somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যেনোবিয়া: প্রাচীন সিরিয়ার রানী

৩০ শে অক্টোবর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যেনোবিয়া: খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দীর সিরিয়ার রানী। সুন্দরী বিদূষী ও সুশিক্ষিত যেনোবিয়া গ্রিক ও প্রাচীন মিশরীয় ভাষাসহ অনেক কটি ভাষা জানতেন । সিরিয়ার প্রথম পূর্নাঙ্গ ইতিহাস তিনিই লিখেছিলেন; ছিলেন সমরকুশলী; রণক্ষেত্রে সাধারণ সৈন্যদের পাশাপাশি যুদ্ধ করেছেন। অসম সাহসীকতায় রুখে দিয়েছিলেন আগ্রাসী রোমের সমরাভিযান ...

রোমান সম্রাট আউরেলিয়ান (২১২/২৭৫) এর ছিল মহৎ এক হৃদয়। রোমের এক পরম শক্রকে হত্যা না করে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন । তিবর নদীর তীরে সেই শক্রর জন্য মনোরম ভিলা বরাদ্দ করে দিয়েছিলেন। সাধারণ সৈন্য থেকে উঠে এসে রোমের সম্রাট হয়েছিলেন আউরেলিয়ান। সৈন্যদের মাঝে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। রোমান সম্রাট ক্লাউদিয়াস ২য় এর মৃত্যুর পর রোমান সৈন্যরা আউরেলিয়ান কে সম্রাট নির্বাচিত করেন।



রোমান সম্রাট আউরেলিয়ান

যোগ্য শাসক ছিলেন আউরেলিয়ান। বর্বর জার্মান গোত্র আলামানিরা রোমান সাম্রাজ্যে উত্তর সীমান্তে বারবার হানা দিচ্ছিল। আউরেলিয়ান তাদের দমন করে দানিয়ুব নদীর উত্তর সীমান্ত রোমান সাম্রাজ্যে অর্ন্তভূক্ত করেন। যা হোক। বলছিলাম আউরেলিয়ান রোমের এক পরম শক্রকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন হত্যা না করে।
বড় বিচিত্র সে কাহিনী।
আমরা এখন সে কাহিনীতে প্রবেশ করছি।
পালমিরা নগরিটি ছিল সিরিয়ায়। ধূ ধূ মরুভূমির মাঝখানে মরুদ্যান। সেই মরুদ্যানজুড়ে পামগাছের অরণ্য। সেখানেই গড়ে উঠেছিল প্রাচীন এক বসতি। জায়গাটি পামগাছঅধ্যুষিত বলেই জায়গাটির নাম পালমিরা। জায়গাটির প্রকৃত নাম অবশ্য তাদমর।



পালমিরা

রোম থেকে পারস্যে যাওয়ার পথে ছিল বিধায় খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকেই ব্যবসাবানিজ্যের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল পালমিরা। দামাশকাস, মিশর ও ফিনিসিয়ার সঙ্গে ব্যবসাবানিজ্য করে পালমিরায় এক ধনী মধ্যবিত্তশ্রেণি গড়ে উঠেছিল।



তৎকালীন বিশ্ব ও পালমিরা

সুপ্রাচীন কাল থেকেই পালমিরায় ছিল মিশ্র সংস্কৃতির শান্তিপূর্ন সহবস্থান। নানা জাতির বাস ছিল পালমিরায়। গ্রিক রোমান বেদূঈন মেসোপটেমিয় ইরানি।
১১৪ খ্রিস্টাব্দে পালমিরা রোমান শাসনের অর্ন্তভূক্ত হলেও পারমিরার কমবেশি স্বাধীনতা ছিল। তার কারণ আছে। পালমিরার সৈন্যরা ছিল দক্ষ তীরন্দাজ । রোমানদের সঙ্গে ইরানি পার্থিয়দের যুদ্ধ চলছিল। রোমান সম্রাট হাদরিয়ান পার্থিয়দের বিরুদ্ধে পালমিরার দক্ষ তীরন্দাজ নিয়োগ করেছিলেন ।



পালমিরা

চারটে শক্তিশালী গোত্র ছিল পালমিরায় । তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল আমলাকি গোত্র । আমলাকি গোত্রের শেখ ছিলেন আমর ইবনে জারিব । বহু আগে থেকেই শেখ পরিবারের রোমের নাগরিকত্ব ছিল। দূভার্গ্যজনকভাবে আমর ইবনে জারিব প্রতিপক্ষ গোত্রের আক্রমনে নিহত হলে তার মেয়ে যেনোবিয়া আমলাকি গোত্রের প্রধান নির্বাচিত হন।



সিরিয়ায় পালমিরার অবস্থান

রোমের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠার কারণেই সম্ভবত সেকালে পালমিরায় আরব নামের সঙ্গে রোমান নাম গ্রহন করারও রীতি ছিল। যেমন যেনোবিয়ার রোমান নাম ছিল জুলিয়া আওরেলিয়া যেনোবিয়া কিন্তু আরবি বা সেমেটিক নাম হল আল যাববা। এর মানে, ‘যার চুল দীর্ঘ ও সুন্দর।’ যেনোবিয়া অবশ্য স্বাক্ষর করতেন ‘বাথ যাববাই’ নামে যার অর্থ আল যাববা-এর মেয়ে। যেনোবিয়ার মায়ের নামও ছিল আল যাববা। যেনোবিয়া নামটি গ্রিক ।
তৃতীয় শতকের প্রারম্ভে পালমিরা রোমান উপনিবেশে পরিনত হয়। এবং সেই উপনিবেশ শাসন করার জন্য রোমান সিনেটে পালমিরাবাসী থেকেই সিনেট নির্বাচিত করার আইন পাস করা হয়। ২৫৮ খ্রিস্টাব্দে পালমিরার সিনেটর নিযুক্ত হন সেপটিমিয়াস ওডাইনাত। সেপটিমিয়াস ওডাইনাত ছিলেন আমলাকি গোত্রের একজন সদস্য। ২৫৮ খ্রিস্টাব্দেই যেনোবিয়াকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে গ্রহন করেন ওডাইনাত । বিয়ের পর যেনোবিয়া নিজের নাম রাখেন সেপতিমিয়া যেনোবিয়া। হাইরান নামে সেপটিমিয়াস ওডাইনাত প্রথম পক্ষের এক ছেলে ছিল । পরে যেনোবিয়ারও একটি ছেলে হয়। ছেলের নাম রাখা হয় ভাবাললাথুস।
২২৭ খ্রিস্টাব্দে পার্থিয় সাম্রাজ্যের পতনের পর পারস্যে শক্তিশালী সাসানিদ রাজবংশের উত্থান হয়। তারপর থেকেই ঐ অঞ্চলের রাজনৈতিক ভারসাম্যটি বদলে যেতে থাকে। সেপটিমিয়াস ওডাইনাত পারস্যের দিকে না ঝুঁকে বরং রোমের পক্ষেই ছিলেন। ২৬০ খ্রিস্টাব্দে রোমান সম্রাট ভালেরিয়ান পারস্য আক্রমন করেন। পারস্য সম্রাট প্রথম সাপুর তাকে বন্দি করে হত্যা করেন। সেপটিমিয়াস ওডাইনাত প্রতিশোধ গ্রহনের জন্য পারস্যের উদ্দেশে রওনা হন। সেসময় স্বামীর পাশে যেনোবিয়াও ছিলেন । এভাবেই যেনোবিয়ার রাজনৈতিক-সামরিক উত্থান শুরু হয়। প্রথমে আমলাকি গোত্রের প্রধান হিসেবে । দ্বিতীয়বার পারস্য অভিযানের সময়। যেনোবিয়া সে যুগের নারীদের তুলনায় একেবারেই যেন অন্যরকম। সুন্দরী অভিজাত। কার্থেজের রানী ডিডোর সঙ্গে নিজের সম্পর্ক দাবী করেছিলেন। নিজের সম্পর্ক দাবী করেছিলেন মিশরের ক্লিওপেট্রার সঙ্গেও । তবে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে প্রাচীন মিশরে ভাষা সর্ম্পকে ধারনা ছিল যেনোবিয়ার । যেনোবিয়ার মা আল যাববা সম্ভবত মিশরিয় ছিলেন।



২৬৭ খিস্ট্রাব্দ । যেনোবিয়ার স্বামী সেপটিমিয়াস ওডাইনাত ও তার ছেলে হাইরান আততায়ীর হাতে নিহত হলেন। যেনোবিয়ার ছেলে ভাবাললাথুস তখন সবে নাবালক। ছেলেকে সিংহাসনে বসিয়ে তার পক্ষে যেনোবিয়া পালমিরা শাসন করতে থাকেন । রাজকার্য পরিচালনা করা যেনোবিয়ার নতুন কিছু না। উপরোন্ত, যেনোবিয়া ছিলেন স্বাধীনচেতা, উচ্চাকাঙ্খি ও বুদ্ধিমতি। বাইরে বাইরে রোমের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে রাজ্যবিস্তারে উদ্যোগ নিলেন তিনি। নিজেও কয়েকটি সামরিক অভিযানে অংশ নিয়ে হয়ে উঠলেন পালমিরার যোদ্ধাদের কাছে অফুরন্ত প্রেরণার উৎস। যেনোবিয়ার দৈহিক সৌন্দর্য, যৌন আবেদন ও খোলামেলা পোশাক পালমিরা যোদ্ধাদের সারাক্ষণ উত্তেজিত করে রাখত। যেনোবিয়া ঘোড়ার চড়তেন সাবলীল ভঙ্গিমায় ;সেনাপতিদের সঙ্গে একত্রে বসে সুরা পান করতেন। তবে নাকি সহজে মাতাল হতেন না। এসব কারণেই পালমিরার যোদ্ধাদের কাছে যেনোবিয়ার হয়ে উঠলেন সাক্ষাৎদেবী।



একালের শিল্পীর আঁকা যেনোবিয়ার ছবি

২৭০ খ্রিস্টাব্দ। মিশর ছিল গুরুত্বপূর্ন রোমান প্রভিন্স। প্রবল আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান হয়ে যেনোবিয়া সসৈন্য মিশরের দিকে অগ্রসর হতে থাকলেন। ৫০,০০০ মিশরীয় সৈন্য প্রতিরোধ কল্পে রুখে দাঁড়াল। লাভ হয়নি। যেনোবিয়ার অনুগত পালমিরার সৈন্যরা মিশরীয় সৈন্যদের পরাজিত করে মিশর দখল করে নেয়।



মিশর ও সিরিয়া

রোমান সম্রাট তখন ২য় ক্লাউদিয়াস । মিশর হাত ছাড়া হয়ে গেলে তিনি ভয়ানক ক্রদ্ধ হয়ে উঠলেন। যেনোবিয়াকে উচিত শিক্ষা দিতে রোমান অ্যাডমিরাল প্রবাস কে পাঠালেন । লাভ হয়নি। যেনোবিয়ার পরিচালনায় যুদ্ধে পালমিরার যোদ্ধারা রোমান সৈন্যদের পরাজিত করেন। দূর থেকে শুধু চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া অভ্যন্তরীণ সঙ্কটের কারণে রোমানদের করার ছিল না কিছুই।
রোমানদের পরাজিত করে যেনোবিয়া আরও উচ্চভিলাষী হয়ে ওঠে। ২৭১ খ্রিস্টাব্দের অগাস্ট মাস। পালমিরার সৈন্যরা যেনোবিয়া কে ‘সবচে আকর্ষনীয় ও পূন্যবতী রানী’ উপাধিতে ভূষিত করে। বিশাল সৈন্যবাহিনীর সমর্থন লাভ করে ছেলে ভাবাললাথুস কে যেনোবিয়া অগাস্টাস (রোমান সম্রাটের উপাধি) উপাধিতে ভূষিত করেন।

মিশর দখল করে ও রোমানদের পরাজিত করে শুরু হল বিলাসবহুল জীবনযাপন। আহার ও উপাসনায় শুরু করলেন পারসিক সম্রাটের রীতিনীতি অনুসরণ । পরলেন রাজকীয় কার্থেজিয় পোষাক। কখনও মিশরের রানীর মতন বেগনি রঙের স্বর্ণখচিত রাজকীয় পোশাক। একে একে গুরুত্বপূর্ন বানিজ্যপথগুলি নিয়ন্ত্রন করতে লাগলেন। তবে তার নীতি ছিল উদার। বিশেষ করে আলেকজান্দ্রিয়ার ইহুদিদের প্রতি সহনশীল ছিলেন । অন্যদিকে আন্টিওক এর খ্রিস্টান বিশপ-এর সঙ্গেও গড়ে তুললেন সুসম্পর্ক ।



যেনোবিয়ার শিলালিপি

মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া ও এশিয়া মাইনরের আন্টিওক নগর নিজের নিয়ন্ত্রণে প্রতিষ্ঠা করলেন যেনোবিয়া ।



আন্টিওক নগরটির ধ্বংস স্তূপ বর্তমান তুরস্কের এনটাকিয়া শহরের কাছে। সে কালে নগরের বাইরে প্রবাহিত হত ওরেনটেস নদীটি।



পালমিরা সাম্রাজ্য

সমগ্র অঞ্চল নিজের অধীন এলে যেনোবিয়া নিজেকে অগাস্টা (সম্রাজ্ঞী) এবং রেজিনা (রানী) ঘোষনা করে আলেকজান্দ্রিয়ার মুদ্রা থেকে রোমান সম্রাটের ছবি অপসারন করে নিজের ছবি খোদাই করার নিদের্শ দেন ।
দূর থেকে এসবই লক্ষ করছিল রোম ।
এবং রোম যেনোবিয়া কে সম্পূর্নরুপে ধ্বংসের আয়োজন সম্পন্ন করে ।
রোমের সম্রাট তখন আউরেলিয়ান । যাঁর একটি মহৎ ও সুন্দর হৃদয় ছিল। ২৭২ খ্রিস্টাব্দ। সম্রাট আউরেলিয়ান পালমিরার বিরুদ্ধে তাঁর সামরিক অভিযান শুরু করেন। প্রথমেই তিনি খুব সহজেই মিশর পুনুরুদ্ধার করেন। যেনোবিয়া তখন সসৈন্য আন্টিওক নগরীতে। এশিয়া মাইনরের দিকে অগ্রসর হলেন সম্রাট আউরেলিয়ান । সম্রাট আউরেলিয়ান আন্টিওক অভিমূখে সসৈন্য অগ্রসর হচ্ছেন শুনে যেনোবিয়া ঘোড়া পিঠে চেপে ওরেনটেস নদীর পাড়ে পালমিরার সৈন্যদের অবস্থান নিতে নির্দেশ দিলেন। লাভ হয়নি। কেননা, সম্রাট আউরেলিয়ান ছিলেন দক্ষ ও অভিজ্ঞ। লক্ষ করুন। তাঁর নির্দেশে রোমান সৈন্যরা পালিয়ে যাওয়ার ভান করে। পালমিরার নির্বোধ সৈন্যরা রোমানদের গূঢ় পরিকল্পনা বুঝতে না -পেরে রোমান সৈন্যদের ধাওয়া করে। এক পর্যায়ে তারা ক্লান্ত হয়ে পড়ে ও মূল বাহিনী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। রোমান সৈন্যরা তাদের কচুকাটা করে।
সিরিয়ার পশ্চিমে ছিল এমেসা নগর। বিপদ বুঝে যেনোবিয়া এমেসায় চলে আসেন। এখানেই দুপক্ষের ৭০,০০০ করে সৈন্য মুখোমুখি হয়। অত সৈন্য প্রাচীন বিশ্বের তুলনায় বিশাল সংখ্যা। এটিই রোমান ও পালমিরার সৈন্যদের মধ্যে সর্বশেষ যুদ্ধ। রোমান সৈন্যরা বুঝিয়ে দিল তারা কতটা পেশাদার। পালমিরা সৈন্যরা পরাজিত হয়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এমেসা থেকে পালমিরা ১০০ মাইল পুবে। সেই মরুময় পথে যেনোবিয়া পালমিরার দিকে পিছু হটতে থাকেন। সম্রাট আউরেলিয়ান পলাতকা বিদ্রোহীনির পিছু নেন।



যেনোবিয়া পালমিরা নগরে ঢুকে জনারণ্যে মিশে যান। সম্রাট আউরেলিয়ান পালমিরা অবরোধ করেন। সিজমেশিন দিয়ে বড় বড় র‌্যাম (পাথর) ছুঁড়ে পালমিরার প্রাচীর ধসিয়ে দিতে থাকে।



এক সময় পালমিরার প্রতিরক্ষা প্রাচীরটি হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়ে। রোমান সৈন্যরা নগরে প্রবেশ করে ধ্বংসযজ্ঞে মেতে ওঠে। না। যেনোবিয়াকে ধরা যায়নি। তিনি রাতের অন্ধকারে নগর থেকে পালিয়ে যান। ফোরাত (ইউফ্রেতিস) নদীর পাড়ে অবশ্য তিনি পরে ধরা পড়েন। সুন্দরী বন্দিনীকে সম্রাট আউরেলিয়ানএর সামনে আনা হল। সম্রাট আউরেলিয়ান এই প্রথম পালমিরার রানীকে দেখলেন এবং মুগ্ধ হলেন । সম্রাট আউরেলিয়ান-এর ছিল মহৎ এক হৃদয়। 'আমি নারী'-এই বলে যেনোবিয়া নিজের মুক্তি দাবী করলেন। সম্রাট আউরেলিয়ান অভিজ্ঞ পুরুষ। তিনি বন্দিনীকে রোমে পাঠানোর নির্দেশ দিলেন । রোমে যাওয়ার পথে যেনোবিয়ার ছেলে ভাবাললাথুস মারা যায়।
সেকালে রোমে সম্রাটের বিজয় প্যারেড অনুষ্ঠিত হত। বন্দিরা রোমের পথ প্রদক্ষিণ করে সম্রাটের সামনে উপস্থিত হত। যেনোবিয়াও রোমের পথ প্রদক্ষিণ করলেন; শরীরে সোনার শৃঙ্খল।



পালমিরার রানীর শরীরে সোনার শৃঙ্খল। দৃশ্যটি যুগে যুগে শিল্পীদের উজ্জ্বীবিত করেছে।

যেনোবিয়া রোমের রাস্তায় হাঁটছেন। আর মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। সেকালে বিদ্রোহীদের ক্ষুধার্ত সিংহের সামনে ছেড়ে দেওয়া হত। যেনোবিয়া শিউড়ে উঠলেন। তারপর বিশাল এরিনায় প্রবেশ করে সম্রাটের সামনে দাঁড়ালেন।



পালমিরার রানীকে ঘিরে সৌন্দর্য ও অহঙ্কার ঝলমল করছিল। সম্রাট আউরেলিয়ান মুগ্ধ হলেন। পরিতৃপ্ত পুরুষ তিনি। রোমান বাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছেন। রোম নগরী ঘিরে ১২ মাইল দীর্ঘ প্রতিরক্ষা দেওয়াল তুলেছেন। রোমান সিনেট তাঁকে সাম্রাজ্যের পুনুরুদ্ধারকারী উপাধি দিয়েছে। হ্যাঁ পরিতৃপ্ত পুরুষ সম্রাট আউরেলিয়ান। কাজেই তিনি পালমিরার রানীকে মুক্ত করে দেন। এত সুন্দর রুপ ক্ষুধার্ত সিংহীর আহার হবে!
তারপর?
তারপর পারস্য অভিযানকালে সম্রাট আউরেলিয়ান রোমান সৈন্য দ্বারা নিহত হন। অথচ, সাধারণ সৈন্য থেকে উঠে এসে রোমের সম্রাট হয়েছিলেন আউরেলিয়ান। সৈন্যদের মাঝে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। চিরকাল কারও ভাগ্য একরকম থাকে না। যাই হোক। কেউ কেউ বলে সম্রাট আউরেলিয়ান এর মৃত্যুর পর যেনোবিয়া আত্মহত্যা করেছিলেন।



তবে অধিকাংশের মত এই যে সম্রাট আউরেলিয়ান অবসর ভাতাসহ তিবর নদীর তীরে এক মনোরম এক ভিলা বরাদ্দ করেছিলেন যেনোবিয়াকে। বাকী জীবন সেখানেই কেটেছিল যেনোবিয়ার দর্শনচর্চা আর লেখালেখি করে। রোমান এক গর্ভনরকে নাকি বিয়েও করেছিলেন যেনোবিয়া । মেয়েও নাকি হয়েছিল। মেয়েদের রোমান অভিজাত পরিবারে বিয়েও হয়েছিল।
পঞ্চম শতকে ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে সেন্ট যেনোবিয়াস নামে এক বিশপের কথা জানা যায়।
বিশপ যেনোবিয়াস সম্ভবত যেনোবিয়ার বংশধর ছিলেন।
ইতিহাস এভাবেই বিস্ময়কর ...




২০টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭



ছবি সৌজন্য-https://www.tbsnews.net/bangla




ছবি- মঞ্চে তখন গান চলছে, মধু হই হই আরে বিষ খাওয়াইলা.......... চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গান।

প্রতি বছরের মত এবার অনুষ্ঠিত হল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪। গত ২৪/০৪/২৪... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

×