ইদানিং লক্ষ করেছি দেশের এড, পত্রিকার ছবি বা বিলবোর্ডের মেয়েগুলোর পোষাক আষাক সহ অঙ্গভঙ্গী অনেকটাই বদলে গেছে। অর্ধনগ্ন খোলা ছবিতে ভরে গেছে চারপাশ। কেমন যেন মনে হয় যত বেশি কাপড় খোলা দরকার তারচেয়েও বেশী খুলে ক্যামেরার সামনে দাড়াচ্ছে। আসলে আমরা যারা দেশে থাকি তারা বিদেশের বিভিন্ন এড, ছবি বা ক্যালেন্ডারে অর্ধ নগ্ন, সর্ট ড্রেস বা পায়ের উরু দেখানোকে ভাবি স্মার্টনেস। কোন স্মার্ট ছেলের কোমড়ে জড়িয়ে ধরে ছবি তোলাকে ভাবি আহ্ জীবনের সব প্রাপ্তিই মনে হয় ওরকম একটা ছবিতে। আসলে আমাদের মন মানসিকতা দিন দিন ছবি নির্ভর হয়ে যাচ্ছে আর সে ছবি যেন তেন প্রকারের নয় ... প্রায় অর্ধনগ্ন হতে হবে। তবেই হবো আমরা দারুন স্মার্ট।
তার উপর আমাদের পত্র পত্রিকা, সিনোম, নাটক, টিভি চ্যানেল আমাদের মেয়েদেরকে বারবার বোঝানোর চেস্টা করে কাপড় খোল, কাপড় খোল, কাপড় খোল....। দর্শক তোমার কাপড়কে নয় তোমারে দেহ দেখতে চায়, তোমার উরু দেখতে চায়, তোমার বুকের অনেকটুকুই দেখতে চায়..... ৩৪/৩২/৩৪...... ওটাই সৈান্দর্য্য, ওটাই স্মার্টনেস।। তাই মেয়েগুলো প্রতিযোগীতা শুরু করেছে কতভাবে কিভাবে কাপড় খোলা যায় ।
সাবানের বিজ্ঞাপন! স্বল্পবসনা সুন্দরী
হাড়ি পাতিলের বিজ্ঞাপন! স্বল্পবসনা সুন্দরী
ছেলেদের সেভিং ব্লেডের বিজ্ঞাপন! স্বল্পবসনা সুন্দরী
টুথপেস্ট, লুঙ্গী, নুডলস!! স্বল্পবসনা সুন্দরী..........। চলছেই চলছে।
তারপর ওইসব ছোট ছোট বাচ্চামেয়েগুলোকে শেখানো হয় কাপড় খোলাটা স্মর্টনেস, অর্ধনগ্ন থাকাটা দারুন ব্যাপার, কারো সাথে শোয়ার নাম স্বাধীনতা কারন দেহ তোমার তা নিয়ে যা খুশি তুমি করতে পারো........ বাহ বাহ বাহ!!! এ সুযোগে ভোগ করো যত পারো। তারপর ছুড়ে ফেলো তাদের যখন তোমার প্রয়োজন শেষ হয়ে যায়।
আর বোকা মেয়েগুলো ঝাপিঁয়ে পড়ছে আরো স্মার্ট হবার আশায়। সুন্দরী প্রতিযোগীতার নামে, অমুক প্রতিযোগীতার নামে, তমুক প্রতিযোগীতার নামে এক একটা মেয়েগুলোকে বের করে আনছে ঘর থেকে। তারপর নারীলোভী হায়েনাগুলো একের পর এক ভোগ করে ছুড়েঁ ফেলছে তাদের।
আর বোকা মেয়েগুলো??? ততদিনে রেভলন বা ম্যাকের মেকআপ এ অভ্যস্থ হয়ে যায়, ভিক্টোরিয়া সিক্রেটের অন্তর্বাস ছাড়া রুচিতে বাধেঁ, শ্যানেলের পারফিউম ছাড়া ঘুম আসে না, ব্রান্ডের ড্রেস ছাড়া চলতেই নিজের প্রতি নিজের ঘৃনা ধরে। ...... ওদের ফিরে যাবার কোন উপায় থাকে না, স্বাভাবিক জীবন থেকে ওরা হয়ে পরে বিচ্ছিন্ন। তাদের জীবন হয়ে পরে ফেইসবুক কেন্দ্রিক, মধ্যরাতের ডিজে পার্টি কেন্দ্রিক কিংবা অন্ধকারের উন্মোত্ত রাত কেন্দ্রিক।
কেউ কি বলতে পারবে এই মেয়েগুলোর কতজন সাক্সেস হয় জীবনে এইসব লাক্স বা ভিট প্রতিযোগীতার পর? কতজন ঘরে ফিরে যায় ও স্বাভাবিক জীবন গড়ে তুলে? আর কতজন হারিয়ে যায় আধুনিক জীবনে আধুনিকতার ভীড়ে???
না কেউই বলতে পারবে না, কারন ওদের খবর কেউই রাখে না। যারা সাক্সেস তাদের খবর হয়তো জানি কিন্তু সেটাতো একজন বা দুইজন! আর #metoo আন্দোলনের পর ওইসব সাক্সেসদেরও খবর সবার সামনে অনেকটা। আর বাকিরা কোথায় কেউই জানে না।
না পারে না এ মেয়েগুলো, ফিরে যেতে পারে না আপন নীরে, আপন ভালোলাগায়। তাদের মধ্যবিত্ত ঘরের বাবা-মা বা স্বামীর হাজার টাকার লিপিস্টিক কেনার সামর্থ্য থাকে না আর নিজের যোগ্যতায় কাজ জুটালে তা দিয়ে ওই লিপিস্টিক এর পয়সা হয় না। তাই পারে না ফিরে যেতে কিংবা ফিরে গেলেও পারে না স্বাভাবিক জীবন পেতে। কারন ততদিনে তারা জানে না নিজের জন্য বাঁচতে, তারা বেচেঁ থাকে অন্যের জন্য....... অন্য কারো সেবাদাসী হবার জন্য।
এই বোকা মেয়েগুলো তোমাদেরকেই বলছি, যে ছবি তোমরা দেখো বিদেশী ফেইসবুকে, বিলবোর্ডে বা বিজ্ঞাপনে সেটা শুধুই একটা ক্লিক। ওর পিছনের নিষ্ঠুর নির্মমতা সত্যটা তোমরা জানো না। তোমরা ছবিটাই শুধু দেখো ছবির পিছনের অন্ধকারটুকু দেখো না যতক্ষন না সেখানে তোমার পা পড়ছে। কারন তোমাকে সেটা শোনানো হয় না, তোমাকে ইউজ করবে বলে বলা হয় না, তোমাকে ভোগ করবে বলে জানানো হয় না.......... তোমরা কি বুঝো না? এবার একটু চোখ মেলো, দেখো বাস্তবতা। অন্যের শয্যাসঙ্গী হবার জন্য বেচেঁ থাকবে নাকি নিজের জন্য বাচঁবে?? আবারো ভেবে দেখো।
আপনাদের চোখের শান্তির জন্য উপ্রের ছবিগুলা দিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০১৯ সকাল ৭:৩৪