নিহত শ্রীলংকান পরিবার
কানাডার মাইগ্রেশান নিয়ে প্রায় ১৫টা পর্ব লিখেছিলাম। ইচ্ছে ছিল একটা বই বের করার সবগুলো নিয়ে। কিন্তু এতো ব্যাস্ত জীবনে আর সময় করে উঠতে পারিনি। তবে আবারো বলে রাখি আমি লেখালেখি করি তা ট্যাকা পয়সা আয়ের জন্য না।
তাহলে প্রশ্ন কেন লেখালেখি করি?
উত্তর: ঘরের খায়ে বনের মোষ তাড়ানো স্বভাব আমার। সে স্বভাব থেকে লিখালিখি করি যদি কারো উপকারে আসে!!
যাহোক যা বলছিলাম, কানাডার মাইগ্রেশান নিয়ে। এতদিন যেমন তেমন ছিল কিন্তু কিছুদিন যাবৎ দেশ থেকে যেভাবে স্টুডেন্ট, ভিজিটর, পিআর এমন কি স্কুল লেভেলের বাচ্চারা আসছে তা দেখে কিছুটা আতংকিত। এবং যতটুকু দেখেছি এদের বড় অংশই রিফুইজ ক্লেইম করার উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়ছে। আর তাইতো সেই পুরোনো লিখা খুলে আবার লিখতে বসলাম।
প্রিয় দেশবাসী,
কিছু সাবধান বাণী আবারো দিচ্ছি।
১) আপনাদেরকে করজোড়ে নিবেদন করছি দেশের দালালদের কথায় কোনভাবেই পা দিবেন না।
২) এখন কানাডার বাস্তবতা প্রচন্ড কঠিন। কারন এটা আম্রিকা না, কানাডার ইকোনমি অনেক ছোট। কিছু না কিছু জুটে যাবে এমন চিন্তা আম্রিকায় হয়তো সম্ভব কিন্তু কানাডায় না।
৩) রিফুইজ ক্লেইম করে বা স্টুডেন্ট বা ভিজিট ভিসায় এসে চাকরী জোটানো এক কথায় অসম্ভব। কানাডিয়ান সিটিজেনদেরই চাকরী জোটে না ঠিকভাবে।
৪) বাসা ভাড়া এখন ২/৩ গুন। কানাডিয়ান সিটিজেনরাই পাগল হয়ে যাচ্ছে বাসা ভাড়া নিয়ে। সেখানে নিউ কামারদের জন্য অনেক কঠিন যদি না টাকার বস্তা নিয়ে আসেন।
৫) জিনিস পত্রের দাম এতো এতো বেশী বেড়ে গেছে যে তা কমার কোন লক্ষনই দেখছি না। একটি পরিবার আগে ২/৩ হাজার ডলার দিয়ে চলতে পারতো মাসে, এখন তা ৪/৫ হাজারের নীচে পারছে না।
৭) আপনি রাতদিন পাগলের মতো খেটে রিফুইজ কোটায় এপ্লাই করলেন কিন্তু রিজেক্ট হলে কিন্তু আপনাকে ফিরে যেতে হবে। এবং এর সম্ভবনা বিশাল।
৮) ক্যাশে কাজ করে সরকারী ভাতা ক্লেইম করবেন, এমন কিছু যদি প্লান করে থাকেন তাহলে বলবো আপনি বোকার স্বর্গে বাস করছেন।
৯) স্টুডেন্ট ভিসায় এসে এক সেমিস্টারের ফি দিয়ে বাকি সেমিস্টারের ফি/থাকা/খাওয়া জোগাড় করবেন.... এমন কিছু যদি ভেবে থাকেন তাহলে বলবো কোনভাবেই তা সম্ভব হবে না। ২৪/৭ দিন যদিও কাজ করেন তাও পারবেন না তা জোগাড় করতে। কারন এখানে বিদেশী স্টুডেন্টদের টিউশন ফি প্রায় তিনগুন।
তাহলে কারা আসবেন?
১) পিআর নিয়ে আসতে পারলে সবচেয়ে ভালো। কারন সরকারী অনেক সুবিধা পাওয়া সম্ভব। আর সিটিজেন হবেই তার প্রায় নিশ্চয়তা আছে।
২) আপনার বা আপনার বাবা/মায়ের যদি টাকার গুদাম থাকে তাহলে আসতে পারেন যেকোন ভিসায়। সেমিস্টারের ফি/থাকা/খাওয়া কোন ব্যাপারই না। টাকা থাকলে বাঘের চোখ সবখানেই জোগাড় সম্ভব।
আমি এ লিখায় ভয় দিচ্ছি না, সাবধান করছি। চারপাশে স্টুডেন্ট বা ভিজিট ভিসায় এসে কিছু মানুষের করুণ চিত্র দেখে বাধ্য হচ্ছি লিখাটা লিখতে। এমনো খবরে এসেছে যে স্টুডেন্টরা ব্রিজের নীচে থাকছে, সেল্টারে আশ্রয় নিচ্ছে।
ছোট্ট দুটো ঘটনা শেয়ার করি;
দেশে ভালো জব করতো ব্যাংকে। স্বামী/স্ত্রী/২.৫ বছরের বাচ্চা নিয়ে এসে এখন প্রায় পথে বসার অবস্থা। এক রুমের একটা বেসমেন্ট আরো তিনটা ফ্যামিলির সাথে কম ভাড়ায় থাকে। স্বামী কোন কাজ পায়নি, স্ত্রী অনেক কষ্টে একটা হাউজ ক্লিনিং মানে বুয়ার কাজ জুটিয়েছে। বাচ্চাটার অসুখ কিন্তু ডাক্তার দেখাতে পারছে না। কারন হেল্থ কার্ড নেই, পয়সা দিয়ে ডাক্তার দেখাতে হবে যা সম্ভব নয়। পরিচিত একজনের কাছে ওষুধ চেয়েছে বাচ্চাটার জন্য।
আরেকটা স্টুডেন্ট সেদিন বলছিল, দালাল তাকে বলেছে এক সেমিস্টারের ফি দিয়ে ভর্তি হলেই আর কোন সমস্যা নেই। বাকি সেমিস্টারের ফি/থাকা/খাওয়া এখানে থেকে জোগাড় করা যাবে। এখন সেমিস্টার ড্রপ দিয়ে যে কাজ করছে তা দিয়ে শুধু থাকার খাওয়ার পয়সা জুটেছে, সেমিস্টারের ফি সম্ভব হয়নি। তার কান্নাকাটি দেখে দেশ থেকে বাবা/মা বাড়ি বিক্রি করে টাকা পাঠানোর কথা চিন্তা করছে।
যাহোক, আরো ভয়ংকর সংবাদ দিয়ে লিখাটা শেষ করছি। মাত্র গত সাপ্তাহের ঘটনা;
শ্রীলংকান ভদ্রলোক বেশ দরদী মানুষ। তার দেশের একটা ইর্ন্টান্যাশানাল স্টুডেন্টকে বাসায় আশ্রয় দিয়েছিল। যতটুকু শোনা যাচ্ছে ছেলেটি সেমিস্টার ড্রপ করে। তারপর কি হয়েছিল তাদের মাঝে তা জানা যায়নি কিন্তু এ ছেলেটি পুরো পরিবারকে হত্যা করে। ভদ্রলোক ইনজুর্ড অবস্থায় কোনভাবে বাসা থেকে বের হয়ে আসতে পারলেও তার স্ত্রী ও চার সন্তান সহ পরিবারের আরেক বন্ধু পারেনি।
এ খবরে পুরো কানাডাবাসী অনেকটা শকের মাঝে যাচ্ছে।
সবাই ভালো থাকুন এ রমজানে খারাপ খবরের মাঝেও। তবে কানাডায় আসার আগে বাস্তবতাটা জেনে তারপর পা দিবেন প্লিজ।
সোহানী
মার্চ ২০২৪
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০২৪ ভোর ৬:৪১