somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অভিমান: আমার লেখা ব্ল্যাক-এর সেই অভিমানী গান ...

২০ শে আগস্ট, ২০০৯ সকাল ১০:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জন

প্রায়শ আমি ভাবি। ‘অভিমান’ শব্দটি কি অন্য ভাষায় রয়েছে। হিন্দি ভাষায় রয়েছে জানি। ছেলেবেলায় ‘অভিমান’ নামে একটি হিন্দি সিনেমা দেখেছি। ভাষাতাত্ত্বিগন বলেন যে- বাংলা আর হিন্দি সম্পর্কের দিক থেকে মামাতো-খালাতো ভাই। (নাকি বোন?) যা হোক। আমার কেন যেন মনে হয় ‘অভিমান’ শব্দটি খুব বেশি ভাষায় নেই। কেননা, এ এক গহীন আবেগীয় বিষয়। আর, জগতে আবেগ-অভিমানে কি মূল্য? সেসব কথা মনে রেখেই একদিন আমি লিখলাম-

স্বগত লগ্নে জমাট স্তব্দতা
(তা হলে) ঘুম পেলে ক্ষতি কি?
তোমার চোখে গভীর বিশ্বাস
হারালে ক্ষতি কি?
কেবলি অভিমানের রাত
তবে কেন প্রতীক্ষা?
ক্ষয়া চোখে ভুলের বিন্যাস
নিভু স্বপ্নের বাতিটা।

আমাকে তুমি জাগিয়ে একা কেন ঘুমালে?
আমাকে এড়িয়ে তোমার আকাশে কবে ফুল ঝরেছে বল।

তোমার চারুগৃহ কেন যে খুলে যায়?
দেওয়ালে মাথা কোটে ধূসর আঁধার
দুচোখ অন্ধের উপড়ে ফেল তুমি
মাতাল ভাঁড় হোক সঙ্গী তার।

আমাকে তুমি জাগিয়ে একা কেন ঘুমালে
আমাকে এড়িয়ে তোমার আকাশে কবে ফুল ঝরেছে।


জন

সময়টা সেই ২০০০ সালের মাঝামাঝি। অনেক রাতে জন এল । আজও আমার মনে আছে- রাতটা ছিল চানরাত (ঈদের আগের রাত) ছিল। প্রায় ১টার মতন বাজে। ঢাকা শহরে চানরাতে রাত ১টা কিছুই না। জন নতুন কম্পোজিশনটা বাজিয়ে শোনাল গিটারে। বরাবরই মতো আমি মুগ্ধ। এবার অবশ্য মেলোডির পরিমান দেখেখানিকটা বিস্মিতও। এখন কম্পোজিশনটা ওপর আমাকে লিরিক লিখতে হবে। ভাবলাম কী লিখব? কম্পোজিশনটা ধাঁচটা বুঝতে হয় আমাকেই ...মনে হল অভিমানী ... তখনই মনে একটা প্রশ্ন উঁকি দিল। ‘অভিমান’ শব্দটি কি অন্য ভাষায় রয়েছে। হিন্দি ভাষায় রয়েছে জানি। ছেলেবেলায় ‘অভিমান’ নামে একটি হিন্দি সিনেমা দেখেছি। ভাষাতাত্ত্বিগন বলেন যে- বাংলা আর হিন্দি সম্পর্কের দিক থেকে মামাতো-খালাতো ভাই। (নাকি বোন?) যা হোক। আমার কেন যেন মনে হয় ‘অভিমান’ শব্দটি খুব বেশি ভাষায় নেই। কেননা, এ এক গহীন আবেগীয় বিষয়। আর, জগতে আবেগ-অভিমানে কি মূল্য? সেসব কথা মনে রেখেই নিউজ প্রিন্টের খাতায় বল পয়েন্টে লিখলাম -

স্বগত লগ্নে জমাট স্তব্দতা
(তা হলে) ঘুম পেলে ক্ষতি কি? (সুর করার সময় এই তা হলে বাদ পড়েছিল )
তোমার চোখে গভীর বিশ্বাস
হারালে ক্ষতি কি?
কেবলি অভিমানের রাত
তবে কেন প্রতীক্ষা?
ক্ষয়া চোখে ভুলের বিন্যাস
নিভু স্বপ্নের বাতিটা। (এই লাইনটা জন-এর)

জন কথাগুলি সুরে বসাতে লাগল । আমি সিগারেট ধরিয়ে সোফায় হেলান দিয়েছি। ঘরে টিউব লাইট জ্বলে ছিল। একটু আগে যা লিখলাম -তা সুরে সুরে শুনছি। এসব মুহূর্তে আমার নিজেকে বিশাল কিছু মনে হয়। মনে হয় যেন আমি প্রশান্ত মহাসাগরের মালিক।
আমি বাথরুমে যাব। উঠে দাঁড়ালাম। জন মুখ তুলে বলল-কোরাস তো লিখলেন না?
ও, কোরাস ...? বলে আমি ঝুঁকে এই কথাগুলো লিখলাম-

আমাকে তুমি জাগিয়ে একা কেন ঘুমালে?
আমাকে এড়িয়ে তোমার আকাশে কবে ফুল ঝরেছে বল।

পরে এ দুটো লাইন ব্যাপক ‘হিট’ হয়েছিল। এমন কী মেয়েরাও আমার তৎকালীন মটোরোলায় (এল সিক্স) ফোন করত। আমি বলতাম: এই মেয়ে, আমি তোমার আঙ্কেলের বয়েসি না?।
ও প্রান্তে কী হাসি। মেয়েরা হাসতে খুব পছন্দ করে।


ব্ল্যাক।

বাথরুম থেকে ফিরে এলাম। এবার অভিমানের শেষ প্যারা লিখতে হবে। কোরাস তো লিখে ছিয়েছি। শেষ প্যারায় আটকে গিয়েছিলাম। মাঝেমাঝে এমন হয়। আমি তো পেশাদাশ গান লিখিয়ে তো নই- তাই। কি করি? কি করি? জন অপেক্ষা করছে। সেসব দিনে আমি ছিলাম বেকার আর বেকারার-খুব কবিতা লিখতাম। ডায়েরিতে মন্দাক্রান্তা ছন্দে একটা কবিতা লিখেছিলাম।

তোমার চারুগৃহ কেন যে খুলে যায় দেয়ালে মাথা কোটে অন্ধকার
দুচোখ অন্ধের উপড়ে তুলে ফেল মাতাল ভাঁড় হোক সঙ্গী তার।

অগত্যা ডায়েরি বার করে সে দুটো লাইনই দিলাম। জন সুরের কারণে ঈষৎ বদলে নিল-

তোমার চারুগৃহ কেন যে খুলে যায়?
দেওয়ালে মাথা কোটে ধূসর আঁধার
দুচোখ অন্ধের উপড়ে ফেল তুমি
মাতাল ভাঁড় হোক সঙ্গী তার।

অভিমান গানটির জন্য আমি আমার একটি প্রিয় কবিতা জলাঞ্জলি দিয়েছি। তাতে আমার বিন্দুমাত্র দুঃখ নেই। এই কথাটা বলার কারণ আছে। অভিমান গানটা যখন আমি আর জন করছি ... তখনও আমারা কেউই জানতাম না যে- ব্ল্যাক নামে যে ব্যান্ডটি গড়ে উঠছে তার ওপর একদিন বি বি এ-র ছাত্ররা থিসিস করবে। থিসিসটি পাঠ করার জন্য ক্লিক করুন।

http://www.mediafire.com/?inymxmmznnz




আমি লিরিক লিখে দিলে জন আর জাহান কম্পোজিশনটা নিয়ে বসে। ডানে জাহান। অভিমান গানে জাহান এর বাজানো লিডটা আমি এদেশের মিউজিক্যাল এরিনায় মাইলস্টোন বিবেচনা করি। আমি সব সময়ই বলতাম এলোমেলো লিড বাজালেই হবে না -লিড-এর যেন অর্থ থাকে-কম্পোজিশনের সঙ্গে যেন সঙ্গতি থাকে। এ প্রসঙ্গে তাহাসানের কথাও উঠে আসে। অভিমান-শব্দটিকে কি ভাবে মিউজিক্যালি প্রকাশ করা যায়? তাহাসান কিবোর্ডে তাই দেখিয়েছে। শুরুর সুরটা তো ওরই বাজানো।




অডিও

Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ১০:৩৭
৯৮টি মন্তব্য ৯০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

আমরা সবাই জানি, ইরানের সাথে ইজরায়েলের সম্পর্ক সাপে নেউলে বললেও কম বলা হবে। ইরান ইজরায়েলকে দুচোখে দেখতে পারেনা, এবং ওর ক্ষমতা থাকলে সে আজই এর অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়।
ইজরায়েল ভাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

নগ্ন রাজা কর্তৃক LGBTQ নামক লজ্জা নিবারনকারী গাছের পাতা আবিষ্কার

লিখেছেন মুহাম্মদ মামুনূর রশীদ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪০

LGBTQ কমিউনিটি নিয়ে বা এর নরমালাইজেশনের বিরুদ্ধে শোরগোল যারা তুলছেন, তারা যে হিপোক্রেট নন, তার কি নিশ্চয়তা? কয়েক দশক ধরে গোটা সমাজটাই তো অধঃপতনে। পরিস্থিতি এখন এরকম যে "সর্বাঙ্গে ব্যথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×