somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রিকশা: সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

২১ শে জুলাই, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাংলাদেশের মানুষকে রিকশা সর্ম্পকে কিছু বলা আর এসকিমোদের বরফ চেনানো একই কথা। অথচ, পূর্ব বাংলায় রিকশা কোথা থেকে এল-কত সাল থেকে এতদ্বঞ্চলে রিকশা চলতে শুরু করল, বা ১৯৪১ সালে ঢাকায় কতটি রিকশা ছিল- এসব প্রশ্নের উত্তরে ‘ইয়ে’ ‘ইয়ে’ করবেন অনেকেই। সে কারণেই রিকশার কাহিনীমূলক এ পোষ্ট ...


পালকি থেকে রিকশা

আগে ছিল কাহার-টানা পালকি; তারপর রিকশা। রিকশার উদ্ভব জাপানে । ১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দের দিকে। সেই জাপান দেশেও আগে ছিল মানুষ-টানা পালকি। তারপর রিকশা। ১৮৭০ সালের পর রিকশা সে দেশে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কারণ একটাই। পালকির চেয়ে রিকশা দ্রুত দৌড়ায়। আর ঘোড়ার চেয়ে মানবশ্রম ছিল সস্তা। ঘোড়ারগাড়ি বড়লোকের বাহন।

নাম

মানবশক্তির শকট বা man-power carriage এর জাপানি হল nj jin-riki-sha.
কাজেই-


কে প্রথম বানাল ত্রিচক্রযান?


ঠিক কে প্রথম রিকশা বানাল আজও জানা যায়নি। মার্কিনিরা এই দাবী করে যে অ্যালবার্ট টোলম্যান নামে এক মার্কিন কামার নাকি মিশনারীদের জন্য ১৮৪৮ সালে প্রথম রিকশা তৈরি করে। কোথায়? ম্যাসাচুসেটস-এ। জায়গাটা আমেরিকার বোস্টনে।
অন্যরা বলে জোনাথন স্কোবি নামে একজন মার্কিন মিশনারী ১৮৬৯ খ্রিস্টাবের দিকে রিকশার উদ্ ভাবন করেন। জাপানে । স্কোবি থাকতেন জাপানের ইয়াকোহামায় । স্কোবির স্ত্রী ছিলেন চলৎশক্তিহীন, মানে ইনভ্যালিড। ইয়াকোহামায় রাস্তায় স্ত্রীর চলাচলের সুবিদাথেই নাকি স্কোবি রিকশা বানিয়ে ফেলেন! ...অন্যরা আবার বলে যে ইজুমি ইয়োসুকি রিকশার আবিস্কারক । সালটা ১৮৬৯। ইজুমি ইয়োসুকি নাকি রেস্তোঁরা মালিক ছিলেন । আবার এও শোনা যায় যে ১৮৮৮ সালে একজন মার্কিন বাপ্তিস্ত মিনিষ্টার রিকশার উদ্ ভাবন করেন।
বোঝা গেল ত্রিচক্রযান তৈরির ক্রেডিট সবাই নিতে চায়।

জাপান

জাপানিরা অবশ্য তিনজন ব্যাক্তিকে রিকশা আবিস্কারের কৃতিত্ব দেয়।
এরা হলেন- ইজুমি ইয়োসুকি, সুজুকি টোকুজিরো এবং তাকায়ামা কোসুকি। বলা হয় যে এরা সেই ১৮৬৮ সালেই রিকশা আবিস্কার করেছেন। এর কিছুকাল আগে জাপানের টোকিয়ো শহরের রাস্তায় অশ্ব শকট মানে ঘোড়াগাড়ি চলতে শুরু করে। ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দে টোকিও সরকার এই তিনজনকে রিকশা তৈরি ও বিক্রির অনুমতি দেয়। রিকশা চালানোর লাইসেন্স হিসেবে এই তিনজনের একজনের সীল লাগত অনুমতিপত্রে।



১৮৭২ খিষ্টাব্দে টোকিয়ো শহরে সর্বমোট রিকশার সংখ্যা ছিল ৪০,০০০ । তখন থেকেই এটি জাপানি জনগনের গমনাগমনের প্রধান বাহন হয়ে ওঠে।




এরপর আরম্ভ হয় রিকশার বৈদেশিক যাত্রা।
১৮৮০ সালের দিকে রিকশা পৌঁছয় ইন্ডিয়া । প্রথমে সিমলায়; এরপর কুড়ি বছর পর কলকাতায়। অর্থাৎ, ১৯০০ সালের দিকে রিকশা পৌঁছয় কলকাতায় । কলকাতায় সে সময় প্রচুর সংখ্যক চিনে বাস করত চায়নাটাউনে। চিনেরই প্রধানত রিকশা ব্যবহার করত। তবে মালামাল টানার জন্য যাত্রী বাওয়ার জন্য না ।



কোলকাতার রিকশা

এর ১৪ বছর পর তারা কলকাতার পৌরসভায় রিকশায় প্যাসেঞ্জার নেওয়ার জন্য অনুমতি চাইল। অনুমতি মিলল। কেননা, শীঘ্রই ভূমি থেকে উৎখাত হয়ে শহরে আসা কৃষকের প্রথম পেশা হয়ে উঠছিল রিকশা বাওয়া।

পূর্ব বাংলায়

আরও দশ পনেরো বছর কাটল। উনিশ শ তিরিশ ও চল্লিশের দশকে ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে রিকশা হয়ে ওঠে জনপ্রিয়। ১৯১৯। বার্মা থেকে রিকশা প্রথম ঢোকে পূর্ব বাংলায়। চট্টগ্রামে। মজার কথা হল- ঢাকায় কিন্তু রিকশা চট্টগ্রাম থেকে আসেনি। এসেছে কলকাতা থেকে। নারায়নগঞ্জের ও ময়মনসিংহের নেত্রকোনার ইউরোপীয় পাট ব্যবসায়ীরা নিজস্ব ব্যবহারের জন্য কলকাতা থেকে সাইকেল রিকশা আনে। ঢাকায় চলত ঘোড়াগাড়ি, পালকি আর ধোলাই (ও অন্যান্য) খালের নৌকা। কাজেই নতুন ত্রিচক্রযানটি ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি করেছিল।
প্রথম প্রথম ঢাকাবাসীরা সাইকেল রিকশা চাপতে চায়নি।
যাক। ১৯৪১ সালে ঢাকায় কতটি রিকশা ছিলো বলেন তো?
৩৭ টি।
আর ১৯৪৭ সালে ১৮১টি।
১৮৪৭ সালের আগে ঢাকা ছিল জেলাশহর। ১৯৫১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী জনসংখ্যা ছিল মাত্র ৬২,৪৬৯ জন!!! ১৯৯৮ সালে ৮০ লক্ষ। এবং রেজি রিকশা ১১২,৫৭২ টি!
আসলে তো আরও বেশি।
এই হল রিকশাকাহিনী।



ভবিষ্যতের রিকশা?

আধুনিক রিকশা নিয়ে চমৎকার একটি পোষ্ট

Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০১২ ভোর ৬:৪৫
২৮টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×