somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৪ ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস ।

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ ১৪ ফেব্রুয়ারী। এই দিনটি গত কয়েক বছর যাবত খুবই ধুমধামে কাটে বাংলাদেশে। বিশেষ করে শহুরে তরুন তরুণীরা উচ্ছাসে মেতে উঠেন! ফুলের ব্যবসায়ী যেন চাঁদ রাতে বিক্রির ব্যস্ততায় কাটান এই দিন | এই দিবস যিনি সপ্তাহিক যায়যায় দিন পত্রিকার বদৌলতে বাংলাদেশে আমদানি করেছিলেন তিনি এখন নির্বাসিত। তাঁর এই ভালবাসার দিনে ১৩ হাজার মাইল দূরে বৃটেনে অবস্থান করছেন।



তবে, দেশের ইতিহাসে একট কলঙ্কিত দিন এটি। ভালবাসার উচ্ছাসে মেতে থাকা তরুণ তরুণীদের ক’জনই বা জানেন সেই দিনের ঘটনা! ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারীতে একটু ফিরে যেতে চাই। কি ঘটেছিল সেদিন?

১৯৮২ সালের মার্চ মাসে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে অপসারিত করে তৎকালীন সেনা প্রধান এরশাদ ক্ষমতা দখল করেন। শুরু হয় সামরিক স্বৈরতন্ত্র। এই সামরিক স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রথম জেগে উঠেছিলেন ছাত্র সমাজ। ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ডাকা হয়েছিল সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি। এরশাদের প্রণীত শিক্ষানীতির প্রতিবাদ ও গণতন্ত্রের দাবীতে এই কর্মসূচির দিনে ঢাকায় ছাত্রদের উপর গুলি চালিয়েছিল বেপরোয়া পুলিশ।

১৪ ফেব্রুয়ারীর কর্মসূচি উপলক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী সমবেত হয়। পুলিশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ঘেরাও করে রাখে। সামরিক রসকারের ভয় ভীতি উপেক্ষা করে ছাত্র ছাত্রীদের মিছিল ষ্মারকলিপি দিতে সচিবালয়ের দিকে এগিয়ে যায়। এর সাথে একাত্মতা ঘোষনা করে জাহাঙ্গরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা।

মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাইকোর্ট এলাকায় পৌছামাত্রই হিংস্ত্র পুলিশ হায়েনার মত ঝাপিয়ে পড়ে। টিয়ারশ্যাল, জলকামান রাবার বুলেট ও গুলি ছোড়া হয় মিছিলে। লাঠি চার্জ তো আছেই। ছাত্ররা এদিক সেদিন ছোটাছুটি করে আশ্রয়ের সন্ধানে। শিশু একাডেমিতে শিশুদের একটি অনুষ্ঠান চলছিল। সেখানে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ ওই অনুষ্ঠানেও হামলা চালায়।


সেদিন পুলিশের গুলিতে জাফর, জয়নাল, দীপালী সাহা, আইয়ুব, ফারুক, কাঞ্চন সহ অনেককে হত্যা করে। দশ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়, কিন্তু সরকারি প্রেসনোটে শুধু ১ জনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করা হয়। আহত হয়েছে অগুণতি, গ্রেফতারও হয়েছে অসংখ্য। সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে ও ঢাকা শহরে কারফিউ জারি করে।

এই সময় লাশ গুম করা হয়েছে বলে ব্যাপক অভিযোগ ওঠে। বাংলাদেশে লাশ গুম নতুন ঘটনা নয়, পার্থক্য হচ্ছে সামরিক সরকারের চেয়ে বেসামরিক সরকার এই ক্ষেত্রে অনেক পারঙ্গম।


স্বাধীন বাংলাদেশে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে এই দিনটি মাইলফলক হয়ে আছে। মহান ভাষা আন্দোলনের মাসে অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এই দিনটি যোগ করে আরেকটি ইতিহাস। সুতরাং ১৪ ফেব্রুয়ারীকে পশ্চিমাদের নিকট থেকে ধারকরা ভালবাসা দিবস নয়, মানুষের অধিকার আদায়ে সংগ্রামের দিন হিসাবে ক’জন ষ্মরণ করেন!
এই লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস গুলো যারা ষ্মরণ করিয়ে দেওয়ার কথা তারাই বা কি সঠিক দায়িত্ব পালন করছেন!

আসুন আমরা ১৪ ফেব্রুয়ারী নিহত হওয়া সংগ্রামীদের শ্রদ্ধার সাথে ষ্মরণ করি। ইতিহাস থেকে প্রেরণা নিয়ে আমাদের লুট হওয়া অধিকার ফিরিয়ে আনার শপথ নেই।



সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:২২
৭টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×