ছবি - unsplash.com
প্রথম পর্বের লিংক - Click This Link
প্রথম পর্বের পর -
কেন ও কি করে ডলার তার এই আজকের শক্তিশালী অবস্থানে পৌছল বা কেন ডলার এত শক্তিশালী ?
বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ক্ষমতাধর রাষ্ট্র যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঠিক তেমনি এর মুদ্রা মার্কিন ডলারও সারা বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী মুদ্রা।এটিকে বর্তমানে সারা বিশ্বের প্রধান রিজার্ভ মুদ্রা হিসাবেও বিবেচনা করা হয়ে থাকে। বিশ্বের মোট অর্থনৈতিক লেনদেনের প্রায় ৯০% মার্কিন ডলারের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এক হিসেব অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে বর্তমানে প্রায় ১.৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের কাগুজে ও ধাতব মুদ্রা ছড়িয়ে আছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য মার্কিন ডলার প্রায় অপরিহার্য। আর তাই এখানে মূল যে প্রশ্ন " মার্কিন ডলার কীভাবে আজকের শক্তিশালী অবস্থানে পৌছল এবং সারা বিশ্বের নিকট এমন অপরিহার্য হয়ে উঠলো"? এই প্রশ্নের উত্তর স্পষ্টভাবে জানতে হলে আমাদেরকে আধুনিক মুদ্রার ইতিহাস জানার জন্য একটু পিছন দিকে যেতে হবে।
মুদ্রা বা অর্থ ( Money ) - মুদ্রার অর্থ হল এমন কোনো আইটেম বা যাচাই যোগ্য রেকর্ড যা সাধারণত কোনো নির্দিষ্ট দেশে বা আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে পণ্য ও পরিষেবার জন্য বিনিময় প্রদান এবং ঋণ পরিশোধের মতো গৃহীত হয়। সাধারণভাবে, অর্থ হলো কোনো পণ্য ক্রয়-বিক্রয় বা সেবা গ্রহণ বা ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধের উপাদান। অর্থ প্রধানত বিনিময়ের মাধ্যম, আয়-ব্যয়ের একক, মজুত দ্রব্যর মূল্য এবং বিভিন্ন সেবার পরিশোধের মান হিসেবে কাজ করে।বর্তমানে যা কাগুজে মুদ্রা বা নোট আকারে বিনিময়ের একটি প্রতিষ্ঠিত মাধ্যম যাকে কয়েন এবং ব্যাংক নোট হিসাবে মিলিতভাবে বুঝায়। আরো সহজ করে বলতে গেলে, " অর্থ হলো অর্থনৈতিক বিনিময়ের মাধ্যম হিসাবে সার্বভৌম কর্তৃপক্ষের সাধারণ সম্মতি দ্বারা গৃহীত একটি পণ্য। এটি এমন একটি মাধ্যম যেখানে মূল্য এবং মান প্রকাশ করা হয় মুদ্রা হিসাবে এবং একটি দেশের সার্বভৌম কর্তৃপক্ষ এর গায়ে মুদ্রিত মূল্য মানের নিশ্চয়তা প্রদান করে। এটি ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি এবং দেশ থেকে দেশে মুদ্রা নামে সঞ্চালিত হয়, এইভাবে বাণিজ্য সহজতর করে এবং এটি একটি দেশ ও মানুষের সম্পদের প্রধান পরিমাপকও বটে"।
মুদ্রা বা অর্থের মূল্য - নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ কোনো নির্দিষ্ট সময়ে প্রচলিত বাজার দামে যে পরিমাণ পণ্য ও সেবা ক্রয় করার ক্ষমতা রাখে তাকে অর্থের মূল্য বলে। অর্থের মূল্য বলতে অর্থের ক্রয়ক্ষমতাকে বোঝায়। অর্থের নিজস্ব কোনো মূল্য নেই। অর্থের মাধ্যমে বিভিন্ন দ্রব্য ও সেবার দাম প্রকাশ করা হয়। এ জন্য অর্থের মূল্য দ্রব্য সামগ্রীর মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। অতএব বলা যায়, "একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দ্বারা যে পরিমাণ দ্রব্য বা সেবাকর্ম ক্রয় করা যায়, তাকে অর্থের মূল্য বলা হয়"। ডি এইচ রবার্টসনের মতে,"এক একক অর্থের বিনিময়ে সাধারণভাবে যে পরিমাণ দ্রব্য ও সেবাকর্ম ক্রয় করা যায়, তাকে সেই অর্থের মূল্য বলা হয়"। আবার অধ্যাপক হ্যানসেন বলেন,"অর্থ যা ক্রয় করে তাই অর্থের মূল্য"। সুতরাং, অর্থের মূল্য বলতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দ্বারা যে পরিমাণ দ্রব্য ও সেবাসামগ্রী ক্রয় করা যায়, তাকেই বোঝায়।
মুদ্রা-অর্থ বা Money কে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
ছবি - theprivatehand.com
ছবি - boycewire.com
১। কমোডিটি মানি (Commodity Money - কমোডিটি শব্দটির অর্থ হচ্ছে পণ্য। কমোডিটি মানি হচ্ছে সেই ধরনের অর্থ যার কোনো অন্তর্নিহিত মূল্য আছে। যেমন - প্রাচীনকাল থেকে স্বর্ণ ও রৌপ্যকে সরাসরি বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হতো। স্বর্ণ বা রৌপ্যের নিজস্ব মূল্য আছে। স্বর্ণমুদ্রা বা রৌপ্যমুদ্রাকে গলিয়ে ফেলা হলেও এর মূল্য হ্রাস পায় না। এজন্য স্বর্ণমুদ্রা বা রৌপ্যমুদ্রা এগুলো হলো কমোডিটি মানি। মানব ইতিহাসের বড় একটি সময়জুড়ে অর্থনৈতিক লেনদেন এর জন্য সোনা, রুপা ও তামা কমোডিটি কারেন্সি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
ছবি - investopedia.com
২। রিপ্রেজেন্টেটিভ মানি (Representative Money) - মানব সভ্যতার বিবর্তন ও পরবর্তীতে প্রকৃত মূল্যবান বস্তুর সহজ ব্যবহার যোগ্যতার কিছু সীমাবদ্ধতার অজুহাতে বিকল্প হিসেবে রিপ্রেজেন্টেটিভ কারেন্সি অর্থাৎ কাগজের মুদ্রার যাত্রা শুরু হয়। একসময় ইউরোপে কাগুজে মুদ্রার প্রচলন ঘটে এবং ক্রমশ তা বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। কাগুজে মুদ্রার কোনো অন্তর্নিহিত মূল্য নেই, কার্যত এগুলো কাগজের টুকরো ছাড়া আর কিছু নয় কিন্তু এই কাগুজে মুদ্রাগুলো কোনো ধাতুর সঙ্গে (স্বর্ণ-রৌপ্যের প্রতিনিধিত্ব করে) সম্পর্কিত ছিল। অর্থাৎ, এই কাগুজে মুদ্রাগুলোর মান কোনো রাষ্ট্রের স্বর্ণ-রৌপ্যের মজুদের ওপর নির্ভর করত। ফলে এই কাগজের মুদ্রা স্বর্ণমান বা গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড গ্রহণ করে। চীন সর্বপ্রথম এই কাগজের নোটের প্রচলন করে তবে ইউরোপে এই নোটের প্রচলন ঘটার পর ক্রমেই বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তে ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যে বিশ্বের বেশির ভাগ উন্নত রাষ্ট্র এ ব্যবস্থায় স্বর্ণের মূল্য নির্দিষ্ট করে দেয়। যতদিন পর্যন্ত নির্দিষ্ট পরিমাণ কাগজের মুদ্রার পরিবর্তে নির্দিষ্ট পরিমাণ স্বর্ণ পাওয়া যেত ততদিন পর্যন্ত টাকার মান নিয়ে কোনো সমস্যা ছিল না। ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যে বিশ্বের অধিকাংশ উন্নত রাষ্ট্র 'স্বর্ণমান' (gold standard) গ্রহণ করে। এই ব্যবস্থায় স্বর্ণের মূল্য নির্দিষ্ট করে দেয়া হয় এবং এই নির্দিষ্ট মূল্যে যেকোনো সময় যেকোনো পরিমাণ কাগুজে মুদ্রাকে স্বর্ণে রূপান্তরিত করা যেত (যেকোনো সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ কাগুজে মুদ্রার পরিবর্তে নির্দিষ্ট পরিমাণ স্বর্ণ পাওয়া যেত)। এই 'অর্থ'কে বলা হয় 'রিপ্রেজেন্টেটিভ মানি' বা 'কমোডিটি বেজড মানি', যেহেতু এই কাগুজে মুদ্রাগুলোর সঙ্গে স্বর্ণের সরাসরি সংযোগ ছিল।
ছবি - britannica.com
৩। ফিয়াট মানি (Fiat Money) - যে মানি কোনো ধরনের পণ্যের সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট নয়, সেগুলোকে বলা হয় 'ফিয়াট মানি অর্থাৎ তখন আর স্বর্ণের মূল্য নির্দিষ্ট রইল না বরং সেটি চাহিদা ও যোগানের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ল। মুদ্রার মান নিয়ে ঝামেলা শুরু হয় তখন, যখন ফিয়াট কারেন্সির আবির্ভাব ঘটে। ফিয়াট মুদ্রাও কাগজের নোটের মাধ্যমে প্রচলিত কিন্তু এই নোটের সাথে বাস্তবের কোনো মূল্যবান স্বর্ণ-রৌপ্য ধাতুর সম্পর্ক নেই। এ ক্ষেত্রে কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের চাহিদামতো ফিয়াট মানি ছাপিয়ে অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। বর্তমানকালের বেশির ভাগ আধুনিক মুদ্রাই ফিয়াট কারেন্সি। এমনকি বহুল আলোচিত এই আমেরিকান ডলার থেকে শুরু করে বাংলাদেশী টাকাসহ প্রায় সবই ফিয়াট কারেন্সি। তবে পার্থক্য হলো- পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ফিয়াট মানি ছাপিয়ে তার নিজের অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে, আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফিয়াট মানি ছাপিয়ে সারা বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করে, শাসন করে-শোষণ করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে ব্রিটেনসহ অধিকাংশ রাষ্ট্র 'স্বর্ণমান' পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয়। অর্থাৎ, তখন থেকে আর এসব রাষ্ট্রের মুদ্রা স্বর্ণমানের ওপর নির্ভরশীল ছিল না। মুদ্রার মানকে বাজারের হাতে ছেড়ে দেয়া হয়, যেটাকে অর্থনীতির ভাষায় বলা হয় 'free floating exchanges'। ১৯৭১ সালে মার্কিন রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সন বিশ্ব অর্থনীতিকে বড় একটি ধাক্কা দেন, যেটি 'নিক্সন শক' (Nixon Shock) নামে পরিচিতি অর্জন করে। তিনি ঘোষণা করেন যে, এখন থেকে আর মার্কিন ডলারের সঙ্গে স্বর্ণের কোনো সংযোগ নেই। অর্থাৎ, এখন আর রাষ্ট্রগুলো চাইলেই নির্দিষ্ট মূল্যে মার্কিন ডলারের বিনিময়ে স্বর্ণ কিনতে পারবে না। মার্কিন ডলারও বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের মুদ্রাগুলোর মতো 'ফিয়াট মানি'তে পরিণত হয়। এর মধ্য দিয়ে কার্যত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক আধিপত্যকে ধরে রাখার প্রচেষ্টা চালায়।
মুদ্রা বা অর্থের কাজ কি - অর্থের মূল কাজ হল ক্রয়কে বিক্রয় থেকে আলাদা করতে সক্ষম হওয়া এবং অন্যকোন জিনিষের দ্বৈত বিনিময়তা ছাড়াই দুটি পক্ষকে বিনিময় বাণিজ্যের অনুমতি দেওয়া। যদি একজন ব্যক্তির নিকট বিক্রি করার মত কিছু থাকে এবং বিনিময়ে অন্য কিছু চায়, তবে অর্থের ব্যবহার আইটেমগুলির পছন্দসই বিনিময় করতে সক্ষম এবং ইচ্ছুক কাউকে অনুসন্ধান করার প্রয়োজন এড়ায়। ব্যক্তি সাধারণ ক্রয় ক্ষমতার জন্য উদ্বৃত্ত আইটেম বিক্রি করতে পারে-অর্থাৎ, "অর্থ বা টাকা"- যে কেউ এটি কিনতে চায় এবং তারপরে যে কেউ এটি বিক্রি করতে চায় তার কাছ থেকে কাঙ্খিত জিনিস কিনতে আয় ব্যবহার করতে পারে। প্রধানতঃ অর্থের কাজ ৪ টি । যথা -
১। অর্থ দ্রব্য ও সেবা সামগ্রীর বিনিময়ের মাধ্যম রুপে কাজ করে।
২। অর্থ মূল্য পরিমাপের মানদন্ড হিসাবে কাজ করে।
৩। অর্থ সঞ্চয়ের বাহন হিসাবে কাজ করে।
৪। অর্থ ঋন গ্রহন ও তা পরিশোধের মাধ্যম হিসাবেও কাজ করে।
মুদ্রা হিসাবে স্বর্ণের ব্যবহার হ্রাস ও ডলারের বিকাশ ও উত্থান -
ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকেই ডলার ধীরে ধীরে পৃথিবীর বুকে অন্যতম শক্তিশালী মুদ্রা হিসেবে স্থান করে নেয়। এমনকি ব্রিটিশ পাউন্ড কিংবা ইউরোর তুলনায়। ডলারের এই উত্থানের পিছনে অনেকগুলি কারন বিদ্যমান ছিল। সেগুলো হল -
১। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ কিছুটা খারাপ হয়ে পড়ে। ধাক্কা আসে এশিয়ার অর্থনীতিতেও। সময়টা ১৯৪৪ সাল, সে সময় অবস্থা সামাল দিতে মাঠে নামে বিশ্ব ব্যাংক । সে ঠিক করে দেয়, "এক আউন্স সোনার দাম হবে ৩৫ ডলার"- আর তা থেকেই শুরু হয় ডলারের একাধিপত্যের বা উত্থান।
২। ইউরোপের পূর্ণ নির্মাণে এ সময় মার্শাল প্ল্যান (মার্শাল পরিকল্পনা বা ইআরপি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ইউরোপীয় পুণর্গঠন প্রকল্প নামে ইউরোপের বিভিন্ন দেশকে সহায়তা প্রদান করার একটি মার্কিন পরিকল্পনা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ইউরোপীয় দেশগুলোর বিধ্বস্ত অর্থনৈতিক পুনর্গঠন এবং এসব দেশে সোভিয়েত কমিউনিজমের বিস্তার রোধ করার লক্ষ্যে এ পরিকল্পনা করা হয় । এ পরিকল্পনা অনুসারে যুক্তরাষ্ট্র এসব দেশকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ পরিকল্পনা ১৯৪৮ সালের এপ্রিল মাসে প্রণয়ন করা শুরু হয় এবং চার বছর যাবৎ পরিচালিত হয়) বলে বিখ্যাত একটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এ পরিকল্পনায় ইউরোপিয়ান দেশগুলিকে ডলার সাহায্য দেওয়া হয়। এটা ছিল ডলারের উত্থানের দ্বিতীয় কারণ।
৩। ডলারের উত্থানের তৃতীয় কারণটি আরও জোরালো। আন্তর্জাতিক রিজার্ভ কারেন্সি হিসেবে ডলারের ব্যবহার বাড়তে থাকে। অর্থাৎ ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ হিসেবে সবার আগে নিজের জায়গা করে নেয়। কাঁচা তেল বা জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে ডলারের দামের একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। আমেরিকা তেলের অন্যতম বড় আমদানিকারক। ফলে ডলারের দাম বাড়া-কমার সঙ্গে তেলের দামেরও হেরফের হয়। এটিও একটি কারণ ডলার শক্তিমান হওয়ার।
ডলারের উত্থানের পিছনে এ সবগুলি ঐতিহাসিক কারণ। এ কারণগুলির ফলে ডলার বিশ্ব অর্থনীতিতে তার জায়গা পাকাপোক্ত করে নিয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিনের শক্তপোক্ত অবস্থান ছাড়াও আরও কিছু কারণ আছে, ফলে ডলার বর্তমান সময়েও এতটা শক্তিশালী।
১। নির্ভরযোগ্যতা - ডলারের শক্তিশালী অবস্থানের পিছনে একটি অন্যতম কারণ এখন পর্যন্ত ডলার যে কোন কিছুর পরিপ্রেক্ষিতে অন্যতম নির্ভরযোগ্য সম্পদ। অর্থাৎ অন্য কোন মুদ্রা, সোনা বা শেয়ার তার দাম অস্বাভাবিক ভাবে উঠতে-পড়তে পারে কিন্তু সেই তুলনায় ডলার অনেকটাই স্থিতিশীল।এখানে আরও একটি বিষয়, ডলার দুনিয়ায় সব থেকে বেশি ছাপা হওয়া মুদ্রার মধ্যে একটি।
২। সবচেয়ে বেশী ব্যবহার - পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী ডলার ব্যাপকভাবে অন্য দেশের মুদ্রা এবং পণ্যের লেনদেনে ব্যবহার করা হয়।
৩। সহজ বিনিময় ও ব্যবহারকারী সিস্টেম বা নেটওয়ার্ক - সারা পৃথিবীতে ডলার ব্যবহারের সিস্টেম বা নেটওয়ার্ক বিদ্যমান এবং যে কেউ চাইলেই ডলারের সাথে দুনিয়ার যে কোন জায়গা থেকে যে কোন মুদ্রার সাথে ডলার বিনিময় করতে পারে । আর তাই এ কারণটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডলার এমন এক মুদ্রা যেটিকে কেনা-বেঁচা করার জন্য সারা দুনিয়ায় বাজার যথেষ্ট সংগঠিত। ফলে পৃথিবীর প্রায় সমস্ত মানুষই ডলার কেনাবেচা করতে পারেন। এছাড়াও আন্তর্জাতিক কমোডিটি বাজারে ডলারের মাধ্যমেই কেনাবেচা করা হয়।
এছাড়াও আরও কিছু কারণ আছে, আছে বেশ কিছু জটিল অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা। সেই জটিল ব্যাখ্যার দিকে না গিয়েও বলা যায় আজকের দুনিয়ায় এ কারণগুলির জন্যই ডলার এতটা শক্তিশালী।
ছবি - istockphoto.com
স্বর্ণের ব্যবহার হ্রাস ও ডলারের ব্যবহার বৃদ্ধি ও উত্থানের ইতিহাস -
ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটেন ছিল বিশ্বের প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি এবং সর্ববৃহৎ সাম্রাজ্য। তাদের স্বর্ণের মজুদ ছিল দুনিায়র সবচেয়ে বেশি এবং লন্ডন ছিল বিশ্ব ব্যাংকিংয়ের কেন্দ্র। এজন্য ব্রিটিশ মুদ্রা 'পাউন্ড স্টার্লিং' ছিল সেসময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী মুদ্রা এবং বিশ্ব বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তখন এটিকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু ১৮৭০ দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়। এরপর বিংশ শতাব্দীতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলো পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। যুদ্ধের ব্যয় নির্বাহের জন্য রাষ্ট্রগুলো তাদের স্বর্ণ মজুদের ভিত্তিতে যে পরিমাণ মুদ্রা ছাপানো যেত, তার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে কাগুজে মুদ্রা ছাপাতে শুরু করে। অন্যদিকে, যুদ্ধের প্রথম তিন বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে নিজেকে জড়ায়নি ঠিক তবে তারা ইউরোপীয় দেশগুলোর কাছে অস্ত্র ও যুদ্ধের রসদ বিক্রি করে মূলত স্বর্ণের বিনিময়ে। ফলে আমেরিকার অর্থনীতি যেমন সমৃদ্ধ হয়, তেমনি বিশ্ব স্বর্ণের উল্লেখযোগ্য অংশ আমেরিকায় গিয়ে জমা হয়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে যুদ্ধে পর্যুদস্ত ব্রিটেনসহ ইউরোপের বেশির ভাগ দেশ তাদের স্বর্ণমান ত্যাগ করতে বাধ্য হয় মূলত স্বর্ণের ঘাটতি থাকার কারণে। অর্থাৎ তখন তাদের মুদ্রার মান দেশের মজুদকৃত স্বর্ণ মানের ওপর নির্ভরশীল ছিল না। এ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ব্যবস্থা চাহিদা ও জোগানের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে আর তখন থেকেই ফিয়াট কারেন্সি বা প্রকৃত মূল্যহীন কারেন্সি ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে। মুদ্রার মানকে বাজারের হাতে ছেড়ে দেয়া হয়, যেটাকে অর্থনীতির ভাষায় বলা হয় 'free floating exchanges'। ফিয়াট এ ধরনের মুদ্রা, যেগুলো কোনো পণ্যের সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট নয় । ইউরোপে ব্যাপকভাবে ফিয়াট মানি ভিত্তিক অর্থব্যবস্থা চালু হলেও মার্কিন ডলার তখনো ফিয়াট কারেন্সিতে পরিণত হয়নি। অর্থাৎ তখন পর্যন্ত আমেরিকান ডলার স্বর্ণমান বা গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড পদ্ধতি ধরে রাখে। যেসব দেশ ফিয়াট মানির প্রচলন করেছিল তারা তাদের স্বর্ণের মজুদ বৃদ্ধি করেও মুদ্রার প্রকৃত মান ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়। অন্য দিকে, আমেরিকান ডলার স্বর্ণমান বা গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড ধরে রাখায় ডলার আস্থা অর্জন করে। তদুপরি, মার্কিন অর্থনীতি ছিল বিশ্বের বৃহত্তম এবং মার্কিন ব্যাংকিং ব্যবস্থা ছিল সারা দুনিয়ায় সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য। মার্কিন ডলার যেহেতু তখনো স্বর্ণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল, তাই ডলারকে তারা বেশি নির্ভরযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করে এবং এটিকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অধিক হারে ব্যবহার করতে শুরু করে। ফলে পাউন্ড স্টার্লিং এর পরিবর্তে মার্কিন ডলার বিশ্ব বাণিজ্যের মাধ্যম তথা 'রিজার্ভ মুদ্রা'য় পরিণত হয়।
'রিজার্ভ মুদ্রা' (reserve currency) বা 'বৈশ্বিক মুদ্রা' (global currency) - হচ্ছে এমন একটি মুদ্রা যেটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত হয় এবং যে মুদ্রাকে অন্য রাষ্ট্রগুলো সঞ্চয় করে রাখে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে অধিকাংশ রাষ্ট্রের মুদ্রাই ছিল 'ফিয়াট মানি', যেগুলোর কোনো অন্তর্নিহিত মূল্য ছিল না। এজন্য তারা পরস্পরের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মার্কিন ডলার ব্যবহার করতে আরম্ভ করে, কারণ ডলার তখনো স্বর্ণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল। এর ফলে মার্কিন ডলার পরিণত হয় বৈশ্বিক রিজার্ভ মুদ্রায়।
ধীরে ধীরে আমেরিকা বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক দেশ হয়ে উঠে এবং মার্কিন ব্যাংকিং ব্যবস্থা সারা দুনিয়ায় সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠে। ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ পাউন্ডের পরিবর্তে মার্কিন ডলার অগ্রাধিকার পেতে থাকে। মার্কিন ডলারকে অধিক নির্ভরযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করে বিভিন্ন দেশ তাদের রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবেও ডলার সঞ্চয় করতে থাকে। একপর্যায়ে অধিক ব্যবহারের ফলে মার্কিন ডলার গ্লোবাল কারেন্সি বা বৈশ্বিক মুদ্রা হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের স্বর্ণের মজুদ বৃদ্ধি করতে শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্র তখন তাদের রফতানি করার জিনিসপত্রের বিনিময়ে স্বর্ণ ছাড়া অন্য কোনো কিছু গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের স্বর্ণের মজুদ বাড়তে থাকে, বিপরীতে অন্য রাষ্ট্রগুলোর স্বর্ণের মজুদ কমতে থাকে।
এদিকে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আরম্ভ হলে অনেকটা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। যুদ্ধের প্রথম প্রায় আড়াই বছর যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে এবং যুদ্ধরত রাষ্ট্রগুলোর কাছে প্রচুর পরিমাণে সামরিক সরঞ্জাম ও রসদপত্র বিক্রি করতে থাকে। যথারীতি এসময়ও যুক্তরাষ্ট্র তার রপ্তানিকৃত দ্রব্যাদির বিনিময়ে স্বর্ণ ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায় এবং এই নীতির ফলে তাদের স্বর্ণমজুদ ফুলে-ফেঁপে ওঠে। ১৯৪৭ সালে বিশ্বের মোট মজুদকৃত স্বর্ণের ৭০% মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তগত ছিল। বলতে গেলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আমেরিকার জন্য এক ধরনের আশীর্বাদ হয়ে আসে। এই বিশ্বযুদ্ধ পৃথিবীতে আমেরিকার অবস্থান চিরদিনের মতো বদলে দেয়। অন্য দিকে ব্রিটেন, জার্মানি ও ফ্রান্সের মতো পরাশক্তিগুলো যুদ্ধে যেমন অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে যায় তেমনি তাদের উপার্জনের প্রধান উৎস, উপনিবেশগুলো একে একে স্বাধীন হয়ে যায়। তখন কেবল আমেরিকা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পায়।
ছবি - nytimes.com
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালেই অন্যান্য রাষ্ট্রগুলো অনুধাবন করতে পারে যে, যুদ্ধপরবর্তী সময়ে বিশ্ব অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীনে থাকবে। যুদ্ধপরবর্তী অর্থনীতি যাতে স্থিতিশীল থাকে সেটি নিশ্চিত করার জন্য ১৯৪৪ সালে মিত্রপক্ষের ৪৪টি সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ার অঙ্গরাজ্যের ব্রেটন উডস নামক স্থানে আলোচনার জন্য সমবেত হয়। এসময় অন্যান্য সিদ্ধান্তের পাশাপাশি এই সিদ্ধান্তও গৃহীত হয় যে," মার্কিন ডলারের সঙ্গে স্বর্ণের যে সংযোগ ছিল, সেটি বজায় থাকবে, এবং আগের মতোই বিনা বাধায় মার্কিন ডলারকে ইচ্ছেমতো স্বর্ণে রূপান্তরিত করা যাবে। এই ব্যবস্থাটি 'ব্রেটন উডস ব্যবস্থা' হিসেবে পরিচিতি অর্জন করে"।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কার্যত বিশ্বব্যাপী মার্কিন অর্থনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। মার্কিন ডলার পরিণত হয় বিশ্ব বাণিজ্যের প্রধান মাধ্যমে এবং মার্কিন ব্যাংকিং ব্যবস্থার তুলনামূলকভাবে সারা দুনিয়ায় নির্ভরযোগ্যতার কারণে অনেক রাষ্ট্র তাদের নিজস্ব 'বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ'ও মার্কিন ব্যাঙ্কগুলোতে জমা রাখতে থাকে। এই ব্যবস্থা কার্যত যুক্তরাষ্ট্রকেই লাভবান করে,কারণ এর ফলে এই রাষ্ট্রগুলোর অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ে। এদিকে বিভিন্ন রাষ্ট্র ডলারের এই আধিপত্যকে নেতিবাচক ভাবে দেখতে থাকে। তাদের মতে, ডলারের একাধিপত্যকে স্বীকার করে নিয়ে কার্যত তারা নিজেদের অর্থে মার্কিনীদের জীবনমানের উন্নয়ন করছে। ১৯৬০ এর দশকে এক ফরাসি অর্থমন্ত্রী মার্কিন ডলারের এই একাধিপত্যকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের 'মাত্রাতিরিক্ত সুবিধা' (exorbitant privilege) হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন।
অবশ্য ১৯৫০ ও ১৯৬০ দশকে পশ্চিম ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলো ও জাপান বিশ্বযুদ্ধের ফলে সৃষ্ট দুর্দশা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয় এবং তারা তাদের মজুদকৃত মার্কিন ডলারের বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে স্বর্ণ কিনতে শুরু করে। এর ফলে মার্কিন স্বর্ণ মজুদ ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে। অন্যদিকে, এসময় ভিয়েতনাম যুদ্ধ এবং মার্কিন রাষ্ট্রপতি লিন্ডন জনসনের 'গ্রেট সোসাইটি' প্রকল্পের ব্যয় নির্বাহের জন্য মার্কিন সরকার বিপুল পরিমাণে কাগুজে মুদ্রা ছাপতে শুরু করে। এর ফলে মার্কিন ডলারের সঙ্গে স্বর্ণের সংযোগ বজায় রাখা ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠতে থাকে। ১৯৭১ সালে মার্কিন রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সন বিশ্ব অর্থনীতিকে বড় একটি ধাক্কা দেন, যেটি 'নিক্সন শক' (Nixon Shock) নামে পরিচিতি অর্জন করে। তিনি ঘোষণা করেন যে, এখন থেকে আর মার্কিন ডলারের সঙ্গে স্বর্ণের কোনো সংযোগ নেই। অর্থাৎ, এখন আর রাষ্ট্রগুলো চাইলেই নির্দিষ্ট মূল্যে মার্কিন ডলারের বিনিময়ে স্বর্ণ কিনতে পারবে না। মার্কিন ডলারও বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের মুদ্রাগুলোর মতো 'ফিয়াট মানি'তে পরিণত হয়। এর মধ্য দিয়ে কার্যত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক আধিপত্যকে ধরে রাখার প্রচেষ্টা চালায়।
বাকী সব মুদ্রা ছেড়ে ডলার নিয়েই সারা দুনিয়ায় কেন এত কাড়াকাড়ি?
এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে, " মার্কিন ডলারকে যখন ফিয়াট মানি তে পরিণত করা হলো, তখন অন্য রাষ্ট্রগুলো কেন মার্কিন ডলারকে 'রিজার্ভ মুদ্রা' হিসেবে ব্যবহার করা বন্ধ করল না"? " কেন তারা এখনো এই কাগুজে মুদ্রাকে আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করছে" ? কেন তাকে নিয়ে এখনো সারা দুনিয়ায় কেন এত কাড়াকাড়ি?
এর উত্তর হচ্ছে, যখন বিশ্ব অর্থনীতিতে 'নিক্সন শক' কার্যকর হয়, তখনো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল বিশ্বের প্রধান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি। সারা দুনিয়ায় এমন কোনো রাষ্ট্র ছিল না, যেটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে পারে। তাছাড়া, বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সমস্যা সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তখন ছিল রাজনৈতিক ও অভ্যন্তরীণভাবে স্থিতিশীল। মার্কিন ব্যাংকগুলোর উপর তখনো ব্যবসায়ীদের আস্থা তুলনামূলকভাবে বেশি ছিল। সর্বোপরি, মার্কিন ডলারকে পরিত্যাগ করে বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার জন্য নতুন একটি বৈশ্বিক ও রিজার্ভ মুদ্রার প্রয়োজন হতো। কিন্তু মার্কিন ডলারের পরিবর্তে কোন মুদ্রাকে রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে গ্রহণ করা হবে এই ব্যাপারেও বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে কোনো ঐকমত্য ছিল না। ফলে মার্কিন ডলারের একাধিপত্যকে কোনো বাধারই সম্মুখীন হতে হয়নি।
এদিকে , ব্রেটন উডস চুক্তির ফসল হিসেবেই বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রতিষ্ঠিত হয়। এই আন্তর্জাতিক সংস্থা দু’টি বিশ্বব্যাপী আমেরিকার প্রভাব বলয় সৃষ্টি করতে ও ডলারের একাধিপত্যকে তুলে ধরতে ব্যাপক ও প্রধান ভূমিকা পালন করে ---
চলবে -
জবাবদিহীতা - এই লিখা লিখতে নিম্নে বর্ণিত তথ্যসূত্র ছাড়াও আরও অনেক জায়গা থেকে ছোট-খাট সাহায্য নিতে হয়েছে যা আমি এখানে উল্লেখ করিনি। তা ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।
==========================================================
তথ্যসূত্র -
১। উইকিপিডিয়া
২। Money - https://www.britannica.com/topic/money
৩। নিউ ইয়র্ক টাইমস - Click This Link
৪। যেভাবে মার্কিন ডলার বিশ্বজুড়ে আধিপত্য স্থাপন করেছিল - Click This Link
৫। Encyclopaedia Britannica - লিংক - https://www.britannica.com/topic/fiat-money
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:২০