somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

" রাশিয়া - ইউক্রেন যুদ্ধ " - ইউক্রেনের সীমিত সামর্থ্য ও পশ্চিমাদের হুমকি-ধামকি কিংবা শুধু নিষেধাজ্ঞা দিয়েই কি থামানো যাবে মহাশক্তিধর রাশিয়াকে ? (১ ম পর্ব) ।

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবি - republicworld.com

কয়েকদিন আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন টেলিভিশনের দেয়া এক ভাষণে ইউক্রেন সম্পর্কে বলেন, এটা এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলোনি যেটা পুতুল সরকারের মাধ্যমে চলছে। তিনি আরো বলেন, "ইউক্রেন কোন দিনই প্রকৃত রাষ্ট্র ছিল না এবং আধুনিক ইউক্রেন রাশিয়ার দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে এবং ইউক্রেন কোন আলাদা দেশ ও জাতি নয় বরং ইউক্রেন হলো রাশিয়ার অবিছ্যেদ্য অংশ"। পুতিন এখনো বিশ্বাস করেন, ইউক্রেন রাশিয়ার আদিভূমি। তার এই বিশ্বাসের পেছনে অবশ্য কিছুটা হলেও সত্য ইতিহাস আছে তবে ইতিহাসের দিকে তাকালে এও আমরা দেখি, ইউক্রেন নানা সময়ে অনেক দখলদারের অধীনেই ছিল। জাতিগত বৈশিষ্ট্যে কিংবা অর্থোডক্স খ্রিষ্টানদের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যে ইউক্রেনিয়ান ও রাশিয়ানদের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। সে দিক বিবেচনায় রাখলে রাশিয়ার সাথে ইউক্রেনের বিরোধ না থাকারই কথা।

কেউ কেউ মনে করেন ইউক্রেনীয় জনগোষ্ঠীর আদি মানুষ ছিলেন রুশ। তাদেরকে ডাকা হতো কিয়েভিয়ান রুশ হিসেবে। কারো কারো মতে, তাদের রয়েছে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান রক্ত ও সাংস্কৃতিক ধারা। কেউ কেউ বলেন, রুমানিয়ানদের সাথেও তাদের রয়েছে যোগসূত্র। তবে, আসল হলো তারা আসলেই রাশিয়ান রক্তের উত্তরাধিকার বহন করছে। ভ্লাদিমির পুতিন আর ভ্লাদিমির জেলেনক্সির নামে ও ধর্মে, চেহারা ও অন্যান্য বিষয়ে তাদের মধ্যে ঐক্য বিদ্যমান। কিন্তু রাজনৈতিক চেতনায় তারা ভিন্ন ও এই ভিন্নতার কারণও রয়েছে। এখন যারা ইউক্রেনের মধ্যে বসবাস করছে তাদের মাঝে তিনটি ধারা চালু আছে -

এক - ইউক্রেনপন্থী ।
দুই - রুশপন্থী।
তিন - তৃতীয়পন্থী, তৃতীয়পন্থীরা এই দুই পক্ষেরই বিরুদ্ধে।

সুদূর অতীতেও ইউক্রেনের মানুষের বোধ ও বিশ্বাসে এমন ত্রিধারা ছিল। পুতিন মনে করেন, ১৯৯১ সালে যখন মিখাইল গর্বাচেভ ক্ষমতায় ছিলেন, তার সরকার ছিল খুব দুর্বল এবং তিনি একটি ঘোরের মধ্যে পেরেসস্ত্রয়কার জালে জড়িয়েছিলেন। তিনি সে সময়ই ক্রাইমিয়াসহ অন্য এলাকাগুলো ফিরিয়ে আনতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা করেননি। সেই ভুল থেকেই আজকের এই বিরোধ।

কেন ইউক্রেন সঙ্কট বা রাশিয়া - ইউক্রেন যুদ্ধ -

সাবেক সোভিয়েত আমলে ৭০ বছর ইউক্রেন শাসিত হয়েছে রাশিয়ার দ্বারা । এই ৭০ বছর ধরে সোভিয়েত শাসনের সময় তারা যে শুধু নিগৃহীত হয়েছেন এমন নয় বরং সোভিয়েত রাশিয়ার সময়েই ইউক্রেনের উন্নয়ন হয়েছে সোভিয়েত রাশিয়ার অন্য অংশের তুলনায় অনেক বেশী। সেসময় লেনিন থেকে শুরু করে নিকিতা ক্রুশ্চেভ পর্যন্ত সোভিয়েত নেতারা ক্রিমিয়াসহ আলাদা আরো কিছু এলাকা ইউক্রেনের সীমানায় জুড়ে দেন। যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেংগে ইউক্রেন স্বাধীন হয় তখন গর্ভাচেব সেই আলাদা করে জুড়ে দেয়া এলাকাগুলি নিয়ে কোন কিছু করেন নি বা সেগুলো ইউক্রেনকেই দিয়ে দিয়েছিলেন। যদিও সেগুলি ছিল রাশিয়ার অংশ , আর তাই এখন সেগুলো উদ্ধারের চিন্তা তো পুতিন করতেই পারেন। আদি রাশিয়ান সাম্রাজ্যের কেন্দ্রও ছিল এককালে কিয়েভ। এসব মিলিয়েই ভ্লাদিমির পুতিনের নিজের মতো করে রাশিয়ার সীমানা গড়ে নেয়ার আয়োজনের নামই এখন ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধ সূচনার আগেই পুতিন বলেছেন, ইউক্রেন কোনো জাতিরাষ্ট্র নয়। ওই রাষ্ট্র কোনো জাতিকে চিহ্নিত ও চিত্রিত করে না।


ছবি - military.com

রাশিয়া - ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু -

পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দনেৎস্ক এবং লুহানস্ককে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে রাশিয়ার স্বীকৃতি দেয়ার পর থেকেই ওই অঞ্চলে উত্তেজনা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছিল এবং তাদের রক্ষায় সেনা প্রেরনের ঘোষনায় যুদ্ধ শুধু সময়ের অপেক্ষার বিষয় হয়ে যায়। অবশেষে, বৃহস্পতিবার (২৪/০২/২০২২) ভোর থেকে মিসাইল ছুঁড়ে ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করেছে রাশিয়া এবং রাশিয়ার সেনাবাহিনী বিভিন্ন দিক থেকে ইউক্রেনের সামরিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা চালাতে শুরু করে। এদিকে ইউক্রেন পশ্চিমাদের আশায় ও আশ্বাসে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি প্রতিরোধ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে চলেছিলেন আগে থেকেই। তার সেই প্রস্তুতি কতটা ফল দেবে কিংবা ইউরোপ-আমেরিকা কতটা সাহায্য করবে বা জড়িত হবে এই যুদ্ধে বা বৃহৎশক্তি রাশিয়ান বাহিনীকে কিয়েভ কতটা ঠেকাতে পারবে, কারো জানা নেই। তবে যুদ্ধ শুরুর চারদিন পর এটা দেখা যাচছে যে, ইউক্রেনের পশ্চিমা বিশ্বের বন্ধুরা মানে ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্র এই প্রতিরোধ যুদ্ধে সরাসরি অংশ নেবেনা ও নেয়নি। কারন তাদের কাছে মনে হয়েছে তারা যদি সরাসরি রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে জড়ায় তাহলে
বিশ্বযুদ্ধ বেধে যেতে পারে। আর তাই তারা এর সমাধান কূটনৈতিক স্তরেই সমাধান চেয়েছিলেন এবং হুমকি ধামকি কিংবা অবরোধের মাঝেই থাকতে চাচছেন।

এটা নিশ্চিত যে, যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো যদি ইউক্রেনের সাহায্যে প্রচলিত অস্ত্র নিয়েই এগিয়ে আসে, তাহলেও এর ব্যাপ্তি ঘটবে এবং বিস্তার লাভ করবে গোটা দুনিয়াজুড়ে। এ কারণেই কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, দুটি মহাসমরের পর এটিই হবে আরেকটি মহাসমর। বর্তমান করোনা কালীন সময়ে বিশ্ব অর্থনীতি এই মহাযুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি সামাল দেয়ার মত অবস্থানে নেই। আর এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো সরাসরি যুদ্ধে না জড়িয়ে টেকনিক্যালি রাশিয়াকে স্থবির করতে উৎসাহী। কিন্তু সেখানেও রয়েছে নানামুখী সমস্যা ও সঙ্কট বিদ্যমান।


ছবি - flipboard.com

যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের নিষেধাজ্ঞা জারি ও রাশিয়ার প্রস্তুতি -

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুটো এলাকাকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রেসিডেন্ট পুতিন লুহানস্ক ও দোনেৎস্কে রুশ সৈন্য পাঠানোর নির্দেশ দেন এবং বলেন রাশিয়ার সেনাবাহিনী সেখানে শান্তিরক্ষার কাজে নিয়োজিত থাকবে। লুহানস্ক ও দোনেৎস্কে রুশ সৈন্য পাঠানোর ঘোষনা দেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং তাদের আরো কিছু মিত্র দেশ রাশিয়ার ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন ২০১৪ সালে যেসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল এবারের নিষেধাজ্ঞাগুলো হবে তার চেয়েও বড় এবং কঠোর। তিনি বলেছেন, রাশিয়া যদি আরো অগ্রসর হয় তাহলে তারাও আরো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে প্রস্তুত। এধরনের নিষেধাজ্ঞার কোনো প্রভাব কি আসলেই পড়ে রাশিয়ার ওপর?

ইউক্রেন সঙ্কটের সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ রাশিয়ার বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধের পরিবর্তে এখনো নিষেধাজ্ঞার উপরই বেশী নির্ভর করতে চাচছেন এবং এখন পর্যন্ত আমেরিকা-ইউরোপ অর্থনৈতিক সহ আরো কিছু অবরোধ আরোপ করেছেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে । আর এসব অবরোধ যুদ্ধ বন্ধে কতটা কার্যকর হবে তা দেখা সময়সাপেক্ষ তবে অবস্থাদৃষ্ঠে মনে হচছে রাশিয়া অবরোধ আরোপে দুশ্চিন্তায় নেই এবং সে এসব ভালভাবে সামাল দিতে পারবে।

ইতিপূর্বে ক্রিমিয়া দখল করে নেয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ রাশিয়ার পাঁচটি ব্যাংক ও ধনকুবেরের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। সেই নিষেধাজ্ঞা বলতে গেলে তেমন কোনো কাজেই লাগেনি। অনেক আগে থেকেই রাশিয়া আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলার জন্য কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে এমন এক রুশ অর্থনীতি গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে যার ওপর নিষেধাজ্ঞার তেমন একটা প্রভাব পড়বে না । আর এসব কাজের ফলে প্রেসিডেন্ট পুতিন আশা করছেন যে, পশ্চিমা দেশগুলো যতোটা অনুমান করেছিল, তার দেশ তার চেয়েও বেশি সময় ধরে এসব নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে টিকে থাকতে পারবে।

১। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ -

বর্তমানে রুশ সরকারের আন্তর্জাতিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ রেকর্ড পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। বৈদেশিক মুদ্রা এবং স্বর্ণের এই রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬৩ হাজার কোটি ডলার এবং রাশিয়া এখন আর কেবল সোনা আর ডলারের মজুদের ওপরই নির্ভরশীল নয়। বিশ্বের সব দেশের তুলনায় রাশিয়ার এই রিজার্ভ চতুর্থ বৃহত্তম যা রুশ মুদ্রা রুবলের পতন ঠেকিয়ে একে চাঙ্গা রাখতে একটা উল্লেখযোগ্য সময় পর্যন্ত ব্যবহার করা হতে পারে। উল্লেখ্য যে বর্তমানে রাশিয়ার বৈদেশিক মুদ্রার মাত্র ১৬% ডলারে রাখা। পাঁচ বছর আগেও এর পরিমাণ ছিল ৪০%, অন্যদিকে রাশিয়ার বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রার প্রায় ১৩% রাখা চীনা মুদ্রা রেনমিনবি'তে রাখা । পুতিন এসবই পরিকল্পিতভাবে করেছেন এবং এটা করা হয়েছে আমেরিকার নেতৃত্বে রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে, তা থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য এবং এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউই যদি আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপও করে তাহলেও তাকে সহজে কাবু করা যাবে না।

২। বৈদেশিক নির্ভরতা হ্রাস , টেকসই উন্নয়ন ও স্থানীয় বিনিয়োগ বাড়ানো

পুতিন রাশিয়ার অর্থনৈতিক কাঠামোতেও বড় ধরনের কিছু পরিবর্তন নিয়ে এসেছেন। সময়ের সাথে সাথে দেশটি বৈদেশিক ঋণ ও বিনিয়োগের ওপর তাদের নির্ভরতা কমিয়েছে। একই সাথে তারা পশ্চিমা বাজারের বাইরে নতুন নতুন দেশের সঙ্গে বাণিজ্যের সুযোগ সম্ভাবনাও যাচাই করে দেখেছে। তাদের নতুন এই কৌশলের একটি বড় অংশ হচ্ছে চীন। রাশিয়া তার বিনিয়োগ ও ঋণের বিষয়টি বৈদেশিক ঋণের ওপর থেকে সরিয়ে এনেছে অনেকটাই। অবশ্যই এই নতুন ব্যবস্থার প্রধান সাহায্যকারী চীন। নতুন অর্থব্যবস্থার চেষ্টাও রাশিয়ার রয়েছে, যার কারণে তাদেরকে নিষেধাজ্ঞার জালে সহজে আটকাতে পারবে না যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইউরোপ।

এছাড়া রাশিয়া তার বাজেটেও কাটছাঁট করে এনেছে। প্রবৃদ্ধির বদলে এখন তারা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকেই বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
এর ফলে রাশিয়ার অর্থনীতি গত এক দশকে প্রতি বছর গড়ে এক শতাংশেরও কম হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এই প্রক্রিয়ায় দেশটি আগের তুলনায় আরো বেশি আত্ম-নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে। রাশিয়া যা করছে এর মধ্য দিয়ে কার্যত তারা বিকল্প এক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলছে যাতে তারা পশ্চিমা বিশ্বের সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার আঘাত সামাল দিতে পারে।


৩।বিকল্প অর্থনৈতিক ব্যবস্থা

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে অর্থ লেনদেনের জন্য সুইফট নামের যে আর্থিক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রয়েছে, পশ্চিমা দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কসমূহ এই সুইফট তদারকি করে থাকে। অবরোধের নামে তা থেকে রাশিয়াকে বের করে দেওয়া হলে বিশ্ব অর্থনৈতিক লেনদেনের ব্যবস্থা থেকে দেশটি যাতে বিচ্ছিন্ন হয়ে না পড়ে, সেজন্য তারা আগে থেকেই কিছু পদক্ষেপ নিয়ে রেখেছে। আন্তর্জাতিকভাবে অর্থ লেনদেনের ব্যাপারে রাশিয়া তাদের নিজস্ব একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য ইতোমধ্যে প্রাথমিক কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। যদিও এসব হলো শুধু হলো হিসাবের বা অনুমানের বিষয়।


ছবি - eu-logos.org

৪। রাশিয়ার গ্যাস-তেল অস্ত্র ও পশ্চিমাদের কৌশলগত স্বার্থ -

পুতিন মুখে যাই বলুক, দীর্ঘমেয়াদে রাশিয়ার জন্য এসব অবরোধ বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে ও দেশটির অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। প্রধান প্রধান ব্যাঙ্ক, বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় ব্যাঙ্কগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে রাশিয়া অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে প্রেসিডেন্ট পুতিন হয়তো আরো একটা হিসেব কষে দেখেছেন এবং তা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কৌশলগত ভিন্ন ভিন্ন স্বার্থ। উল্লেখ করা যেতে পারে যে কিছু কিছু দেশের জন্য রাশিয়ার তেল ও গ্যাস শিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা অন্য কিছু দেশের তুলনায় সহজ। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন তার প্রাকৃতিক গ্যাসের ৪০% পেয়ে থাকে রাশিয়ার কাছ থেকে। আর ব্রিটেন ৩% গ্যাসের জন্য রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল। এদিকে ,ইউক্রেনের দুটো অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে রাশিয়ার স্বীকৃতির পর জার্মানি নর্ড স্ট্রিম ২ গ্যাস ( নর্ড স্ট্রিম ২ হল বাল্টিক সাগরে গ্যাজপ্রম এবং অন্য পাঁচটি ইউরোপীয় কোম্পানির নেতৃত্বে একটি পাইপলাইন প্রকল্প। গ্যাজপ্রম বিশ্বব্যাপী গ্যাস সরবরাহ বাজারের নেতা হিসেবে পরিচিত, যার মালিকানা ৫১% রাশিয়ার) পাইপলাইনের অনুমোদন স্থগিত করেছে। এটা রাশিয়ার জন্য ক্ষতিকর, তবে এর ফলে পশ্চিম ইউরোপে জ্বালানির মূল্যের উপরেও জার্মানির এই সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়বে।

অন্যদিকে ইউরোপ -আমেরিকার অবরোধের বিরুদ্ধে রাশিয়ার হাতে আছে গ্যাস ও তেল অস্ত্র। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ রাশিয়ান তেল ও গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। যদি ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মিলে রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক ও খাদ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তাহলে রাশিয়া প্রাকৃতিকগ্যাস তথা জ্বালানির সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে। ফলে উভয় পক্ষই যে সঙ্কটের মধ্যে পড়বে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের নিষেধাজ্ঞা কতোটা কার্যকর হবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ?

পশ্চিমা নেতারা এটা পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে গত কয়েকদিনে যেসব নিষেধাজ্ঞার কথা ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলো আরো অনেক সম্ভাব্য পদক্ষেপগুলোর প্রথম কয়েকটি ধাপ যা ধাপে রাশিয়ার ওপর আরো উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ানো হতে পারে। কিন্তু রাশিয়াকে তাদের পথ পরিবর্তনের জন্য বাধ্য করতে এসব নিষেধাজ্ঞা কি যথেষ্ট হবে? নিষেধাজ্ঞার যে কিছু প্রভাব আছে তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। তবে রাশিয়ার মতো বৃহৎ অর্থনীতির ওপর এধরনের নিষেধাজ্ঞা এর আগে কখনো প্রয়োগ করা হয়নি। সেকারণে রাশিয়ার ওপর আরোপিত এসব নিষেধাজ্ঞা কার্যকরী করতে হলে পশ্চিমা দেশগুলোকে দীর্ঘ সময় ধরে কঠোরভাবে লেগে থাকতে হবে।


ইউক্রেন, রাশিয়ার আদি ভূমিই হোক বা ইউক্রেনীয় জাতির নিজস্বই হোক, এটা বিবেচ্য বিষয় নয়। ইতিমধ্যে যদিও ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি অভিযোগ করে বলেছেন যে, "পশ্চিমারা সাহায্য করবে বলে করেনি এবং তারা তাকে একা ভালুকের মুখে রেখে সবাই চলে গেছে "। আবার এটাও ঠিক যে, ইউক্রেনকে ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক ভূরাজনৈতিক খেলা খেলছে যার ভূক্তভোগী হচছে ইউক্রেন। যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ন্যাটো ও রাশিয়ার এই খেলা কতদিন চলবে এবং তাদের রাজনৈতিক ও সামরিক অভিলাষের পেছনে কি কারন রয়েছে এবং কিভাবে এসব সমস্যার স মাধান হবে সব দেখার জন্য সেই আরো কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে আমাদের । তবে আমরা সাধারন ,মানুষ এতটুকুই বলতে পারি যে, কোনো যুক্তিতেই মানুষ হত্যা সমর্থনযোগ্য নয়।


তথ্যসূত্র - বিবিসি বাংলা, আল জাজিরা
================================================================

" ইউক্রেন সংকট " - (শেষ পর্ব) - Click This Link
" ইউক্রেন সংকট " - ২ য় পর্বের লিংক - Click This Link
" ইউক্রেন সংকট " - ১ ম পর্বের লিংক - Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০২২ বিকাল ৫:৩৪
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×