somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

" ইউক্রেন সংকট " - (শেষ পর্ব) - কি নিয়ে এবং এর সমাধান কোথায় ? আসলেই কি রাশিয়ার সাথে ইউক্রেনের এত সমস্যা নাকি ইরাক-লিবিয়া-আফগানিস্তানের মত মিথ্যা অজুহাতে পশ্চিমাদের ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা ?

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
১ ম পর্বের লিংক - Click This Link
২ য় পর্বের লিংক - Click This Link

শেষ পর্ব -


ছবি - এএফপি

রাশিয়া কি আসলেই ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে ?

আমেরিকা-ই্উরোপের মতে চরম উত্তেজনায় পৌঁছেছে রাশিয়া ও ইউক্রেন পরিস্থিতি। যেকোনও মুহূর্তে ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করতে পারে রাশিয়া বার বার বলছে আমেরিকা-ই্উরোপ। তবে রাশিয়া অবশ্য জানিয়েছে, যুদ্ধের কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। রাশিয়া বলছে তারা নয়, আগ্রাসন দেখাচ্ছে আমেরিকা এবং ন্যাটো বাহিনী। প্রয়োজনে রাশিয়া তার জবাব দেবে। অর্থাৎ, যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হলেও বল ন্যাটো এবং আমেরিকার কোর্টে রাখতে চাইছে রাশিয়া। বুধবার আক্রমণের বিষয়টিও সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়েছে রাশিয়া।

রাশিয়া বার বার জোর গলায় এমন কোনো পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করছে যে,তারা ইউক্রেনে একটি যুদ্ধ শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে রাশিয়া এর আগেও ইউক্রেনের সীমানা দখল করেছে। এই মুহূর্তে তাদের প্রায় এক লাখ সৈন্য ইউক্রেনের সীমান্তের কাছে মোতায়েন আছে বলে মনে করা হচ্ছে। রাশিয়া বহুদিন ধরেই চেষ্টা করছে, ইউক্রেন যাতে কোনোভাবেই ইউরোপীয় ইউনিয়নে না যায়।তাদের আরো আপত্তি ন্যাটো জোট নিয়ে। ইউক্রেন এখনো ন্যাটো জোটের সদস্য নয়। কিন্তু পূর্ব ইউরোপের আরো অনেক সাবেক কমিউনিস্ট দেশের মতো, ইউক্রেনও সেই পথে চলেছে বলে মনে করছে রাশিয়া।

এই মুহূর্তে সেখানে তীব্র সামরিক উত্তেজনা রয়েছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, পশ্চিমা দেশগুলো যদি তাদের আক্রমণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি না বদলায়, তাহলে " যথাযথ পাল্টা সামরিক-কারিগরি " ব্যবস্থা নেয়া হবে। ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল মনে করেন, একটা সংঘাতের বাস্তব সম্ভাবনা আছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিশ্বাস করেন, রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাবে।

যুক্তরাষ্ট্র বলছে, রাশিয়া কেন ইউক্রেন সীমান্তের কাছে এত সৈন্য পাঠিয়েছে, তার কোনো ব্যাখ্যা তারা দেয়নি। বেলারুশেও রাশিয়ার সৈন্যরা যৌথ সামরিক মহড়ায় অংশ নিচ্ছে। পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ধারণা, রাশিয়া এ বছরের প্রথম ভাগেই কোনো এক সময়ে ইউক্রেনে ঢুকবে। রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য বর্তমান সংকটকে কিউবান ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের সাথে তুলনা করেছেন। ১৯৬২ সালের সেই সংকটের সময় যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রায় একটি পরমাণু যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছিল।


ছবি - বিবিসি

সত্যি সত্যিই যুদ্ধ কি বাধবে?

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বলেন, তিনি মনে করেন, ইউক্রেনে যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব এবং রাশিয়া যে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন, এ উদ্বেগ জানানোর অধিকার তাদেরও রয়েছে। ইউক্রেন সংকট সমাধানের লক্ষ্যে মস্কো সফরের (সোমবার - ০৭/০২/২০২২) আগমুহূর্তে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এসব কথা বলেন।

হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন, " রাশিয়া কয়েক দিন বা সপ্তাহের মধ্যেই ইউক্রেনে হামলা করতে পারে তবে এখনো পর্যন্ত সমস্যা সমাধানে কূটনৈতিক পথ খোলা রয়েছে" বলেও মন্তব্য করেন তিনি। স্থানীয় সময় রোববার যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশন ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জ্যাক সুলিভান এই কথা বলেন। তিনি বলেন, যেকোনো দিন রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে। তবে, সংকট সমাধানে রাশিয়া এখনো কূটনৈতিক পথ বেছে নিতে পারে।

এদিকে , ইউক্রেন ইস্যুতে মস্কোর সঙ্গে পশ্চিমাদের চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে সি চিন পিং ও ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। ক্রেমলিনের এক শীর্ষ উপদেষ্টা জানিয়েছেন, দুই নেতার বৈঠকের বিষয়ে রাশিয়া ও চীনের পক্ষ থেকে যৌথ বিবৃতি দেওয়া হবে।

ইউরোপকে নিজের সাথে এবং নিজের বলয়ে আনতে মরিয়া বাইডেন -

নানা কারনে সারা দুনিয়া ও ইউরোপে আমেরিকার প্রভাব কমে আসছে বা কমতির দিকে। আমেরিকা সুপার পাওয়ার হওয়ার পরও বিশ্বের নানা দেশ এখন আর আমেরিকার উপর এককভাবে নিভরশীল নয় এবং আগে যেরকম আমেরিকার কথাই শেষ ছিল সেরকম পরিস্থিতিও এখন আর নেই। আবার আমরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে ইউরোপের সাথে আমেরিকার কৌশলগত
সম্পর্কও তলানীতে গিয়ে ঠেকে। আর আমেরিকা-ইউরোপের মতবিরোধ এর সর্বশেষ উদাহরন হলো আফগান ইস্যু। আফগান ইস্যুতে আমেরিকার সাথে পশ্চিমা মিত্রদের মতবিরোধ সারা দুনিয়ার নজর এড়ায়নি।


আর তাই , বাইডেন প্রশাসন এখন ইউক্রেন ইস্যুকে পুজি করে রাশিয়ার প্রশ্নে ইউরোপে একটি ঐক্যবদ্ধ অবস্থান তৈরির জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। কারণ তিনি জানেন, ইউক্রেনে রাশিয়া হামলার বদলা হিসেবে যে ব্যাপক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার হুমকি তিনি পুতিনকে দিচ্ছেন তা কার্যকর করতে ইউরোপকে তার সাথে আনতে হবে। এর প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে তিনি ইউক্রেন ইস্যুতে প্রতিটি পদক্ষেপে ন্যাটো দেশগুলোকে সাথে রাখছেন। যদিও এটি তার ঘোষিত পররাষ্ট্রনীতি, তারপরও আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার নিয়ে পশ্চিমা মিত্রদের সাথে যে দূরত্ব তার তৈরি হয়েছিল- তা থেকে বাইডেন শিক্ষা নিয়েছেন।

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙ্গার পর রাশিয়া বিষয়ক মার্কিন নীতি প্রণয়নের অন্যতম কারিগর ছিলেন ড্যানিয়েল ফ্রাইড। সাবেক এই মার্কিন কূটনীতিক বলেছেন, " আমার মনে হয় আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার নিয়ে সৃষ্ট ঘটনাবলী নিয়ে পুতিন হিসাব-নিকাশ করেছেন। তিনি মনে করেছেন আমেরিকার ক্ষমতা পড়তির দিকে"।

তিনি আরও বলেন," কিন্তু ইউরোপের প্রতিরক্ষা আর আফগানিস্তানে ভঙ্গুর অবস্থান ধরে রাখার মধ্যে সবসময়ই একটি পার্থক্য ছিল। এটা অনেকটা ভিয়েতনাম পরিস্থিতির মত। ভিয়েতনামে আমাদের ব্যর্থতা, সর্বনাশা পরিণতির কারণে পশ্চিমা ইউরোপের নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের সক্ষমতা এবং প্রত্যয় যে ভেঙে পড়েছিল তা নয়। সেটা কখনওই হয়নি। সুতরাং আমার মনে হয় পুতিন বেশি আশা করেছিলেন"।

তবে, এখনও ক্রেমলিনই মূলত ইউক্রেন নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতির গতি-প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করছে। পুতিনের শক্ত অবস্থানের কারণেই ইউরোপ ও আমেরিকার কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া আসছে। আগামীতে তিনি কী করবেন, তার মনে কী রয়েছে- সেই ভাবনায় ইউরোপ ও আমেরিকা উদ্বিগ্ন।

"আমাদের বুঝতে হবে যে প্রেসিডেন্ট পুতিন একজন পোকার (তাসের জুয়া) খেলোয়াড়", - বলছেন ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য অমি বেরা, যিনি সম্প্রতি ইউক্রেনের সমর্থনে দুই দলের কংগ্রেস সদস্যদের নিয়ে গঠিত একটি প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে কিয়েভ সফরে গিয়েছিলেন। অমি বেরা বলেন, " আপনি জানেন না যে তার (পুতিনের) হাতে কী তাস রয়েছে। সেই তাস সত্যিই শক্ত, নাকি তিনি ব্লাফ (ধাপ্পা) দিচ্ছেন " ?

আমেরিকার অস্বচছ ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা -

আমেরিকার অভিযোগ, যেকোনো দিন ইউক্রেনে হামলা চালানোর নির্দেশ দিতে পারেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তবে এই পরিস্থিতিতেও কূটনৈতিক পন্থায় সংকটের সমাধান হতে পারে বলে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বাসভবন হোয়াইট হাউসের ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার জ্যাক সুলিভান বলেছেন, কয়েকদিন বা সপ্তাহের মধ্যে ইউক্রেনে হামলার নির্দেশ দিতে পারেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

রোববার ‘ফক্স নিউজ সানডে’ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন একটি মাঝামাঝি অবস্থানে আছি। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়া যেকোনো দিন সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে। অথবা এটি এখন থেকে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেও হতে পারে। অথবা রাশিয়া হয়তো কূটনৈতিক রাস্তাও বেছে নিতে পারে।’

আমেরিকা এবং পাশ্চাত্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে এমন সব অভিযোগ ও প্রচারণা চালাচছে যেসব বিষয়ের পক্ষে কোন অকাঠ্য প্রমাণ নেই বা তারা সেগুলো প্রমাণ করতে পারছেনা। এ প্রচারণা যেন অনেকটা আমেরিকা কর্তৃক ইরাক,লিবিয়া কিংবা আফগান আক্রমণের সময়ের পূনরাবৃত্তির প্রচারণা যেখানে ইরাক ও লিবিয়া আক্রমণের পূর্বে তারা অনেক কিছু বলেছিল তবে পরবর্তীতে তার একটাও সত্য বলে প্রমাণ করতে পারেনি । সম্পূর্ণরূপে ভূল-মিথ্যা তথ্যের ওপর ভর করে দুটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের উপর আক্রমণ করে এবং দেশ দুটিকে ধ্বংস করে দেয় যার ভূক্তভোগী সে দেশের জনগন ও তারা এখনো তার বিষময় ফলাফল ভোগ করছে। আবার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ন্যাটো বাহিনী তথা পশ্চিমা শক্তিগুলো আফগানিস্তান দখল করেছিল। দীর্ঘ দু’টি দশক নিষ্ফল এক যুদ্ধে লাখ লাখ মানুষের জীবন এবং ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করে পরাজয় বরণ করে রাতের আঁধারে পালিয়ে এসেছে। পশ্চিমা শক্তি সেখানে সত্যিকারার্থে ‘সন্ত্রাস’কে একটি মিথ্যা অজুহাত ও প্রচারনা হিসেবে দাঁড় করিয়েছিল।

এদিকে , ১৯৯০ সালে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস বেকার তৎকালীন রাশিয়ান নেতা মিখাইল গর্বাচেভের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, মস্কো যদি জার্মানির পুনর্মিলনের অনুমতি দেয় তবে ন্যাটো এক ইঞ্চিও পূর্ব দিকে অগ্রসর হবে না। তবে আমেরিকা বা ন্যাটো এখন তা মানতে চাচছেনা। এখানে আমেরিকানরা হাস্যকর রকমের অজুহাত ব্যবহার করে এই অঙ্গীকার থেকে সরে এসেছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়াকে তা কখনো লিখিতভাবে এরকম কোন প্রতিশ্রুতি দেয়নি আর তাই তা মানার বাধ্যবাধকতা তাদের নেই।

ইউক্রেন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে উত্তেজনা চলছে। দেশটিতে কবে আক্রমণ হবে, আর রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে কী কী হবে, তা নিয়েও চলছে আলোচনা। এ আলোচনার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রার অভিযান চালাতে প্রয়োজনীয় সামরিক সক্ষমতার প্রায় ৭০ শতাংশই প্রস্তুত রেখেছে রাশিয়া। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে মার্চের শেষ নাগাদ আরও ভারী সরঞ্জাম মোতায়েন করবে দেশটি। বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই দুই মার্কিন কর্মকর্তা তাঁদের বক্তব্যের পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি। তাঁরা বলেছেন, গোয়েন্দা পর্যালোচনার ভিত্তিতে এসব তথ্য পেয়েছেন তাঁরা, তবে স্পর্শকাতর হওয়ায় এর বিস্তারিত উল্লেখ করা যাচ্ছে না।

ওই মার্কিন কর্মকর্তারা আরও বলেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে হামলার পরিকল্পনা করছেন কি না, সে ব্যাপারে তাঁরা অবগত নন। তবে তাঁরা মনে করেন, এখনো কূটনৈতিক সমাধান সম্ভব। দুই মার্কিন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, আবহাওয়া পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটলে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের শেষ পর্যন্ত খুব সহজে সামরিক সরঞ্জাম বিভিন্ন জায়গায় নেওয়ার সুযোগ পাবে রাশিয়া। কারণ, ওই সময়ে ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে রাস্তাগুলো জমে শক্ত হয়ে যাবে। ওই কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেছেন ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানের কারণে ৫০ হাজার বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হতে পারে। তাঁরা আরও আভাস দিয়েছেন, হামলা হলে কয়েক দিনের মধ্যেই ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের পতন ঘটবে। দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হবে লাখো মানুষ। আর তাতে ইউরোপে শরণার্থী সংকট হবে।

তাহলে সর্বশেষ পরিস্থিতি কি বলছে ?

ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার সঙ্গে একীভূত করা নিয়ে উত্তেজনা হওয়ার প্রায় আট বছর পর সম্প্রতি নতুন এ উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। পশ্চিমা বিশ্বের দাবি, ইউক্রেনে হামলার উদ্দেশ্যে দেশটির সীমান্তের কাছে এক লাখের বেশি রুশ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। তবে রাশিয়া বলেছে, ইউক্রেনে হামলার পরিকল্পনা তাদের নেই। মহড়া চালানোর জন্যই সেনা সমাবেশ করা হয়েছে। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে রাশিয়ার উত্তেজনা চলছে।

তাহলে যুদ্ধ কি সত্যিই বাধবে ? সে ধরনের আশঙ্কা একদম নেই - এমনটি বলা যাচ্ছে না। তবে যুদ্ধের আশঙ্কা ফিকে পর্যায়ে আছে। এখনো গাঢ় হয়নি। উভয় শিবির থেকে শক্ত শক্ত কথা ছোড়া হচ্ছে বটে; কিন্তু সেই শক্ত কথার মাঝেও আপস ও সমঝোতার একটি প্রচ্ছন্ন সুরও দেখা যাচ্ছে।

সব ধরনের সংবাদমাধ্যম বলছে, রাশিয়া ইতিমধ্যে ইউক্রেনের সীমানা ঘেঁষে লাখখানেক সেনা মোতায়েন করে ফেলেছে। সেখানে আরও ভারী সাঁজোয়া যান ও জঙ্গি কপ্টার জড়ো করা হচ্ছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যদিওবা বলছেন, ইউক্রেনে ঢোকার কোনো ইচ্ছা তাঁর নেই; সে কথায় ভরসা পাচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ইউরোপীয় মিত্রদের নিয়ে গঠিত জোট ন্যাটো।

বাইডেন পশ্চিম ইউরোপে আগে থেকে মোতায়েন করা মার্কিন সেনাবাহিনীর সঙ্গে নতুন আরও কিছু সেনা যুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ শনিবার বলেছেন, রোমানিয়ায় অবস্থানরত ন্যাটো বাহিনীতে তারা আরও সেনা পাঠাচ্ছেন। আর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, পূর্ব ইউরোপে তাঁদের আগে থেকেই ১ হাজার ১৫০ জন সেনা মোতায়েন করা আছে। এক সপ্তাহের মধ্যে সেই সংখ্যা দ্বিগুণ করে ফেলা হবে।

আর যে দেশকে নিয়ে এত কাণ্ড, সেই ইউক্রেনের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো নেতাদের শক্ত হয়ে রাশিয়াকে মোকাবিলা করতে অনুরোধ করা হচ্ছে। কিন্তু ন্যাটোর মহাসচিব ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ গত শনিবার বলেছেন, ইউক্রেন যেহেতু ন্যাটোবহির্ভূত দেশ, সে কারণে সে দেশে রাশিয়া আগ্রাসন চালালেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে তারা যুদ্ধে সেনা পাঠাতে পারবে না। সে ধরনের কোনো পরিকল্পনাও তাদের নেই অর্থাৎ ন্যাটোর দিক থেকে রাশিয়ার প্রতি আপাতত হুমকি দেখা যাচ্ছে না। তবে শেষ পর্যন্ত কী হয় তা দেখতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

ইউক্রেন সংকট ও ভূক্তভোগী ইউক্রেন -- পশ্চিমা বিশ্বকে ভীতি না ছড়ানোর আহ্বান জেলেনস্কির

যেকোনো মুহূর্তে রাশিয়া হামলা চালাতে পারে- যুক্তরাষ্ট্রের এমন সতর্কতার মধ্যে দেশটির নাগরিকদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইউক্রেন সরকার ৷শনিবার ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানোর পাশাপাশি হামলার বিষয়ে কোনো ধরনের আতঙ্ক না ছড়ানোর পরামর্শও দেওয়া হয় ৷বিবৃতিতে আরো বলা হয়," এই মুহূর্তে শান্ত থাকা খুব জরুরি ৷ প্রয়োজন দেশের ভেতরে একতা তৈরি এবং অস্থিতিশীলতা ও আতঙ্ক ছড়ায় এমন কাজ এড়িয়ে চলা "। তবে যেকোনো সময় হামলা হতে পারে, যুক্তরাষ্ট্রের এমন মন্তব্য জনগণের মনোবল নষ্ট করছে এবং দেশটির অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে দাবি ইউক্রেনের।

রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বকে অহেতুক ভীতি না ছড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদমির জেলেনস্কি। শুক্রবার (২৮/০১/২০২১) রাজধানী কিয়েভে এক সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন," পশ্চিমের কয়েকটি দেশের সম্মানিত নেতারা এমনভাবে বক্তব্য দিচ্ছেন, যেন আগামী কালই ইউক্রেনে হামলা ঘটবে। তাদের এই বিষয়ক বক্তব্য, উদ্বেগ-সতর্কবার্তার ফলে ইউক্রেনের জনগণের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়ছে। এর ফলে আমাদেরকে কতটা মূল্য দিতে হবে, তা তারা বিবেচনায় রাখছেন কি ? দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, অর্থনীতি ও সামাজিক অবস্থার জন্য এই ভীতি খুবই ক্ষতিকর"।

যদিও ইউক্রেন সীমান্তে বর্তমানে সেই সংখ্যা প্রায় ১ লাখ রুশ সেনা অবস্থান করছে, তবে শুক্রবারের (২৮/০১/২০২১) সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি বলেছেন, "গত বছর বসন্ত থেকেই সীমান্তে সেনা মোতায়েন শুরু করেছে রাশিয়া এবং কেবল সেনা উপস্থিতির কারণে নিকট ভবিষ্যতে আগ্রাসন হতে পারে, আমরা এমন মনে করছি না"।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার (২৭/০১/২০২১) ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে টেলিফোন করেন যুক্তরাষ্টের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ফোনালাপে জেলেনস্কিকে সতর্কবার্তা দিয়ে তিনি বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়া সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে বলে ‘সুনিশ্চিত’ বা ‘অতিস্পষ্ট সম্ভাবনা’ আছে। তবে এই যে এত সব প্রচারণা এবং রাজনীতি এর মূল ভূক্তভোগী হচছে ইউক্রেনের জনগণ এটা আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্ব ভূলে যাচছে।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলো কী ব্যবস্থা নিতে পারে?

পশ্চিমা দেশগুলো মূলত মারাত্মক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাই বলছে, যদিও তারা খোলাখুলি স্পষ্ট করে বলছে না এই নিষেধাজ্ঞা ঠিক কেমন হবে। এতে আরও বলা হয়, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ফের কোনো রুশ আগ্রাসন হলে আমরা দ্রুত সমন্বিত এবং শক্তিশালী জবাব দেব। রাশিয়াকে "অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা" দেওয়া হবে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, এর ফলাফল হবে ভয়াবহ।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলো যে ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে, সেটি হলো একটি আন্তর্জাতিক আর্থিক বার্তা লেনদেন সার্ভিস " সুইফট " থেকে রাশিয়াকে বাইরে রাখা। বিশ্বে ২০০ টির বেশি দেশের ব্যাংক এবং আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো এটি ব্যবহার করে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, এটি একটি মারাত্মক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এর ফলে রাশিয়ার ব্যাংকগুলোর পক্ষে কোনো ধরনের আন্তর্জাতিক লেনদেন চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।

২০১২ সালে এটি ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে এরকম নিষেধাজ্ঞায় উল্টো ফলও হতে পারে, কারণ যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মান ব্যাংকগুলোর খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে রাশিয়ার আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে। যুক্তরাষ্ট্র চাইলে রাশিয়াকে আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ডলার ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। এর মানে দাঁড়াবে রাশিয়ার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য একেবারে সীমিত হয়ে পড়বে। এর বিরাট প্রভাব পড়তে পারে রুশ অর্থনীতিতে। আন্তর্জাতিক ঋণ বাজার থেকে যাতে রাশিয়া ঋণ করতে না পারে, সেরকম নিষেধাজ্ঞাও দিতে পারে।

আবার নিষেধাজ্ঞা দেয়া হতে পারে প্রেসিডেন্ট পুতিন ও তার ঘনিষ্ঠজনদের বিরুদ্ধে।এদিকে পশ্চিম ইউরোপে রাশিয়া যে জ্বালানি বিক্রি করে, সেটি বন্ধ করার কথাও আলোচনায় আসছে। কিন্তু এর কোনো বিকল্প এখন পর্যন্ত জার্মানি বা অন্য দেশগুলোর নেই।তবে ব্যাপার যাই হোক রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর নিজেদের মধ্যেই আসলে মতবিরোধ রয়েছে যে তারা রাশিয়াকে শাস্তি দিতে কতদূর পর্যন্ত যাবে।

কিভাবে সমাধান হতে পারে এতসব ধারনা-প্রচারণা কিংবা হুমকির ?

ইউক্রেন নিয়ে এই যে যুদ্ধের টানাপোড়েন কিংবা উত্তেজনা বা আমেরিকা-ন্যাটোর প্রচারনা এসবের ধাঁধাঁর মত সমাধান করতে বসলে তার খণ্ড খণ্ড অংশগুলোই আমাদের চোখে পড়ে বাকী অর্ধেক খুঁজে পাওয়া যায়না তবে কল্পনার রং মিশিয়ে কিংবা রং চড়িয়ে সবগুলো টুকরো জোড়া দিয়ে পুরো ছবিটা চোখের সামনে আনা সম্ভব আমেরিকার মত। যদিও ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার রাজনীতি অনেকটা সমাধান-অযোগ্য ধাঁধাঁ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ রুশ নকশার (আসলেই পুতিনের কি পরিকল্পনা তা কেউ জানেনা ) অনেকগুলো টুকরোরই হদিশ মিলছে না। ভ্লাদিমির পুতিন কী ভাবছেন, কী পরিকল্পনা করছেন তা বিরাট এক রহস্য এবং ক্রেমলিন চাইছে এটা রহস্যই থাকুক - এনিয়ে জল্পনাই চলুক। কিন্তু কেন?

যে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজছে সারা দুনিয়া - সেগুলো হল মস্কো কি পুরো মাত্রার হামলা চালাতে চাইছে? নাকি সীমিত পরিসরের অভিযান? নাকি এটা রাশিয়ার শুধুই হুমকিধামকি - তার দাবি আদায়ের জন্য বিপজ্জনক জেনেও শেষ চেষ্টা হিসাবে চরম পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়ে ভয় দেখানো বা চাপ সৃষ্টি করার কূটনীতি ? ভূ-রাজনৈতিক জটিল ইউক্রেন ছবির এ ধাধা এখনও অসম্পূর্ণ। আর তাই পুতিনের এ ধাঁধাঁ সমাধানের জন্য যে খণ্ডচিত্রগুলো পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোই পশ্চিমা দেশগুলোকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। সেগুলো হলো -

১। ইউক্রেন সীমান্তে এক লক্ষ রুশ সৈন্যের সমাবেশ।
২। স্থলে ও সাগরে চালানো মস্কোর একের পর এক সামরিক মহড়া।
৩। বেলারুশ ও রাশিয়ার এক সংগে সামরিক অনুশীলন।
৪। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ক্রেমলিনের অসম্ভব সব দাবি পেশ। যার ব্যাপারে রাশিয়া নিশ্চিতভাবেই জানতো যে যুক্তরাষ্ট্র তা প্রত্যাখ্যান করবে।
৫। প্রেসিডেন্ট পুতিনের মন্তব্য - " রুশ ও ইউক্রেনিয়ানরা একই মানুষ - অবিচ্ছেদ্য সত্ত্বা"।

এদিকে , মস্কো তার নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলে যে দাবি জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র এখন তার জবাব দিয়েছে। ক্রেমলিন বলেছে, "তারা যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর বিশ্লেষণ করে দেখবে"।


ছবি - এএফপি

সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে - রাশিয়া

তবে ইতোমধ্যে, উভয়পক্ষেরই কড়া কড়া কথা কিন্তু থেমে নেই। এ বিষয়ে রাশিয়ার এমপি ইয়েভগেনি পোপোভ বলেন, " ইউক্রেন ভূখণ্ডে ন্যাটোর কাঠামো বসাবেন না। ন্যাটো জোটে আমাদের 'অংশীদার' দেশগুলোকে বলছি, ইউক্রেন থেকে দূরে থাকুন। আমাদের সীমান্ত থেকে সরে যান। এককালে সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ থাকা দেশগুলো থেকে বেরিয়ে যান, কারণ এটা রুশ নাগরিকদের জন্য হুমকি তৈরি করছে"। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টিভিতে একটি আলোচনা অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন পোপোভ। তিনি ক্ষমতাসীন ইউনাইটেড রাশিয়া দলের একজন এমপি। "সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে," বলে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।

সাংবাদিকরা তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন , " নাহলে কী হবে"?

এরপর ইয়েভগেনি পোপোভ বলেন," নাহলে, গোটা বিশ্বের জন্য একটা গুরুতর বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। কোনো কোনো পশ্চিমা কর্মকর্তা বলছেন রাশিয়ার অত সাহস নেই। ভাই - সাহসটা কি আপনারা আসলেই দেখতে চান"?

ন্যাটো কি আসলেই রাশিয়ার জন্য হুমকি? রাশিয়ার মূল লক্ষ্য কী ?

রুশ কর্মকর্তারা প্রকাশ্যেই জোরেশোরে বলছেন যে ন্যাটো রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে রাশিয়া ন্যাটোকে আসলেই যে একটা হুমকি হিসেবে দেখে তা বিশ্বাস করা কঠিন। রাশিয়ার মাত্র ছয় শতাংশ ভূখণ্ড ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলোর সীমানা সংলগ্ন। নেটোর সদস্য দেশগুলো, যেমন ইতালি ও হাঙ্গেরির সাথে ক্রেমলিনের সম্পর্কও ভাল। এমনকি রাশিয়া ন্যাটোর সদস্য দেশ তুরস্কের কাছে অস্ত্রও বিক্রি করেছে। আরো মনে রাখতে হবে, ন্যাটোর সদস্য দেশ নরওয়ে রাশিয়ার সীমান্তে আছে ৭০ বছরেরও বেশি সময়। এছাড়াও, ইউক্রেন, জর্জিয়া বা অন্যান্য সাবেক সোভিয়েত দেশগুলো অদূর ভবিষ্যতে ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, এমন কোনো ইঙ্গিতই কিন্তু নেই।

তাহলে ন্যাটো জোটকে নিয়ে ক্রেমলিনের এত মাথাব্যথা কেন?

এর কারণ অংশত অভ্যন্তরীণ। কারণ রাশিয়া চায় তাদের বহিঃশত্রু বলে যাদের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ - তাদের বিরুদ্ধে দেশের জনমতকে ঐক্যবদ্ধ করা। কিন্তু এর বাইরেও রাশিয়া এ পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ইউরোপের নিরাপত্তা কাঠামোকে নিজের কব্জায় রাখার অনুকূল একটা ব্যবস্থা সম্ভবত গড়ে তুলতে আগ্রহী। রাশিয়া ইউরোপে তার একটা প্রভাব-বলয় আবার প্রতিষ্ঠা করতে চায় এবং শীতল যুদ্ধের পরিণতিকে নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরতে চায়। প্রেসিডেন্ট পুতিন বিশ্বাস করেন, ১৯৯০-এর দশকে রাশিয়ার দুর্বলতাগুলোর সুযোগ নিয়েছে পশ্চিমা বিশ্ব, রাশিয়ার প্রতি ন্যায্য আচরণ করা হয়নি এবং রাশিয়া তার প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তিনি এটা বদলাতে চান বলে মন্তব্য করেছেন আন্দ্রেই কর্তুনভ। রুশ কর্তৃপক্ষের ঘনিষ্ঠ একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রাশিয়ান ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের মহাপরিচালক হিসেবে আছেন আন্দ্রেই কর্তুনভ।

পুতিনের যুক্তি খুবই সোজাসাপটা। ক্ষমতার ভারসাম্য এখন বদলে গেছে। পৃথিবী এখন পশ্চিমাকেন্দ্রিক একক-শক্তির মুখাপেক্ষী নয়। আমাদের কথাও তোমাদের শুনতে হবে এবং আমাদের কোনো উদ্বেগ থাকলে তাকে গুরুত্বের সাথে নিতে হবে।

মস্কোর পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে বা হতে পারে ?

তা সঠিকভাবে বলা কঠিন, কারণ ইউক্রেন ধাঁধাঁর সবগুলো টুকরো কারো হাতে নেই। সবাই শুধু অনুমান করতে পারে ।

যুক্তরাষ্ট্র , ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিরাপত্তার কিছু কিছু দিক নিয়ে রাশিয়ার সাথে আলোচনায় বসার যে প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছে, ভ্লাদিমির পুতিন সেটাকে যথেষ্ট মনে করছেন কিনা, রাশিয়ার পরবর্তী পদক্ষেপ সম্ভবত তার ওপর নির্ভর করবে।


পুতিন যদি মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব যথেষ্ট নয়, তিনি যদি ইউরোপের বর্তমান নিরাপত্তা কাঠামোকে ভেঙে ফেলে তা নতুন করে সাজাতে বদ্ধপরিকর হন, তাহলে সামরিক সংঘাতের সম্ভাবনা রয়েছে এবং সেটা হলে পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী টানাপোড়েন অবশ্যম্ভাবী। কর্তুনভ বলেন, ‘আমি আশা করব, এ পর্যন্ত রাশিয়াকে যেটা প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে পুতিন সন্তুষ্ট হবেন। আমি মনে করি, তিনি কিছুটা সফল হয়েছেন। তিনি অন্তত পশ্চিমা দেশগুলোকে সংলাপে বাধ্য করেছেন। তিনি যুক্তি দেখাতে পারেন যে তার মিশন সফল। ইউক্রেন সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি করে তিনি পশ্চিমের দেশগুলোকে রাশিয়ার প্রস্তাব অন্তত বিবেচনা করতে উৎসাহিত করতে পেরেছেন। কিন্তু পুতিন বিষয়টাকে সেভাবে নাও দেখতে পারেন। তার ব্যাখ্যা ভিন্ন হতে পারে। তিনি হয়ত বলতে পারেন, পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়াকে নিরর্থক ও অব্যাহত, মীমাংসাহীন একটা আলোচনায় জড়িয়ে রাখার চেষ্টা করছে। আর এরই মধ্যে ইউক্রেনে পশ্চিমা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রাখতে চাইছে।

তিনি বলেন, " দেশের ভেতর, রুশ সমাজ তাদের দোরগোড়ায় বড় ধরনের যুদ্ধ বাধুক তা চায় না। ইউক্রেনে বড়ধরনের সামরিক তৎপরতায় অংশ নিতে রুশরা আগ্রহী নয়"।

আর এসব কিছুর শেষ জানার জন্য আমাদেরকে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

=============================================================

তথ্যসূত্র - এএফপি,বিবিসি, রয়টার্স ও প্রথম আলো ( ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২),নয়া দিগন্ত (২৮/০১/২০২২)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০২২ দুপুর ২:৩০
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×