাবে কিছুই বললেন না, মানসিকভাবেই আঘাত করে গেলেন। তাকে এড়িয়ে চললেন। সে কষ্ট পাবেনা?
তার বিশ্বাস কে আঘাত করলেন। তাকে প্ররোচিত করলেন বিশ্বাস ভাংতে, সে কষ্ট পাবেনা? ঠিক একই রকম, নাস্তিকরা গালাগালি করছে। যা তা লিখে যাচ্ছে।মানুষের মনেও অনেক কষ্ট জমা। এট লিস্ট সুখ স্মৃতির মত তো কিছু নাই কারো মনে।
আছে?
যদি না থাকে তবে কে কারে মেরে ফেললো এই ব্যাপার নিয়ে এতদিন কষ্ট পাওয়া পরহেজগার কিংবা নূন্যতম ঈমান থাকা লোকটা কেন কেয়ার করবে? তার এতদিনের মানসিক কষ্ট যদি আপনি দূর করতে না পারেন, তবে এই হত্যাকান্ডের মত জঘন্য বিষয় যদি তাকে সুখ না দেক, কষ্ট না দেয়, আপনার কিছুই বলার অধিকার নাই স্যার। কে কাঁদবে না কাঁদবে তা দেখার দ্বায়িত্ব আপনার হতো, যদি আপনি ধর্মবিরোধী লেখালেখিকেও নিরুতসাহিত করতেন।
জাফর ইকবালঃ যাদের ওপর 'নাস্তিক' অপবাদ দেওয়া হয় তারা সবাই কি নাস্তিক? তার কি কোনো প্রমাণ আছে? একজন মানুষ যদি একটু যুক্তিবাদী হয়, একটু বিজ্ঞানমনস্ক হয়, একটু মুক্তচিন্তা করে, তাহলেই কি তার পিঠে নাস্তিক ছাপ দেওয়া হয়?
বাউন্ডুলে রুবেলঃ প্রমাণ আছে কিনা আজকে পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তার একাত্তর টিভিতে শো করা দলিলই প্রমাণ করে। যুক্তিবাদী, বিজ্ঞানমনষ্ক আর মুক্তচিন্তাবাজ হলেই তাকে কেউ নাস্তিক বলে না। বছরের পর বছর ব্লগ, ফেসবুক কিংবা সোশ্যাল মাধ্যমে লাইভ বা অন্তর্জালিক লেখালেখিতে নিজেকে নাস্তিক বলে পরিচয় দিলেই তাকে নাস্তিক বলা হয়।
আপনি যুক্তিবাদী, সচেতন কেউ আপনাকে নাস্তিক বলে?
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞানবক্তা মিস্টার আসিক, তাকে কেউ নাস্তিক বলে?
মুক্তচিন্তাবাজ? সে তো প্রায় আমরা সবাই। কুসংস্কার আমরাও অস্বীকার করি।
আমাদের নাস্তিক বলা হয়? উত্তর দিবেন আশা করি।
জাফর ইকবালঃ না, এ দেশে একজন মানুষের পিঠে 'নাস্তিক' ছাপ দেওয়া হয়, যদি সে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ হয়। আরও স্পষ্ট করে বলা যায়, যদি তারা যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়।
বাউন্ডুলে রুবেলঃ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির প্রতিনিধি হিসেবে অনলাইনে লিখালিখি করা সবচেয়ে বড় নামটির নাম অমি রহমান পিয়াল। তাকে কেউ নাস্তিক বলেছে? নাস্তিক ছাপ দিয়েছে?এমনকি ঘোর বিরোধী বিম্পি জোটের কেউ? দেয়নি।
জাফর ইকবালঃ সবাই কি লক্ষ্য করেছে, ব্লগার হিসেবে যাদের হত্যা করা হচ্ছে তারা সবাই কোনো না কোনোভাবে যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবি করে লেখালেখি করেছে কিংবা গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনে অংশ নিয়েছে? এই হত্যাকাণ্ড আসলে একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের একটি নতুন রূপ!
বাউন্ডুলে রুবেলঃ সবকিছুতে একাত্তর টানার ব্যাবসাটা আর যাই হোক আপনাকে দিয়ে মানায় না। একাত্তরের চেতনার মানে এই ছিলোনা দেশ নাস্তিকতায় ভরে যাবে। গণজাগরণ মঞ্চের সবচেয়ে বড় নাম ইমরান এইচ সরকার। কোন প্রমাণ আছে সে নাস্তিক? ইভেন আপনি দিতে পারবেন? পারবেন না। গণজাগরনের সাথে থেকেও যে ইসলাম বিরোধী লিখালিখি করেছে সে নাস্তিক। নাস্তিকতা মূলক লিখা ছাড়া কেউ কি কাউকে নাস্তিক বলে? আমার ধারনা নাই। আমি নিজেই এই হত্যাকান্ডের ঘোর বিরোধী, কিন্তু যে স্টাইলে আপনি সব এক করে ফেললেন তাতে আপনার মুরিদরাই একমত হবে না।
আপনি আপনার মুরিদদের জিজ্ঞেস করে দেখুন তো?
মৃত কিংবা জীবিত সব নাস্তিকদের তারা আসলেই বাংলাদেশের সেইরাম লেভেলের বুদ্ধিজীবি মনে করে কি না?
অন্তত আপনার মুসলিম ফ্যানদের জিজ্ঞেস করুন।
উত্তর পেয়ে যাবেন।
সবকিছুর সাথে একাত্তর মিলায়ে ৭১ কে হালকা করে দেখবেন না, প্লিজ।
ধন্যবাদ মিস্টার জাফর ইকবাল।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:২৪