দেখলাম নেটফ্লিক্সে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত গৈারী খান ও আলিয়া ভাট প্রযোজিত+অভিনিত "ডার্লিংস" মুভিটি। ডমিস্টিক ভায়োলেন্সের মতো সিরিয়াস বিষয়ের উপর মুভিটি হলেও এতে হার্ড কমেডির তকমা লাগানো আছে। যার কারনে এতো স্পর্শকাতর বিষয়টাকে মোটামুটি সবাই মিলে-ঝুলে ছাগলামীর পর্যায়ে নিয়ে গেছে। আর বিরক্তিটাকে আরো উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে গেছে আলিয়া ভাট এর অভিনয়। স্বামীর মাইরধরে যে ভাইটামিন আছে আর তা যে অত্যন্ত আনন্দের বিষয় আলিয়া ভাট এর অভিনয় দেখে এ প্রথম জানলাম। আলিয়ার অভিনয় দেখে সারাক্ষনই মনে হচ্ছিল সে হানিমুন কাটাচ্ছে, অত্যাচোরে জর্জরিত কোন বউ না। এ ছবি দেখে আরো অনেক জ্ঞান লাভ করলাম যেমন "স্বামী" মানেই অত্যাচারী আর তাকে খুন করা তেমন কোন কঠিন কাজ না। আর খুন করে ধরা পরারও তেমন কোন সম্ভাবনা নেই। বদরুন্নেসা (আলিয়া) ও তার মা শামসুন্নেসা (শেফালি) উভয়ই একই কাজ করে আইন-কানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে।
"ডমিস্টিক ভায়োলেন্স" এ শব্দটা বলতে গেলে আমাদের উপমহাদেশের মানুষের কাছে শুধুমাত্র বউ পেটানোর মাঝেই সীমাবদ্ধ। আর এ নিয়ে তেমন কোন বিশেষ উচ্চবাচ্য হয় না। কারন স্ত্রীকে মৃদু প্রহারে বৈধতা যেমন আছে, তেমনি স্বামী প্রবরের রাগ, দু:খ, হতাশা, বসের ঝাঁড়ি, বাড়িওয়ালার গুতানী, রিক্সাওয়ার মুখ ঝাঁমটা, সিএনজি ওয়ালার ভাব........... সব কিছুর রাগ বউ এর প্রয়োগের মাধ্যমে বউকে উত্তম-মধ্যম দেয়াটাও ভাত খাওয়ার মতই খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার আমাদের এক শ্রেনীর কাছে। দাদার দাদার দাদা তার বউ এর ঝাঁড়ছে, বাপে মা'রে পিটাইছে, চাচা, মামা চাচা ফুফা সবাই বউ পিটায়ে ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করছে। এ বিষয়টা কিছুটা হলেও ছবিতে ফুটে ইঠেছে।
"ডমিস্টিক ভায়োলেন্স" শব্দটা শুধুমাত্র পেটাপিটির মাঝে যে সীমাবদ্ধ নেই তা অনেকেই বলতে গেলে বুঝে না। স্ত্রীকে যথাযথ সন্মান না করা, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না থাকা, মানসিক অত্যাচার করা, এবিউসিব ভাষা বা গালাগালি করা, বাক স্বাধীনতা না থাকা, মানবিক সম্পর্ক গড়ে না তোলা......... এরকম অসংখ্য বিষয় হতে পারে। তবে ফিজিক্যাল টর্চার বা শারিরীকভাবে মারধর সর্বোচ্চ পর্যায়ের বিষয়। আমাদের সমাজ যতক্ষন পর্যন্ত মারধর এর সর্বোচ্চ পর্যায়ে না পৈাছে ততক্ষন পর্যন্ত এটাকে "ডমিস্টিক ভায়োলেন্স" বলতে নারাজ। এমন কি এ মারধরের খবর জানার পরও এটাকে এডজাস্ট করা বা মেনে নেয়ার জন্য পরিবার সমাজ রাস্ট্র সবাই পরামর্শ দেয়। কেউ একটু ভেবে দেখে না রক্ত মাংসে গড়া এ মেয়েটিরও কষ্ট আছে, দু:খ আছে, ভালো লাগা আছে, মারলে ব্যাথা লাগে। এসব নিয়ে তারা চিন্তা করে না কারন মেয়েদেরকে মানুষ হিসেবেই তারা ভাবতে পারে না, এরাতো চাবি দেয়া পুতুল কিংবা দাস অথবা শুধুই "মেয়ে মানুষ"।
অথচ এ পুরুষমানুষগুলো বুঝে না, তার পাশে থাকা এ নারীটি তার জীবন দিয়ে এ ভদ্রলোকের সংসার রক্ষা করছে, সন্তান জন্ম দিচ্ছে, তাদের লালন পালন করছে, সে অসুস্থ্য হলে তার মাথার কাছে বসে থাকছে, বিপদে-আপদে তার পাশে থাকছে। সামান্য একটু ভালোবাসা, একটু ভালো বিহেব, একটু মানবিক সম্পর্ক তাকে দিতে পারে সুন্দর একটি পারিবারিক জীবন, রাখতে পারে চমৎকার একটি পরিবেশ সন্তানদের জন্য। কিন্তু না..... এদের সুখে থাকতে ভুতে কিলায়!!!!
আবারো বলছি, সব পুরুষদেরকে নিয়ে কথা বলছি না। আমি অমানুষদেরকে নিয়ে কথা বলছি। যাদের হাত পা মাথা সবই আছে কিন্তু তারা মানুষরুপী পশু। আর শুধুমাত্র নারীদের এবিউস নিয়ে কথা বলছি, কারন "ডালিংস" ছবি প্রসঙ্গে আলোচনা আসছে। এর বিপরীত চিত্রও আছে। পুরুষ এবিউজ ও কম নয় এ সমাজে। তা নিয়ে অবশ্যই লিখবো।
সোহানী
আগষ্ট ২০২২