somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সম্পর্কের পরিচর্যা - ৩ (শেষ পর্ব)

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
উৎসর্গ এবং গল্প লেখার ধারনা - কঙ্কাবতী রাজকন্যা'কে এবং তার লেখা 'যুঁথি' ধারাবাহিক থেকে ।


ছবি - dreamstime.com

প্রথম পর্বের লিংক - Click This Link
দ্বিতীয় পর্বের লিংক - Click This Link

শেষ পর্ব -

ফলাফল -

এখন উভয়েই সারাদিন অপেক্ষা করে তাদের কাংখিত একটা ঘন্টার জন্য। এভাবে দেখতে দেখতে পনের দিন চলে গেল। পনের দিন শেষে সাগর রুমে গিয়ে মুভি বের করে নদীকে ডাকলে মা বলে উঠলো , " তোমাদের পনের দিন শেষ। এখন আর শাস্তি ভোগ করার দরকার নেই ।

সাগর অবাক হয়ে মাকে জিজ্ঞাসা করে - শাস্তি ?

মা বললেন, " হ্যা - তোমাদেরতো আমরা এক ঘন্টা একসাথে থাকার জন্য শাস্তিই দিয়েছিলাম "।

সাগর কিছুটা অবাক হয়ে বলে উঠলো, " কিন্তু মা - তুমিতো একমাস থাকার কথা বলেছিলে "?

মা বললেন, " বলেছিলাম,তবে এখন তোমাদের শাস্তি কমিয়ে দিলাম। আমরা ভাবলাম তোমাদের উপর আমরা মা-বাবা অনেক অত্যাচার করে ফেলেছি। শুধু শুধু তোমাদের উপর আমরা একটা বিষয় চাপিয়ে দিয়েছি ছেলেমানুষী করে। আগামী কাল তোমরা উভয়ে গিয়ে ডিভোর্স ফাইল করতে পারো "।

সাগর-নদী একে অন্যের দিকে অবাক ও ব্যাথাতুর চোখে তাকিয়ে রইলো। তারা উভয়েই যেন ভূলেই গিয়েছিল যে,তারা কেন এবং কি জন্য এইটা শুরু করেছিল। মা তারপর বলে উঠলেন, " আজ আর তোমাদের যাওয়া লাগবেনা ঐ রুমে। যাও বৌমা,আমার জন্য একটা ডিম ভাজি করে নিয়ে আস। দুপুরে তরকারীর মাঝে লবণ বেশী দিয়েছিলে, আমি খেতে পারিনি। ইদানিং আমি দেখছি তোমার কোন কাজে বা রান্নায় মনোযোগ নেই" ।

নদী উঠে যেতে চাইলেই সাগর নদীর হাত ধরে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে, " মা, তুমি কিন্তু এক মাসের কথা বলেছিলে আর এখন নদী পাকঘরে যাবেনা - আমার সাথে রুমে যাবে"।

সাগর নদীকে টেনে রুমে নিয়ে যখন দরজা বন্ধ করে দেয় তখন নদীর নতুন বউয়ের মত লজ্জা লাগছিল। বিয়ের পরপর নতুন বউকে জামাই রুমে ডাকলে যেরকম লজ্জা অনুভূত হয় ঠিক সেরকমই নদীর মনে হচছিল।

নদী হাসি চেপে রেখে রাগী রাগী মুখ করে সাগরকে বলল, " এইটা তুমি কি করলা " ?
সাগর বললো, " কি করলাম মানে ? তোমাকে নিয়ে মুভি দেখব তাই তোমাকে নিয়ে আসলাম "।
"তাই বলে এভাবে মায়ের সামনে থেকে, তোমার লজ্জা নেই এতটুকুও " ? - নদী বললো।

" তো কিভাবে আনব আর নিজের বউয়ের কাছে কিসের লজ্জা ? পরে আবার কি ভেবে মন খারাপ করে সাগর বললো, আচছা ঠিক আছে,যদি তোমার মুভি দেখার ইচছা না থাকে তবে তুমি যাও " ।
নদী হাসি চেপে রেখে দরজার দিকে এগিয়ে যেতেই সাগর বলে উঠে - " খবরদার নদী , রুম থেকে বের হবেনা তুমি"।

নদী হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ে বিছানায়। সাগর বোকার মত চেয়ে থাকে নদীর দিকে এবং বুঝতে চেষ্টা করে নদীর হাসার কারণ।

পরের দিন বাবা একটা ফর্ম এনে বলল, " এই নেও - আজ একটা কাজে কোর্টে গিয়েছিলাম তাই ফর্মটা নিয়ে আসলাম। তোমরা উভয়ে এটা পূরণ করে আগামীকাল কোর্টে জমা দিয়ে এসো "।


সাগর-নদী দুজনেই অবাক হয়ে দেখল এটি একটি তালাক নামার ফর্ম । সাগর গভীর দুঃখের সাথে নদীর চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো, যেন দেখতে চাচছে নদী কি বলে বা নদীর প্রতিক্রিয়া কি। দুজনেই চুপ করে আছে এবং কিছু বলছেনা দেখে বাবা বলে উঠলো," কি ব্যাপার , কোন সমস্যা তোমাদের"?

সাগর-নদী একসংগেই বলে উঠলো, " আমার তালাক চাইনা বাবা "।
তাদের এ কথায় বাবা-মা দুজনেই চোখাচোখি হলো এবং বেশ রাগীভাবে বাবা বলে উঠলো, " তোমরা নিজেরাইতো কিছুদিন আগে তালাক চেয়েছিলে এখন আবার উল্টে যাচছো কেন "? তোমরা কি ফাজলামি করছ আমাদের সাথে ?

সাগর-নদী একে অপরের দিকে করুণ চোখে তাকিয়ে থাকে, কোন কথা খুজে পাচছেনা বলার মত বাবাকে। তখন নদীর কেমন যেন এক অনুভুতি হচছিল যেখানে কোন কিশোরীকে তার মা-বাবা তার ভালবাসাকে ভূলে যেতে বলছে। নদীর ভীষণ মন খারাপ হতে লাগল , কেমন যেন বুকটা ফেটে যেতে চাচছে না বলা কষ্টে। মনে হচছে কিছু বলতে গেলে এখন সে বলতে পারবেনা কেঁদে ফেলবে। এদিকে সাগরেরও একই রকম অবস্থা । কিছুই বলতে পারছেনা , বুক ভেংগে যাচছে না বলা কষ্টে আর তাকিয়ে আছে বাবা-মায়ের দিকে করুণ চোখে।

বাবা-মা আর কিছু বলল না । ফর্মটা হাতে নিয়ে বলল, " আচছা ঠিক আছে, এখনি কিছু বলতে হবেনা। আরও দু-চার দিন সময় নাও তোমরা। এরপর ভেবেচিন্তে তোমরা পূরণ করো "।

নদীর দাড়িয়ে থাকতেই কষ্ট হচছিল ,তার মনে হচছে সে যে কোন সময় পড়ে যাবে দাড়ানো থেকে । তারপরেও যখন পা টেনে ধীরে ধীরে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে লাগল তখন সাগর বলে উঠে , " আমার তালাক চাইনা বাবা " । তারপর নদীর দিকে তাকিয়ে নদী তখনো চুপ করে আছে দেখে এগিয়ে এসে বলে, " নদী, তুমি কি এখনো তালাক চাও "?

নদীর মুখ দিয়ে কোন শব্দই বের হচছিলনা । মুখ তোলে সাগরের দিকে তাকাতেই সাগর দেখতে পেল চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে নদীর। সাগর কোন কথা না বলে বাবা-মায়ের সামনেই নদীকে গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরল এবং আবেগে কপোলে চুমু দিয়ে জড়িয়ে ধরে রাখল দীর্ঘ সময়। এদিকে নদী শুধু হেচকি দিয়ে দিয়ে কেঁদেই যাচছে না বলা ভাললাগায় এবং নতুন করে আপনজনকে পাওয়ার আনন্দে। সাগর আরো জোরে জড়িয়ে ধরে নদীকে। নদীর মনে হতে থাকে, " এই মানুষটাকে ছাড়া আমি একমুহূর্তও থাকতে পারবোনা"।

নদী ধীরে ধীরে সাগরের বাহুবন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত করে নত মাথায় বাবা-মায়ের সামনে দাড়িয়ে বলে, " আমার তালাক চাইনা বাবা, আমরা এখন ঠিক আছি "।

মা বলে উঠলো, " এত দ্রুত কিভাবে তোমাদের সব কিছু ঠিক হয়ে গেল? মাত্র পনের দিন আগেই তোমরা একে অন্যের থেকে তালাক চেয়েছিলে,তা কি তোমরা ভূলে গেছ ? পনের দিন আগেও তোমরা একে অন্যকে এক মুহূর্তের জন্যও সহ্য করতে পারতেনা "।

সাগর-নদী উভয়েই মাথা ঝাকিয়ে নতমুখে বলে উঠে, " আমি জানিনা " ।

তাদের কথা শুনে বাবা-মা উভয়েই উচচস্বরে হেসে উঠে। সাগর-নদী উভয়েই বোকা চোখে মা-বাবার দিকে তাকিয়ে বলে , " তোমাদের কি হয়েছে"?

মা হাসতে হাসতে বলে, " আমরাও একবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, একসাথে আর থাকবো না এবার আমরা তালাক নিবো। তখন আমার শ্বশুর-শ্বাশুরী ( সাগরের দাদা-দাদী )ও ঠিক এভাবেই আমাদের একমাস এক ঘন্টা এক সাথে থাকার শাস্তি দিয়েছিল। অবশ্য আমাদের মাঝে এক সপ্তাহের মাঝেই সব ঠিক হয়ে গিয়েছিল । এই এক সপ্তাহেই আমরা বোঝে গিয়েছিলাম এক জনকে ছাড়া অন্যের চলবেনা এবং আমরা কেউ কাউকে ছেড়ে থাকতে পারবোনা" ।

নদী কেঁদে-কেটে বসে পড়তেই মা বলে, " বৌমা সবাই বলে, মা হওয়া অনেক কঠিন জিনিষ । মা হতে গেলে অনেক কিছু ত্যাগ করতে হয়। এটা আসলে একটা ভূল কথা। এই কথার মাধ্যমে আমাদের সমাজে মেয়েদের উপর একটা বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়। মেয়েরা এটা শুনেই বড় হয় যে,মেয়েদের/মায়েদের সন্তানের জন্য সব করতে হয়। তাই যখন একটা সন্তানের জন্ম হয় তখন মেয়েরা সব কিছু ভূলে তার সব ধ্যান-জ্ঞান সন্তানের পিছে ব্যয় করে। এতে তার তেমন কোন দোষও থাকেনা। আর এসব করতে গিয়ে সেই মানুষটা থেকেই মেয়েরা নিজেদের অজান্তে বহূদুরে চলে যায় যে মানুষটাকে সবসময় সবচেয়ে বেশী কাছে রাখার দরকার ছিল। যখন একটু তাকানোর সময় হয় বা পরিবর্তীত সম্পর্কের বাস্তবতা উপলব্ধি করার সুযোগ হয় তখন আর কোন ভাবেই ফিরে যাওয়ার পথ থাকেনা তার মনের মাঝে। জীবনের নানা জটিলতা ও ব্যস্ততার জঞ্জাল দিয়ে সেই পথ আমরাই ভরাট করে ফেলি নিজেদের অজান্তে যেখানে আর উভয়ের কারোরই একটু দাড়ানো,হেটে বেড়ানো কিংবা নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ থাকেনা । কেউ আর কাউকে বুঝতে চায়না ও বুঝতেও পারেনা। নিজেরা নিজেরা ভাবে ,সে এখন আর আমাকে ভালবাসেনা ,এই ভেবে নিজে নিজে কষ্ট পায় কিন্তু কেউ আর এগিয়ে আসেনা অন্যের মান-অভিমান ভাংগাতে কিংবা সম্পর্কের পরিচর্যায়। উভয়েই ভাবে সম্পর্কের দায় শুধু তার একার নয় অপরেরও। কেউ আর কারো আবেগ-অনুভূতিকে না করে কেয়ার না করে সম্মান। আর এই মান-অভিমান থেকে রাগারাগি-জগড়া , তারপর ভূল বোঝাবুঝি থেকে তিক্ততা এবং সব শেষে সবকিছুর অবসানের জন্য তালাক নামক বেদনাদায়ক পরিস্থিতীর মুখোমুখী। আর তালাকের মাধ্যমেই যে এসব সমস্যা থেকে মুক্তি মিলে এমনও নয়, তারপরেও তার মাঝেই মুক্তি খোজে উভয়েই"।


মা একটু থেমে আবার বলতে লাগলেন, " অথচ শত ব্যস্ততার মাঝেও দিনের কিছুটা সময়ও যদি তোমরা একে অপরকে দিতে তবে তোমাদের জীবনে এরকম বেদনাদায়ক পরিস্থিতীর মুখোমুখি হতে হতনা । শুধু একটু সময়, একান্ত ব্যক্তিগতভাবে একটু সময় । একে অপরকে দেখে একটু হাসা,একটু জড়িয়ে ধরা, হঠাত করে একটা চুমো দেওয়া কিংবা সময়ে অসময়ে ফোন করে খোজ নেওয়া , উভয়ে উভয়ের পছন্দ-অপছন্দের দিকে নজর রাখা এবং পছন্দের কাজ গুলি করে মাঝে মাঝে চমকে দেওয়া - এসব ছোটখাট কাজ যা তোমাদের উভয়কে নিজেদের ভাগ্যনবান হিসাবে ভাবতে বাধ্য করত এবং উভয়েই উভয়ের জন্য গর্বিত বোধ করতে। অথচ একসাথে একঘরে তোমরা ১০ বছর থেকেছ ,এভাবে না তোমরা চিন্তা করেছ না সেভাবে সময় কাটিয়েছ। আর সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার, তোমরা একঘরে, এক বিছানায় থেকেছ ঠিকই কিন্তু তোমরা কেউ কাউকে এক ঘন্টা সময়ও দেওনি । শারিরীক ভাবে এক ঘরে এক বিছানায় থেকেও মনের দিক থেকে তোমরা ছিলে শত মাইল দূরে"।

মা গ্লাস থেকে পানি খেয়ে আবার বলতে লাগলেন, " স্বামী-স্ত্রী'র জীবনে বা পরিবারে সন্তান অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ তবে সেই সন্তানকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে যেই সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে পরিবার- সন্তান, সেই সম্পর্কই যদি শেষ হয়ে যায় তাহলে কিভাবে সন্তানের সঠিক পরিচর্যা করবে তোমরা? যেই পরিবার-সন্তান করে নিজেদের সব শেষ করছ একটা সময় এসে তোমরা দেখলে তোমাদের উভয়ের মাঝেই আর বলার মত কোন কিছু বাকী নেই । সাগর ব্যস্ত তার অফিস কাজ নিয়ে আর বৌমা তুমি ব্যস্ত তোমার সংসার সন্তানকে নিয়ে কিন্তু তোমাদের দিন শেষে বা শেষ বয়সে এসে তোমাদের একে অন্যের সাথেই থাকতে হচছে এবং হবে। ছেলে-মেয়ে-পরিবারকে সময় দিতে গিয়ে তোমরা নিজেদেরকে এক ঘন্টা সময়ও না দিয়ে কি অর্জন করছে ? নিজেদের মাঝে ভূল বোঝাবুঝি ও তিক্ততা। এক ঘন্টা সময়ে এমন না যে তোমরা সন্তানদেরকে মানুষ করে ফেলছ বা পরিবারে জন্য অনেক কিছু করে ফেলছ । আবার তোমরা যদি এক ঘন্টা সময় নিজেদেরকে দিতে তার জন্য কারো কাছে তোমাদের কোন জবাবদিহীও করতে হতনা অথচ তোমাদের সম্পর্কটা ভালো থাকত । আর তোমাদের সম্পর্ক ভালো থাকলে পরিবার-সন্তান উভয়ের জন্যই লাভ " ।

সাগর কাঁদতে কাঁদতে নদীর হাত চেপে ধরে। মা আবার বলে উঠে, "যে কোন সম্পর্কই একটা চারা গাছের মতো যাকে যত্ন ও পরিচর্যা করতে হয়। তাতে দিতে হয় সার-পানি।আর যখন গাছের শিকড় গেড়ে উঠে তখনও প্রতিদিন পানি না দিতে হলেও মাঝে মাঝে ঠিকই পানি দিতে হয় । দিতে হয় সার ,কীটনাশক - পরিষ্কার করতে হয় তার গোড়া থেকে আগাছা, তবেই একটা গাছ ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে। কিন্তু ছোট থাকতে সার-পানি না দিলে যেমন মরে যেত তেমনি বড় হলে সার-পানি দিলে হয়ত তাড়াতারি মরবেনা তবে ভালোভাবে বেঁচেও থাকবেনা এবং একসময় মারা যাবে। ঠিক তেমনি , বিয়ের আগে বা বিয়ের কিছুদিন পর পর্যন্ত ছেলে-মেয়ে উভয়েই নিজেদের সম্পর্কের খুব যত্ন ও পরিচর্যা করার কারনে উভয়ের মাঝে সম্পর্কটা খুব ভাল ও মধুর থাকে । তারপর ধীরে ধীরে বিয়ের পর সব ভূলে যায় । নিজেদের মাঝে কেয়ার বা ভালবাসা বলে কোন কিছুই আর থাকেনা বা থাকাটা যে জরুরী তাই ভূলে যায়। যে কোন সম্পর্কই আপনা আপনি চলেনা। একে যত্ন ও পরিচর্যা করতে হয় তবেই সম্পর্ক রক্ষা হয় নতুবা এভাবেই হয় শত শত সম্পর্কের অপমৃত্যু। কাজেই এখন তোমরা ভেবে দেখ তোমরা উভয়ে গত দশ বছর কি করেছ এবং বাকী জীবন কি করবে"?

সাগর-নদী উভয়েই মা বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো শিশুর মত । আর বাবা-মায়ের কান্না শুনে দুই সন্তানও গুটি গুটি পায়ে বেরিয়ে আসল রুম থেকে এবং অবাক বিস্ময়ে দেখতে লাগল তাদের বাবা-মাকে।

তারপর ?

তারপর,দেখতে দেখতে পঁচিশ বছর পার হয়ে গেল সাগর-নদীর বৈবাহিক জীবন। এর মাঝে বাবা-মাও চিরদিনের মত ছেড়ে গেছে তাদের এবং দুই সন্তানও বড় হয়ে গেছে। সংসারের জটিলতা ও ব্যস্ততায় নিজেদের মাঝে ছোট-খাট কিছু ঝামেলা হয়নি এমন নয় তবে উভয়ে উভয়ের সাথে শেয়ার-কেয়ারের মাঝে পার করে এসেছে সেই সব ঝামেলা।

এর মাঝে তাদের মেয়ে মোহনার বিয়ে হলো। ছেলেও বিয়ে করল। ছেলের বিয়ের পাঁচ বছর পর একদিন ছেলে-ছেলের বৌ এসে বলল, ওরা তালাক চায় একে অন্যের কাছ থেকে, কারন একসাথে থাকা আর কারো পক্ষেই সম্ভব না।

ছেলে-ছেলের বৌয়ের কথা শুনে সাগর-নদী তাকায় একে অপরের দিকে ও মুচকি হাসে এবং মনে মনে বলে ,এখন আমরা জানি কিভাবে সম্পর্কের পরিচর্যা করতে হয় বা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হয় । তারপর সাগর গম্ভীর গলায় বলে উঠলো, " ঠিক আছে , তোমরা তালাক নিবে তবে আমাদের একটা শর্ত আছে"।

" কি শর্ত "? - প্রশ্ন করে ছেলে-ছেলের বৌ।

সাগর বলে, " তোমাদের উভয়কে এক মাস এক ঘন্টা করে এক রুমে থাকতে হবে । আর এই শর্ত মানলেই এক মাস পর আমরা তোমাদের তালাকের সিদ্ধান্ত মেনে নিব :(( ;) "।

================================================================
পুনশ্চ / পরিশিষ্ঠ -

যদিও এটা গল্প তবে তা আমাদের জীবনেরই বাস্তবতা । একটি পরিবার-সংসার গড়ে উঠে স্বামী- স্ত্রী মিলে এবং তাদের ভালবাসায় । কিন্তু সংসার জীবনের জটিলতায় এবং সম্পর্কের টানা-পোড়নে সেই সংসার ভেংগে যায় তাসের ঘরের মত । জীবনের জটিলতায় সময়ের সাথে সাথে উভয়ের প্রতি উভয়ের অনুরাগের পরিবর্তে জন্ম নেয় ঘৃণা বা সম্পর্কে আসে শীতলতা । জীবনের বাকী সব কিছুকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়ই চলে আসে গুরুত্বহীনতা বা শীতলতা । আর এর পরিণতি দাড়ায় সংসারের ভাংগন কিংবা তালাক। তাই , আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত, যতই ব্যস্ততাই থাকুক বা যত সমস্যাই আসুক না কেন, সব সময় সংগীর প্রতি আন্তরিক থেকে , ভরসার হাত বাড়িয়ে সম্পর্কের পরিচর্যা করা। এতে পরিবারের ভাংগন যেমন রোধ হবে তেমনি নিজেরাও বাঁচতে পারবে সুখী-সুন্দর ভাবে আর পরিবার হয়ে উঠবে শান্তির আবাস।

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
পূর্বের গল্প -

২। " শাশুড়ি " - ( গল্প ) - লিংক Click This Link
১। " রোযা " (ছোট গল্প) - লিংক Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:১৬
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×