somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

" ইউক্রেন সংকট " - কি নিয়ে এবং এর সমাধান কোথায় ? আসলেই কি রাশিয়ার সাথে ইউক্রেনের এত সমস্যা নাকি ইরাক-লিবিয়া-আফগানিস্তানের মত মিথ্যা অজুহাতে পশ্চিমাদের ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা ? - (১ম পর্ব) ।

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(২০২১ এর এপ্রিলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ফোন করে ইউক্রেন সীমান্ত থেকে রুশ সেনা সরিয়ে নিতে বলেন)।
ছবি - এএফপি

গত প্রায় বছরাধিকাল যাবত সারাবিশ্ব ও বিশ্ব-ভূরাজনীতি যে বিষয়কে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচছে তা হলো ইউক্রেন সংকট। যেখানে পশ্চিমাবিশ্ব - ন্যাটো - রাশিয়া সব মিলিয়ে ইউক্রেনকে ঘিরে সারা দুনিয়ায় এখন উত্তেজনা মারাত্মক রূপ নিয়েছে। ইউক্রেনকে ঘিরে ইউরোপেও উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এর একদিকে আছে রাশিয়া, যারা ইউক্রেনের সীমান্তে প্রায় লাখখানেক সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়েছে বলে দাবি করছে পশ্চিমা দেশগুলো। এর পাল্টা ন্যাটো জোটও তাদের সামরিক তৎপরতা বাড়িয়েছে। ইউক্রেনে কোনো অভিযান চালালে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞাসহ নানা ব্যবস্থার হুমকি দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা।গত কয়েক দশকের মধ্যে এই প্রথম ইউরোপ আবার একটি বড় আকারের যুদ্ধের মুখোমুখি - এমন আশংকা করছেন অনেকে।

এ অবস্থায় কিছু প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সারা বিশ্বে।আর সেগুলো হল -

১। ইউক্রেন সংকট কেন এবং কি নিয়ে ?
২। পুতিন তথা রাশিয়ার হাতে এত শক্তি কোত্থেকে এল যে তারা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ দুনিয়ার সবচেয়ে শক্তিধর দেশগুলোর সামনে অস্ত্র উঁচিয়ে হুমকি-ধামকি দেওয়ার সাহস পাচ্ছে?
৩। রাশিয়ার ইউক্রেনের সীমানার কাছে এত সৈন্যসামন্ত জড়ো করার দরকার পড়ল কেন?
৪। এটা কি অতি সাম্প্রতিক ঘটনার জের, নাকি এর পেছনে ঐতিহাসিক পটভূমি কোনো কাজ করছে?
৫। পুতিন আসলে চাইছেনটা কী?
৬। পুতিন কি ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া ছিনিয়ে নেওয়ার পর এখন পুরো ইউক্রেনকেই দখল করতে চাইছেন, নাকি এসব ভয়ভীতি দেখিয়ে পশ্চিমাদের কাছে থেকে নিজের চাওয়াগুলোকে পাওয়াতে পরিণত করার মতলবে আছেন?
৭। রুশ বাহিনী যদি সত্যি সত্যি ইউক্রেনে ঢুকে পড়ে, তাহলে ন্যাটো কি সে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে?
৮। সর্বোপরী আমেরিকা তথা পশ্চিমাবিশ্বের কেন এত আগ্রহ ইউক্রেন কে নিয়া তথা রাশিয়ার চরম আপত্তি সত্ত্বেও তারা কেন এত আগ্রহ দেখাচছে ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ দেয়ার জন্য?

আসুন দেখি - ইউক্রেন সংকট আসলে কী নিয়ে এবং উপরের প্রশ্নগুলির কিছু জবাব খুঁজি।

১৯৯১ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক ফেডারেশন রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটে এবং বৃহৎ রাষ্ট্রটির ভূমি বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। সামগ্রিকভাবে, এই অঞ্চলকে 'উত্তর সোভিয়েত অঞ্চল' (post-Soviet space) হিসেবে অভিহিত করা হয় এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গঠিত রাষ্ট্রগুলোকে উত্তর সোভিয়েত রাষ্ট্রসমূহ (post-Soviet states) হিসেবে অভিহিত করা হয়। সোভিয়েত ফেডারেশনের পতনের পর উত্তর সোভিয়েত অঞ্চলে ১৫টি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। কিন্তু পরবর্তীতে অঞ্চলটিতে আরো অন্তত ৬টি নতুন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ, এক সোভিয়েত ইউনিয়নের স্থলে বর্তমানে রয়েছে মোট ২১টি কার্যত স্বাধীন রাষ্ট্র।

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের ফলে সৃষ্ট সর্ববৃহৎ রাষ্ট্রটি হচ্ছে রাশিয়া। যা বাল্টিক সাগরের তীর থেকে প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল পর্যন্ত ইউরেশিয়ার বিস্তীর্ণ ভূখণ্ডে অবস্থিত এবং রাশিয়া আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্তরসূরী রাষ্ট্র (successor state)। অর্থাৎ, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সোভিয়েত ইউনিয়নের যেসব অধিকার ও দায়বদ্ধতা ছিল, সেগুলো (যেগুলোর মধ্যে রয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়নের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সোভিয়েত ইউনিয়নের স্থায়ী সদস্যপদ ও সোভিয়েত ইউনিয়নের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব) বর্তমানে রাশিয়ার ওপর ন্যস্ত।

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বিভিন্ন সময়ে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত চেচনিয়া ও তাতারস্তান, ইউক্রেনের ক্রিমিয়া এবং মলদোভার গাগাউজিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল, কিন্তু বর্তমানে অঞ্চলগুলো হয় তাদের মূল রাষ্ট্র অথবা অন্য কোনো রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত। যেমন - ১৯৯৪ সালে তাতারস্তান রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হয়, ১৯৯৫ সালে গাগাউজিয়া মলদোভার অন্তর্ভুক্ত হয়, ২০০০ সালে চেচনিয়া রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হয় এবং ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া ইউক্রেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা ঘোষণার পর রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হয়। এর ফলে এগুলো এখন আর কার্যত স্বাধীন রাষ্ট্র নয়।

ইউক্রেন সংকটের কারণ বুঝতে হলে আমাদের কিছুটা পিছনে বা সমস্যার শুরুর দিকে যাওয়া দরকার। ইউক্রেন সংকটের শুরু হয়েছে মূলতঃ ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের পর থেকে। ক্রিমিয়া দখলেরও একটি শুরুর ইতিহাস আছে। ইউক্রেন যখন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের অংশ ছিল, তখন প্রায় ২০০ বছর ধরে রাশিয়ার মালিকানায় থাকা ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে ইউক্রেনের মালিকানায় দেওয়া হয়। ১৯৫৪ সালে সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভ এই কাজ করেছিলেন। তখন তিনি ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি, কয়েক দশকের মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে এবং ক্রিমিয়ার ওপর মস্কোর আর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন সত্যিই ভেঙে গেল এবং ক্রিমিয়ার ওপর মস্কোর নিয়ন্ত্রণ ছুটে গেল, তখন মস্কো আবার চেষ্টা শুরু করল ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে ফিরে পেতে এবং তখন থেকেই ইউক্রেনের সঙ্গে তার সমস্যার শুরু।


(ইউক্রেন ইস্যুতে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন।)
ছবি - এএফপি

সোভিয়েত থেকে বেরিয়ে ইউক্রেন স্বতন্ত্র স্বাধীন দেশ হওয়ার পর তাদের ভেতরকার জনগণের মধ্যে দুই ধরনের শিবির গড়ে ওঠে। ইউক্রেন রাশিয়ার লাগোয়া এলাকা বলে সেখানে অনেক জাতিগত রুশ নাগরিকের বাস। সেই রুশ নাগরিকেরা সব সময় রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ থাকতে চেয়েছে। অন্যদিকে, বাকিরা ইউরোপসহ পশ্চিমাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ থাকতে চেয়েছে। পশ্চিমাপন্থীরা চেয়ে আসছে, ইউক্রেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত হোক এবং একই সঙ্গে তারা ন্যাটোভুক্ত হোক। এই ন্যাটোর সঙ্গে ইউক্রেনের যুক্ত হতে চাওয়াতেই রাশিয়ার আপত্তি এবং তখন থেকেই সমস্যার শুরু হয়। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অঙ্গরাজ্য ও রাশিয়ার প্রতিবেশী রাষ্ট্র ইউক্রেন কয়েক বছর আগে ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করার পর থেকেই পুরোদমে উত্তেজনা শুরু হয়েছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে। সম্প্রতি ন্যাটো ইউক্রেনকে সদস্যপদ না দিলেও ‘সহযোগী দেশ’ হিসেবে মনোনীত করায় আরও বেড়েছে এই উত্তেজনা।

২০১৪ সালে ইউক্রেনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে একটি বড় ধরনের বাণিজ্য চুক্তি করতে চেয়েছিলেন। এতে ইউক্রেনের বেশির ভাগ মানুষ খুশি হয়েছিল। কারণ, এই চুক্তিগুলো হলে দেশ আরও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি পাবে। ইউক্রেনবাসী খুশি হলেও ইয়ানুকোভিচের এ উদ্যোগ পুতিনকে বিচলিত করে ফেলে। কারণ সেই চুক্তিটি হয়ে গেলে ইউক্রেনের ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়া সহজ হয়ে যাবে। আর ইউক্রেন ইইউর সদস্য হয়ে গেলে একসময় রাশিয়ার ঘোর শত্রু ন্যাটোরও সদস্য হয়ে যাবে।


(রাশিয়ার অভিযানের আশংকায় ইউক্রেনের জনগণকে সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচছে)
ছবি -এএফপি

এ চিন্তা থেকেই ইয়ানুকোভিচের ওপর পুতিন এমন চাপ দিলেন যে ইয়ানুকোভিচ ইইউর সঙ্গে সেই চুক্তির আলোচনা থেকে বেরিয়ে গেলেন। এত বড় অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ইয়ানুকোভিচ নষ্ট করে দিলেন কেন? - এ প্রশ্ন রেখে ইউক্রেনবাসী বিক্ষোভ করলে ইয়ানুকোভিচের পতন হয় এবং তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।

এরপর ইউক্রেনের ভেতরে যেসব এলাকায় জাতিগত রুশ লোকের বসত, সেখানে পুতিন ইউক্রেন সরকারবিরোধী বিক্ষোভ উসকে দেন। বিদ্রোহীরা ইউক্রেন সরকারের বিরুদ্ধে ফেটে পড়ে। পুতিন এই বিদ্রোহীদের সমর্থন দিতে যে সেনাবাহিনী পাঠান, তারা ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া দখল করে এবং পুতিন ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার নিজের ভূখণ্ড বলে ঘোষণা করেন।

এত বড় দেশ ওয়ার পরেও রাশিয়া কেন ক্রিমিয়া নিজের সীমানাভুক্ত করলো?

রাশিয়া এক বিরাট দেশ। বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশ যেটি ১১টি টাইম জোন জুড়ে বিস্তৃত। যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিগুণ। ভারতের পাঁচগুণ। ব্রিটেনের চেয়ে ৭০ গুন বড়। কিন্তু দেশটির জনসংখ্যা মাত্র ১৪ কোটি ৪০ লাখ। যার জনসংখ্যা বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া বা পাকিস্তানের চেয়েও কম। এত বড় একটি দেশের ক্রিমিয়া দখল করে নিজের সীমানাভুক্ত করার কী দরকার ছিল, এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে।

রাশিয়া যত বড় দেশই হোক, তাদের একটাই সমস্যা - সারা বছর সচল রাখা যায় উষ্ণ পানির এমন গুরুত্বপূর্ণ বন্দর তাদের প্রায় নেই বললেই চলে। ক্রিমিয়ার সেভাস্তাপোলে রাশিয়ার যে নৌঘাঁটি, সেটি কৌশলগত কারণে তাই রাশিয়ার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাল্টিক সাগরে রাশিয়ার ঢোকার পথ হচ্ছে এই বন্দর। সেটি হাতছাড়া হতে তারা কোনোভাবেই দিতে চায়নি। তাছাড়া প্রায় ২০০ বছর ধরে ক্রিমিয়া কিন্তু রাশিয়ারই অংশ ছিল।


ক্রিমিয়ার প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষও জাতিগত রুশ। ১৯৫৪ সালে সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভ এটি হস্তান্তর করেন তৎকালীন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র ইউক্রেনের কাছে। তখন তারা ভাবেননি, কোনো একদিন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাবে এবং ক্রিমিয়ার ওপর মস্কোর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাবে। কাজেই ইউক্রেন যে ন্যাটোর সদস্য হবে, সেটা রাশিয়া কোনোভাবেই মানবে না। কিন্তু মস্কো যখনই দেখলো যে ইউক্রেন তাদের প্রভাবের বাইরে চলে যাচ্ছে, তখন প্রেসিডেন্ট পুতিন সেখানে হস্তক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নেন।

লেখক-সাংবাদিক টিম মার্শালের মতে, " কোনো বৃহৎ শক্তির অস্তিত্ব যখন হুমকিতে পড়ে, তখন সে শক্তি প্রয়োগ করবেই। এটা হচ্ছে কূটনীতির এক নম্বর শিক্ষা"। তিনি তার একটি বই ‘প্রিজনার্স অব জিওগ্রাফি’ বইতে লিখেছেন,"আপনি হয়তো এরকম একটা যুক্তি দিতে পারেন যে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সামনে বিকল্প ছিল। তিনি ইউক্রেনের ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে পারতেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে প্রেসিডেন্ট পুতিন আসলে রাশিয়ার ঈশ্বর প্রদত্ত ভৌগোলিক হাত নিয়ে খেলছেন এখানে"।

"কাজেই ইউক্রেনের ব্যাপারে কিছু না করে বসে থাকার কোনো সুযোগ তার ছিল না পুতিনের সামনে। কারণ ক্রিমিয়া ছিল রাশিয়ার একমাত্র উষ্ণ পানির বন্দর, আর পুতিনের আমলেই এই বন্দর রাশিয়ার হাতছাড়া হবে, সেটা তিনি চাননি"। আর রাশিয়া নিজেকে এখনো দেখে একটি পরাশক্তি হিসেবে, এবং বিশ্বে তার সেই সামরিক-রাজনৈতিক শক্তি অটুট রাখার ক্ষেত্রে ক্রিমিয়ার ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব তাই অনেক বেশী।

এদিকে, একসময় রশিয়ার বলয়ে থাকা অঞ্চলে রাশিয়ার আধিপত্য ঠেকাতে ন্যাটো ধীরে ধীরে সেনা মোতায়েন বাড়াতে থাকে। সোভিয়েত ভেঙে যাওয়ার পর একের পর এক ন্যাটোতে যোগ দিয়েছিল চেক প্রজাতন্ত্র, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, বুলগেরিয়া, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া ও আলবেনিয়া। এই দেশগুলো একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ অথবা ওয়ারশ সামরিক জোটের সদস্য ছিল। এদের সঙ্গে যোগ দিতে চাইছে জর্জিয়া, মলদোভা ও ইউক্রেন। কিন্তু সেখানে রুশপন্থী সশস্ত্র মিলিশিয়াদের শক্ত ঘাঁটি আছে এবং রাশিয়া তাদের সব ধরনের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। ওই মিলিশিয়াদের কারণে তারা ন্যাটোতে যোগ দিতে পারছে না।

ইউক্রেন ন্যাটোয় যোগ দিলে রাশিয়ার কী ক্ষতি

ইউক্রেন ন্যাটোয় যোগ দিলে রাশিয়ার ক্ষতি আছে,আর সেই ক্ষতি বেশ বড় ধরনের। সে কারণেই ১ কোটি ৭০ লাখ ৯৮ হাজার ২৪৬ বর্গকিলোমিটারের বিশাল দেশ রাশিয়া মরিয়া হয়ে মাত্র ২৭ হাজার বর্গকিলোমিটারের পুঁচকে ক্রিমিয়াকে ইউক্রেনের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে। রাশিয়া দেশ হিসেবে বিশাল বড় হলেও সারা বছর সচল রাখা যায় উষ্ণ পানির এমন গুরুত্বপূর্ণ বন্দর তাদের প্রায় নেই বললেই চলে কিন্তু ক্রিমিয়ার সেভাস্তাপোলে রাশিয়া যে নৌঘাঁটি গেড়েছে, সেখানে সে ধরনের উষ্ণ পানি আছে। আর রাশিয়ার কৃষ্ণ সাগরে ঢোকার একমাত্র পথও হলো এই বন্দর। এ কারণে ক্রিমিয়ার অবস্থানগত মূল্য অনেক। ইউক্রেন যদি ন্যাটোর সদস্য হয়, তাহলে সেখানে ন্যাটো বাহিনীর আনাগোনা শুরু হবে। আর সেটি হলে কৃষ্ণ সাগরে রাশিয়ার যাওয়া-আসা আগের মতো সহজ থাকবে না।

কাজেই ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্য হওয়া রাশিয়ার পক্ষে মানা সম্ভব নয়। এর আগে যতবার পোলিশ, সুইডিশ, ফরাসি, জার্মানসহ অন্যান্য বিদেশিদের আক্রমণের মুখে রাশিয়া পড়েছে, তার সবগুলোই এসেছে উত্তর ইউরোপের সমতল ভূমি দিয়ে। এ কারণে ওই অঞ্চলের দিকে রাশিয়াকে বাড়তি নজর দিতে হচ্ছে - --------

- চলবে


তথ্যসূত্র - এএফপি,বিবিসি, রয়টার্স ও প্রথম আলো ( ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২),নয়া দিগন্ত (২৮/০১/২০২২)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:১১
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×