somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"দ্য কাশ্মির ফাইলস" - ইতিহাস ভিত্তিক এ ছবির কাহিনী কি আসলেই প্রকৃত ইতিহাস ও সত্যি, নাকি - ইতিহাস বিকৃতি ও সত্যের অপালাপ ।

১০ ই এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ১:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবি - indiatoday.in

পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী পরিচালনায় , জি স্টুডিওসের ব্যানারে মার্চ ১১, ২০২২ এ মুক্তি পেয়েছে " দ্য কাশ্মির ফাইলস" যাতে অভিনয় করেছেন মিঠুন চক্রবর্তী ,অনুপম খের,দর্শন কুমার,পল্লবী জোশী,চিন্ময় মন্ডলেকর, প্রকাশ বেলাওয়াদি প্রমুখ । ছবির অভিনয় শিল্পীরা কেউ বর্তমানের প্রথম সারির নায়ক-নায়িকা নয় এবং ছবির বাজেট সব মিলিয়ে ১৫ কোটির মত কিন্তু ১৫ কোটির সেই ছবিই আলাদিনের চেরাগের মত জি স্টুডিওসের ঘরে নিয়ে এসেছে ৩০০ কোটির উপরে এবং যা আসা এখনো অব্যাহত আছে। আর তাই বিশাল এক প্রশ্ন দর্শক-প্রদর্শক-সমালোচক সবার সামনে কি সেই কারিশমা যা " দ্য কাশ্মির ফাইলস" কে দিয়েছে সুপার ডুপার ব্লকবাস্টারের মর্যাদা এবং ভেংগে দিয়েছে সিনেমা ব্যবসার সকল নিয়ম কানুন ?

এক কথায় এর জবাব হলো সাম্প্রদায়িকতা ও মুসলিম ইতিহাস-ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার। তবে তা হিন্দুদের পক্ষে হওয়ায় এবং রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের পৃষ্ঠপোষকতা (সকল স্কুল-কলেজ,সরকারী কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বাধ্যতামূলক দেখা,করমুক্ত ঘোষণা ) ও ধর্মের আবরনই এই সাফল্যের মূল কারন, ছবির কাহিনী নয়। সাধারন বাণিজ্যিক সিনেমা বলতে যা বুঝায় এ ছবি তা নয়, এটা বিজেপির হিন্দুত্ববাদের পক্ষে দলীয় ভোট জোগাড়ের এক প্রপাগান্ডামূলক সিনেমা। তবে এখানে একটা বিষয় (কৌশলে) হিন্দুস্বার্থ কিভাবে কোন ফাঁকে এ ছবিতে ভারতীয় জাতিয়তাবাদের স্বার্থ হয়ে গেছে কেউ তা খেয়াল করছে না। বাস্তবে হিন্দুস্বার্থ মানেই তা ভারত রাষ্ট্রের স্বার্থ এমনটা নাও হতে পারে। ভারতে মুসলমানদের উপর দমন-পীড়নকে যদি কেউ হিন্দুস্বার্থ বলে মনে করে, তাহলে এটা কি ভারতের স্বার্থই হবে ?


ছবি - en.wikipedia.org

" দ্য কাশ্মির ফাইলস" একটা ভারতীয় সিনেমার নাম যেখানে ছবির নায়ক কৃষ্ণের চোখ দিয়ে দেখানো হয়েছে, কাশ্মীরি পণ্ডিতদের উপর মুসলমানদের নির্যাতনের ফলে তাদের দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণা, সংগ্রাম এবং মানসিক আঘাতের চিত্র । ছবিটিতে গণতন্ত্র, ধর্ম, রাজনীতি এবং মানবতা সম্পর্কে প্রশ্ন করে যা আসলে ইতিহাস বিকৃতি ও মিথ্যাচারে পরিপূর্ণ। আসলে বলা উচিত মুসলমান বিরুদ্ধে ঘৃণা-বিদ্বেষের বিষ উগড়ে দিয়ে বিজেপির পক্ষে নিজ বাক্সে হিন্দুভোট জোগাড়ের নতুন এক উপায় হলো এই সিনেমা। এই সিনেমা বিজেপি তথা মোদীর ভোটের মাঠের বড় ধরনের প্রপাগান্ডা। আর তাই তারা গাটের পয়সা খরচ করে নির্বাচনী প্রচারণার বদলে সত্য-মিথ্যা ভুলে মনগড়া ভাবে কাহিনী দাড় করিয়ে সিনেমা বানিয়ে এক বড় সাম্প্রদায়িক প্রপাগান্ডার কাজ করেছে। একে কোনভাবেই সিনেমা বলা যাবেনা - না সৌন্দর্যগুণ বিচারে না বিনোদনের বিচারে। বিজেপির এটা একটা বিশাল সাম্প্রদায়িক প্রপাগান্ডার অংশ মাত্র।

ছবির বাজেট যতটুকু জানা যায় প্রায় ১৫ কোটি রুপি, যেটা ইতোমধ্যে ৩০০ কোটির বেশি অর্থ আয় করেছে। সত্যি কি অসামান্য ব্যবসা সফল ছবি !!! বিজেপি-মোদির হিন্দুত্ববাদ কী না পারে । ছবির সাফল্যের মূল কারণ বলা যায়, বিজেপি শাসিত রাজ্যে এর টিকিট করমুক্ত করা, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও মিডিয়ার প্রচারণার সাথে সাথে, দলীয় প্রপাগান্ডা (সারা ভারতে নাকি মুসলমানরা হিন্দুদের ওপর হত্যা ও অত্যাচার করছে -ফলে হিন্দুরাই ভিকটিম) তাই ত্রাতা মোদিকে ভোট দিয়ে তার পক্ষে দাঁড়ানোর আহ্বান, এটাই এই ছবির মাহাত্ম ও মূল সূর।

তবে কোন দেশেই শতভাগ মানুষ দলকানা কিংবা সাম্প্রদায়িক হয়না। আর তাইতো ইতোমধ্যে সারা ভারতেই এই সিনেমাকে কেন্দ্র করে পক্ষে যেমন তুমুল আলোচনা চলছে তেমনি এর বিরুদ্ধেও সমালোচনাও কম হচছেনা। আর তাই ছবির প্রপাগান্ডার বিরুদ্ধে পাল্টা ফ্যাক্ট চেক ( অর্থাৎ আসল ঘটনাটা কী তা যাচাই-বাছাই করে পরীক্ষা ও প্রমাণসহ সেই বিষয়ের সঠিক তথ্য তুলে ধরা ) ও রিপোর্ট মিডিয়ায় প্রকাশ করা শুরু হয়েছে। এরই একটা রিপোর্ট দেখা গেছে, ১ লা এপ্রিল দক্ষিণী পত্রিকা "দ্য হিন্দু"তে। ওখানে পাঁচটা বিভিন্ন প্রপাগান্ডার ঘটনা তুলে আনা হয়েছে, যার পাঁচটাই ভুয়া বা মিথ্যা বলে প্রমাণ দেখানো হয়েছে। উদাহরন - কাশ্মিরে কতজন হিন্দু কাশ্মিরি পণ্ডিতকে এ পর্যন্ত হত্যা করা হয়েছে? এতে কোনো এক কথিত আরটিআই (রাইট টু ইনফরমেশন) তথ্যে বলা হয়েছে, তা ১৬৩৫ জন। কিন্তু ওই ফ্যাক্ট চেক মোতাবেক, তা মাত্র ৮৯ জন আর বাকিরা অন্য কেউ বা তারা কাশ্মিরি পণ্ডিত নন এবং অন্য কেউরা আর কেউ নন - তারা হলো মুসলিম। তারা সবাই এ কথাই বলছেন যে, এটা একটা বিজেপি দলীয় প্রপাগান্ডা সিনেমা, ফলে নানান উসকানিমূলক তথ্য, ভুয়া তথ্য (অনেক মিডিয়ায় এই সিনেমাটাকে ধান্ধাবাজি বা ম্যানিপুলেটেড তথ্য বলতেও দ্বিধা করা হয়নি) সাথে দিয়ে দলীয় প্রপাগান্ডায় সবটা অসৎ সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে ও হয়েছে।

১৭০ মিনিট বা ২ ঘন্টা ৫০ মিনিটের এ ছবি থেকে দর্শকরা ভুল ধারণা পেতে পারে যে, " কাশ্মির সমস্যা মানে হলো, মুসলমানদের হাতে হিন্দুদের নির্যাতন ও নিপীড়নের ঘটনা যার ব্যপ্তিকাল ১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত। যা বিজেপির ভাষায় জাস্টিস। দ্য কাশ্মির ফাইলস-এর সবচেয়ে বড় মিথ্যাচার এটাই। কারণ এ ছবির কাহিনীর মূল উদ্দেশ্য হলো হিন্দু-মুসলমানকে প্রথমে বিভক্ত ও ধর্মের ভিত্তিতে মেরুকরণ করা। পরে হিন্দুরা ভালো, মুসলমানরা খারাপ এভাবে এক কাল্পনিক কাহিনী তৈরি করে ঘটনাকে তুলে ধরা, যাতে মানুষের নিকট বিজেপি বা মোদিকে ত্রাণকর্তা বলে মনে হয়, আর তাতে সব হিন্দু ভোট বিজেপির বাক্সে ঢুকবে। আর তার জন্য সেখানে কাশ্মিরের প্রকৃত ঘটনা, ইতিহাসের আগে-পিছে না দেখিয়ে (কাশ্মিরের সমস্যার শুরু ১৯৪৭ সালে ভারতের জন্ম অথবা ১৯৫০ সালে ভারতের কনস্টিটিউশন থেকে শুরু) ছবির কাহিনী শুরু হয়েছে জানুয়ারি ১৯৯০ সালে দেশত্যাগী হিন্দু পণ্ডিতদের ঘটনা থেকে। আবার তারা এটা শেষও করে দিয়েছেন ১৯৯০ সালের দু-এক বছর পরে। আবার তারা প্রচার চালাচছেন, এখনো কাশ্মিরের একমাত্র সমস্যা হলো ইনজাস্টিস, দেশত্যাগী হিন্দু পণ্ডিতদের প্রতি ইনজাস্টিস। অথচ কাশ্মিরের প্রকৃত ইতিহাস তা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।কাজেই এটাকে কোনভাবেই ছবি বলা যায়না। এটা হলো রাজনৈতিক সুবিধার হাতিয়ার


ছবি - mapsofindia.com

কাশ্মির সমস্যার শুরু ও তার কারন -

কাশ্মীর নামটি চোখে পড়লেই মনের কোণে ভেসে আসে এর অপরূপ সৌন্দর্যের বিমোহিতকর দৃশ্যসমূহ । শ্রীনগর উপত্যকার মনোরম দৃশ্য মুগ্ধ করবে যে কোন প্রকৃতি প্রেমীকে। পর্বতের উপর পতিত সূর্যের আলো ও ভাসমান মেঘ মন ভোলাবে আপনাকে, গভীর নীল আকাশ মনকে শান্ত এবং সতেজ করে তুলবে। তাছাড়া ডাল হ্রদ, হজরত বল মঠ (দরগাহ) শালিমার বাগ এবং নিশাত বাগের অবস্থানের কারণে কাশ্মীর একটু ভিন্ন ভাবেই বিশ্বব্যাপী পরিচিত। অভ্য়ারণ্য রোপওয়ে, এবং অপূর্ব ট্র্যাকিং রূট সহ পহলগাও, অত্যন্ত সুন্দর উপত্যকা এবং কাশ্মীরের রয়েছে গুলমার্ক,স্কি রিসোর্ট এবং বিশ্বের সর্বোচ্চ গলফ মাঠ যা যেকোন পর্যটককেই মুগ্ধ করবে নিঃসন্দেহ। এই সকল সৌন্দার্য মন্ডিত স্থানের কারণেরই হয়তো মোঘল সম্রাটদের নিকট এটি "ভূ-স্বর্গ", গান্ধিজির নিকট আলোর কিরণ কিংবা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর নিকট শাহরগ নামে পরিচিত।


ছবি - wikipedia.org

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং জম্মুর রাজা গুলাব সিংয়ের মধ্যে ১৬ ই মার্চ ১৮৪৬ অমৃতসরের দ্বিতীয় চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীর (রাজ্য রাজ্য) তৈরি করা হয়েছিল। গুলাব সিং সামগ্রিকভাবে ব্রিটিশ সার্বভৌমত্ব মেনে নেন। কাশ্মীর উপত্যকা ছিল একটি মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল যা কাশ্মীরি ভাষায় কথা বলে এবং কাশ্মীরিয়াত নামে একটি স্বতন্ত্র সংস্কৃতি ছিল।পরবর্তী মহারাজা হরি সিং ২০ শে এপ্রিল ১৯২৭ সালে (তিনি হিন্দু ডোগরা রাজবংশের অংশ ছিলেন যে একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম রাজ্যে শাসন করেছিল) মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় অন্যদের চাকরি এবং বসবাসের জন্য বিশেষ সুবিধা প্রদান করে বংশগত রাজ্য বিষয় আদেশ পাস করেন। এ আইনের ফলে ভারতের যে কোন ধর্মের মানুষ প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে কাশ্মীরে স্থাবর সম্পত্তি ক্রয় করে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি লাভ করে। এ আইনের কারনে রাজা হরি সিংয়ের বিরুদ্ধে ১৯৩১ সালে আন্দোলন শুরু হয় এবং তিনি রাষ্ট্রীয় বাহিনীর ব্যবহার করে তা দমন করেন।

১৯৩৪ সালে আবার বিক্ষোভ দেখা দেয়। তখন মহারাজা জনগণের জন্য একটি আইনসভার ব্যবস্থা করে একটি সংবিধান প্রদান করেছিলেন, কিন্তু তা ছিল ক্ষমতাহীন।রাজ্যে মুসলমানদের অধিকারের জন্য লড়াই করার জন্য চৌধুরী গোলাম আব্বাসের সহযোগিতায় শেখ আবদুল্লাহ দ্বারা জুন ১৯৩২ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় "অল জম্মু ও কাশ্মীর মুসলিম কনফারেন্স " নামক সংগঠন।সেপ্টেম্বর ১৯৩৪ সালে প্রজা সভা (রাজ্যের বিধানসভা) জন্য প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মুসলিম কনফারেন্স মুসলিমদের জন্য সংরক্ষিত ২১ টি আসনের মধ্যে ১৬ টিতে জয়লাভ করে। ১৯৩৭ শেখ আবদুল্লাহ প্রথমবারের মত জওহরলাল নেহরুর সাথে দেখা করেন। মে ১৯৩৮ রাজ্যের বিধানসভার জন্য দ্বিতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সেখানে মুসলিম কনফারেন্স ১৯ টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবকটিতেই জয়লাভ করেন।১৯৩৯ সালে শেখ আবদুল্লাহর নেতৃত্বে মুসলিম কনফারেন্স তার নাম পরিবর্তন করে ন্যাশনাল কনফারেন্স করে এবং সকল ধর্মের মানুষের জন্য এর সদস্যপদ উন্মুক্ত করে দেন। ২৩ শে মার্চ ১৯৪০ লাহোরের ইকবাল পার্কে পাকিস্তান প্রস্তাব পাস হয়। রেজুলেশনে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ সব অঞ্চল নিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানানো হয়। "পাকিস্তান" নামের "কে" অক্ষরটি কাশ্মীরকে নির্দেশ করে।


ছবি - pinterest.com

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৪১ সালে) জন্য ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদান করেছিল ৭১,৬৬৭ জন কাশ্মীরি যার বেশীরভাগই ছিল মুসলিম।১৯৪৪ সালের এপ্রিল মাসে শেখ আবদুল্লাহ মহারাজার কাছে নয়া কাশ্মীর (নতুন কাশ্মীর) কর্মসূচির প্রস্তাব করেন এবং একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের আহ্বান জানান।এদিকে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ গ্রীষ্মকালে কাশ্মীর সফর করেন, ন্যাশনাল কনফারেন্সকে অগ্রাধিকার দিয়ে মুসলিম কনফারেন্সকে সমর্থন করেন।

পরবর্তীতে শেখ আবদুল্লাহ মহারাজার বিরুদ্ধে কাশ্মীর ছাড়ো আন্দোলন শুরু করেন ১৯৪৬ সালের মে মাসে। তখন তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়। জওহরলাল নেহেরু আদালতে আবদুল্লাহকে রক্ষা করার জন্য কাশ্মীরে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং রাজ্য ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। ১৯৪৬ সালের জুলাই জুলাই মাসে মুসলমানরা অভিযোগ করে যে প্রধানমন্ত্রী রাম চন্দ্র কাক মুসলমানদের উপর অত্যাচার করছেন তখন মহারাজা ঘোষণা করেন যে কাশ্মীরিরা বাইরের হস্তক্ষেপ ছাড়াই তাদের ভাগ্য নিজেই নির্ধারণ করবে। একই সালের অক্টোবর মাসে মুসলিম সম্মেলন মহারাজার স্বৈরাচারী শাসনের অবসানের দাবিতে একটি "অ্যাকশন প্রচারাভিযান" শুরু করে। তার কারনে চৌধুরী গোলাম আব্বাসকে কারারুদ্ধ করা হয়। ডিসেম্বরে ব্রিটিশ রেসিডেন্ট রিপোর্ট করে যে মুসলিম কনফারেন্সের "নতুন নেতা", চৌধুরী গোলাম আব্বাস এবং আগা শওকত আলী, মুসলিম ঐক্যের ছদ্মবেশে হিন্দু বিরোধী মনোভাব জাগিয়ে তুলছিলেন।এর পর প্রশাসনের সাহায্যে ডিসেম্বরেই হাজরা জেলা থেকে হিন্দু ও শিখ উদ্বাস্তুরা মুজাফফরাবাদে প্রবেশ করে।

১৯৪৭ সালের জানুয়ারিতে রাজ্যের বিধানসভার জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ন্যাশনাল কনফারেন্স নির্বাচন বর্জন করে এবং মুসলিম কনফারেন্স ২১ টি মুসলিম আসনের মধ্যে ১৬ টিতে জয়লাভ করে। ১৯৪৭ সালের মার্চে দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মধ্যে ভারতের শেষ ভাইসরয় হিসেবে লর্ড মাউন্টব্যাটেন ভারতে আসেন এবং পাঞ্জাবের ইউনিয়নবাদী সরকারের পতন ঘটে। ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মুখে শিয়ালকোটের হিন্দু ও শিখরা জম্মুতে পালিয়ে যায়। জুন মাসে তাদের দেশত্যাগ বৃদ্ধি পায় এবং আগস্ট পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।সেসব লোকদের নিকট থেকে মহারাজা আজাদ কাশ্মীরের সূত্র জেনে তার ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত হন।

১৯৪৭ সালের মে মাসে জম্মু ও কাশ্মীরের মহারানী যুবরাজ করণ সিং-এর সাথে পাঞ্জাব হাইকোর্টের বিচারপতি মেহের চাঁদ মহাজনের সাথে দেখা করেন এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সাথে যোগাযোগের কথা বলেন। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আচার্য কৃপালানি কাশ্মীরে গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং তাদের ভারতের গণপরিষদে যোগদানের বিষয়ে আলোচনা করতে কাশ্মীর সফর করেন। এদিকে ,মুসলিম সম্মেলনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি চৌধুরী হামিদুল্লাহ ঘোষণা করেন যে দল "রাষ্ট্রের জন্য স্বাধীনতা অর্জনের" সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

৩রা জুন ১৯৪৭ সালে মাউন্টব্যাটেন ব্রিটিশ ভারতকে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন আধিপত্যে বিভক্ত করার জন্য বিভাজনের পরিকল্পনা প্রস্তাব করেন। জয়েন্ট ডিফেন্স কাউন্সিলের বৈঠকে, জিন্নাহ এবং নেহরু রাজকীয় রাজ্যগুলির যোগদানের বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন, জিন্নাহ জোর দিয়েছিলেন যে এটি শাসকদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য এবং নেহেরু জোর দিয়েছিলেন যে এটি জনগণের জন্য।এদিকে লর্ড মাউন্টব্যাটেন কাশ্মীরের মহারাজাকে ভারত বা পাকিস্তানে যোগদান করতে রাজি করার জন্য ৫ দিনের জন্য কাশ্মীর সফর করেন। ১৯৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর মহারাজা হরিচন্দ্র ভারতকে কাশ্মিরের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরার ক্ষমতা প্রদান করেন। ফলস্বরূপ ২৭ অক্টোবরেই কাজে নেমে পড়ে ভারত। একটু একটু করে ভারত এগোতে থাকে কাশ্মিরকে দখল করার কাজে।

কাশ্মিরের সব সমস্যার শুরু ১৯৪৭ সাল থেকে দেশভাগের সময় কাশ্মীরের বিতর্কিত ভারতভুক্তির মধ্যে দিয়ে। ইনস্ট্রুমেন্ট অব অ্যাক্সেশনের মাধ্যমে কাশ্মীর ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু যে শর্তে হয়েছিল কালক্রমে ভারত তা থেকে অনেকটা সরে এসেছে। পাকিস্তানও কতকটা জোর করেই এই অ্যারেঞ্জমেন্টের মধ্যে প্রবেশ করেছে। ফলে সাতচল্লিশে এই সমস্যার শুরু হলেও এখন সেই সমস্যা অনেক বেশি জটিল আকার নিয়েছে।কাশ্মীরের রাজা হরি সিং হিন্দু হলেও এখানকার বেশীরভাগ বাসিন্দা ছিল মুসলিম। এই অবস্থায় এখানকার রাজা কাশ্মীরের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করলে ভারত ও পাকিস্তান উভয় রাষ্ট্রই কাশ্মীরকে নিজে রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করে এবং পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়ে। মহা রাজা হরি সিং ১৯৪৭ সালের ২২শে অক্টোবর ভারতভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করেন এবং তখন থেকে আইনি ভাবে কাশ্মীর ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় । কাশ্মিরের প্রাক্তন রাজা হরি সিংকে ভারতে অন্তর্ভুক্ত ও বিলীন হয়ে যাওয়ার কাগজে সই করার উপযুক্ত অথরিটি বলে মনে করেন ভারতের প্রায় সব হিন্দু রাজনীতিবিদ যদিও মুসলমানরা মনে করেন তার সেই অধিকারই ছিলনা। তবে এখানে একটা কথা মনে রাখতে হবে, মহারাজা হরি সিং কিন্তু প্রতিরক্ষা, যোগাযোগ ও বৈদেশিক সম্পর্ক - শুধু এই তিনটি ক্ষেত্রে ভারতভুক্তি স্বীকার করেছিলেন, নিজের রাজ্যকে ভারতের সঙ্গে পুরোপুরি মিশিয়ে দেননি। ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা অনুযায়ী জম্মু ও কাশ্মীরকে যে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই।

ভারতের বর্তমান ক্ষমতাসীন দল বিজেপি কিন্তু সব সময় দাবি করে থাকে কাশ্মীরের সঙ্কট তৈরি হয়েছে স্রেফ পাকিস্তানের মদত আর উসকানিতে এবং উপত্যকার বেশীরভাগ মানুষ সেই বিচ্ছিন্নতাবাদের শরিক নন। সারা ভারত এক মিথ্যা জাতিবাদী জোশে ভুগতে দেখা যায় যে, ব্রিটিশ কলোনি দখলদাররা নাকি স্বদেশী আন্দোলনের নামে জমিদার হিন্দুর সন্ত্রাসবাদ বা কংগ্রেসের আন্দোলনে মুখে টিকতে না পেরেই ভারত ত্যাগ করেছিল। অথচ এ কথা শতভাগ মিথ্যা। সত্যি হলো, কেবল ব্রিটিশরা নয়, সারা দুনিয়া থেকে সব কলোনি শাসকই ১৯৪৫ সালে বিশ্বযুদ্ধ থামার পরে স্ব স্ব কলোনি ছেড়ে স্বেচ্ছায় নিজ নিজ দেশে চলে গিয়েছিল। আর তারা ত্যাগ করে চলে গিয়েছিল যে কারণে ঠিক সেই একই কারণে, রাজা হরি সিং-সহ তার মতো কোনো রাজারই ভারতে অন্তর্ভুক্ত ও বিলীন হওয়ার কোনো কাগজ-দলিলে স্বাক্ষর করার অথরিটিই ছিল না। আর এসব কিছুর পেছনে মূল কারণ হলো ‘আটলান্টিক চার্টার’ চুক্তি। এটাকে বলা যায়, আমেরিকার সাথে কলোনি দখলদার ইউরোপের চুক্তি। এই চুক্তিতে বিশ্বযুদ্ধ শেষে ইউরোপের কলোনি দখলদাররা বিনা শর্তে দখলদারি ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। আর এই শর্তেই আমেরিকা হিটলারের বদলে ব্রিটিশ-ফরাসি ইত্যাদি মিত্রশক্তির পক্ষ নিয়ে বিশ্বযুদ্ধে প্রথম যোগ দিতে সম্মত হয়েছিল। এতে ফেলে যাওয়া কলোনির কোনো রাজার আর কোনো অথরিটিই নেই, থাকবে না যে, সে ওই দেশকে নিয়ে নিজ খেয়ালে অন্য কোনো দেশের ভেতর যোগ দেয়। ওই দেশ কার দ্বারা শাসিত হবে, এর একমাত্র নির্ধারক হবে ওই ভূখণ্ডের জনগণ বা পাবলিক। ফলে তা নিজ পাবলিক ভোটের সম্মতিতে এক স্বাধীন রিপাবলিক রাষ্ট্র হতে পারে। ব্রিটিশরা চলে যাওয়ার পর কাশ্মিরেরও এমনটাই হওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু নেহরু কাশ্মিরকে জোর-জবরদস্তিতে ভারতের অংশ করে রাখার পক্ষে জোড়াতালি দিয়ে কিছু কাজ করে যান। কাশ্মিরের সব সমস্যার শুরু এখান থেকে। আরেকটি বড় ফ্যাক্টস হলো, জম্মু-কাশ্মির মিলে ২০১১ সালের হিসাবে মোট জনসংখ্যা প্রায় ১.৩ কোটি যার ৬৮.৩% হলো মুসলমান আর হিন্দুরা ২৮.৪; বাকিটা অন্যান্য। আর ভারত রাষ্ট্রের জন্ম থেকেই হিন্দু-মুসলমান সমস্যা যেটা সেটাই কাশ্মিরের ওপরেও ভর করেছিল যদিও তা অনেক পরে ১৯৮৭ সালের আগে-পরে। কাশ্মিরে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং এর প্রকাশ ঘটেছিল ১৯৮৭ সালের (প্রাদেশিক বা অ্যাসেম্বলি) নির্বাচনে। কারণ তত দিনে কাশ্মিরের অতিষ্ঠ মুসলমানরা, তাদের ব্যক্তি বা সামাজিক-রাজনৈতিক দল বা গ্রুপগুলো একজোট হয়ে মুসলিম ইউনাইটেড ফ্রন্ট (এমইউএফ) গড়ে ওই নির্বাচনে লড়ে ক্ষমতা নিতে তৈরি হয়েছিল। এই এমইউএফ ছিল ১৯৮৪ সালে গড়ে তোলা এক ছাত্রসংগঠন, যার নাম ছিল ইসলামী স্টুডেন্ট লিগ। আসলে ভারতের আধিপত্য তত্ত্ব অনুসারে, কাশ্মিরে মুসলমানদের আধিপত্য দেখে তারা প্রমাদ গুনে বিপদ বুঝতে পারে আর এটা তারা মেনে নিতে পারেনি।

অর্থাৎ ভারতের ‘আদি পাপ’ হলো, সব নাগরিকদের সমান অধিকারের রাষ্ট্র হবে, সেটা হবে না। তার মানে ভারত অধিকার ভিত্তিক নাগরিক রাষ্ট্র হবে না বরং ধর্মভিত্তিক জাতি-রাষ্ট্র হবে। আর যে ধর্মের লোক সংখ্যায় বেশি মানে হিন্দুরা এ রাষ্ট্রে আধিপত্য নেবে। ভারত রাষ্ট্রের মূল বিষয় হলো, হিন্দু আধিপত্যের স্বার্থে ডিফাইন করা সীমার মধ্যে মুসলমানদের বসবাস ও জীবন যাপন করতে হবে। মুসলমানরা ধর্মীয় চিহ্ন প্রদর্শন করে চলতে পারবে না। যদি তা না অনুসরণ করে তবে ওসব মুসলমানকে ‘সাম্প্রদায়িক’ বলে নিন্দা করা হবে। বিপরীতে যেসব মুসলমান তা মানবে, মানে হিন্দু আধিপত্য কর্তৃত্ব মেনে নেবে তাদের মানার শর্তেই তারা হিন্দুদের পাশে সমাজে মানে যেমন স্কুলে অফিসে পাশে বসতে দেয়া হবে। আর তাতে এসব মুসলমানরা ‘অসাম্প্রদায়িক’ বলে গণ্য হবে।

এসবের মূল কারণ নাগরিক অধিকারভিত্তিক রাষ্ট্র হলে সেখানে ধর্মীয় বা সব ধরনের পরিচয় নির্বিশেষে সবাই সমান নাগরিক হয়ে থাকতে পারে আর নাগরিকের যদি সবাই সম-অধিকারের নাগরিক হয়, কারো কারো আধিপত্যের আলাপ সেখানে থাকে না। কিন্তু বাস্তবের ভারত ছিল-আছে এর বিপরীত। হিন্দু-জাতিবাদী কংগ্রেস-বিজেপির হাতে পড়ে সেটি এখন কট্টর হিন্দু আধিপত্যের ভারত হয়ে উঠেছে। আর একইভাবে তা কাশ্মিরের মুসলমানরা অনুসরণ করতে গেলে হিন্দুদের জন্য সব বিপদ ঘনিয়ে ওঠে।

কাশ্মিরে মুসলমানদের উত্থানের এই ব্যাপারটি কাশ্মির জাতীয় কংগ্রেসের নেতা ফারুক আবদুল্লাহ সেসময় প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর কানে তোলেন,তার সাথে আলাপ করেন এই এমইউএফ-এর উত্থান ঠেকাতে। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, ব্যাপক হলেও সরাসরি নির্বাচনী কারচুপি করেই তারা এই উত্থান ঠেকাবেন। ওই নির্বাচনের ভোটদানের পরেই এমইউএফের প্রায় সব নেতাকর্মীকে তারা গ্রেফতার করেন আর পরে প্রতিটা কেন্দ্রের ফলাফল ওই দিন দূরে থাক সপ্তাহ-দশ দিন পরে ইচ্ছামতো ঘোষণা করেছিলেন। আর এখান থেকে কাশ্মিরের রাজনীতি আর প্রকাশ্য রাজনীতি ও নির্বাচনে সীমাবদ্ধ থাকেনি। পরের বছর ১৯৮৮ সাথে সারা কাশ্মির সশস্ত্র রাজনীতিতে চলে যায়। তার পর থেকে কাশ্মিরে নির্বাচনের আর কোনো গুরুত্ব থাকেনি। কংগ্রেস-বিজেপির ভাষায় যা মুসলিম ‘জঙ্গিবাদ’ হয়ে যায়।বাজপেয়ী কংগ্রেসের হাতে নির্বাচনী কারচুপি করে রাজনীতিকে সশস্ত্রতার দিকে ঠেলে দেয়া ভুলে গেলেন, অস্বীকার করলেন।তিনি এক নতুন মতবাদ হাজির করলেন যে, কাশ্মিরের সব সমস্যার উৎস "সীমা পার কী আতঙ্কবাদ" - মানে কাশ্মিরের সব সমস্যার উৎস নাকি পাকিস্তান থেকে আসা টেরোরিজম!

আবার এদিকে কাশ্মিরের সশস্ত্র রাজনীতিতে এই প্রথম প্রতিহিংসাবশত দু-একজন হিন্দু পণ্ডিতকে হত্যা করা হয়েছিল। পরে যেটা সবচেয়ে বড় আর ব্যাপক হত্যার ঘটনাটা ঘটেছিল ১৯৯০ সালের ১৯ জানুয়ারি। আর এবারও কংগ্রেস, বিজেপি, ফারুক আবদুল্লাহ আর মুফতি সাঈদ সবাই একজোটে অবদান রেখে পণ্ডিতদের জম্মু ছেড়ে চলে যেতে উৎসাহিত করেছিলেন। ভেবেছিলেন এতে সশস্ত্রতার বিরুদ্ধে একটা চাপ হবে। কাশ্মিরের গভর্নর বা কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মুফতি সাঈদ বা বিজেপি সমর্থিত কোয়ালিশনে ভিপি সিং-এর সরকারের আমলে এই জম্মুত্যাগের ঘটনাটা ঘটানো হয়। যদিও কেউ এ থেকে কোনো শিক্ষা নেয়নি। কিন্তু শিক্ষাটা হলো, কোনো একটা ধর্মীয় আধিপত্যের জাতিরাষ্ট্র গড়বেন নাকি অধিকারভিত্তিক সাম্যের নাগরিক রাষ্ট্র? যেমন গড়বেন তেমন ফল পাবেন। এটা না সারা ভারতে অথবা না কেবল কাশ্মিরে কোনো একটি ধর্মীয় আধিপত্যের রাষ্ট্র, কোথাও কারো জন্য ফলদায়ক হয়নি। আর আপনি যদি হিন্দু আধিপত্যের জাতিরাষ্ট্র চান তবে নিশ্চিত থাকতে পারেন, আপনি তার মানে সে দেশে মুসলমান আধিপত্যের আরেক জাতিরাষ্ট্রের চিন্তার জন্ম হতে দাওয়াত দিচ্ছেন। ঠিক যেমন এখন ভারতে শুরু হয়েছে হিন্দুত্ববাদের আধিপত্যের রাষ্ট্র গড়া। এতে আরেকবার মুসলিম লীগের মতোই মুসলিম জাতিরাষ্ট্র চিন্তার জন্মকে দাওয়াত দেয়া হচ্ছে।

তাহলে কাশ্মির ফাইল কী দাঁড়াল? সেটি হচ্ছে কাশ্মিরের সঠিক ও সব ইতিহাসকে মুছে ফেলে বা ধামাচাপা দিয়ে কেবল ১৯৯০ সালে কাশ্মির পণ্ডিতদের জম্মু ছেড়ে চলে যাওয়াটাকে সামনে এনে বিজেপির পক্ষে সহানুভূতি জোগাড়, এই হিন্দুত্ব উত্থানের চেষ্টা করা হচ্ছে। আবার ১৯৪৭ সাল থেকে কত কাশ্মিরি মুসলমান মরেছে সেটি নয় কেবল ১৯৯০ সালের মাঝেই সব বুঝাবুঝি সীমাবদ্ধ করতে চাইছেন আর দাবি করছেন মুখরোচক শব্দ -জাস্টিস। কেবল ১৯৯০ সালকে জাস্টিস দিতে চাইছেন।

পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রীর হিন্দুত্ববাদের পাল্লায় পড়ে তার বিবেক মরে গেছে । তিনি অন্ধ হয়ে গেছেন এবং রাষ্ট্র ও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় মিথ্যাচার করেছেন। অথচ তিনি ছবিতে বুঝাতে চেয়েছেন, তিনি নির্যাতিত হিন্দুদের পক্ষ নিয়েছেন এবং এটা তার প্রগতিবাদী অবস্থান। কিন্তু কে তাকে বোঝাবে, ছবিতে প্রগতিবাদ = হিন্দুত্ববাদ এক ও সমার্থক হয়ে গেছে। আর হিন্দুত্ববাদের ভেলায় চড়ে ছবি এগিয়ে চলছে তরতরিয়ে আর আয় করছে দুহাত ভারে।

তথ্যসূত্র - উইকিপিডিয়া , কাশ্মিরের ইতিহাস ও সম্পাদকীয় (নয়া দিগন্ত - ০২ রা এপ্রিল - ২০২২)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ১:৫৮
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×