somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তাহাদের বর্ষবরণ।

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঘটনা বাংলাদেশেই। এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানকে হারাতে না পারায় রাগে,দু:খে এবং কিছুটায় চেতনাবশত এক যুবকের ইহলীলা সাঙ্গ হয়েছিল। প্রত্যাশার স্পর্ধা বলে কথা। ‘অডেসিটি অব হোফ’র মাত্রা আছে কিনা তা পরিক্ষা নিরিক্ষার বিষয় নয়। নতুন ঢাকার লোকরা সনাতন মেলা টেলায় যান না খুব একটা; তবে টিএসসির দিকে তাদের ¯স্রোত দখলদারী বলা চলে। বসন্তবরণ থেকে বৈশাখ বরণ আরো যত আছে বরণ; এসব দিনে বহিরাগতদের ভীরে ভার্সিটির ছাত্ররা নিজেদের লুকোয়। পুরনো ঢাকার লোকরা ব্যস্ত নিজেদের সুঠাম পেট নিয়ে। বিশেষ দিনগুলোতে ঘরের ছোট ছেলে কি বড় ছেলে সবার চাই ‘বড় বাপের পোলা’। ভোজন রসিকতার এ নমুনা ক্যারিবিয় গায়ানা দ্বীপ ছাড়া জুড়ি মেলা ভার। পুরান ঢাকায় যদি নয়া ঢাকাইয়ারা যান তাদের জন্যও বিশেষ আপ্যায়ণের ব্যবস্থা আছে। লুচিডাল আর বাগরখানি সব উৎসর্গ তাদের জন্য। সখের বশে খেতে পারেন ‘বিউটি বোর্ডিং’ এর স্পেশাল খিচুরী। বাংলাবাজারের কাছে এ ঐতিহাসিক বোর্ডিংটিতে কবি শামছুর রহমান সহ নামি দামি অনেক সাহিত্যিকের আড্ডা কেন্দ্র ছিল।
।।
ছোটকাল থেকে ধারণা ছিল পহেলা বৈশাখ হিন্দুদের অনুষ্ঠান। গ্রামের মেলা বলতে যে জিনিসটি বোঝায় আদতে সেটিই ছিল পহেলা বৈশাখ। কিছু বিষয় থাকে যাকে সোজাসাপ্টা কথায় প্রকাশ করা যায় না। কেউ যদি বলে ‘অন্যের অধীনতা থেকে মুক্তিই স্বাধীনতা’- প্রতিবাদ করি তার। বিউটি বোর্ডিং এর কবি স্বাধীনতার যথার্থ চিত্র একেছেন অনেকগুলো ছিন্নপত্র যোগে। গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাতার থেকে নজরুলের বাবরি চুল; অবিনাশি গান থেকে বাবার জায়নামাজের উদার জমিন। এসব এলোমেলো কথাতেই মেলে স্বাধীনতার আসল অর্থ। পহেলা বৈশাখ সোজা কেবল পান্তা ইলিশ খাওয়ার সহজ সুন্নত নয়; নয় মেচ করে শাড়ী পড়ে সংস্কৃতিবান ভাব দেখানোও। ছায়ানটের গান দিয়ে উদ্বোধনের একচেটিয়া রীতিও নয় এ সংস্কৃতি। অথবা হাল আমলে চারুকলার আরোপিত মঙ্গলশোভাযাত্রার কোন বহ্ণি নয় এ বৈশাখ। আসলে এ সবই কালের জোয়ারে জুড়েছে আমাদের নগর সংস্কৃতিতে। আমাদের পালহীন গণমাধ্যম শহুরে সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করেই ছাপে চাররঙা ত্রোড়পত্র। আবহমান গ্রাম বাংলা ছোটলোকদের জায়গা তাদের কাছে। কিন্তু আমাদের চিরায়ত সংস্কৃতিতে উপরের নমুনাগুলোর কি ছায়া পড়ে। যখন চাঁদপুরের মাঝিপাড়ার জেলেদের প্রতিটা সকাল হয় ইলিশের সরুয়া দিয়ে পান্তা খেয়ে, বা কেউ মজে বিশেষ ধর্মের আচারকে (মঙ্গলশোভা) জাতীয় সংস্কার বলে চালিয়ে দিয়ে- তখনই ক্ষুদ্রমণা সে সংজ্ঞা পারেনা কাল উৎরাতে। সংজ্ঞাকে অবশ্যই যুগের উধের্¦ উঠতে হয়-নাহলে তার পতন হয়।
বৈশাখ এর সংজ্ঞা এলোমেলো ভাবেই দিতে হবে।

- বোশেখ তুমি কালবোশেখী দেখে হঠাৎ চমকে যাওয়া
- কয়েক ওভার বাকী থাকতেই খেলা শেষ করে দেয়া।
- বোশেখ তুমি ঝড়েপড়া আম কুড়োতে, একটানা লড়ে যাওয়া
- কখনও আবার শুকনো লাড়কি তড়িঘরি ঘরে তোলা
- বোশেখ মানে চুরি করে গ্রাম্য মেলায় যাওয়া
- কম টাকায় চাকু-ছুড়ি চিড়ে মুড়ি কেনা।
- শহরে এসে সে হাওয়া খানিক বদলে যাওয়া।
- নানা ধর্মে না শহরে ভিন্নতা যাবে পাওয়া।

বর্ষবরণ ধর্মীয় নয়; সার্বজনীন । ধর্মভেদে উদযাপনে পার্থক্য হবেই। তবে এক ধর্মীয় রীতি অন্যদের উপর চাপিয়ে দেয়ার বিষয় নয় এটি।
।।
চাঁদপুরের ছোট সুন্দর মাদরাসা। বছর কয়েক আগের কথা। পহেলা বোশেখ আসলেই হুজুরদের নজরদারী বেড়ে যেত। মেলা উপলক্ষে পথে পথে জুয়ার আসর এবং হিন্দুয়ানী রীতির প্রাধ্যান্যই বাঁধার মূল কারণ। মুলিবেড়া টপকানো সহজ হলেও লেইজারের পর ফেরারীদের লিস্ট যত্ন সহকারে লেখা হত।
বোশেখির দিন লেইজারের পর গায়েব মানে নিশ্চিত মহামায়া বাজারের হিন্দুয়ানী মেলায় আবিষ্কার করা যাবে ছোকড়াটাকে। তথ্য ভেরিফাই করার জন্য রক্ষণশীল হুজুররা মেলাপথে তাদের ছাত্রবেশী চর ছেড়ে দিতেন। এসব ছাত্ররা আর্থিক এনাম না পেলেও হুজুরদের সাহচার্য পেত; ন্যূনতম খতমে খাজেগানে দোয়াপড়িয়ে ২০ জনের মাঝে ঠাই পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যেত। পরদিন কাশে চিহ্ণিত ছাত্রদের উপর যথারীতি খরগ নেমে আসে। একবার ২০ টাকা জোগাড় করে মহামায়া বাজারে বোশেখির মেলায় গিয়েছিলাম। হুজুরদের কঠোর নজরদারীর গলিপথ বাকিয়ে বেঁচে গিয়েছিলাম ধরা খাওয়া থেকে। কোনাকোচা পথে বাড়ী ফেরার সময় এক চাচাতো ভাই হুজুরের বাণী ভুলে লোভে পড়ে জুয়া আসরের। লাভের লোভে দিয়ে দেয় ৫ টাকার একটি কয়েন। ভাবে হবে দিগুন; তিনগুণও অসম্ভব কিছু না। আসে না; সে আদলি আর আসে না ফিরে। মূলধন উঠাতে বার কয়েক কয়েন চেলে সবগুলো হারিয়ে দেউলিয়ে ও! ধুর এসব ভালো না বলে বৃথা শান্তনা দিয়ে আসর ত্যাগ -সবই ঘটনার পরম্পরা। মেলা থেকে এরই মধ্যে ঝংধরা তবে উপরে ফিনিশিং দেয়া ছুরি কিনে ফেেেলছি একটা। আগামী মাস দুয়েক ধরে ছুড়ির আচরে এক একটি আমকে নিমিশেই করাচ করব- এ আশায় মনে হিল্লোল বইছে তখন। আমার মত এদের কাছেও বোশেখ মানে,
-‘বিনে বাঁধায় মেলা থেকে ছুরি কেনার এতটুকুন অধিকার।’
/ মাসুম তোফ
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×