রাত বারোটা বেজে ১০ মিনিট। কাকরাইল চৌরাস্তায় একটা “বিআরটিসি এসি বাস” রঙ রুটে ঢুকে টান দিচ্ছিলো। কর্তব্যরত ট্রাফিক অফিসার দৌড় গিয়ে বাসের সামনে দাড়ালেন। বাস থেমে গেল। অফিসার হাতের লেজার লাইট দিয়ে ঈশারা করে পিছনে যেয়ে সঠিক রাস্তায় যেতে বলছেন। কিন্তু বাস ড্রাইভার পিছনে যাবে না। সে উল্টা হাতের ঈশারায় বুঝাচ্ছে একটু সামনে যেয়েই ঐদিক দিয়ে ঢুকে যাবো। কিন্তু অফিসার কিছুতেই রঙ রুটে যেতে দিবেন না।ড্রাইভার ও পিছনে যাচ্ছে না।
আমি একটু দুরে দাড়িয়ে ঘটনা দেখছি। আশেপাশে আরো কোন পুলিশ কর্মকর্তা নাই। এক্টু দুরে একজন মাত্র পুলিশ অন্য গাড়ি নিয়ন্ত্রন করছেন।
গাড়ি পিছনে না নেয়ায় পুলিশ অফিসার ধমক শুরু করলেন। তারপরও ড্রাইভার অনড়। মিটিমিটি আলোতে বিশাল বাসের সামনে ছোট পুলিশ অফিসারকে দেখতে অসহায়ের মত লাগলেও তার সাহস বাঘের মত। এক্টু পর চিৎকার শুরু করলেন, পিছা.... পিছা..... যাইতে দিমু না, পিছা...
ড্রাইভার তবুও পিছায় না। আমার ভয় হতে লাগলো। ঘাড় তেড়া ড্রাইভার রেগে যেয়ে কোন দুর্ঘটনা ঘটিয়ে না বসে। কারণ এলাকা মোটামুটি নিরব। এছাড়া পত্র পত্রিকায় মাঝে মধ্যেই খবর পাই “রাতের অন্ধকারে পুলিশের লাশ পাওয়া গেছে হাইওয়ে রুটের পাশে”।
প্রায় দেড় মিনিট হয়ে গেল কিন্তু ড্রাইভার পেচাচ্ছে না। পুলিশের এই সাহসিকতাকে অনেক চ্যালেন্জিং মনে হল। রেগে গিয়ে উপর দিয়ে টান দিয়ে চলে গেলেই জানটা শেষ। আমার ভয় হতে লাগলো, কিন্তু পুলিশ ভয় পাচ্ছে না। পুলিশ স্ট্রেইট ড্রাইভারের মুখে লেজার ধরে আছে। আর চিৎকার করছে। কিন্তু ড্রাইভার পিচাচ্ছে না।
পরিস্থিতি বেশি ভালো ঠেকল না। এক্টু দূরে আরো দুইজন দাড়িয়ে ঘটনা দেখছিলো। আমি তাদের দুইজনকে ডাকদিয়ে বললাম ‘ভাই, সবাই এদিক আসেন’।
আমি ধীরে ধীরে পুলিশের কাছে গেলাম। তার পাশে দাড়ালাম। বাকি দু’জনও তারাতারি বাসের সামনে এসে দাড়ালো। পুলিশ আর কোন ঝাড়ি দিলেন না। একটু পর ড্রাইভার গাড়ি পিছিয়ে অন্য রুট দিয়ে চলে গেলো।
ঘটনা অনেক সিম্পল। তবুও শেয়ার করলাম নিজেদের মাঝে সচেতনা বৃদ্ধির জন্য। মনে রাখতে হবে, আমাদের বিপদে যেমন পুলিশকে দরকার তেমনি পুলিশের দরকারেও আমাদের এগিয়ে আসা উচিত।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১:৪৩