somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উত্তর আমেরিকার নাভাজো ইন্ডিয়ান: অতি সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত

০২ রা আগস্ট, ২০০৯ দুপুর ২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এই হল হোগান । উত্তর আমেরিকার নাভাজো ইন্ডিয়ানদের বাড়ি । আকারে অস্টকোণ; কাঠ ও কাদায় তৈরি। দরজা সর্বদাই পুবমুখো। কেন? ভোরবেলায় সূর্যর আলোটা ঘরে এসে পড়বে বলে।



উত্তর আমেরিকার নাভাজো ইন্ডিয়ান


নাভাজো ইন্ডিয়ানরা উত্তর আমেরিকার অন্যতম বৃহৎ আদিবাসী গোত্র। তারা নিজেদের বলে দিনেহ্ । ওদের ভাষায়-দিনেহ্ মানে, জনগন। নাভাজো ইন্ডিয়ানরা আথাপাসকান ভাষাগোষ্ঠীর অর্ন্তভূক্ত ।



নাভাজো ভাষায় ১ ২ ৩ ৪ ...



মানচিত্র। নাভাজো টেরটরি। নাভাজো ইন্ডিয়ানরা বাস করে উত্তরপূর্ব অ্যারিজোনায়; নিউ মেক্সিকোর উত্তরপশ্চিমে। উটাহ্ প্রদেশের পুব-দক্ষিণে এবং কলোরাডোর দক্ষিণ পশ্চিমে।



নাভাজো টেরটরি।

নাভাজোদের পূর্বপুরুষ এসেছিল কানাডার পশ্চিমাঞ্চল থেকে। সময়কাল? ১৩ ও ১৬ শতকের মধ্যবর্তী কোনও এক সময়ে। সে সময়টায় ওরা ছিল যাযাবর শিকারী ও খাদ্য সংগ্রহকারী। উত্তর আমেরিকার পুয়েবলো ইন্ডিয়ানরা ততদিনে কৃষিকাজ শিখে নিয়েছিল। গ্রামে বাস করত তারা, মানে, পুয়েবলো ইন্ডিয়ানরা । যাযাবর নেভাজোরা চড়াও হত পুয়েবলো ইন্ডিয়ান গ্রামে ।




এরপর সপ্তদশ শতকে স্প্যানিশ কলোনিয়াল শক্তির মুখোমুখি হয় নেভাজোরা। তারপর মেক্সিকানদের। স্প্যানিশদের থেকে ওরা পেল ঘোড়া ভেড়া আর ছাগল; যা ওদের জীবনের ধারা বদলে দিল। পুয়েবলো ইন্ডিয়ানরা কাজ থেকে শিখল বুনন ও মৃৎ শিল্প। মেক্সিকানদের কাছ থেকে শিখল রুপোর কাজ ।



রুপার কাজ



কাপড়ের নকশা

১৮৪৬। নাভাজোরা মার্কিন সরকারের মুখোমুখি হয়। বিরোধ এড়াতে চুক্তি করে। লাভ হয়নি। বিরোধ বাড়তেই থাকে।



নাভাজো যোদ্ধা

১৮৪৯। দুপক্ষের সংঘাত শুরু হয়। ১৮৬৩ অবধি মার্কিন সৈন্যদের ওপর চলে বিক্ষিপ্ত হামলা চালায় নাভাজোরা। ঐ বছরই মার্কিন সৈন্যরা নাভাজোদের ওপর চূড়ান্ত হামলা করে। সৈন্যরা নাভাজোদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করে, খেত-খামার বিনষ্ট করে ও পশুসম্পদ জব্দ করে।



১৮৬৩ সালের মার্কিন বাহিনী

১২,০০০ নাভাজো আত্মসমর্পন করে। এদের পায়ে হাঁটিয়ে ফোর্ট সামারের রিজারভেশনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় মার্কিন কর্তৃপক্ষ। ফোর্ট সামারের রিজারভেশন জায়গাটা মেক্সিকোর পূর্বাঞ্চলে। বললাম পায়ে হেঁটে। নাভাজো-ইতিহাসে এই বলপূর্বক উচ্ছেদকে বলা হয়: “লং ওয়াক।”



দীর্ঘযাত্রায় নাভাজো নারী (শিল্পীর চোখে)

যা হোক। ফোর্ট সামারের রিজারভেশন এলাকায় নাভাজোরা ভয়াবহ সঙ্কটের মুখে পড়ে। অসুবিসুখ ছাড়াও নাজাভোদের শষ্য নষ্ট হয়ে যায়। তা ছাড়া মার্কিন সৈন্যরা মেক্সিকোর পূর্বাঞ্চলে ফোর্ট সামারের রিজারভেশনে অ্যাপাচি ইন্ডিয়ানদেরও বন্দি করে রেখেছিল। অ্যাপাচি ইন্ডিয়ানদের সঙ্গে নেভাজোদের পূর্ববৈরিতা ছিল। ওদের সঙ্গে অনিবার্য সংর্ঘষ বাধল।

১৮৬৮। মার্কিন সরকার ও নেভাজো চিফদের মধ্যে নতুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হল। চুক্তি মোকাবেক নাভাজোদের ছেড়ে দেয় মার্কিন কর্তৃপক্ষ। নাভাজোরা ফিরে আসে নাভাজো টেরিটরিতে। শুধু তাই নয় ওদের বেচেঁবর্তে থাকার জন্য গরু-ভেড়াও দেওয়া হয়। নাভাজোরাও বিরোধ এড়িয়ে শান্তিতে থাকতে সম্মত হয়।

আমি যখনকার কথা বলছি। সে সময়। নাভাজো গোত্র ৫০টি ক্ল্যানে ভিভক্ত ছিল। মায়ের দিক থেকে পরিচয় নির্দিস্ট হত। অর্থাৎ, নাভাজোরা মাতৃতান্ত্রিক। আর্ন্তগোত্রীয় বিবাহ হত ওদের।




একালের শিল্পীর আঁকা নাভাজো হোগান

আগেই বলেছি নাভাজো বাড়ি কে বলা হয়: ‘হোগান’। হোগান তৈরি করতে লাগে মাটির ইট, মাটি, গাছের ছাল ও পাথর। হোগানের আকার টুপির মতন। ওপরে, মানে, ছাদের দিকটায় ধোঁওয়া বেরুবার ফুটো থাকে।



হোগান এর ভিতরে

যাযাবর জীবনে নাভাজোরা যা খেত খেত। স্থায়ী জীবনে ওদের প্রধান খাদ্য ভেড়া ও খাসীর মাংস। পরে ভুট্টা বীন লাউ ও তরমুজ চাষ করে।

নাভাজোরা প্রকৃতিসংলগ্ন। স্মৃতিতে রয়েছে বিস্তর উপকথা। ওদের দেবতা মানুষের জীবনে হস্তক্ষেপ করেন। সেজন্যই নেভাজোরাও আহবান করেন দেবতাকে। নৈবদ্য দেয়; দেবতাকে খুশি করতে মুখোশ পরে শরীরে রং করে নাচে। ভূতপ্রেতেও বিশ্বাস আছে ওদের। পূর্বপুরুষের আত্মাই নাকি ভূতপ্রেত-যা কখনও কখনও অশুভ।



নাভাজো সমাজে শামানও আছে

নাভাজো সমাজের অন্যতম এক কৃত্য: বালির ওপর রং করা। কারও অসুখবিসুখ হলে শামান দেখিয়ে দেয় কী ভাবে বালির ওপর রং করতে হয়। ভোরে মেঝের ওপর বালি ফেলে রং করে কেউ একজন । নাভাজোদের পাঁচটি পবিত্র রং আছে। সাদা কালো নীল লাল এবং হলুদ।



তা বালির ওপর কি আঁকা হয়?
উপকথার প্রাণি কিংবা প্রাকৃতিক কোনও ঘটনা।
তারপর?
তারপর সূর্য ওঠার আগেই সব মুছে ফেলবে।
কেন?
সূর্য ওঠার পর রংবালি রাখার নিয়ম নেই যে!
ও।

২০০০ সালের এক হিসেব অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২৬৯,০০০ জন নাভাজো আদিবাসী রয়েছে । আরও ২৯,০০০জন নাকি নাভাজোসমাজের অংশ। সব মিলিয়ে নাভাজোরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২য় বৃহত্তম আদিবাসী গোষ্ঠী।



নাজাভোরা এখনও অ্যারিজোনা ও মেক্সিকোয় বাস করে। ভীষন টান নাভাজো ঐতিহ্যের প্রতি। আধুনিক বাড়িঘর ওদের কাছে এখন সুলভ হলে আজও ওরা হোগানই তৈরি করে!

নাভাজোদের পেশা বদলে গেছে একুশ শতকে পৌঁছে। ওরা এখন টুরিষ্ট গাইড। তা ছাড়া মাটির তৈষজ ও ঝুরিও তৈরি করে। নাভাজো রুপার অলঙ্কার বিশ্ববিখ্যাত।




উলের তৈরি শালও বিশ্ববিখ্যাত...



গত শতকের মাঝামাঝি নেভাজো টেরিটরিতে মূল্যবান খনিজ (যেমন: ইউরেনিয়াম) পাওয়া যাওয়ায় ওদের জীবনের মান বেড়ে যায়। অবশ্য জন্মভিটে উচ্ছেদও হতে হয়েছে। মানুষের এই এক নিয়তি! তবে আদিবাসীদের মধ্যে ওদেরই আয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সবচে বেশি।

















সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০০৯ রাত ৮:৫৪
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×