somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান: কেন মহৎ।

১৭ ই অক্টোবর, ২০০৮ সকাল ৮:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভাবতে ভালো লাগে যে-আমাদের এই পৃথিবীতে এককালে মুন্সিগঞ্জের অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান বেঁচেছিলেন। এককালে মানে, এক হাজার বছর আগে। এক হাজার বছর, কেননা অতীশের জন্ম হয়েছিল ৯৮০ খ্রিস্টাব্দে। মুন্সিগঞ্জের বজ্রযোগীনি গ্রামে। আর মৃত্যু হয়েছিল ১০৫৩ সালে। তিব্বতে।
এসব কথা আমরা আবছা হলেও কমবেশি জানি।
অন্তত আমরা অতীশ নামে বিক্রমপুরের একজন বৌদ্ধ পন্ডিতের কথা জানি।
যাক। কিন্তু, আমরা কি জানি এক অনিবার্য যুদ্ধের মুখোমুখি হয়ে ওই মহৎ বাঙালি হৃদয় কি করেছিল?
আজ সে কথাই একবার মনে করি না কেন।
অতীশ তখন সোমপুর বিহারে।
তো কোথায় ছিল সোমপুর বিহার?
বিহারটি ছিল বর্তমান বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার বদলগাছী থানার পাহাড়পুর গ্রামে। অনেকেই হয়তো পাহাড়পুর গিয়েছেন। না গেলেও অন্তত ক্যালেন্ডারে পাতায় কি অন্যকোথাও মাটির উচুঁ ঢিবির সেই বিখ্যাত ছবিটি দেখেছেন। হ্যাঁ, ওটই সোমপুর বিহার। কিন্তু, বিহার কি? সহজ কথায় বিহার মানে বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়। অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান জ্ঞানী ছিলেন বলেই ওরকম একটা বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ছিলেন।
তো তখন উত্তর ভারতে কার্ণ্য নামে একটা রাজ্য ছিল । রাজ্যটি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ইতিহাসে তো যুদ্ধবিহগ্র লেগেই আছে। যুদ্ধের পিছনে কারণ আর কি। লোভ।
তো কার্ণ্যরাজ্য মগধ আক্রমন করলেন।
মগধ?
তখন বাংলায় ছিল পালদের শাসন। তারা শুধু বাংলা নয়-উড়িষ্যা এবং মগধ (বর্তমান বিহার) দখলে রেখেছিল। আমরা বলি না, বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা। সেরকম।
সেই সময়টায় পাল রাজা ছিলেন নয় পাল। বাঙালি বরাবরই সাহসী জাতি। বাংলা বরাবরই পশ্চিমের আগ্রাসন তুমুল রুখে দিয়েছিল। কাজেই পশ্চিমা হানাদার কার্ণ্য আক্রমনের বিরুদ্ধে প্রবলভাবে রুখে দাঁড়াল পাল সৈন্যরা।
ওদিকে কার্ণ্যসৈন্যরা বাংলার যত্রতত্র আক্রমন করতে লাগল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিল খুনিরা। এমন কী ...এমন কী বৌদ্ধ মঠ আক্রমন করে ধ্বংস করল। নিরীহ বৌদ্ধদের হত্যা করল। কার্ণ্যরা হয় ছিল শৈব কি বিষ্ণুর উপাসক। তাদের তো শান্তিবাদী বৌদ্ধদের ঘৃনা করারই কথা। কিছুকাল আগে দক্ষিণ ভারতের চোল বংশের শৈব রাজা রাজেন্দ্র চোল বাংলা তছনছ করেছিল! ওই খুনি শৈবরাজ সুদূর সুবর্ণদ্বীপের শ্রী বিজয়া বৌদ্ধরাজ্যও ধ্বংস করেছিল।
যাক। কার্ণ্য আক্রমনের কথা অতীশের কানে পৌঁছেছিল ঠিকই। তিনি অস্থির বোধ করতেন। বাঙালি তো। সবাইকে নিয়ে সুখেশান্তিতে বেঁচে থাকতে চান। তিনি বড় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিলেন অনুমান করি। শান্তির জন্য ঘন ঘন প্রার্থনা করতেন হয়তো। জগতের সকল প্রাণি সুখি হোক। নির্বান লাভ করুক।
যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত নয়পাল জয়ী হন।
আর, পরাজিত কার্ণ্যসৈন্যরা সব এদিক-ওদিক পালাতে লাগল।
শোনা যায়, অতীশ কয়েকজন কার্ণ্য সৈন্যকে পাল সৈন্যদের কাছে অর্পন না করে নিরাপদে কার্ণ্যরাজ্যে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।
ওই সিদ্ধান্তটি সহজ ছিল না। কারণ কার্ণ্য সৈন্যরা ছিল খুনি। তারা বৌদ্ধ ভিক্ষুদেরও হত্যা করেছিল।
ধরুন, ১৯৭১। ডিসেম্বর মাস। যুদ্ধের সময়ে আপনি যে গ্রামে ছিলেন সে গ্রামে ক’জন নিরস্ত্র পাকিস্থানী সৈন্য পালিয়ে আছে। ধরা যাক-সাহসী মুক্তিযোদ্ধারা ঘিরে ফেলেছে গ্রাম। আপনি তখন কি করবেন?
যুদ্ধের পরে দুই রাজার মধ্যে সন্ধি স্থাপনেও অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছিলেন অতীশ।
অতীশ আমাদের কাছে বিক্রমপুরের একজন বৌদ্ধ পন্ডিত মাত্র। আসলে অতীশ আরও অনেক অনেক বড়। অতীশকে আমাদের আরও বুঝতে হবে। তাঁর অপার উদারতার মানে খুঁজতে হবে।

তথ্যসূত্র:

(ক) বাংলাপিডিয়া।
(খ) একরাম আলী রচিত অতীশ দীপঙ্কর।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:১৫
১১টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×