somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চায়নাতে ঃবৃদ্ধাশ্রমে একবেলা

০৯ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চায়নাতে আছি অনেক দিন।আমাদের ভার্সিটিতে বিদেশী ছাত্রদের একটা সংগঠন আছে।এর সাথে অনেক চাইনিজরা ও যুক্ত।কিছুদিন আগে সবাই মিলে ঠিক করলাম কোথাও ঘুরতে যাইয়া যাক।

তাই আজকে সবাই মিলে "বৃদ্ধাশ্রমে" গিয়েছিলাম, জীবনে প্রথম বারের মতো।তাও আবার চাইনিজ বৃদ্ধাশ্রম।আমরা বিদেশী ছাত্র ছিলাম ১০ জন আর সাথে ১০-১২ জনের মতো চাইনিজ বন্ধু।চায়নিজরা প্রায় সব কাজই সকাল সকাল করতে অভ্যস্ত তাই ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও আমাদের ও সকাল ৮ টায় ঘুম থেকে উঠতে হয়েছে। সকাল ৮.৩০ এ রওনা দিলাম গন্ত্যব্যের উদ্দেশ্যে, আর প্রায় ১ ঘন্টার মধ্যেই পৌছে গেলাম।জায়গাটি শহর থেকে একটু দূরে।এই দিনটি আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে।বৃদ্ধাশ্রম সম্পর্কে অনেক গল্প শুনেছি কিন্তু অনেক কাছ থেকে বৃদ্ধাশ্রমের এই জীবনটা দেখে অবাক হলাম।

আমাদের বয়সে এরাও হয়ত সারা পৃথিবী বেড়িয়েছে।কিন্তু এই বয়সে এসে নিঃসঙ্গতা তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী।রোগের ভারে আক্রান্ত মানুষগুলো স্বজনদের কাছ থেকে রয়েছে অনেক দূরে।যে সন্তানদের জন্য সারাজীবন কষ্ট করেছে তারা হয়ত সপ্তাহে বা মাসে একবার দেখতে আসে, অনেকে আবার আসেই না। আমাদের ততাকথিত সভ্য সমাজ থেকে অনেক দূরে সরে আসা এই মানুষগুলো হয়ত প্রতিনিয়ত আমাদের ধিক্কার জানাচ্ছে।

আমাদের প্রথম দেখাতে অনেকে অবাক হলেও,বন্ধুসুলভ আচরণের কারণে তারা আমাদের বেশ দ্রুতই আপন করে নিয়েছিলো।আমরা যতক্ষন ছিলাম তাদের মুখে হাসি ফোটানোর সর্বচ্চো চেষ্টা করেছি।কেউ কেউ বে-সুরা গলায় গান গেয়েছে আর অন্যরা তার সাথে সামিল।আমাদের গান গাইতে দেখে একজন বৃদ্ধা ও গেয়ে উঠল "wen wo ai ni......"।তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আবার ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে সাজিয়ে নিয়েছে তাদের আপন রাজ্য।এরা নাকি খাবার সময় ছাড়া রুম থেকে বের হয় না।আমরা নিজেদের বিদেশী ছাত্র বলে পরিচয় দেয়াতে একজন শেষমেশ দরজা খুলে বের হলো, তাও আবার একপলকের জন্য।তবে বাকি সবাই ছিলো বেশ আনন্দমুখর।দোতালা বিল্ডিংটার উপরের তলায় গিয়ে একটু অবাক হলাম।ডাইনিংরুমে বিশাল বড় পিয়ানো দেখে।চাইনিজদের জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম এটা কেউ বাজাতে পারে না।আমি নিজেও পারি না।জীবনে কোনদিন পিয়ানোর কিবোর্ড এ হাত না দিলেও আজকে চেষ্টা করে দেখেছি।বে-সুরা ভাবে বাজিয়েছি, শুধুমাত্র তাদের মুখে একটু হাসি ফোটানোর জন্য।সবচেয়ে ভালো লেগেছে একটা দৃশ্য দেখে, তাদের মধ্যে একজন লোক (বয়স প্রায় ৮৫) চেয়ারে বসে একমনে বই পড়তেছে।তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কেমন আছে।কিন্তু কোন জবাব পেলাম না।একটু পর ম্যানেজার এসে জানালো উনি কানে শুনতে পান না।চোখেও খুব একটা দেখেন না।কিন্তু তার দু-চোখ আটকে আছে বইয়ের পাতায়।এইবয়সে জীবনের সন্ধিক্ষণে এসেও জানার ইচ্ছা অথবা বইয়ের চোখে বাইরের পৃথিবীকে দেখার ইচ্ছা।

নিজের জানা চাইনিজ আর সাথে নেপালী বড় আপু একের পর বৃদ্ধার সাথে কথা বলেই গেছি।আর আপুর canon এর ক্যামরায় স্মৃতি গুলো ফ্রেম বন্দি করেছে বন্ধু " মোকারম"।

এইখানে একটা বিষয় আমাকে বেশ মর্মাহত করেছে।আমাদের সমাজে সাধারন বাস্তবতার মতো এইখানে ও ধনী-গরিব পার্থক্য।যাদের ছেলেমেয়ে ধনী এবং মাসে মাসে বেশ ভালো অংকের টাকা দিতে পারে তারা আছে অন্যদের তুলনায় আলাদা রুমে।তাদের জন্য আলাদা খাতির।তবে আপাত দৃষ্টিতে তাদের আলাদা মনে হলেও এরা আলাদা নয়।সকালে নাস্তার পর সবাই মাঠে এসে হাজির।শীতের সকালে রোদ পোহানো আর পেছনের জীবনে ফেলে আসা গল্প করতে করতে কাটছে সময়।কাটছে একটি একটি দিন।অপেক্ষায় আছে কবে লাশের গাড়িতে করে এই জেলখানা থেকে বের হবে!!!!

দুপুর ১২ টার দিকে চলে আসার সময় অনেককেই দেখলাম হাত দিয়ে চোখ মুছতে।হয়ত আমরা ক্ষণিকের অতিথিরা তাদের কিছু ভালো সময় উপহার দিয়েছি।

বৃদ্ধাশ্রম থেকে বের হতে হতে চোখের সামনে ভেসে উঠল "৭০ বছর বয়সী আমি"!!!!!!!!তবে কি......???না এই প্রশ্নের উত্তর ভবিষ্যতের হাতেই তোলা থাক।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৮
১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×